নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলা ২০২১ এ আমার অনূদিত গ্রন্থঃ ডায়াস্পোরা, মেমোরি, আইডেন্টিটি, ওয়ার অ্যান্ড ট্রমা\'র অনন্য মিশ্রণে নোবেল বিজেতা প্যাট্রিক মোদিয়ানো\'র উপন্যাস \'মিসিং পারসন\'

২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:১৬



বইমেলা ২০২১ এ সোহরাওয়ারদি উদ্যানের ২৭০ নং স্টলে, চমন প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে আমার দুটো বই - ফ্রেঞ্চ নোবেল লরিয়েট (২০১৪) প্যাত্রিক মোদিয়ানোর উপন্যাস - 'মিসিং পারসন' , আমার বঙ্গানুবাদে, এবং 'কাঁচের দেয়াল' - আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ। মিসিং পারসনটা নতুন করে মুদ্রিত হয়েছে এ বছর। আমার প্রথম পেপারব্যাক বই এটা।

২০১৫ সালের বইমেলায় মিসিং পারসনের অনুবাদের প্রথম প্রকাশ। প্যাত্রিক মোদিয়ানো যে বছর (২০১৪র সেপ্টেম্বর / অক্টোবর) নোবেল জেতেন , তার পরের বছরেই। এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলিয়ে আমারটাই ছিল মোদিয়ানোর প্রথম অনুবাদ। দ্রুততার সঙ্গে বইটির প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় মুদ্রণ আর করা হয় নি মধ্যের পাঁচ বছর, যদিও চাহিদা ছিল বইটির বাংলার বিদগ্ধ মহলে।

তালাশ, ময়ূর সিংহাসন, সখী রঙ্গমালা খ্যাত সুলেখিকা শাহিন আখতার আপা আমাকে আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রথম নক করে জিজ্ঞেস করেন মিসিং পারসনের আর কপি আছে কিনা। আমার কাছে এক কপিই এই অনুবাদের শেষ চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে শুনে তিনি আমাকে বাংলাদেশের সবচে বড় এক পাবলিকেশন হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন বইটি পুনঃমুদ্রনের জন্যে। তিনি আমার কাছে আমার অনুবাদের পিডিএফ ভার্শনটি নিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উক্ত বড় পাবলিকেশন হাউজের সঙ্গে আমার বনিবনা হয় নি। বইটির পুনঃমুদ্রিত নতুন ভার্শন বের হয় চমন প্রকাশনী থেকে, প্রকাশক এনাম রেজা ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, যিনি আমার আগের বই, কাঁচের দেয়াল (২০১৯) তার প্রকাশনী থেকে বের করেছিলেন।

বইটির অনুবাদের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার জীবনে এক বড় রকমের ট্র্যাজেডি ঘটে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিন থেকে চলে আসা প্রণয়ের সম্পর্কে লিপ্ত মানুষটি আমার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সে সম্পর্ক শেষ করবার পূর্বেই তার পারিবারিকভাবে অন্যকারো সঙ্গে পরিণয়ের বন্ধনে জড়াবার ঘোষণা দেয়। এসমস্ত বিষয় এখন খুব খেলো, এবং হাস্যকর মনে হলেও - যে দিনগুলোতে আমি এই ঝামেলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমার দিনরাত শ্বাসকষ্ট হতো। ডিপ্রেশনে ভুগতাম। এমন সময় ২০১৪র সাহিত্যে নোবেলের খবর আসে, আমার আগ্রহ ছিল ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোর, ফলশ্রুতিতে মোদিয়ানোর সবচে বিখ্যাত উপন্যাসটি পড়ি এবং অনুবাদ শুরু করি।

নেহায়েত ঘোরগ্রস্থের মতো দিনরাত কাজ করে আঠারো দিনের মাথায় অনুবাদের প্রাথমিক ড্রাফ্‌ট শেষ করি হাতে লেখা খাতায়। এই বইয়ের কপি আমি সবসময় সঙ্গে রাখতাম, যখনই সুযোগ পেতাম, বসে পড়ে কিছুকিছু অনুবাদ করতাম। বিশেষ করে যখন একা লাগতো, যখন শ্বাসকষ্ট ব্যাক করতো, বা ডিপ্রেশন ঘিরে ধরত, তখনি। এই বইয়ের অনুবাদ করেছি আমি টিএসসিতে বসে, ফুলার রোডে রাস্তার ওপর বসে, কলাভবনে বসে, শিল্পকলা অ্যাকাডেমির নাট্যকলা দালানের পাশে বসে। এই বইটা শেষ করেছি ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় বসে, রাতে, যখন খাবার পরিবেশন করা হচ্ছিল, এবং ওয়েটাররা আমাকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন যে, এখন আমাকে টেবিল ছেড়ে দিতে হবে। শেষ লাইনটায় দাঁড়ি চিহ্ন বসিয়ে খাতাটা বুকে চেপে ধরে যখন ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সিঁড়ি ঘরে এসে দাঁড়াই, প্রবল শীত আর কুয়াশা তখন আস্তে আস্তে জেঁকে বসছে আমার তৎকালীন ক্যাম্পাসকে। আমার মনে পড়ে, এই সিঁড়িতে বসে বহুদিন আমরা ক্লাসশেষে আড্ডা দিয়েছি, পরীক্ষার আগে একসঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছি, চারবছরের বহু ভালোমন্দ স্মৃতি এই জায়গায় জন্মেছে, আজ এই উপন্যাস অনুবাদের সমাপ্তির মাধ্যমে , আমার মনে হল, সে সম্পর্কের একটা উপযুক্ত ক্লোজার বোধয় লাভ করলাম আমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টেম্পারেচার এমনিতেই ঢাকা শহরের নর্মাল তাপমাত্রার ২-৩ ডিগ্রী কম থাকে, গাছপালার সংখ্যাধিক্যের কারণে। শৈত্য আর কুয়াসার বুক চীরে যখন আমি ধীর পায়ে হেঁটে চলছি, ডাকসু হতে সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, সেন্ট্রাল লাইব্রেরী হতে হাকিম চত্বর, হাকিম চত্বর হতে টিএসসি, রিকশার খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সে মুহূর্তে আরও একটি অসমাপ্ত অসফল সম্পর্কের শবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সর্বমোট পাঁচটা খাতা লেগেছিল বইটা অনুবাদ করতে। পরে খাতা থেকে কম্পিউটারে টাইপ করতে করতেই দ্বিতীয় এডিট সম্পন্ন হয়। ঘাসফুল প্রকাশনী নামে এক নতুন প্রকাশনা সংস্থা, এবং তার স্বত্বাধিকারী মাহদী আনাম আগ্রহ প্রকাশ করেন এই অনুবাদ বইটি প্রকাশের। পরবর্তীতে, এই প্রকাশনা সংস্থা আমাকে যে কষ্ট দেয়, আচরণে, ব্যাবহারে, অর্থনৈতিক লেনদেনে - এমন কষ্ট আমি জীবনে আর কোন পাবলিকেশন্স থেকে পাই নি।

ডিসেম্বর মাসে বইয়ের পাণ্ডুলিপি তাদের হাতে দিলেও তারা বই প্রকাশ করতে সময় নেয় ফেব্রুয়ারি ১৭ - ১৮ তারিখে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আমি পাণ্ডুলিপি উইথড্র করে নিতে চাইলে তারা আমাকে হুমকি দেয় পাণ্ডুলিপি হাওয়া করে দেবে। অর্থাৎ, অন্যকারো নামে, বা নামবিহীনভাবে বই প্রকাশ করে দেবে। প্রাথমিকভাবে অনুবাদের জন্যে আমাকে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হবে বলা হয়েছিল, টাকা দেয়া হয় তার দশভাগের একভাগ। আমি তিনহাজার টাকা দিয়ে বইটি ১০ বা ১৫ কপি কিনেছিলাম আমার শিক্ষক, বা পত্রপত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকদের বই দেয়ার জন্যে। আমাকে তারা সেই ৩০০০ টাকাই ফেরত দেয় পরে। উপর্যুপরি চাপ দেয়া হতে থাকে, অনুবাদের স্বত্ব যেন আমি প্রকাশককে দিয়ে দিই। আমি রাজি হইনি তো বটেই, এখন ভাবলে অবাক লাগে, কোন রকম পারিশ্রমিক, বা সম্মানী ছাড়া তারা আমার অনুবাদের স্বত্বও রেখে দিতে চেয়েছিল।

নতুন লেখক যারা আছেন, এ ধরনের প্রকাশনা সংস্থা থেকে সতর্ক থাকবেন।

প্যাট্রিক মোদিয়ানো ফ্রেঞ্চ - জিউইশ রাইটার। ওনার বিশেষত্ব হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজিবাহিনীর অত্যাচারে প্রাণ হারানো, বা ভিটেমাটি ছাড়া হওয়া সে সময়কার ইহুদীদের ডায়াস্পোরা নিয়ে কাজ করা। বই ও বইয়ের লেখকের ওপর, অনুবাদের সূচনাপর্বে আমি যে মুখবন্ধ লিখেছি, সেটাই তুলে দিচ্ছি ব্লগপাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে।

প্যাট্রিক মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার জয় করেন ২০১৪ সালে। সে বছরেই আমি মোদিয়ানো'র আলোচিত উপন্যাস 'মিসিং পারসন' (১৯৭৮) ড্যানিয়েল ওয়েইসবোর্টের ইংরেজি অনুবাদ (১৯৮০) থেকে বাংলায় অনুবাদ করি, এবং পরের বছরের বইমেলায়তে অনুবাদকর্মটি মলাটবদ্ধ আকারে বাজারে আসে। এ বছর চমন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এনাম রেজা ভাইয়ের আগ্রহে অনুবাদকর্মটি তাঁর প্রকাশনা সংস্থা থেকে পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে।

'মিসিং পারসন' - উপন্যাসে প্রবেশের পূর্বে সহায়ক তথ্য হিসেবে জেনে রাখা ভালো হবে যে প্যাট্রিক মোদিয়ানো'র জন্ম ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর ফ্রান্সের প্যারিসে, এক ইহুদী পরিবারে। প্যাট্রিক মোদিয়ানোর বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মোদিয়ানোর জন্মের বছর তিনেক আগে, হিটলারের নাজি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাতে হারাতে কোনক্রমে বেঁচে যান তাঁর এক বন্ধুর সহায়তায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত সাহিত্যকর্মের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়, কিন্তু মোদিয়ানো'র রচিত এ উপন্যাসের বিশেষত্ব এই যে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজি বাহিনীর নিস্রংসতার শিকার ইহুদীদের প্রতি বাহ্যিক সহানুভূতি থেকে সৃষ্ট কোন সাহিত্যকর্ম নয়। বরং উপন্যাসের রচয়িতা এমন একটি পরিবারের অংশ যারা সরাসরি সেই নিস্রংসতা চোখে দেখেছেন, এবং তাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পার্থক্যটুকু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অন্যান্য সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম থেকে মোদিয়ানো'র উপন্যাস মিসিং পারসনকে পৃথক করে। ধার করা আবেগ, আর স্বতঃস্ফূর্ত জৈবিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।

'মিসিং পারসন' উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র গায় রোল্যান্ড স্মৃতিবিভ্রাটে আক্রান্ত এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাঁর জীবনে বিদ্যমান স্মৃতি বলতে স্রেফ একদশকের মতন সময়কাল ধরে কর্মরত থাকা একটি বেসরকারি গোয়েন্দাসংস্থার দিনগুলি। এর বাইরে তাঁর অতীত জীবন সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে তিনি এটা জানেন, স্মৃতিসংক্রান্ত তাঁর এ সমস্যার সূত্রপাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। 'মিসিং পারসন' উপন্যাসের ঘটনার চাকা গড়াতে শুরু করে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তাঁর প্রারম্ভেই আমরা আবিষ্কার করি, যে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থায় গায় কাজ করতেন তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ফুসরতে বিদ্যমান সামান্য কিছু তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গায় রোল্যান্ড শুরু করেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা তাঁর অতীত জীবনের তত্ত্বতালাশ। গোয়েন্দা হিসেবে সফল একটি ক্যারিয়ারের প্রায় পরিসমাপ্তির মুখে এসে তিনি কি সমাধা করতে পারবেন তাঁর জীবনের সবচে ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ কেইসটি? তিনি কি খুঁজে বের করতে পারবেন, তিনি কে? নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজের অতীত - বর্তমান - ভবিষ্যৎ হারানো আরও অসংখ্য হতভাগ্যের মত একজন 'মিসিং পারসন' হয়েই তাঁর জীবনের ইতি ঘটবে?

নোবেল বিজয়ের পূর্বে প্যাট্রিক মোদিয়ানো বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে তারকা ছিলেন না, যে অর্থে মিলান কুন্দেরা, সালমান রুশদি, বা হারুকি মুরাকামি নোবেল পুরস্কার না পেয়েও বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে তারকাখ্যাতিসম্পন্ন । নোবেল বিজয়ের পরেও প্যাট্রিক মোদিয়ানো বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে কোন সেলিব্রেটি সাহিত্যিকে পরিণত হন নি, যে অর্থে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আলবেয়ার কাম্যু, বা গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মারকেজ নোবেল বিজয়ী সেলিব্রেটি সাহিত্যিক। সাধারণ পাঠক - যারা বই পড়তে ভালবাসেন তাঁদের মাঝে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অ্যাকাডেমিক অঙ্গনেও মোদিয়ানোকে নিয়ে অ্যাকাডেমিশিয়ান/ শিক্ষক - গবেষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া, তাঁর নোবেল বিজয়ের পরেও, পরিলক্ষিত হয় নি। ব্যাপারটা বেশ বিস্ময়করই, কারন তাঁর উপন্যাস 'মিসিং পারসন'কেই যদি বিচ্ছিন্নভাবে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করি, দেখা যায় তা বিবিধ আঙ্গিক থেকে পাঠ ও বিবেচনা করা সম্ভব। উপন্যাসটিতে একটি ভয়াল যুদ্ধের করাল থাবায় স্মৃতিভ্রংশ, ও নিজের পরিচিত পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একজন মানুষের অতীত খুঁজে ফেরার মানবিক ও শ্বাসরুদ্ধকর একটি গল্প তো আছেই, সঙ্গে আছে নিজভূম, বন্ধুবান্ধব, ও আত্মপরিচয় থেকে বিচ্ছেদের তাড়নাজাত ডায়াস্পোরা সাহিত্যের স্বাদ; আছে যুদ্ধ এবং বিভীষিকা/ ওয়ার অ্যান্ড ট্রমার চাক্ষুষ প্রতিবেদন যার সাইকোঅ্যানালাইটিক পাঠ ও বিশ্লেষণ খুবই সম্ভবপর; এবং আছে আত্মপরিচয়শূন্যতা - নির্মাণ - বিনির্মাণের চক্রাকার আবর্তন। অর্থাৎ, উপন্যাসটি কয়েকটি লেয়ার বা স্তরে পাঠ করা সম্ভব যা স্রেফ আনন্দের জন্যে সাহিত্যপাঠ / প্লেজার রিডিং এর সুযোগ যেমন তৈরি করে দেয়, একই সঙ্গে সিরিয়াস পাঠক - গবেষকের হাতে তুলে দেয় সাহিত্যতত্ত্বের গভীরে ডুব দিয়ে বইটির উপজীব্য সময় - চরিত্রাবলী - দর্শনের নতুনতর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, ও অর্থ উন্মোচনের চাবিকাঠি।

মিসিং পারসন ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হলে সে বছরেই ফরাসী সাহিত্যের সম্মানজনক পুরষ্কার প্রি গনক্যুরে ভূষিত হয়। এ উপন্যাস ও তাঁর লেখকের ব্যাপারে আগ্রহ জাগানিয়া আরও অনেক তথ্যের সংযোজন সম্ভব, তবে গুণী পাঠক এ অনুবাদ পাঠ শেষে আগ্রহান্বিত হয়ে নিজেই হয়তো তা খুঁজে নেবেন, এই আশায় অনুবাদক হিসেবে আমার কর্তব্য আপাতত সমাপ্ত মনে করছি।


গোয়েন্দা গল্প, বা সাসপেন্স থ্রিলার যারা পছন্দ করেন, তাদের সংগ্রহে রাখার মতো একটি অনুবাদ গ্রন্থ এটি। আশা করি এই বইমেলায় আমার অনূদিত গ্রন্থটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করবে।



(বইটির প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ, প্রচ্ছদশিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের হাতে)

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:২১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: শুভ কামনা ভাইয়া

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, আপা! : )

২| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: জাস্ট গ্রেট।

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজীব ভাই! : )

৩| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৩৯

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। নাম শুনলেও প্যাট্রিক মোদিয়ানের কোনো বই আগে পড়িনি।

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:২১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, তমাল সাহেব! : )

মোদিয়ানোর লেখা এই মুহূর্তে না পড়লেও আপনার ক্ষতি নেই। লেখক হিসেবে প্রস্তুতি নেবার জন্যে আগে বরং নিজের ভাষাভাষী সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পড়ে শেষ করাটা দরকার।

শুভকামনাসহ।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৩২

আমি সাজিদ বলেছেন: অভিনন্দন৷ শুভকামনা।

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, সাজিদ সাহেব!

৫| ২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৪

শাহ আজিজ বলেছেন: বইগুলি সংগ্রহ করব । আমি ২০২০ এর দুটো বই নিয়ে প্রকাশকের হাতে ধরা খেয়েছি । আমার বড় অংকের টাকা গায়েব । চেষ্টা করছি ফেরত পাবার । আপনার প্রতি ফর্মায় কত পড়েছে ? ক'কপি ছেপেছে ?

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, সম্মানিত জ্যেষ্ঠ ব্লগার। অনুবাদ বইয়ে আপনার টাকা পাবার কথা। আপনার টাকা দিয়ে ছাপানো লাগবে না, সাধারণত। আর মৌলিক বই যদি হয়, আপনি পাণ্ডুলিপি নিয়ে ঘোরাঘুরি করলে, বা পরিচিত পাবলিশার থাকলে, বা এমন পাবলিশার থাকলে - যে আপনার লেখার ওপর ভরসা রাখেন, সে বিনে পয়সায় আপনার বই করে দেয়ার কথা।

আমার একদম প্রথম দুটো বই ছাপাতে ১০০ কপি বই আগেই কিনে নেয়া লেগেছিল। এই প্রকাশনা সংস্থা কোন টাকা রাখে নি আমার কাছে। কাজেই আমিও আর খোঁজখবর নেই নি যে অনুবাদ বইটা কয়কপি ছেপেছে। আমার মৌলিক বই থেকে আমার প্রকাশক লাভ করতে পারেন নি বিধায়, এই অনুবাদ বইবাবদ কোন টাকা আমি ওনার কাছ থেকে চাইছি না ভদ্রতার খাতিরে। লাভ যদি কিছু করতে পারেন, পুরোটাই ওনার পকেটে যাক। ভালো প্রকাশকও আছেন বাংলাদেশে, যারা নতুন কাজ করছেন, ভালো কাজ করতে চাইছেন, কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারছেন না।

শুভকামনাসহ।

৬| ২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার বইয়ের সফলতা কামনা করি

২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, নেওয়াজ ভাই!

৭| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪২

ওমেরা বলেছেন: আপনার বই এর জন্য শুভ কামনা।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, ব্লগার ওমেরা!

৮| ২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৫৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আমি আপনার অনুবাদটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো। আপনি বোধহয় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক। আপনি চমৎকার বাংলা লিখেনও। এমন কম্বোতে আশা করি অন্যধারার চমৎকার একটা অনুবাদ পাবো। আর থ্রিলার তো আমার পছন্দের জনরা।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৪৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ সাহেব। শুক্রশনিবার করে আমার বইমেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে এলে আওয়াজ দিয়েন।
আর আপনার কাইজ্জা পোস্টগুলি গেলো কই? আমি তো লুঙ্গি রাতে থেকেই কাছা মারছি ক্রমাগত, সকাল হলেই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বো বলে!

৯| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আমি ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল মধ্যে নেই আপাতত, তাই আসা হবে না মেলায়। পোস্ট সরিয়ে নিয়েছি৷ কারন ব্লগার সোহানাজোহা তার পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন বলে৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.