নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুতির খালের হাওয়াঃ ২৮

২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৩৮




১।
উমবার্ত ইকোর অন লিটারেচার নামের বইটি নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। বিশ্বসাহিত্যের অনেকানেক বিষয় নিয়ে ভদ্রলোকের লেখা প্রবন্ধের সংকলন বইটি। তারমধ্যে কিছু প্রবন্ধ আছে, চেষ্টা করলে সহজেই দাঁত ফোটানো সম্ভব। লেখার স্টাইল, সিম্বলিজম, তিনি কেন লেখেন ইত্যাদি বিষয়, যেমন। আবার কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো রচনার স্টাইল, জেমস জয়েসের পোট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্ট - এগুলো পড়লেও বুঝবো, কিন্তু এ মুহূর্তে কোন কাজে লাগবে বুঝতে পারছিলাম না। বর্তমানে যা লিখছি, বা যে বিষয়ে গবেষণার কাজ করছি - কোনটার সঙ্গেই ইকোর লেখা আপাতত মেলে না। দান্তে, অস্কার ওয়াইল্ড, বোরহেসের উপরেও মূল্যায়নধর্মী তিনটি আর্টিকেল আছে, কিন্তু তাদের কোন লেখা আমার পড়া নাই বলে পড়ে মনে হয় না কিছু বুঝবো।
.
একটু পর উঠে গিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের লেখাঝোকার কারখানাতে বইটা হাতে তুলে নিই। বেঙ্গলের বের করা বইটি, ৮০র দশকে তার সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত 'অলস দিনের হাওয়া' - নামের সাহিত্য কলামের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ২৬টি প্রবন্ধের সংকলন। যদিও বইটার নাম লেখাঝোকার কারখানাতে, যেমন কিনা সৈয়দ শামসুল হকের মার্জিনে মন্তব্য, কিন্তু বইটা আসলে ঠিক সাহিত্য কীভাবে রচনা করতে হয় , তা নিয়ে নয়। বরং সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে। স্যারও বিশ্বসাহিত্যের অনেকানেক রথী মহারথীদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে গেছেন। ইকোর নাম স্যারের কাছ থেকেই প্রথম জানা। ক্লাসরুমে স্যার বলতেন, বাংলাদেশে আমভাবে ল্যাতিন সাহিত্য নিয়ে কথাবার্তা তিনিই প্রথম শুরু করেন। এরকম অনেক বিদেশি সাহিত্য - সাহিত্যিকের সঙ্গেই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার আমাদের, বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন।
.
২।
বিষয় হল, ইকো যেভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত, মনজুর স্যার তার কিয়দাংশও নন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাদ দিই, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে যারা সাহিত্য চর্চা করেন - তারা ক'জন কথাসাহিত্যিক মনজুরুল ইসলাম স্যারের লেখা পড়েছেন? (আমি পড়েছি। স্যার আমার শিক্ষক ছিলেন বলেই তার লেখার হদিস জানতাম ও রাখতাম। তার দুটো গল্পের বই আর একটি উপন্যাস আমার পড়া। যে ছবিটা দেখছেন, তা স্যারের 'সুখদুঃখের গল্প' বইয়ের উৎসর্গ পাতা)। ইকো দার্শনিকও বটে। মনজুর স্যার দেশ বরেণ্য গবেষক। কিন্তু একজন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক হয়ে না ওঠার পেছনে আমার মনে হয় স্যারের সাহিত্যিক হিসেবে মেধার চেয়েও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চিন্তা ও সাহিত্যের গুরুত্বহীনতা, এবং অনুবাদ সাহিত্যে দুর্বলতার কারণে (বাংলা থেকে ইংরেজি) বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী সাহিত্যিকদের জায়গা করে নিতে না পারা।
.
৩।
ইকো আজীবন ইতালিয়ান ভাষাতেই লিখেছেন, যা তার মাতৃভাষা। তরুণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে আমার নিজের প্রায়ই এই ডিলেমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যে - বয়স তো এখনও কম, বছরখানেক চেষ্টা করে দেখবো ইংরেজিতে উপন্যাস লিখতে পারি কি না? পাশের দেশ ভারতেই তো কতজন আছেন যারা ইংরেজিতে উপন্যাস লিখে আজ বিশ্ব সাহিত্যের মানচিত্রে সমাদৃত। একজন ইউরোপিয় ভাষাভাষী সাহিত্যিকের এই ডিলেমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় কী, সাধারণত? অথচ বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের একটা শক্ত পাইপলাইন তৈরি হয়ে গেলে আমরা মাতৃভাষাতেই, অন্তত চেষ্টাটা করতে পারি বিশ্বসাহিত্যের দরোজায় কড়া নাড়ার। ভাষার রাজনীতিতো আছেই, তবুও অরিজিন্যাল, থট প্রভোকিং চিন্তার মূল্যই কি সবচে বেশী নয়, সৃজনশীল সাহিত্যকর্মে?
.
৪।
বিশ্বসাহিত্য, অনুবাদের পাইপলাইন - এসমস্ত কথা বাদ দিই। দেশের ভিতর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাহেবের মতো লেখকরা সমাদৃত হন না কেন? সাহিত্যপদবাচ্য নয় বলে, তাদের সাহিত্য কর্ম? মনে হয় না। এই ধরণের সাহিত্যের বাজার নেই, মোটাদাগে বলতে গেলে, বাংলাদেশে। জনগণের রুচি কি পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব, একজন লেখক হিসেবে? ইলিয়াস না হয় ধার ধারেন নি পাঠকের রুচির। কিন্তু তার স্ত্রী যখন তাকে এই প্রশ্ন করতেন - 'কি লেখো তুমি এতো? কাগজ আর কলম কিনতেই তো তোমার লেখার মাধ্যমে আয় করা পয়সা শেষ হয়ে যায়...' ইলিয়াসের কেমন লাগতো? সে উত্তর আমাদের আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। ইলিয়াসের হাড় কবরে শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনি কিছু লিখেও যান নি। কিন্তু ইলিয়াসের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারিতে তার স্ত্রীর এ প্রশ্ন এখনও ধাক্কা দিয়ে যায় আমাদের মনে।
.
৫।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যখন আপনি সাহিত্যচর্চায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাবেন, নানা রকম অস্বস্তিকর, এবং সাহিত্যের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আপনার মননকে ক্রমাগত ঘাই মেরেই যাবে। জীবন তো একটাই, ফেলনা তো নয়। জীবনের অর্থবহতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোও তাই ফেলে দেয়া যায় না। মুখোমুখি হতেই হয়। এবং সে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




সে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। - সহমত।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সাহিত্য চর্চাকে প্রফশন হিসেবে বেছে নেয় তাদের অনেক ঘাটের পানি খেয়ে অনেক সময় মেধা শ্রম ব্যয় করে তবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব হয় । বাঙালির জন্য বাঙলা চর্চাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হয় । আর একটা ইংরেজী প্রবাদ আছে cut your coat according to your cloth. আয় বুঝে ব্যয় করা উচিৎ। খরচ বেশি হলে দেনা হবে।দেনা বাড়লে ঋণের বোঝায় চাপা পড়ে মরতে হবে্ ।

৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:১৮

কামাল১৮ বলেছেন: সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অনেক লেখা আমি, কালি ও কলমে পড়েছি।তার লেখা প্রবন্ধ অনেক সমৃদ্ধ।তার প্রবন্ধ দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় তো বলা যায় না সাহিত্য মহলে সমাদৃত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.