![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে যিনি ছিলেন প্রেরণা, নিজের সন্তানকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, পিছু হটতে পারেন নি। নিজের স্বামীকে হারালেন সেই বছরই। কিন্তু কি যেনো এক অদ্ভুত শক্তি ছিলো আম্মার মাঝে। যিনি অগ্রদুত। মশাল হাতে দেখিয়েছেন পথ। জানতেন এই পথ সহজ নয়, কিন্তু জানতেন একবার থামলেই পিছিয়ে যাবেন অনেকটা পথ।
ক্র্যাক প্লাটুন কে তিনি ঢাকায় কোলে পিঠে করে রেখেছিলেন। তার পরিনাম দিতে হয়েছিলো ছেলেকে হারিয়ে, কিন্তু তিনি তো দমে থাকার পাত্র নন, আম্মা সব সয়ে বেড়িয়েছেন বাকি জীবন জুড়ে। মেজর জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে দেশদ্রোহীদের সুযোগ দিলো রাজনীতিতে আসার আর পাশে সাহস জুগালো এরশাদ। দুয়ে মিলে দাঁড়িয়ে গেলো জামায়াতে ইসলাম নামে পাকি শুয়োরের বীর্যরা। ওরা চেয়েছিলো বাংলাদেশ আবার ফিরে যাক পাকিস্তানী চেতনায়। বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন আম্মা। জীবনে কম আঘাত তো সহ্য করেন নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছেন নিজের চোখে সামনে থেকে, ছেলেদের সাহস জুগিয়েছেন ব্যাথা ভুলে তবুও এগিয়েছেন অনেকটুকু পথে।
নব্বইয়ে যুদ্ধাপরাধী, মানবতা হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যখন গণ আন্দোলন গড়ে তুলেন প্রতিটি পদক্ষেপে ছিলো ভয়। কিন্তু তিনি তো ভীতু নন। পথ দেখিয়েছেন প্রজন্মকে। গণ আদালত নিয়ে খালেদা সরকার করলো মামলা, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আম্মা সহ যোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুনরায়। দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
তিনি জানতেন সুফল আসবে, আসবে সুদিন। এবং সুদিন এসেছে। তিনি দেখে যেতে পারেননি সঠিক কিন্তু জান্নাত থেকে ঠিকই দেখেছেন। ২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে পুলিশের হামলা চালালো আম্মার উপর। ভর্তি হলেন পিজি হাসপাতালে। সেই শুরু, কিন্তু প্রেরণায় ছিলেন প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্পন্দনে। বাক শক্তি হারিয়েছেন ক্যান্সারে, কিন্তু হেরে জাননি কোনো পথে। মৃত্যু হয়তো গ্রাস করেছিলো আম্মাকে কিন্তু তিনি তো অপরাজিত। যার ফল আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের রায়ে। আম্মা জাতিকে প্রেরণা, শক্তি জুগিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তে।
আজকের দিনটিতে আম্মা জাহানারা ইমাম চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর কর্ম, প্রেরণা, শক্তি। আম্মা থাকেবেন প্রতিটি নিঃশ্বাসে, আত্মা জুড়ে। ওপারে ভালো থাকবেন আম্মা। জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ।
©somewhere in net ltd.