![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
মাথায় শুভ্র দু চার গোছা চুল, গায়ে পুরু কোট বেয়ে শীত কিভাবে ঢুকতে পারে তা অনেকেরই অজানা। পার্কের বেঞ্চিতে বসে লিখতেন আর পাখিদের খাবার দিতেন। ৩৩ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে একেবারে শূন্যহাতে পোল্যান্ড ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলেন। আর কোনো দিন দেশে ফিরে যাননি। কারো সাথে দেখা হলে প্রায়ই বলতেন “ময়লার কাগজ ফেলার ঝুড়িটি হলো একজন লেখকের প্রিয় বন্ধু।
একদিকে রাজনৈতিক চিন্তার রক্ষণশীলতা এবং অন্যদিকে অনুভূতির প্রাবল্য ও তীব্রতার উভমুখী দ্বন্দ্ব তাঁকে বিশিষ্টতা দিয়েছে ।
তাঁর চরিত্রগুলোর সঙ্কট বহুমুখী । ইউরোপীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কোনঠাসা অথচ চিরায়ত তাওরাত ও ইঞ্জিলের ধর্মীয় আবহ ধরে রাখতে প্রাণপণ সংগ্রামরত ইহুদী সম্প্রদায়ের নৈতিক ও বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন কিছুতেই আর সরল স্বাভাবিক থাকতে দেয় না । সহজেই প্রলোভনের ফাদে ধরা পড়ে এরা , আর পরিনামে ছিন্নভিন্ন হয় পরিবার, গ্রাম, জনপদ । তাঁর কাহিনীগুলোর ছোট্ট সব জনপদের অসুখী-অচরিতার্থকাম মানুষেরা শুধু বাস্তবতার পীড়নেই দিশেহারা নয়। শয়তান আর অশুভ সব শক্তিও তাদের নিয়ে ছেলেখেলা করতে ছাড়েনা ।
এ ব্যাপারে কোনই সংশয় নাই যে যখনই চরিত্র আর তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কিছু লিখতে হয়, তখন, ঠিক তখনই দেখা যায় ইদ্দিস খুবই শক্তিশালী এক ভাষা-মাধ্যম। যখন প্রযুক্তি নিয়ে কোনও কিছু লেখার বা বলার দরকার হয়, তখনই দেখা যায় ইদ্দিস খুব দুর্বল এক ভাষা। কিন্তু ক্রমশই কমে-যেতে-থাকা ঈদিশভাষী পাঠকরা তাঁর মত কেউ নন। তিনি নিয়তিবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তি, ভীষণ চিন্তিত একজন ।
সব পাতা ঝরে গেছে, তবু, গাছের দেহকাণ্ড আর শিকড়বাকড় এখনও বেঁচে আছে। এটা খুবই বাজে একটা ব্যাপার, তবে আমাদের এই বাজে অবস্থাটা দেখা দিতে শুরু করেছিল ৩,০০০ বছর আগেই। আমি একক-চরিত্রের এক নাটক লিখেছিলাম দরিদ্র একজন নকলনবিশকে নিয়ে, যিনি, সেই প্রাচীনকালে আমাদের, মানে ইহুদিদের দলিলদস্তাবেজের লেখক ও রক্ষক ছিলেন। যিনি অস্পষ্ট হস্তাক্ষরে কীসব লিখছেন। তিনি ক্ষুধার্ত ছিলেন, তার স্ত্রীও ক্ষুধার্ত। তিনি যখন কিছু কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন, কাগজপত্রগুলিকে তিনি মনে করছিলেন ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির প্রারম্ভিক বিন্দু হিসাবে এবং তার মনে পড়ছিল, খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ অব্দে মিশর থেকে ইস্রাইলিয়দের দলবদ্ধ প্রস্থানের দৃশ্য। তখন তার স্ত্রী জানতে চাইলেন, কারা আর এই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হবে? আসলে, পরিস্থিতিকে সব সময়ই খারাপ দেখায়, কিন্তু খারাপ দেখালেও কখনই তা পুরোপুরি হারিয়ে যায় না।”
'শোশা' পড়তে পড়তে আমার মনে হতে থাকে ১৯৭১-এর গর্ভে থাকা বাঙালির কথা। ৮০০-৯০০ বছর ধরে পোল্যান্ডে বসবাস করেও ইহুদিরা সে দেশে পোলিশ হতে পারে না। তারা পৃথক এবং তারা চিহ্নিত যেভাবে ফ্যাসিবাদ-অধ্যুষিত জার্মানিতে তাদের হলুদ বর্ণের ডেভিড-তারকা পরে পৃথক হতে বাধ্য করেছিল হিটলার। ১৯৭১-এ বাঙালি পরাজিত হলে তারা যে কী পরিস্থিতির শিকার হতো, সেই আতঙ্ক অনুভব করতে পারি সিঙ্গারের এ উপন্যাস থেকে। একজন সমালোচক বলেছিলেন, আজ যদি পোল্যান্ডের ইহুদি বসতিগুলোকে পুনরায় নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে, তবে সে ক্ষেত্রে সিঙ্গারের উপন্যাস হতে পারে সহায়ক সূত্র।
লিখতেন ইদ্দিস ভাষায়। পৃথিবীতে ইদ্দিস ভাষাভাষীর সংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ। বই অনূদিত হতো ইংরেজিতে। ইংরেজিতে কলাম লিখতেন, কিন্তু কখনোই সাহিত্যের বেলায় ইংরেজি অগ্রাধিকার পেতোনা। প্রায়ই বলতেন ইদ্দিস খুব কম লোকই জানে কিন্তু আমি তো ভালো জানি! ইদ্দিস ভাষায় লিখে প্রথম নোবেল পেয়েছিলেন তিনি।
মজা করে বলছিলেন, যখন খবর এলো তিনি নোবেল পেয়েছেন এবং তাঁকে একখানা বক্তৃতা পাঠ করতে হবে। সারা নিউ ইয়র্কে একটা ভালো ঈডিশ টাইপমেশিন খুঁজে পাওয়া গেল না, যেটাতে তিনি নোবেল বক্তৃতা টাইপ করতে পারেন। শেষে বহু কষ্টে নিজের ভাঙা টাইপমেশিনেই টাইপ করেন তাঁর বক্তৃতা।
ছোটবেলার কথা লিখেছিলেন অ্যা ডে অব প্লেজার, স্টোরিজ অব অ্যা বয় গ্রোইং আপ ইন ওয়ারসোতে’। আমাদের ঘরটি ছিল এমন যেন এটাও একতা পাঠশালা। বাবা এখানে দিনমান বসে থেকে তালমুদ চর্চা করতেন। মা যখনি সময় পেতেন, পবিত্র পুস্তক খুলে পড়তে বসে যেতেন। আমার ভাইবোনেরা খেলনার হাতিঘোড়া নিয়ে ব্যস্ত পয়ে পড়ত আর আমার খেলনা ছিল বাবার সংগ্রহের বইগুলো। বর্ণমালা শিখবার আগেই আমি লিখতে শুরু করেছিলাম! কলমটিকে কালির দোয়াতে ডুবাতাম আর হিজিবিজি কী যেন লিখতাম! আসলে এখন মনে হয় কাগজে কলমের আঁচড় কাটতাম আর খুব আঁকতে ভালবাসতাম হাতিদের, ঘোড়াদের। বাড়িঘরের ছবি আঁকতাম আর আঁকতাম অনেক অনেক কুকুরের ছবি।
আজ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা, প্রিয় সাহিত্যিক আইজ্যাক বাশেভিস সিঙ্গারের জন্মদিন। মাতৃভূমি ছাড়লেও যিনি ভুলতে পারেন নি আপন মাতৃভাষা। তাইতো জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ছিলেন মাতৃভাষা ইদ্দিস নিয়ে! বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো প্রিয় লেখকের প্রতি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ইদ্দিস ভাষা!
এ ভাষাসাহিত্যে নোবেলও আছে!!
পড়া হয়নি তার কোন বই।
বাংলায় অনূদিত হয়েছে তার সাহিত্যকর্ম?