![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
জননী সাহসিকা, বটবৃক্ষসম একটি মানুষ কতটা একাত্ম হয়ে আছেন আমাদের সঙ্গে। আসলে ইতিহাসের অনিবার্যতায় বহু মানুষের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম আন্দোলনকে ধারণ করে প্রতিনিধিত্ব করে নির্মিত হয়েছিলেন আমাদের সুফিয়া কামাল।
একজন কবি হিসাবে তাঁর পরিচয় প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল বিশ শতকে, ব্রিটিশ শাসিত কলকাতার সাহিত্য পত্রিকায়। তখন মুসলিম নারী সমাজ রোকেয়ার নারী জাগরণী মন্ত্রে সবেমাত্র দীক্ষা নিয়েছে। সুফিয়া কামালের কাব্যচর্চা শুরু হয়েছে। একজন তরুণীর লেখা কবিতা বিদ্রোহী কবি নজরুলকেও আকৃষ্ট করে এবং সেকালের কবি- সাহিত্যিকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও তাকে আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন। বরিশালের নানাবাড়ির আভিজাত্যও তাকে ধরে রাখতে পারেনি।
(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে।)
বাঙালি মেয়ে হয়েই জন্মেছিলেন বলে তাঁর স্বভাবজাত মূল্যবোধ ও আদর্শ ছিল সুদৃঢ়। প্রকৃতি তাঁকে কবি করেছিল, প্রকৃতি তাঁকে পরিপুষ্ট করেছিল, প্রকৃতি তাকে মানবিক করেছিল বলেই আমরা এক বিরাট বটবৃক্ষ সুফিয়া কামালের ছায়ায় আশ্রয় পাই।
কলকাতা থাকতেই অল্প বয়সে তিনি বিধবা হলেন একটি কন্যা সন্তান নিয়ে। কলকাতা করপোরেশনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নেন মাত্র ১৭ টাকা বেতনে। প্রথম জীবন সংগ্রাম তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই একটু একটু করে তৈরি করেছে আমাদের সুফিয়া কামালকে।
একজন নিরুপায় তরুণী হলেও আত্মমর্যাদায় সুফিয়া কামাল ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্বময়ী। সরকারি- চাকরিজীবী হলেও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী কামালউদ্দীন সাহেব তখন লেখকমহলে সুপরিচিত ছিলেন। কবি সুফিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১৯৪০ সালে, এরপর আর তাঁকে ভাবতে হয়নি। স্বামী, সন্তান, সংসার সামলিয়ে তার কাব্যচর্চা এগিয়ে গেছে এবং সমাজ-সংস্কৃতি ও স্বদেশের কাজে তিনি একাত্ম হতে পেরেছিলেন। প্রতিদিন লেখার টেবিলে বসাটা একটা অভ্যাস ছিলোই। তবে পড়ার প্রতি ঝোঁকটা শৈশব-কৈশোর থেকে গড়ে উঠেছিলো শেষ বয়সেও সেই অভ্যাস ছাড়তে পারেননি।
১৯৪৭ সালে সাপ্তাহিক ‘বেগম’ প্রকাশিত হলে তিনিই এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন কয়েকমাস। সুফিয়া কামাল কেবলমাত্র কাব্যচর্চায় থাকেননি। ঘর ছেড়ে বেরিয়েছেন মানুষের ডাকে, মানুষের কল্যাণের জন্য। বর্ধমানে স্বামীর চাকরিস্থলে থাকাকালে তাকে প্রথম দেখা যায় খাদ্যের দাবিতে একটি মিছিলে, এর উন্মেষ মণিকা সেনের গ্রন্থে পাওয়া যায়।
কলকাতায় থাকাকালে দেশ-বিভাগের পূর্বে ও পরে যে দাঙ্গা হয়, তখনও তাঁকে দেখা গেছে দাঙ্গায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কাজ করতে। ১৯৪৮ সালে সুফিয়া কামাল ঢাকায় চলে আসার পর তখনকার মহিলা সমাজকর্মী আশালতা সেনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ঢাকার ‘গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজকল্যাণমূলক কাজে সংযুক্ত হন। এরপর বেগম ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে আরো বেশি জড়িয়ে পড়তে হয় শামসুন্নাহার মাহমুদ, জোবেদা খাতুনসহ অনেকের সঙ্গে।
নারী শিক্ষার জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, নারী পুনর্বাসন, নারীর অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন তিনি। ১৯৬১ সালে যে মুসলিম পারিবারিক আইন পাস হয় তার পেছনেও ছিলো শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামালের বিরাট ভূমিকা। এ আন্দোলনে পাকিস্তানের আরো অনেক কল্যাণী মহিলারাও সংযুক্ত ছিলেন। এ দাবি সোচ্চার হয়েছিলো, সমর্থন পেয়েছিলো বলেই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
( ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহিলাদের সমাবেশে ও মিছিলে নেতৃত্বে)
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় সুফিয়া কামাল রাজপথেই ছিলেন। ছাত্রদের গুলি খাওয়া ও গ্রেফতারের খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজে, প্রতিবাদ সভায়, মিছিলে। অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন বাঙালির যে সংগ্রাম, সেখানে তিনি যুক্ত হয়ে পড়লেন। বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রধান সারিতে দাঁড়ালেন সুফিয়া কামাল। ছাত্র সমাজের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের আন্দোলন- সর্বত্র।
১৯৭১- এর অসহযোগ আন্দোলনের সময়ও সুফিয়া কামাল হেঁটেছেন রাজপথে, মিছিলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। একাত্তরের নয়টি মাস তাকে নজরবন্দী করে রাখে পাকিস্তানি সৈন্যরা। এ সময়ও তিনি সাহস দিয়ে সাহায্য করেছেন গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের, মেয়েদের। স্বাধীনতার পর সৈন্যদের হাতে ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য তিনিও ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ডের’ কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী হিসাবে নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী হিসাবে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত, সর্বজন স্বীকৃত। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী কণ্ঠ, সাহসী আন্দোলন দুস্থ অসহায় নারী সমাজের মাঝে বিপুল সম্ভাবনা এনে দিয়েছিল।
(জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে সুফিয়া কামাল)
নারীর মানবাধিকার আদায়ে বেগম রোকেয়া যে নারী জাগরণী শক্তি যুগিয়ে যান, সুফিয়া কামাল তা আন্দোলনে রূপান্তরিত করে প্রতিষ্ঠা করে গেলেন। এ কর্মে, সংগ্রামে তাঁকে সাহস ও সমর্থন দিয়ে তা কার্যকর করতে অনেক পথ হাঁটতে হয়েছে।
(১৯৭২ সালে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সুফিয়া কামাল; জাহানারা ইমাম; অভিনয়শিল্পী উৎপল দত্ত ও শোভা সেন এবং অন্যান্যদের সঙ্গে)
( যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা গন আদালতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও শেখ হাসিনার সাথে সুফিয়া কামাল)
অনেক অপপ্রচার হয়েছে, বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে আদর্শ সব বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে তা ‘নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রাম’ ক্ষমতায়নের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে।
তিনি বলতেন নারী মুক্তি মানেই মানবমুক্তি।
আজ কবি সুফিয়া কালামের প্রয়াণের দিন। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষটির প্রতি।
২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩
নিষ্কর্মা বলেছেন: ১৯৬৫ সালে এবং তৎপরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা কারা পালন করেছিলেন? তাদের মধ্যে একজন মুনীর চৌধুরী, অন্য জন তার ভাই কবীর চৌধুরী। আরেকজন হলেন এই সুফিয়া কামাল। এই সবও তো ইতিহাসেরই অংশ।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের স্মরণে, মননে, প্রেরণায়।
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২
ক্লে ডল বলেছেন: ছবিগুলো আগে দেখিনি। ধন্যবাদ এগুলো শেয়ারের জন্য।
প্রতিটি বাঙ্গালী নারীর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন সুফিয়া কামাল চিরকাল।
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৩
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: সুফিয়া কামাল কে নিয়ে সুন্দর গোছানো লেখা। ধন্যবাদ
৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: অগ্রগামী এবং একজন আধুনিক মানুষ শ্রদ্ধা
৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৬
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
সময়কে অতিক্রম করে এগিয়ে চলা একজন নারী কবি সুফিয়া কামাল। বাংলা সাহিত্য তার অবদান কোনদিন ভুলবে না। তিনি বেচে আছেন আমাদের সকলের মননে। এই দিনে-
তাহারেই পড়ে মনে!
৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩০
রমজান আহমেদ সিয়াম বলেছেন: তার অবদান বাংলা সাহিত্যে অস্বীকার্য
৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩০
রমজান আহমেদ সিয়াম বলেছেন: তার অবদান বাংলা সাহিত্যে অস্বীকার্য
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৬
বিজন রয় বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষটির প্রতি।
++++