![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
শরীয়তপুরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল। কে এই ইদ্রিস সরদার? কি তার পরিচয়?
শরীয়তপুরের পালং উপজেলার মাহমুদপুরের মৃত হামিক আলী সরদারের ছেলে ইদ্রিস আলী সরদার। একাত্তরের ভয়ঙ্কর নরপিশাচ ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিস ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৬৯ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের নেতা ছিলো ইদ্রিস সরদার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামি ছাত্রসংঘের সক্রিয় কর্মী ছিলো।
আজো মধ্যপাড়া, উত্তর দক্ষিণ মধ্যপাড়া, কাশাভোগ, আংগারিয়া, নীলকান্দি, স্বর্নঘোষ, ধানুকা, পালং, কোটাপাড়াসহ জেলার মানুষেরা শিউরে উঠে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্মৃতি হাতড়ে ধরলে। পালং গণহত্যার নেতৃত্বে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের কুখ্যাত জঘন্য দুই খুনে ইদ্রিস আলী সরদার ও সোলেমান মোল্লা ।
১৯৭১ সালের ২২ মে। সবে দুপুর পেরিয়েছে। দেড় শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্যকে নিয়ে আংগারিয়া বাজারের পশ্চিমে কীর্তিনাশা নদীর পাড় থেকে মার্চ করে আংগারিয়া বাজারে ওঠে। কুখ্যাত রাজাকার ও একাত্তরের ভয়ঙ্কর খুনে ইদ্রিস সরকার ও সোলেমান মোল্লা পাকিস্তানি সেনাদের অভ্যর্থনা জানায়। পাকিস্তানি সেনার আগমন টের পেয়ে আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি কমরেড নূরুল ইসলাম একটি গামছার এক মাথা বেঁধে গামছাটি ঘোরাতে ঘোরাতে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন তোমরা যে যেভাবে পার পালাও পাকিস্তানি মিলিটারি আসতেছে।।
ইদ্রিস সরদার ও সোলেমান মোল্লা নেতৃত্বে রাজাকাররা আসছে। পালাও পালাও তোমাদের ওরা মেরে ফেলবে। এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে নুরুল ইসলাম মনোহর বাজার পর্যন্ত গিয়ে মনোহর বাজারের গরুর হাট খেলার মাঠের মধ্য দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যায়।
ও দিকে পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছে ইদ্রিস সরদার বলছে, সার এদার বহুত মালাউন হায় স্যার, বহুত খুব সুরত মাল হায়। লাগতা হায়তো হামাক বলতা হায়, হাম আমজান করেগা। মিলিটারিরা আংগারিয়া বাজারে উঠে বাজারে আগুন দেয় । পাক সেনারা বাজারে, বাজার থেকে মনোহরবাজারের দিকে আসার পথে রাস্তার দুপাশে প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে ঢুকে নারী, পুরুষ, সাবালিকা মহিলা, নাবালিকা সুন্দরী মেয়ে, শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা সবাইকে পৈশাচিক নির্যাতন, হামলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ লুণ্ঠন করে অন্তত সাড়ে তিনশত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, ঘরের ভেতরে থাকা হিন্দু পরিবারের সদস্যদের আগুন দিয়ে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করেছে।
পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে আংগারিয়া বাজারের দক্ষিণ দিকে খালের মধ্যে দিয়ে গরু নিয়ে খালের দক্ষিণ পাড়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় আ. ছামাদ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করে। এরপরই শুরু হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। কাশাভোগ, উত্তর দক্ষিণ মধ্যপাড়া, হিন্দুপাড়া, রুদ্রকর, নীলকান্দি, আংগারিয়া, ধানুকা, বর্তমান জেলা প্রশাসকের বাড়ি (জীবন পালের বাড়ি) পালং বাজার এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়ে বহুসংখ্যক মানুষকে পাখির মতো গুলি করে খুন করে। ধানুকা এলাকার শিক্ষক সম্ভুনাথ দাস মাস্টারের স্ত্রী ধানুকা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা সুমিত্রা রানী দাসকে গণধর্ষণ শেষে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখে, সুমিত্রা দাসের বাবা-মাকে বাড়ির উঠানের মধ্যে বেদম প্রহার করে অর্ধমৃত অবস্থায় রেখে গেলে কিছুদিনের মধ্যেই তারা মারা যান।
এদিকে শিক্ষিকা সুমিত্রা রানী দাসকে গণধর্ষণের পর ফেলে রেখে গেলে ৬ দিন পানি খেয়ে ধুঁকেধুঁকে মারা যান তিনি।
কুখ্যাত রাজাকার ইদ্রিস সরদার ও সোলেমান মোল্লার সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা মনোহরবাজারে ভজনিতাই সাহা এবং রমনী মোহন সাহার সাথী বিড়ি ফ্যাক্টরির মধ্যে থাকা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আত্মীয়স্বজন ৯ জনকে একসঙ্গে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। এ ছাড়া ভজনিতাই সাহার মেয়ে শোভা রানীর দেবর, ননদ-ননদীসহ আরো ৬ জনকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে অগ্নিসংযোগ করে হত্যা করে। ধানুকার পোদ্দার বাড়ির বিধবা বাইশ্যার মা জোৎস্না রানী (৭৫) এবং তার বিবাহিতা দুই মেয়ে কমলা রানী ও যমুনা রানীকে পাকিস্তানি সেনারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসব হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন কাজের সময় ছলেমান মোল্লা এবং তার সহযোগীরা কাছে থেকে উল্লাস এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করেছে।
কুখ্যাত রাজাকার ইদ্রিস সরদার ও সোলেমান মোল্লার নেতৃত্বে কাশাভোগ মধ্যপাড়া এলাকা থেকে ৫০-৬০ জন বিবাহিত-অবিবাহিত নারী এবং পুরুষকে ধরে নিয়ে যায় মাদারীপুর এ আর হাওলাদার জুট মিলে। সেখানে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন শেষে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মিলের পেছনের দিকে আঁড়িয়াল খাঁ নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছলেমান মোল্লার নেতৃত্বে¡
উল্লিখিত এলাকাগুলোতে কমপক্ষে সাড়ে তিনশত নারী-পুরুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে, প্রায় সাড়ে তিনশ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং সাড়ে তিনশ থেকে চারশ বাড়িঘর লুটপাট চালিয়ে এলাকাগুলোকে বিধ্বস্ত করেছিল। এ সময় যারা হত্যার শিকার হন তারা অধিকাংশ লোকজনই ছিলেন, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, গৌরনদী, কালকিনি, মাদারীপুর, রাজৈর থেকে আসা আত্মীয়স্বজন। যারা এই এলাকাকে নিরাপদ মনে করে এখানে পালাতে এসেছিলেন, তারা সবাই মারা গেছেন। একই সঙ্গে যাদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে এসেছিলেন তাঁরাও সবাই মারা গেছেন।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়েছে। একাত্তরের দুই ভয়ঙ্কর খুনি ঘুরে বেড়িয়েছে দাপটের সঙ্গে। শহীদ, নির্যাতনের শিকার মুক্তিপ্রাণ স্রোত এতদিন ডুকরে কেঁদেছে। না আর নয়। এবার সময় আমাদের।
বাঁ থেকে একাত্তরের ভয়ংকর খুনে নরপিশাচ সোলেমান মোল্লা ও ইদ্রিস সরদার
২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৫২
জগতারন বলেছেন:
কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের ফাঁসী চাই।
৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: ফাঁসি হয়ে গেছে।
জয় বাংলা!
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪১
জেন রসি বলেছেন: ফাঁসি চাই।