নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাধনার স্তম্ভ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০২

ইংরেজী ১৬০০ সালের দ্বিতীয় দশকে পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২) এই অভিযোগে অভিযুক্ত হন যে তাঁর বিজ্ঞান ও নানাবিধ প্রমাণ ধর্মীয় সত্য বলে পরিচিত বাণীগুলোর বিরোধিতা করে। গ্যালিলিও ১৬১৫তে গ্রান্ড ডাচেস ক্রিস্টিনা (Grand Dutches Christina of Tuscany) কে চিঠি লিখে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টিয় বিশ্বাসে তাঁর আস্থার কথা। [সূত্র:Letter to the Grand Duchess Christina of Tuscany, 1615 Click This Link তবু গীর্জার ও বাইবেলের অভিভাবক হিসাবে পাদ্রীরা এবং জাগতিক সব জ্ঞানের পুরোহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা সমস্বরে তাঁর বিরোধিতা করেন। তাদের কারও কারও উৎসুক চোখ গ্যালিলিও উদ্ভাবিত দূরবীন দিয়ে গ্রহ উপগ্রহের আবর্তন দেখল। অধিকাংশই সেই সত্য দেখার মতো যথেষ্ট উদার ও উৎসুক হলোনা। যারা সত্যকে দেখলেন এবং যারা স্বেচ্ছায় মিথ্যা আঁকড়ে ধরলেন তারা উভয়পক্ষই গ্যালিলিওর বিরোধিতায় সুদূঢ় রইলেন। হয়ত তারা ভাবছিলেন যে মহাজাগতিক সব সত্য নির্ভর করে সেই সত্যকে মানুষের স্বীকার করা বা না করার ওপর! অবশেষে অশেষ বিরোধিতায় বাধ্য গ্যালিলিও সুবোধ বালকের মতো বললেন যে, বরং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য সমেত বাকি জগত আবর্তিত হচ্ছে! অবশ্য এটা তার জানা ছিল যে পৃথিবীর সব মানুষ সত্যকে অস্বীকার করলেও সত্য সত্যই থাকে। সত্য কারও অনিচ্ছার বা অস্বীকারের কারনে মিথ্যা হয়না, কিঙবা মিথ্যাকে জোর করে সত্যে পরিণত করা যায় না- হয়ত সত্যকে সাময়িক সময়ের জন্য মানবচক্ষুর আড়াল করা যায়।

এ ঘটনার প্রায় তিশন বছর পর বিজ্ঞান জগতের আরো একজন সাধক অভিযুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনাটা খুব কম জানা একটা ঘটনা। তিনি বলেন যে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জন্মসূত্রে মানুষ অনেক গুনাবলী ( বা দোষ) অর্জন করে যা তার নিজের ইচ্ছা বা কাজের ওপর নির্ভরশীল নয়। অপ্রত্যাশিতভাবে এই মানুষটি ছিলেন একজন যাজক যিনি গির্জার দেয়া পয়সায় ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। সেখান থেকে ফিরে সেই গির্জারই অধীনস্ত বাগানে গবেষণা করেন যার ফলাফল ১৮৬৬ তে তিনি লিখিত রূপ দেন। ১৯০০ সাল পর্যন্ত তাঁর গবেষণা একপ্রকার মানবচক্ষুর আড়ালে ছিল। তারপর এটি প্রচারিত হলো। কেউ ভাবলেন, তা হতেও পারি ঠিক, কেউ বা বললেন, ভেবে দেখা যাক! আবার কেউ কেউ ঠোঁট উল্টে বললেন, যত সব বাজে কথা!

এভাবে দিনবছর বয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে কেউ কেউ তাঁর তত্ত্বে নয়, তাঁর বিশ্বাসে দোষ খুঁজে পেলেন। তারা বললেন যে যেহেতু তিনি ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তাই তাঁর বিজ্ঞান একটা ‘অপবিজ্ঞান’! কম্যুনিষ্ট নেতারা, বিশেষত যোসেফ স্টালিন, তাকে পরিত্যাগ করেন। তাঁর তত্ত্ব পড়াবার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এমনকি সমাজতান্ত্রিক চেক রিপাবলিকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তাঁর কাজ ছিল উপেক্ষিত কেবলমাত্র তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে [দ্রষ্টব্য, Scientific American, December-2002, Page-33]

মানুষটি ছিলেন যোহান ম্যান্ডেল (Johann Mendel, ১৮২২-১৮৮৪)। গ্রেগর ম্যান্ডেল নামে তিনি পরিচিত ও বিখ্যাত। উপরোল্লিখিত ঘটনা দুটি আমাদের উপলদ্ধি করতে সাহায্য করে যে যদি মিষ্টির দোকানে মিষ্টি কিনতে যাই তবে মিষ্টির গুণাবলীই আমদের বিবেচ্য হওয়া উচিত, মিষ্টি প্রস্তুতকারকের বিশ্বাস বা মতাদর্শ নয়। অনেক সময় আমরা সরে যাই সেই দৃশ্য থেকে যা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। মূলঘটনায় না গিয়ে অপ্রসঙ্গিক অ-ঘটনা বা কুÑঘটনাকে মুখ্য করে তুলি আমরা। আমাদের বিশ্বাস,এতে ভালো হবে ! কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করার মাঝে কিছুই ভালো নেই। তবে এ জাতীয় অস্বীকৃতি যে পরিণতিতে পরিত্যক্ত হয় তার প্রমাণ অতীতের এ দুটি ঘটনা। এখানে দেখা যাচ্ছে দুজন ব্যক্তি মানুষের অশেষ সাধনায় অর্জিত জ্ঞানই সঠিক ছিল যেখানে তাদের নিজ সময়ের বিরোধীরা সংখ্যায় ছিলেন অসংখ্য। সাধনার মূল্য এইখানে যে সমস্ত জগত তাদেরকে বিমুখ করলেও মহাকাল তাদেরকে দিয়েছে মহিমা ও স্বীকৃতি।

তারা যে সিদ্ধি অর্জন করেছেন তা নিজ কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতার কারনে। কোন কাজের প্রতি একজন মানুষ একনিষ্ঠ এর অর্থ হচ্ছে এই বিশেষ মানুষটি তার কাজে ঠিক ভাবে এগিয়ে চলেছেন যথাযথ অভ্যাস, অর্জন ও কাজের মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, একাগ্রতা হচ্ছে নিজ কাজের প্রতি অক্লান্ত ও অখন্ড মনযোগ। এ প্রসঙ্গে, চার্লস গুডিয়ার (ঈযধৎষবং এড়ড়ফুবধৎ,. ১৮০০-১৮৬০) উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি প্রথম রাবার প্রস্তুত করেন। তিনি তাঁর সমস্ত দিন এর পিছনে লেগে থাকেন। তাঁর ভাই এ জাতীয় একটা কারখানায় কাজ করতেন বলে সেখানেও তিনি সাহায্যের আশায় যান এবং ব্যর্থ হন। গবেষণায় অখন্ড মনেযোগ দেয়ার জন্য তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। অভাব অনটনে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা তাকে ত্যাগ করেন। গবেষণা চালাবার জন্য তিনি তাঁর সমস্ত বিষয় সম্পত্তি বন্ধক রাখেন। পরিণতিতে গুডিয়ার ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের সমান ঋণ রেখে মারা যান। অবশ্য মৃত্যুর আগে তিনি সফল হন যদিও সেখান থেকে কোন কিছু তিনি আয় করতে পারেননি।

এ হলো উদ্ভাবক উদ্ঘাটক আবিস্কারক আর বিজ্ঞানীদের কথা। তবে মানুষের সকল কাজে এবং পেশায় সাধক মানুষের যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে। তাদের কথা একারনে আলোচনা করা গেলো না যে সব সত্যকে পর্যবেক্ষণমূলক তথ্য দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া বেশিরভাগ সময় এই সত্যগুলো, যেমন শৈল্পিক কিংবা দার্শনিক সত্য সার্বজনীন নয়। একজন দার্শনিক (বা শিল্পী) যেটাকে সত্য বলছেন অপর যে কোন মানুষ এবং দার্শনিক (বা শিল্পী) ভিন্ন সত্য দেখিয়ে সেটাকে অস্বীকার করতে পারেন। অপরপক্ষে বিজ্ঞানের যে কোন সত্য অপর কোন বিজ্ঞানী তো বটেই এমনকি যে কোন সাধারণ মানুষও একই প্রক্রিয়ায় সমানভাবে উপলদ্ধি করতে পারবেন। একারনে জ্ঞান-বিশ্বে বিজ্ঞান পেয়েছে রাজ-মুকুট ও রাজার আসন।

শিল্পকলা বা দর্শন বা জ্ঞানের অন্য অনেক শাখাকে বিজ্ঞানের মতো সার্বজনীন জ্ঞানে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। অবশ্য সে কারণে জ্ঞানের আর সব শাখা তাদের কার্যকারিতা হারায়নি। এতে এপথের যারা সাধক তাদের মহিমাও বিনষ্ট হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় মহাকালে সাধনার জয়, সফলতার নয়। সাফল্যের ঝোঁকে প্রায়শ আমাদের ধ্যান টুটে যায়, আমরা সাধনা ও সত্যের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ি। বেছে নিই সহজ প্রাপ্তির পথ। কিন্তু এ সত্য ধ্রুব যে যথার্থ সাধনা কোন প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে না। তার আশা স্রেফ সত্যের উদ্ঘাটন, জ্ঞানের মুক্তি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৭

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
কিন্তু এ সত্য ধ্রুব যে যথার্থ সাধনা কোন প্রাপ্তির প্রত্যাশা
করে না। তার আশা স্রেফ সত্যের উদ্ঘাটন, জ্ঞানের মুক্তি।



অনেক ভালোলাগা রইল সুন্দর লেখাটির জন্য ! ++

ভালো থাকুন সব সময় ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৯

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় পাঠক, আপনার মতামত ও শুভ কামনার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.