নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার করের টাকা গেল কোথায়?

১০ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৪৭

[ এই লেখাটা ৮/১০ বছর আগে এই ব্লগে পোস্ট করা হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় তা কিছুটা পরিমার্জন করে আবার পোস্ট করা হলো । ]

আমি একজন ছোটখাট ও সামান্য চাকুরে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার চাকরীটা সরকারী নয়। এ চাকরীতে কোন ধরনের উপরি, পেনশন বা রিটায়ার্ডমেন্ট বেনিফিট নেই। তারপরও আমাকে বেতন দেয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটি ইনকাম ট্যাক্স কেটে রাখে। অনেক সময় তারা বেশি ট্যাক্স কাটে। আমি ও আমার মতো আরও অনেকে বলেন, ভাই ট্যাক্সটা একটু কম করে কাটেন। বছরে যদি কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে পারি তাতেও তো কিছু ট্যাক্স কমে। অফিসের ফাইন্যান্স কন্ট্রোলার আমাদের কথা শোনেন না। তিনি বলেন, এ বছর একটু বেশি দিলে আগামী বছর সেটা এডজাস্ট করতে পারবেন। কর বা রাজস্ব ভবনে যারা গেছেন তারা জানেন যে তাতে খরচ আরো বাড়ে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের ঘুষ না দিয়ে অনেক সময় ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নও জমা দেয় যায় না। বেশি কেটে নেয়া ট্যাক্স এডজাস্টের স্বপ্ন তাই আমার মতো আদার ব্যাপারী দেখে না ।

আমার থেকে বেশি আয়ের মানুষ বাংলাদেশে অগণিত, কিন্তু আমার আয়ের থেকে কম আয়ের মানুষও কম নয়। সান্ত¦না পেতাম যদি দেখতাম আমার করের টাকায় গরীব মানুষের ভালো কিছু হচ্ছে।

শহরের যে এলাকায় আমি থাকি সেখানে একটু বৃষ্টি হলে সব একাকার। রাস্তাঘাট এবড়ো থেবড়ো ভাঙাচোরা। ডাস্টবিনের ময়লা পারলে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। মশার উৎপাতও অপরিসীম। বছরে দু’একবার গ্রামের বাড়ি যাই তাতেও কষ্ট। রাস্তা ভাঙা। বিনা মূল্যের ঝাকি খেতে খেতে কোমর ব্যথা। বাড়তি পাওনা হিসাবে আছে হঠাৎ হঠাৎ ডাকাতের দায়ের কোপ। পুলিশের টিকিটাও তখন খুঁজে পাওয়া দায়। ওদিকে সরকারী হাসপাতাল ওষুধ শূন্য। ডাক্তার বলেন, এর বেশি কিছু বলার সময় নেই; চেম্বারে আসেন।

গ্রামের বাড়ির পাশ দিয়ে এক সময় যে নদী বয়ে যেত তা খননের অভাবে অর্ধমৃত। প্রতি বর্ষায় বন্যার ফ্রি পানি সহ মাছ চলে আসে বিনা পয়সায়। ওদিকে আমার ভাই বিদেশে শ্রম দিতে গিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে পায় না কোন সুবিধা। আমার দুলাভাই পঁচছে থাইল্যান্ডের কারাগারে, ভ্রæক্ষেপ করার কেউ নেই।

শহরে ফিরেও শান্তি নেই। বাচ্চার সরকারী স্কুলে লেখা-পড়ার অবস্থা শোচনীয়। মাস্টারের কাছে কোচিং না করলে, জ্ঞান চুলোয় যাক, পরের ক্লাসে ওঠা দায়! বছর বছর ২০, ২৫ বা ৫০ হাজার বা লাখ টাকা ট্যাক্স কাটা যাচ্ছে আমার সারা বছরের আয় থেকে কিন্তু তাতে কি সুবিধা আমি পেয়েছি? একটা টাকার সরকারী ওষুধ ( বর্তমানে এক টাকায় কোনো ওষুধ পাওয় যায় কিনা আমার জানা নেই) কী অন্য কোনো নাগরিক সুবিধা কিচ্ছু পায়নি।

তাহলে আমার এত এত ট্যাক্সের টাকা গেল কোথায়? তা কি কারও পকেটে নাকি কারও পেটে তা জানি না। নাকি সে টাকা পাচার হয়ে গেছে ? বাহে, কুন্ঠে সবাই? আমার দেয়া করের টাকার কোনো হিসাব আমার জানা নেই - সরকার কী কাজে কোথায় তা ব্যবহার করলো। আপনারা যারা কর দেন তারা যদি আপনাদের দেয়া করের টাকার হিসাব জানেন তা জানতে পারলেও অনেক ভালো লাগবে।

সব শেষে বলতে চাই, কর দেয়া যেমন নাগরিকের দায়িত্ব, জনগণের কাছে করের হিসাব দেয়াও সরকারে দায়িত্ব। এ বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপের কথা এখনও শুনিনি। কিন্তু কর না দিলে কী হবে তা পত্রিকার পাতায় দেখা যাচ্ছে। দৈনিক প্রথম আলো জানাচ্ছে যে ‘শূন্য’ রিটার্ন দিলে ৫ বছর পর্যন্ত জেল: এনবিআর (লিঙ্ক Click This Link) । এখানে বলা হচ্ছে, "সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলেছে, করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন না করে এর কোনো একটি শূন্য অথবা সব কটি তথ্য শূন্য হিসেবে প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।" নিবন্ধটিতে আরও বলা হচ্ছে, "এনবিআর বলেছে, সব করদাতা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আয়কর রিটার্নে প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন করে দেশের উন্নয়নে গর্বিত অংশীদার হবেন।" দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে শ্রদ্ধাশীল প্রত্যেক নাগরিক 'দেশের উন্নয়নে গর্বিত অংশীদার' হতে চান। কিন্তু নাগরিকদের দেয়া সেই করের টাকা কিভাবে খরচ হবে বা হচ্ছে তা জানার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বা এনবিআর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা জনগণ কবে জানতে পারবে? বা আদৌ কি জানতে পারবে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩

ধুলো মেঘ বলেছেন: আপনার ট্যাক্সের ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু বানানো হয়েছে, ৩৯ হাজার কোটি টাকায় তাতে রেল সংযোগ করা হয়েছে, মেট্রো রেলের প্রথম প্রকল্প এমআরটি-৬ বানাতে খরচ লেগেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা - এরকম আরো পাঁচটি মেট্রোরেল বানানোর পরিকল্পনা সরকারের আছে, তার মধ্যে দুটির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানাতে ইতিমধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, আরো ১১ হাজার কোটি টাকার কাজ বাকি আছে। গাজীপুর-এয়ারপোর্ট রোডে বিআরটি প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে - আরো ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ বাকি আছে।

এছাড়াও যে মেগা প্রকল্পগুলো পাইপ লাইনে আছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আপনার মত ১০০ জনের ট্যাক্সের টাকাও পকেট থেকে বের করার আগেই গায়েব হয়ে যাবে।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সবারই সঠিকভাবে ট্যাক্স দেওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.