নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্রিজা

অথই জলে খুঁজে বেড়াই পূর্ণিমারই চাঁদ।

আদ্রিজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কিছু কবিতা -১

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:২২

পাহাড় চূড়ায়

................সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।

... কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।

... যদি তার দেখা পেতাম,

দামের জন্য আটকাতো না।

আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,

সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।

কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী।

পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।

তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই

কিনতাম।

কারণ, আমি ঠকতে চাই।



নদীটাও অবশ্য কিনেছিলামি একটা দ্বীপের বদলে।

ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো,

ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।

সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।

শৈশবে দ্বীপটি ছিল আমার বড় প্রিয়।

আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার

কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।

বন্ধুরা বললো, ঐটুকু

একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড়

একটা নদী পেয়েছিস?

খুব জিতেছিস তো মাইরি!

তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।

তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।

নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।

যেমন, বলো তো, আজ

সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?

সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।

শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি,

সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!

আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না,

সে জানতো! সবাই জানে।

শৈশবে আর ফেরা যায় না।



এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।

সেই পাহাড়ের পায়ের

কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ

কঠিন পাহাড়।

একেবারে চূড়ায়, মাথার

খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,

চরাচরে তীব্র নির্জনতা।

আমার কন্ঠস্বর সেখানে কেউ

শুনতে পাবে না।

আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,

প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-

এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।

এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।

হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।

আমাকে ক্ষমা করো









দুঃখ করো না, বাঁচো

.......নির্মলেন্দু গুণ



দুঃখকে স্বীকার করো না, –সর্বনাশ হয়ে যাবে ।

দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ ভ’রে বাঁচো ।

বাঁচার আনন্দে বাঁচো । বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো ।

জানি মাঝে-মাঝেই তোমার দিকে হাত বাড়ায় দুঃখ,

তার কালো লোমশ হাত প্রায়ই তোমার বুক ভেদ করে

চলে যেতে চায়, তা যাক, তোমার বক্ষ যদি দুঃখের

নখরাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়; যদি গলগল করে রক্ত ঝরে,

তবু দুঃখের হাতকে তুমি প্রশ্রয় দিও না মুহূর্তের তরে ।

তার সাথে করমর্দন করো না, তাকে প্রত্যাখান করো ।



অনুশোচনা হচ্ছে পাপ, দুঃখের এক নিপুণ ছদ্মবেশ ।

তোমাকে বাঁচাতে পারে আনন্দ । তুমি তার হাত ধরো,

তার হাত ধরে নাচো, গাও, বাঁচো, ফুর্তি করো ।

দুঃখকে স্বীকার করো না, মরে যাবে, ঠিক মরে যাবে ।



যদি মরতেই হয় আনন্দের হাত ধ’রে মরো ।

বলো, দুঃখ নয়, আনন্দের মধ্যেই আমার জন্ম,

আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্যু, আমার অবসান













আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে

....................................... রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ



আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,

আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।



ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।

তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।



পুষে রাখে যেমন কুসুম, খোলসের আবরণে মুক্তোর ঘুম।

তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।



ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।

দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।







আকাঙ্খা

......আবুল হাসান



তুমি কি আমার আকাশ হবে?

মেঘ হয়ে যাকে সাজাব

আমার মনের মত করে ।



তুমি কি আমার নদী হবে?

যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে

তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।



তুমি কি আমার জোছনা হবে?

যার মায়াজালে বিভোর হয়ে

নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।



তুমি কি আমার কবর হবে?

যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে

বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।









তোমার কথা

..........দাউদ হায়দার



মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি

আকাশে জমেছে মেঘ, বাতাসে বৃষ্টির গান

রাত্তির বড় দীর্ঘ; কিছুতেই

ঘুম আর আসছে না । একবার এপাশ, একবার ওপাশ, আর

বিশ্বচরাচর জুড়ে… নিথির স্তব্ধতা ।

মাঝে মাঝে মনে হয়

অসীম শূন্যের ভেতর উড়ে যাই ।

মেঘের মতন ভেসে ভেসে, একবার

বাংলাদেশে ঘুরে আসি ।

মনে হয়, মনুমেন্টের চূড়ায় উঠে

চিৎকার ক’রে

আকাশ ফাটিয়ে বলি;

দেখো, সীমান্তে ওইপাশে আমার ঘর

এইখানে আমি একা, ভীনদেশী







মৃত্যুদন্ড

-শামসুর রাহমান



বেকসুর আমি তবু আমাকেই মৃত্যুদন্ড দিলে!

কী করে তোমার কাছে অপরাধী, এখনও জানি না;

কস্মিনকালেও আমি শত্রুতা সাধিনি, শুধু বীনা,

অলৌকিক, প্রেমময়, বাজিয়েছি। সেই সুরে ছিলে

মিশে তুমি বসন্তের পাতার গভীরে, শান্ত ঝিলে,

শস্যক্ষেতে নীলিমায়। এই কি আমার অপরাধ?

আমার সর্বস্ব দিয়ে রাত্রিদিন একটি নিখাদ

প্রেমস্বপ্ন গড়ি, তা-ও ভেঙ্গে যায় কী কর্কশ ঢিলে।



আমাকে পাঠালে নির্বাসনে, দিলে দন্ড ভয়ংকর।

তোমার সান্নিধ্য থেকে, অমন দৃষ্টির থেকে দূরে,

বহুদুরে চকিতে সরিয়ে দিলে- এই শাস্তি, বলো,

মৃতের চেয়েও বেশি, ঢের বেশি নয় কি কঠোর?

তুমি কি দেখতে চাও সর্বদা আমার ছলছল চোখ?

চাও আমার হৃদয় খাক কীট কুরে-কুরে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.