![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১)প্রেমিক
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!প্রেমিক
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি
২)বৃষ্টি ভেজা বাংলা ভাষা
কে মেয়েটি হঠাৎ প্রণাম করতে এলে ?
মাথার ওপর হাত রাখিনি
তোমার চেয়েও সসংকোচে এগিয়ে গেছি
তোমায় ফেলে
ময়লা চটি, ঘামের গন্ধ নোংরা গায়ে,
হলভরা লোক, সবাই দেখছে তার মধ্যেও
হাত রেখেছ আমার পায়ে
আজকে আমি বাড়ি ফিরেও স্নান করিনি
স্পর্শটুকু রাখব বলে
তোমার হাতের মুঠোয় ভরা পুস্করিণী
পরিবর্তে কী দেব আর ? আমার শুধু
দু’ চার পাতা লিখতে আসা
সর্বনাশের এপার ওপার দেখা যায় না
কিন্তু আমি দেখতে পেলাম, রাঙা আলোয়
দাঁড়িয়ে আছে সে-ছন্দ, সে-কীর্তিনাশা ।
অচেনা ওই মেয়ের চোখে যে পাঠাল
দু’-এক পলক বৃষ্টিভেজা বাংলা ভাষা ।
৩)আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে
তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবো
একদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক
গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল
রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই
এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন
আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত
কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায়
একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক
জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ
অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক
রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ
আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে
শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন
একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম
একদিন পা তুলেছিলাম
একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম
একদিন সাবান মেখেছিলাম
একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকে
একদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা
একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই
একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল
একদিন দোদোমা ফাটিয়েছিলাম, একদিন চকলেট
একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও
একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম
একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন
কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার…
একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা
আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল
আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ
হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য—
একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস
তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য—
আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল
আমার দুটো চোখ
এ নদী থেকে ও নদী থেকে সেই সে নদীতে
কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা
সেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো
একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর
যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে
ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে
এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা,
টেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসী
একদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু
তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু
আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো
কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্
একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে
ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম
বাজেট
একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম
কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
একদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায়
জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে
হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখ
একদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায়
রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায়
আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোক
একদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে
সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর
লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে
পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম
উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম,
মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম
ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে
পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে
এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায়
মারো মারো মারো
স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা
মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ও
এইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যবহার করা দরকার
যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি
এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার
যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর
দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে
এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার
যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে
এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময়
নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদের
হাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে
ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও
একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে
পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে
এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে
‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে
পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে
আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ
আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ
একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি
মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ?
যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত
কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে
আমি শুধু বলবো একটি কণা,
বলবো, বালির একটি কণা থেকে আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম
লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু
কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে
আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর
কিচ্ছু জানি না……
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্ ব্যূহ কোন্ অন্ধকুপ
রাষ্টের কোন্ কোন্ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে
বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক
কাপ
তুমি মাথা দিয়ে ঢুঁসিয়েছো কোন্ হোর্ডিং কোন্ বিজ্ঞাপন কোন্ ফ্লাইওভার
তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্ হরিণ
তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্
মরাল
তাহলে আমি বলবো
মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর
আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি
হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি
লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো :
তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম
তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ
তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত
তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স
তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ
তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে
তুমি চণ্ডাল না মোছরমান
তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলা
তা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে
শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে
চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে
দেখেছিলাম
এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার
কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে
আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন
দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড়
এই
সময় গর্ভে……
আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ
আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময়
অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায়
মাছ
আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে
জলস্তম্ভ
আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত
মেঘপুঞ্জ
আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি
যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে
এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে
যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার
সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে
দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা……
এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো না
৪)স্নান
সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার -
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …
জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।
আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?
শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।
দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত -
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।
৫)হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে
অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনিবলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়েরসানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
–’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।
৬) আমরা তো অল্পে খুশি
আমরা তো অল্পে খুশি,
কী হবে দু : খ করে?
আমাদের দিন চলে যায়
সাধারণ ভাতকাপড়ে।
চলে যায় দিন আমাদের
অসুখে ধারদেনাতে
রাত্তিরে দুভায়ে মিলে
টান দিই গঞ্জিকাতে।
সবদিন হয়না বাজার,
হলে হয় মাত্রাছাড়া -
বাড়িতে ফেরার পথে
কিনে আনি গোলাপচারা।
কিন্তু পুঁতব কোথায়?
ফুল কি হবেই তাতে?
সে অনেক পরের কথা
টান দিই গঞ্জিকাতে।
আমরা তো অল্পে খুশি,
কী হবে দু : খ করে?
আমাদের দিন চলে যায়
সাধারণ ভাতকাপড়ে।
মাঝে মাঝে চলেও না দিন
বাড়ি ফিরি দুপুররাতে ;
খেতে বসে রাগ চড়ে যায়
নুন নেই ঠান্ডা ভাতে।
রাগ চড়ে মাথায় আমার
আমি তার মাথায় চড়ি,
বাপব্যাটা দুভায়ে মিলে
সারা পাড়া মাথায় করি।
করি তো কার তাতে কী?
আমরা তো সামান্য লোক।
আমাদের ভাতের পাতে
লবণের ব্যবস্থা হোক।
৭)প্রীতি
ও প্রীতি,
দীর্ঘ ঈ, হস্ব্র ই-কারের ডানা
দুদিকে অর্ধেক মোড়া
চিঠিতে বসেছ, নিতে
বলেছ। নেবো না।
ডানা মেলে উড়ে যাও, প্রীতি
দূরে দীর্ঘ ঐ জল
পার হয়েএকপিঠ ডাঙা
ঐ যে উঠেছে,
চর
জানা বা অজানা
কত সব পরিবার
ঘর ছাইবে, ঘর ছাইল,
যাও,
ঐ চরে গিয়ে নামো,
হাত লাগাও
বসতির কাজে,
আমিও তোমার পিছে উড়ে যাই
সকলের সঙ্গে গিয়ে বসি
পুরোনো পাড়ার লোক দেখে যাই বসে-বসে
আলিঙ্গন, আলিঙ্গন,
আজ একাদশী,
এখন বন্যার জল নেমে গেছে,
ছেলেরা কাঠাম তুলছে জল থেকে
ঝাঁপাঝাঁপি
নদীপাড় পোহাচ্ছে রোদ্দুর,
খালাসীর কড়াইতে ছ্যাঁকছোঁক শুকনো লঙ্কা
শুকনো কাশি, ঝাল তরকারি
ভাঙা আস্ত দুটো লঞ্চ
গায়ে লেখা লম্বা নাম
“দুর্গতিনাশিনী’ আর “জয় মা অভয়া’ …
মা ভেসে গেছেন কালকে, শুভ নমস্কার,
প্রীতি,
হ্যা, শুভ বিজয়া!
৮) যে-ছাত্রীটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে
কী বুঝেছে সে-মেয়েটি ?
সে বুঝেছে রাজুমামা মায়ের প্রেমিক।
কী শুনেছে সে-মেয়েটি ?
সে শুনেছে মায়ের শীৎকার।
কী পেয়েছে সে-মেয়েটি ? ___ সে পেয়েছে জন্মদিন ?
চুড়িদার, আলুকাবলি ___ কু-ইঙ্গিত মামাতো দাদার।
সে খুঁজেছে ক্লাসনোট, সাজেশন ___
সে ঠেলেছে বইয়ের পাহাড়
পরীক্ষা, পরীক্ষা সামনে ___ দিনে পড়া, রাতে পড়া ___
ও পাশের ঘর অন্ধকার
অন্ধকারে সে শুনেছে চাপা ঝগড়া, দাঁত নখ,
ছিন্ন ভিন্ন মা আর বাবার।
৯) শাসকের প্রতি
আপনি যা বলবেন আমি ঠিক তা-ই করব, তা-ই শুনব, তা-ই খাব,
তা-ই গায়ে পরে মাঠে চলে যাব।
আমি নিজের জমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাব
কথাটি না-বলে।
বলবেন গলায় দড়ি দিয়ে
ঝুলে থাকো সারারাত। তা-ই থাকব। শুধু
পরদিন যখন বলবেন, এইবার নেমে এসো
তখন কিন্তু লোক লাগবে আমাকে নামাতে
একা একা নামতে পারব না।
এটুকু পরিনি বলে অপরাধ নেবেন না যেন!
১০) বিবাহিতাকে
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।
১১) বলি
অনামিকা কই? কাজল কোনদিকে গেল?
সায়ন কোথায়?
পিছনে তাকিয়ে দেখি সঙ্গে কেউ নেই
প্রান্তরের মধ্যে এক যূপকাষ্ঠ—অর্ধেক প্রোথিত—
ধারে কাছে কোনও ধড় নেই
মুণ্ডুরা উধাও |
ধুলোয় শোওয়ানো আছে খাঁড়া |
চেনে চেনে লাগে বড় |
ইতি পূর্বে দেখা হয়েছে কি?
সত্তর – একাত্তর – বাহাত্তর সালে
এঁদের দেখেছি বটে |
তারপর কি কোখাও দেখিনি?
হ্যাঁ মনে পড়েছে |
লালাবাজারে এই খাঁড়া ঝোলানো রয়েছে |
যূপকাষ্ঠ আছে মহাকরণের বুদ্ধিঘরে
১২) সোজা কথা
গুলি লেগে পড়ে গেল |
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ |
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো |
বলো— ‘না, তুলবি না—’
বলো— ‘যা সরে যা বলছি—’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো |যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা |
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো
১৩)মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
বেশ, বলতে পরি
ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো
ফুলপিসিমার বাড়ি
গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন
তখন মানে ? কবে ?
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে
ছাদের থেকে হাতছানি দিতো
ক্যারাম খেলবি ? … আয় …
সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায়
সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয়
হ্যা,ঁ জোচ্চুরি হতো
আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত
ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে
জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে
শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল
ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল
এই এখানে … না ওখানে ..
এই এইটা না ঐটা
ঝাঁপিয়ে পরে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা
ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরন
প্রথম মরা মানে ?
বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে
চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায়
কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায়
খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক
কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুরে খাক
খাক হোয়া সেই কলশি আবার পরের বছর জলে …
ভরল কেমন তোমায় ? …
ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? …
আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই
সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই
দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে
ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে
আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি
মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি
১৪)জলহাওয়ার লেখা
স্নেহসবুজ দিন
তোমার কাছে ঋণ
বৃষ্টিভেজা ভোর
মুখ দেখেছি তোর
মুখের পাশে আলো
ও মেয়ে তুই ভালো
আলোর পাশে আকাশ
আমার দিকে তাকা–
তাকাই যদি চোখ
একটি দীঘি হোক
যে-দীঘি জ্যোৎস্নায়
হরিণ হয়ে যায়
হরিণদের কথা
জানুক নীরবতা–
নীরব কোথায় থাকে
জলের বাঁকে বাঁকে
জলের দোষ? — নাতো!
হাওয়ায় হাত পাতো!
হাওয়ার খেলা? সেকি!
মাটির থেকে দেখি!
মাটিরই গুণ? — হবে!
কাছে আসুক তবে!
কাছে কোথায়? — দূর!
নদী সমুদ্দুর
সমুদ্র তো নোনা
ছুঁয়েও দেখবো না
ছুঁতে পারিস নদী–
শুকিয়ে যায় যদি?
শুকিয়ে গেলে বালি
বালিতে জল ঢালি
সেই জলের ধারা
ভাসিয়ে নেবে পাড়া
পাড়ার পরে গ্রাম
বেড়াতে গেছিলাম
গ্রামের কাছে কাছে
নদীই শুইয়ে আছে
নদীর নিচে সোনা
ঝিকোয় বালুকণা
সোনা খুঁজতে এসে
ডুবে মরবি শেষে
বেশ, ডুবিয়ে দিক
ভেসে উঠবো ঠিক
ভেসে কোথায় যাবো?
নতুন ডানা পাবো
নামটি দেবো তার
সোনার ধান, আর
বলবোঃ শোন, এই
কষ্ট দিতে নেই
আছে নতুন হাওয়া
তোমার কাছে যাওয়া
আরো সহজ হবে
কত সহজ হবে
ভালোবাসবে তবে? বলো
কবে ভালোবাসবে?
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪১
আদ্রিজা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫০
এক্সপেরিয়া বলেছেন: ভালই.,
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২২
আদ্রিজা বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৪
তাসজিদ বলেছেন: welcome to somwhere blog.
কবিতায় +++++++++++++