নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রয়োজনে যে বেয়াদপ হতে পারে, ভদ্রতা পাওয়ার অধিকার শুধু তাই।

অদ্বিত

পরাজয়ে ডরে না বীর।

অদ্বিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী স্বর্ণযুগ

০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৫

মধ্যযুগে ইউরোপ যখন কুুসংস্কার ও জ্ঞানের অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তখন মধ্যপ্রাচ্যে জ্ঞানের মাশাল দাউদাউ করে জ্বলছিল। 622 সাল থেকে 1258 সাল পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় ইসলামী স্বর্ণযুগ ( The Golden Age Of Islam )। এই যুগে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী শহর বাগদাদ, কায়রো ও কর্ডো‌বা পরিণত হয় গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বাণিজ্য ও শিক্ষার বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্রে।

ঐ সময় মুসলিমরা জ্ঞানের সন্ধানে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। গণিতের দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ( 1 - 10 ) ও শূণ্য (0) ভারতে আবিস্কার হলেও আরবদের মাধ্যমেই ইউরোপে ও সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভিন্ন ধর্মীয় মতের প্রতি যে সহিষ্ণুতা ছিল তা আজ আর দেখা যায় না। গ্রীক দর্শন, গ্রীক বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা আরবে সেইরকম প্রভাব বিস্তার করে। ভিন্ন দর্শন, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব থেকে ইসলামের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে গিয়েই ইসলামী স্বর্ণযুগের পতন ঘটে। যাই হোক, আরবীয়রা বিভিন্ন দেশ ( গ্রীস, ভারত, পারস্য, চীন, মিশর ) থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের বই সংগ্রহ করে সেগুলো আরবীতে অনুবাদ করে ফেলে। তৎকালিন ইসলামি সাম্রাজ্য জ্ঞানী-পন্ডিতদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষক ছিল। সকল খরচ রাষ্ট্র বহন করতো।
গণিতবিদ আল খাওয়ারেজমি তাঁর গ্রন্থ "আল জাবর আল মুকাবিলা" গ্রন্থটি খলিফা মামুনকে উৎসর্গ করেন। এই বই থেকে Algebra ( বীজগণিত ) শব্দটা এসেছে। এ বই থেকে ইউরোপে বীজগণিতের প্রচলন ঘটে। জ্যোতির্বিদ আহমদ আল ফারগানি টলেমির পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণার উপর একটা বই লিখেন। তখনকার কিছু বিজ্ঞানীদের জীবনী আলোচনা করা যাক।

আল বাত্তানীঃ
আরবের জ্যোতির্বিদ আল বাত্তানী। পুরো নাম হল মুহাম্মদ ইবনে জাবির ইবনে সিনান আল রাক্কি আল হারানী আস সাবী আল-বাত্তানী। এত বড় নাম কিভাবে মনে রাখত, চিন্তার বিষয়। আল বাত্তানীর মেসোপটেমিয়ার হাররান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন যেটি এখন তুরস্কতে অবস্থিত। আল বাত্তানীই প্রথম নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়েছিলেন যে, এক সৌর বৎসরে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড হয় যার সাথে আধুনিক পরিমাপের পার্থক্য মাত্র ২ মিনিট ২২ সেকেন্ড কম। জ্যোতির্বিজ্ঞানে টলেমির আগের কিছু বৈজ্ঞানিকের ভুলও তিনি সংশোধন করে দেন। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সম্পর্কিত টলেমি যে মতবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, আল বাত্তানি তা ভুল প্রমাণ করে নতুন প্রামাণিক তথ্য প্রদান করেন। ৫৭ অধ্যায় সংবলিত তার লেখা ‘আল-জিজ আল-সাবি’ একটি অসাধারণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সংকলন যা ষোড়শ শতকে ‘ডি মটু স্টেলারাম’ নামে ল্যাটিনে অনূদিত হয়। তিনি বেশ কিছু ত্রিকোণমিতিক সম্পর্কও উদ্ভাবন করেন।


আল বিরুনীঃ
আরবের আরেকজন জ্যোতির্বিদ আল বিরুনী। পুরো নাম আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি। তিনি 973 সালে এক ইরানী পরিবারে জন্ম নেন। তিনি গাজনি শাহী দরবারে সম্ভবত রাজ জ্যোতির্বিদ হিসেবে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি কয়েকবার সুলতান মাহমুদের সাথে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমন করে ছিলেন। গজনির সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ভারতে প্রায় ১২ বছর অবস্থান করেন। এখানে সংস্কৃত ভাষা শেখেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ কানুন মাসুউদী। গ্রন্থটির প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডে জ্যোতির্বিজ্ঞান, তৃতীয় খন্ডে ত্রিকোণমিতি। তিনিই সর্বপ্রথম অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেন। পৃথিবীর পরিধি ও ব্যাসার্ধ নির্ণয় করেন। বইয়ের সপ্তম খন্ডে চন্দ্রের গতি প্রকৃতি, কলা পররিবর্তন; অষ্টম খন্ডে চন্দ্রের দৃশ্যমান ও গ্রহণ; নবম খন্ডে স্থির নক্ষত্র দশম খন্ডে পাঁচটি গ্রহ নিয়ে আলোচনা করেন। একাদশ খন্ডে জ্যোতিষ নিয়ে আলোচনা করে প্রমাণ করেন এত জ্ঞানী হওয়ার পরেও কুুসংস্কারের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি।


আল হাজেনঃ আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলী আল-হাসান ইবনে আলী-হাসান ইবন আল হাইসাম। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি আল হাজেন নামে পরিচিত। তিনি একইসাথে জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতববিদ, দার্শনিক। একসময় দুনিয়া ভাবত আমাদের চোখ থেকে আলো বের হয়ে কোন বস্তুতে পড়লে আমরা বস্তুটা দেখি। আল হাজেন প্রথম বুঝতে পারেন বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়লে আমরা দেখি। তিনি আবিস্কার করেন আলো সরলরেখায় চলে এবং পিনহোল ক্যামেরার তত্ত্ব দেন। তাঁর বিখ্যাত বই "Book of optics"। তিনি নিউটনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়ে যান। গণিতে আল হাজেন কাজ করেছেন কণিক, সংখ্যাতত্ত্ব আর বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতি নিয়ে। তিনি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করেছেন। তিনি পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগতে বিশ্বাস করতেন। তাঁর সম্মানে গ্রহানুপিন্ড 59239 এর নামকরণ করা হয় আল হাজেন।


টলেমির সৌরজগতের মডেল ছিল ভূকেন্দ্রিক। অর্থাৎ তার মডেল অনুসারে, পৃথিবী হল সৌরজগতের কেন্দ্র ( সূর্য নয় ) এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, অন্য গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি আবর্তিত হচ্ছে।
আরবের সব বিজ্ঞানী টলেমির দেখানো পথেই হেটেছে। টলেমির মডেলে অনেক সমস্যা ছিল। রাতের আকাশে কিছু গ্রহের উল্ট গতি দেখা যায়। এর কারণ, গ্রহসমূহের মধ্যকার আপেক্ষিক বেগ। মুসলিম বিজ্ঞানীরা আকাশে গ্রহদের এই উল্টো গতি ব্যাখ্যা করার জন্য টলেমীর মডেল অনেক সংশোধন করেছিলেন। কিন্তু কোন মুসলিম বিজ্ঞানীর মাথায় আসে নাই যে, সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্র।
যদিও জাকির নায়েক দাবী করে যে, কোরআনে নাকি সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র বলা আছে। তাই যদি হত, তবে ইসলামী স্বর্ণযুগে একজন মুসলিম বিজ্ঞানীও কেন সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের কথা বললেন না ? জাকির চাচা তো তৎকালীন মুসলিম বিজ্ঞানীদের চেয়ে কোরআন বেশী বুঝে, এজন্যই বিজ্ঞানী হতে পারেন নাই।
কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মডেল দেখলে মুসলিম বিজ্ঞানীরা অজ্ঞান হয়ে যেত। ইবনে মুয়াজ আল-জাইয়্যানি হলেন অন্যতম ইসলামিক একজন গণিতবিদ যিনি সাইনের সূত্র আবিষ্কারের জন্য খ্যাত। দশম শতকে আব্দুর রহমান সুফি টলেমির নক্ষত্র তালিকা সংশোধন করেন। এই সংশোধনে কোন নতুন নক্ষত্র যোগ হয়নি বা আকাশে নক্ষত্রেদের ভুল অবস্থানও সংশোধন হয়নি। শুধু নক্ষত্রদের উজ্জ্বলতার মান নিখুতভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

ঐসময় আরবীই ছিল বিজ্ঞানের ভাষা এবং ইউরোপে চলছিল অন্ধকার যুগ। এখন অবশ্য বিজ্ঞানের ভাষা ইংরেজী হয়ে গেছে আর গত আটশ বছর ধরে আরবে অন্ধকার যুগ চলছে। যতই ওদের তেলের খনি থাকুক, যতই ওরা বুর্জা খলিফা টাওয়ার বানাক। শিক্ষাদীক্ষায় ওরা বাংলাদেশের চেয়েও পিছনে।
ইসলামের স্বর্ণযুগ ধ্বংস হল কিভাবে ? ইমাম গজ্জালী নামক এক লোকের কারণে। উনি ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব থেকে ইসলামকে রক্ষা করার জন্য বলেন - গণিতচর্চা করা শয়তানের কাজ। আরবের লোকদেরও মনে হতে লাগল - ''সবকিছু আল্লার ইচ্ছায় ঘটে। আর সমস্ত জ্ঞান ধর্মগ্রন্থে দেয়া আছে। SO, গবেষণা করার কি দরকার ? কোরান আকড়ে পড়ে থাকলে বেহেশত নিশ্চিত।''
এসব চিন্তাই ইসলামী স্বর্ণযুগ ধ্বংসের কারণ। অনেকে মোঙ্গলীয় আক্রমণকে দায়ী করে। কিন্তু হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলার পর হিরোশিমা তো ঠিকই উঠে দাঁড়িয়েছে। আরব কেন পারল না ? জাকির নায়েক বলে, "কোরান হাদীস থেকে দূরে সরে যাওয়া মুসলিমদের বিজ্ঞানে পতনের কারণ।" অথচ বাস্তবতা হল "কোরান হাদীস বেশী করে আকড়ে ধরাই হল বিজ্ঞানে মুুসলিমদের পতনের কারণ।" যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই, জাকির নায়েকের কথাই সঠিক। তখন
প্রশ্ন চলে আসে, "ইহুদি নাসারা তো কোরান হাদীস ছুয়েও দেখেনি। ওরা তো সবসময়ই কোরান হাদীস থেকে দূরে আছে। ইহুদী খ্রিষ্টানরা যদি কোরান হাদীস ছাড়া বিজ্ঞানে উন্নতি করতে পারে, তবে মুসলিমদের বিজ্ঞানে উন্নতি করার জন্য কোরান হাদীস লাগবে কেন ?"


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১০

আসাদুজ্জামান ইব্রাহিম ২২১১ বলেছেন: বেশ কিছু বিষয় জানা হলো

০১ লা জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

অদ্বিত বলেছেন: আমার সব পোষ্টই জ্ঞানবর্ধক।

২| ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

০১ লা জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

অদ্বিত বলেছেন: আমার সব পোষ্টই জ্ঞানবর্ধক।

৩| ০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২

সোনালি কাবিন বলেছেন: ++++

০২ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:২৩

অদ্বিত বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.