নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রয়োজনে যে বেয়াদপ হতে পারে, ভদ্রতা পাওয়ার অধিকার শুধু তাই।

অদ্বিত

পরাজয়ে ডরে না বীর।

অদ্বিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেকালের কথা ( ২য় পর্ব )

০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:৫৫



পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের পর থেকে বিবর্তনের ধারায় কত প্রাণীর যে আবির্ভাব ঘটেছে আর কত প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে এর ইয়ত্তা নাই। প্রাণীর কি বিলুপ্তি ঘটে ? জীবজন্তু কি লোপ পায় ? হ্যা পায়। পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক জন্তুই লোপ পেয়েছে। বর্তমানে বলতে গেলে আমাদের চোখের সামনেই কতগুলো জন্তু লোপ পেয়েছে।

নিউজিল্যান্ডে মোয়া নামে এক ধরণের পাখি ছিল। আজ থেকে ৭ কোটি বছর আগে এন্টার্কটিকার মূল মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড দ্বীপ। তখন সেখানে অন্য কোন শিকারী প্রাণী না থাকায় ৮ লক্ষ বছরেরও বেশী সময় ধরে রাজত্ব করেছিল এই পাখি। মোয়াদের সবচেয়ে বড় প্রজাতির নাম Dinornis maximus. ১০ শতাব্দীতে নিউজিল্যান্ডে মানুষ আগমণের পর থেকে নির্বিচার শিকার ও বনজঙ্গল উজাড় হবার কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

মাদাগাস্কার দ্বীপে ডোডো নামক আরও একধরণের পাখি পাওয়া যেত। এরা তৃণভোজী ছিল এবং উড়তে না পারায় মাটিতেই বাসা বেধে ডিম পাড়ত। কাজেই এদের শিকার করা সহজ ছিল এবং পায়রা জাতীয় এই পাখিটি খেতে খুব সুস্বাদু ছিল। যাকে খেতে এত ভাল লাগে তাকে যদি এত সহজে শিকার করা যায় তবে মানুষের মত রাক্ষস তাকে দুইদিনে খেয়ে শেষ করবে এটা আর বিচিত্র কি ?


১.৬ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আবির্ভূত মারসুপিয়াল জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ডিপ্রোটোডন ৪৬০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়।
মাত্র দশহাজার বছর আগেও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় খড়গদন্ত বাঘের রাজত্ব ছিল। এ জাতীয় বাঘের উল্টানো খড়গের মত বেরিয়ে থাকা দাঁতদুটি এদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। শিকার ধরার সময় সামনের শক্তিশালী পা দুটি দিয়ে শিকারকে ধরাশায়ী করে খড়গদন্তদুটি দিয়ে কামড় বসিয়ে মেরে ফেলত। ৪২ মিলিয়ন বছর আগে ইওসিন যুগে আবির্ভূত হওয়া এই বাঘদের শারীরিক গড়ন এদের শ্লথগতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আর তাই জলাশয়ের ধারে লম্বাঘাসের আড়ালে লুকিয়ে থেকে জলাশয়ে জল খেতে আসা পশুপাখিকে শিকার করেই এই বাঘের দল উদরপূর্তি করত। যখন পরিবেশ পরিবর্তনের দরুণ জলাশয় তীরবর্তী ঘাস বিলুপ্ত হয় তখন এদের আড়াল হারায় এবং শিকারের ফন্দি মাঠে মারা যায়। তাই শিকারের হার ধীরে ধীরে কমে যাবার কারণে এরাও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

আজ থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগে মধ্য মায়োসিন যুগে দক্ষিণ আমেরিকার সমতল ভূমিতে টেরর বার্ড বা সন্ত্রাসী পাখি নামে উটের মত লম্বাগলাবিশিষ্ট একধরণের পাখি ছিল। এর বিশাল মুখগহ্বর দেখলে মনে হবে যেন আস্ত জানোয়ার ধরে খেয়ে ফেলবে এবং আসলেও এরা তাই করত। এরা আট ফুট থেকে নয় ফুট উচু হত। এরা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকায় এসে উপস্থিত হয়েছিল। এ ভায়ানক আগুন্তুকদের দেখে উত্তর আমেরিকার তৃণভোজী নিরীহ প্রাণীদের মনের অবস্থা না জানি কেমন হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এদের 25 টা প্রজাতি খুঁজে পাওয়া গেছে।

উনিশ শতকে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে প্রচুর জাভা বাঘ ছিল। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপের সর্বত্র বসতি ও কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার হতে থাকলে বিশালার জাভা বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। সর্বশেষ জাভা বাঘ দেখা যায় ১৯৭২ সালে।
কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কারের সময় ক্যারাবিয়ান সন্ন্যাসী সিল দেখেন সান্তো ডোমিঙ্গতে ১৪৯৪ তে। কলম্বাস এর নাম দেন সাগরের নেকড়ে ''Sea-wolves'' । তিনি ২য়বার এসে ক্যারাবিয়ান সন্ন্যাসী সিল শিকার করেন খাওয়ার জন্য। একসময় সাগরে প্রচুর দেখা ক্যারাবিয়ান সন্ন্যাসী সিল মাত্র কয়কশ বছরে হারিয়ে যায়। মাংস ও তেলের জন্য মানুষ এদেরকে মেরে ফেলে। ২০০৮ সালে ক্যারাবিয়ান সন্ন্যাসী সিল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।


সর্বশেষ ২০১১ সালের শেষের দিকে পৃথিবী থেকে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল আফিকার কাল গন্ডার। কে জানে, এরপর কার পালা ? সুন্দরবনের নিকটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে বাঘ বিলুপ্ত হবারও আশঙ্কা আছে। সরকারকে বুঝাবে কে ? আগে প্রকৃতি তারপর মানুষ।
সুতরাং জন্তু যে লোপ পায়, এক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ নেই। এভাবে কত জন্তু যে লোপ পেয়েছে তা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। এখন পর্যন্ত যাদের চিহ্ন রয়েছে তাদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। সবাই তো আর চিহ্ন রেখে মরার অবসর পায় না। একশটি প্রজাতির মধ্যে একটিরও এরূপ সৌভাগ্য হয় কিনা সন্দেহ। আমাদেরই এমন সৌভাগ্য হবে কিনা, তাই বা কে বলতে পারে ?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৫৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রনীকুলের মধ্যে মানুষ সবথেকে বুদ্ধিমান প্রানী।তাদের বিলুপ্ত হতে অনেক দেরি।তারা নিজেদেরকে নিজেরাই বিলুপ্ত করে ফেলতে পারে।

২| ০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:০৪

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: ছোটবেলা আব্বা একটা মাছ আনতো কালবাউস। একটু মেটে স্বাদ কিন্তু খেতে ভালো লাগতো। পুরু স্তর মাংসালো তবে স্তরের মতো না। যখন বড় হলাম তখন পত্রিকার বরাতে জানলাম এটা নাকি বিলুপ্তির পথে। যদিও পরে শোনা গিয়েছিলো ভ্যাটেরনারীপ গবেষকরা এর কৃত্রিম প্রজনন করে পুকুরে চাষের ব্যাবস্থা করেছে কিন্তু দেশে থাকতে এটা আর পাই নি।

এখন কোরোনার কারনে প্রকৃতিতে অনেক পরিবর্তন আসছে। ওজোন স্তরের ফুটো বন্ধ হয়ে গেছে। পশুপাখির কলরবে ভোর বেলা এমনকি পুরা রাত সীগালের সমস্বরে চিৎকার শুনতে ভালোই লাগে। সামনে যে মহামন্দা বা অর্থনৈতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এর বড় লাভ হবে প্রকৃতির। লাগামছাড়া মানবপ্রজনন যে প্রকৃতির জন্য কোনো ক্ষতিকর এরপরও জঙ্গিরা যদি না বুঝে তাহলে আর কি করার

০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৩

অদ্বিত বলেছেন: করোনা ভাইরাস দিয়ে মানুষকে ঘরবন্দী করে পৃথিবী নিজেকে ঠিক করে নিচ্ছে।

৩| ০৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার একটী পোষ্ট।

৪| ০৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫৩

হাসান রাজু বলেছেন: কক্সবাজার বীচে ডলফিন নাকি দেখা যেত। সেটা ও নাকি ২৫/৩০ বছর আগের গল্প। এবার করোনার করুনায় নাকি সে দৃশ্য দেখা গিয়েছে।

০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:২৮

অদ্বিত বলেছেন: ভাল তো।

৫| ০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: পৃথিবী থেকে না হলেও, বাংলাদেশ থেকে বোধ হয় এখন শকুন হারিয়ে যাবার পথে। এদের আয়ু নাকি তিনশত বছর। আমার ছোটবেলায় আমি ঢাকার আকাশে প্রচুর শকুন দেখতাম। এখন শকুন তো দূরের কথা, একটা চিল খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর।

১৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:২১

অদ্বিত বলেছেন: শকুন মরা জন্তু খায়, এরা disgusting. আমি ঢাকার আকাশে জীবনেও শকুন দেখি নাই, চিড়িয়াখানায় দেখেছিলাম। তবে হ্যা, চিল এখন আর দেখা যায় না। এমনকি cute চড়ুই পাখি পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। আর কাকের আধিক্য বাড়ছে। স্বাভাবিক ঢাকা হল পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.