নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জগতারন

জগতারন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি; আমার চোখের সামনে জীবনে প্রথমবারের মতো তরতাজা যুবকের মৃত্যু !

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫৯

স্মৃতি;
আমার চোখের সামনে জীবনে প্রথমবারের মতো তরতাজা যুবকের মৃত্যু !

১৯৮০ সাল, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হলো না। কারন আমার মন আগেই উড়নচণ্ডী হয়েগেছে অ্যামেরিকা যাবো; এবং সেখানে গিয়ে পড়াশুনা করবো।
পড়াশুনার বিষয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে; আমি বৈমানিক হবো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামে মাত্র চেষ্টা করেছিলাম আইনবিভাগে ভর্তি হওয়ার। শেষ অবধি তা আর হল না। যথাপোযুক্তভাবে চেষ্টা করলে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য যে কোন বিভাগে ভর্তি হওয়া যেত। জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইচ্ছা করলে কোনও বিভাগে ভর্তি হওয়া যেত কিন্তু সেখানে একবারের জন্য একটু যেয়েও দেখি নি। নিত্যান্ত পক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ও কোনও বিভাগে গিয়ে ভর্তি হওয়া যেত। কিন্তু সেখানে যাওয়া হয়ে উঠে নি।

এর মধ্যে দু, দুবার অ্যামেরিকান এ্যামবাসী থেকে আমার সাউথইস্টার্ন ওকলাহোমা স্টেইট ইউনিভারসিটিতে ছাত্র ভিসা রিফিউজ হয়ে গেলো। এ যেন এক মহা বিপথ ও সংকটময় হয়ে গেলো আমার ভবিষ্যৎ পড়াশুনা। এদিক দিয়ে অ্যামেরিকান ইউনিভারসিটির ফল সেমিষ্টার হারালাম। আবার বাংলাদেশেও কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া হলো না। মনের মধ্যে এক হতাশা এসে গেলো। কি যে করি কিচ্ছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তার পর ঢাকা সদরনঘাট জগন্নাথ কলেজের এক কেরানীকে ৪০০ টাকা বখসিস দিয়ে সাগরীয় জীববিজ্ঞান সম্মান বিভাগে ভর্তি হওয়া গেলো। এ যেন একটু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচা, এবং আব্বাকে বলতে পারা যে ঢাকা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া গেছে। তখনও আমার মনের সুপ্ত বাসনা তৃতীয় বার এবং শেষ বারের মতো আমি চেষ্টা করবো আবার অ্যামেরিকান ইউনিভারসিটিতে ছাত্র ভিসা পাওয়ার জন্য। এ জন্যই জাহাংগীর নগর, রাজশাহী বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হয় নি কারন আমি সেখানে গেলে ঢাকা ছাড়তে হবে।

যাই হোক একবার মনের ভিতর স্থান দিতে চেষ্টা করলাম প্রানী বিজ্ঞান-এ সম্মান ও মাষ্টার করে পরে হয়তো অ্যামেরিকান ইউনিভারসিটিতে গিয়া পড়াশুনা করা যাবে কিন্তু তাতে তো আর আমার বৈমানিক হওয়া হবে না। এ সমস্ত নানাবিধ চিন্তা মনের মধ্যে বিরাজমান তার পরেও আমি সাগরীয় প্রানী বিজ্ঞান সম্মান , রসায়ন বিজ্ঞান ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান-এ পড়াশুনা করার জন্য মোহাম্মদ পুর থেকে প্রত্যহ জগন্নাথ কলেজে যাওয়াআসা করছি।

একদিন সকাল সকাল কলেজে গেলাম।
আমি তখনও ব্যাক্তিগতভাবে কোনও রাজনিতীর সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে বাল্যকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা মনেপ্রানে ভালোবাসি, সম্মান করি।
১৯৮০ সাল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় মোনাফেক জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এবং শিশু রাসেল সহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা, নম্বেরের চার নেতাদের হত্যা আরও এমনি বিভিন্ন ঘটনায় আমি কোন দিনই জিয়াউর রহমানকে বা ঐ নামই আমি সম্মান করতে পারি না। আর সে সময়ে জিয়াউর রহমানের যে কী আকাশ চুম্মি দাপট (!)
তার বিরুদ্ধাচরণ করে এমন কার হিম্মত (!) সারা দেশ ব্যাপী শুধু জিয়া আর জিয়া জয়ধ্বনি (!) এর আগে থেকেই জিয়াউর রহমান নিজের দাপটের জোরে নিজের ক্ষমতা বলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব জেনারেল, এবং রাষ্ট্র পতি উপাধি নেওয়া সারা করেছে। এর দুই তিন বছর আগে থেকেই জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহি, ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মেধাবী ছাত্রদের নিয়া এবং ছাত্রসংঘ থেকে ছাত্রশিবির বানিয়ে তাদের অস্ত্রের হিংস্রতায় প্রশ্রয় দিয়েছে। মেধাবী ছাত্র অভি নীরুদের হিজবুল বাহারে বিহার করিয়ে হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ছাত্ররাজনীতির পঁচন ধরিয়েছে। হাতে অত্যাধুনিক অস্র দিয়েছে এবং ছাত্র দল গঠন করা হয়েগেছে নিজের ক্ষমতাকে চির স্থায়িত্ব দেয়ার জন্য।

যাইহোক, কী যেন বলতেছিলাম;
একদিন সকাল সকাল জগন্নাথ কলেজে গেলাম ক্লাশ করবো আশা নিয়ে। সেই সময়ে জগন্নাথ কলেজের চারিদিক সুউচ্চ ইমারত মধ্যখানে ছোট্ট করে চার কোনাকৃতি সবুজ একটু মাঠ ছিল। আর সে সময়ে জিয়াউর রহমানের লেলিয়ে দেওয়া ছাত্র দল জগন্নাথ কলেজ কাঁপিয়ে বেড়ায় এবং এর নেতা সগীর নামক এক নামে মাত্র ছাত্র। তিনি কলেজে আসলে সবসময় তার দল বল নিয়া আসতেন। বহু দূর থেকে জগন্নাথ কলেজে তার দল বল নিয়ে তাকে আমি অনেকবার দেখিছি। সে ছিল দীর্ঘ অংগের অধিকারী ও দেখতে খুবই কুৎসিত। শুনেছিলাম সে ঐ পেশায় (জগন্নাথ কলেজের ছাত্র দল) গত ৭/৮ বছর যাবৎ ছাত্র দলের নেতা, ও তিনি সম্মান ও মাষ্টার ডিগ্রী হওয়ার পরও ঐ কলেজ থেকে বিদায় নেন না। নেতাগিরি থাকবে না ও জিয়াউর রহমান নিকট থেকে লাখ লাখেলাখে টাকা ও অস্রও তিনি হাত ছাড়া করতে নারাজ।

ওহ! বারে বারে আমি যা বলতে চাহি তার সেই গতি হারিয়ে ফেলছি;
কী যেন বলতে চেয়েছিলুম (!)
একদিন সকাল সকাল জগ বাবুর কলেজে গিয়েছি; ঠিক আমার বয়সেরই সাদা ফুল হাতা সার্ট পরিহিত একটি সুদর্শন ছাত্র ছোট্ট মাঠের পশ্চিম পাশের ইমারত নীচ তলায় বারান্দায় হাসি মুখে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে বন্ধুসুলব আলাপ আলোচনায় রত। তার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোন পরিচয় নেই। আমি তার পাশ দিয়ে হেটে একটু উত্তরের দিকে আগাইলাম। এরই মধ্যে দেখি অভিশপ্ত ছাত্র দল নেতা সগীর ও তার দল বলের গুন্ডারা সেই হাস্য-উজ্জল ছাত্রটিকে মারতেছে তিন চার মিনিটের মধ্যে ছেলেটিকে মারতে মারতে মেরেই ফেলল।

ঠিক তার পর থেকে আমি আর জগন্নাথ কলেজ ও পড়াশোনায় মনঃ সংযোগ করতে পারি না। এবং যে করেই হোক এই দেশ আমাকে ছাড়তেই হবে, অ্যামেরিকায় গিয়েই যদি পারি পড়াশুনা করবো। তার পর ১৯৮২ সালের ফল সেমিষ্টার-এ আগের সেই ইউনিভার্সিটিতে ভালয় ভালো বহু আকাংখিত ও দুর্লভ আমার স্টুডেন্ট ভিসা হয়।
আমার অ্যামেরিকা আসার আগেই ১৯৮১ সালের মাঝামাঝির দিকে অভিশপ্ত জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অন্যান্য আর্মিদের দ্বারা নিসংশভাবে নিহত হয়। তাকে মেশীন গানের গুলি দিয়ে এমনভাবে নিহিত করা হয় যে তার লাশের কোথায়ও কোন চহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
এখন আমাদের দেশের পবিত্র স্থান সংসদ ভবনের উত্তর পাশে জিয়াউর রহমানের যে কথিত কবর আছে সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনই লাশ দিয়ে সে কবর দেওয়া হয় নি। একটি কফিনে কিছু আবর্জনা সংগ্রহ করে তা জিয়াউর রহমানের লাশ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তথা কথিত লাশ বলে চালিয়ে দেওয়া কফিন ঢাকা নিয়ে আনা হলে বেগম জিয়া সেই লাশ বলে কথিত কফিনের উপর উব্বুত হয়ে কান্না কাটি (অভিনয় !) করে কিন্তু একবারের জন্যও শেষবারের জন্য স্বমীর লাশের মুখটি পর্যন্ত দেখতে চায় নি। ঠিক একই ভাবে জিয়াউর রহমানের ছেলেরাও বাপের মুখ খানা শেষবারের মত দেখতে চায় নি (!)

কি লাশ বা জিয়াউর রহমানের মরা লাশের মুখ দেখবে (!) সেখানে তো জিয়াউর রহমানের কোন লাশই ছিলা না। সে খবর আগেই আর্মি ও অস্থায়ী দায়ীত্বশীল প্রিসিটেন্ট আব্দুর সাত্তার তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ওহঃ কী যেন বলতে আজ এই লিখতে বসেছিলাম (!)
চোখের সামনে তরতাজা এক যুবকের মৃত্যু।

এ-ই আমার চোখের সামনে জীবনে প্রথমবারের মতো তরতাজা যুবকের মৃত্যু দেখা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১১

জুল ভার্ন বলেছেন: ভালো লাগলো।

২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:২৩

জগতারন বলেছেন:
সুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার স্মৃতি কথা।

২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:২২

জগতারন বলেছেন:
আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল।
ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন।
দেশে আসবো ভাবছি, আসলে ফোন দিবো।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:১২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
চোখের সামনে মৃত্যু দেখা সে অবশ্য একটি মর্মান্তিক দৃশ্য ।
জগন্নাথ কলেজে বহবার গিয়েছি তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়াধীন
জগন্যাথ হলে বন্ধু জগদিশের সাথে সিট ভাগাভাগি করে মাঝে
মাঝে অতিথি হয় থেকেছি । চোখের সামনে অনেক মারামরি
দেখেছি তবে মৃত্যুর কোন দৃশ্য চোখে পড়েনি । তবে মুক্তি
যুদ্ধের সময় চোখের সামনে অসংখ মৃত্যুর ঘটনা দুর হতে
প্রত্যক্ষ করেছি , নীজেও মৃত্যুর মুখামুখী হয়েছি ।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:২১

জগতারন বলেছেন:
প্রিয় ব্লগার ও সু-সাহিত্যিক ডঃ এম এ আলী সাহেব,
আপনার কাছ থেকে মন্তব্য পেয়ে প্রীত হলাম, ধন্যবাদ!

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:২৪

তাজেরুল ইসলাম স্বাধীন বলেছেন: :((

৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:০০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভয়ঙ্কর মৃত্যু। এমন সাহসী উচ্চারণও অনেকদিন দেখি না। জরিমানা করা দরকার আপনাকে। এত কম লেখেন কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.