![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পটি অনেকেই জানেন। তারপরও বলছি। প্রাসঙ্গিক বলেই ফের গল্পটির অবতারণা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ব্যস্ত রাস্তা। এক পাগলা কুকুর যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড় বসাচ্ছে! হঠাৎ কুকুরটি এক বাচ্চা মেয়ের দিকে দৌঁড়ে গেলো কামড় দেওয়ার জন্য। বাচ্চাটা তখন ভয়ে চিৎকার শুরু করলো। ঠিক এমন সময়, এক সুঠামদেহী যুবক সাহসিকতার সাথে কুকুরটির কাছ থেকে ওই নিরীহ বাচ্চাকে বাঁচালো! উপস্থিত সবাই যুবকের অনেক প্রশংসা করলো! কয়েকজন সাংবাদিকও ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে আর যুবকটির প্রশংসা করে তারা বললেন, "আপনার সাহস আমাদের জন্য, আমাদের সার্বভৌম দেশটির জন্য অনুপ্রেরণার অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে! সুতরাং কালকে আমরা সংবাদের শিরোনাম করবো, আমেরিকান সাহসী এক যুবক বাঁচালো শিশুর প্রাণ।"
যুবকটি তখন বললো, “ভাই, আমি আমেরিকান নই, ফিলিস্তিনি...! এবং আমরা জন্ম থেকেই কুকুরদের সাথেই যুদ্ধ করে আসছি। এটা নিউজ হওয়ার মতো কিছু না।”
তৎক্ষণাৎ টিভিগুলো ব্রেকিং নিউজ দেখানো শুরু করল এভাবে, "মুসলমান টেরোরিস্টদের হাত থেকে অবুঝ পশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না! ওয়াশিংটন ডিসির ব্যস্ত সড়কে খুন হলো এক নিরীহ কুকুর! এ দেশের নিরাপত্তা..."
সত্যিই সাংবাদিকতা একটা ‘আজব পেশা’ হয়ে গেছে এখন। পেশা ছিল এককালে হয়তো। এখন এটাকে অনেকে ব্যবসা বলেই গর্ববোধ করে থাকেন। এতে সাংবাদিকতার মান বাড়ল কি কমলো সে বিতর্কে যাব না। এই ব্যবসায় মালিকরা তো বটেই কর্মীরাও আর্থিক ‘লস’ গুনতে চান না। এ কারণে এটা পেশা না হয়ে এখন ব্যবসা। যেমনটা এককালে আইন পেশা ছিল, ডাক্তারি পেশা ছিল। এখন সাংবাদিকতা, আইন আর চিকিৎসাকে সবাই এক পাল্লায় তুলে বলেন, "এটা একটি ব্যবসা। মালিকপক্ষও এটিকে মিডিয়া ব্যবসা বলতে পারলে গর্ববোধ করেন।" শুরুর গল্পটির ব্যাখ্যা আরও একটু পরে দেবো। তার আগে দেশের গণমাধ্যম নিয়ে দু-চার কথা লিখে নিই।
আমরা সাংবাদিকরা শুধু পারি পরের দোষ-গুণ নিয়ে কারবার করতে। আত্মসমালোচনারও দরকার আছে বৈকি! এদেশের সাংবাদিকতার দিকপাল হিসেবে যাদের সম্পর্কে বইপত্রে পড়ে এসেছি, তাদের সাথে এ যুগের সাংবাদিকদের মেলাতে বড় কষ্ট হয়। স্বাধীন গণমাধ্যম এখনো বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীদের কাছে অধরা স্বপ্ন। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যারা গণমাধ্যমে কর্মরত আছেন তারা শেষতক কিন্তু চাকরি নয়; চাকর-ই করেন। একটি কারখানার চাকরিতে যেমন ফরমায়েশ অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে দিতে হয়, ঠিক তেমনই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে বিশেষায়িত সংবাদ পণ্য তৈরি করে দেন সংবাদকর্মীরা। এই মিডিয়া কর্মীদের জন্য তাদের স্বার্থোদ্ধারের জন্য যারা কাজ করবেন বলে মাঠে নামেন সেই সাংবাদিক নেতারাও নানা ব্যানারে সরকার আর বিরোধী দলের পক্ষে ভাগ হয়ে নেতা-নেত্রীদের পকেটে ঢুকে যান অবলীলায়, সামান্য রুটি রুজির জন্য। এ কারণে দেখা যায় সহকর্মী সাংবাদিক দম্পতির নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সোচ্চার নেতার কণ্ঠ থেমে যায় সরকারের ‘উপদেষ্টা’ নামের প্রলোভনে। কেউ কেউ মাথা বিকিয়ে দেন প্লট, ফ্ল্যাট, বিদেশ ভ্রমণ, মাসোহারার প্যাকেটের সুঘ্রাণের কাছে। সাংবাদিকতার নৈতিকতা সেখানে মাথা কুটে মরে।
সত্যিই সাংবাদিকতা একটা ‘আজব পেশা’ হয়ে গেছে এখন। পেশা ছিল এককালে হয়তো। এখন এটাকে অনেকে ব্যবসা বলেই গর্ববোধ করে থাকেন। এতে সাংবাদিকতার মান বাড়ল কি কমলো সে বিতর্কে যাব না। এই ব্যবসায় মালিকরা তো বটেই কর্মীরাও আর্থিক ‘লস’ গুনতে চান না। এ কারণে এটা পেশা না হয়ে এখন ব্যবসা। যেমনটা এককালে আইন পেশা ছিল, ডাক্তারি পেশা ছিল।
নিজের পেশার হালহকিকত নিয়ে লিখব- এই বিষয়টি ভাবছিলাম বেশ কিছুদিন ধরেই। আত্মসমালোচনার তাগিদ থেকেই। এ অভিপ্রায় জানাতেই একটি করপোরেট কোম্পানির মিডিয়া হ্যান্ডল করেন এমন এক কর্মকর্তা দিলেন বোমা ফাটানো তথ্য। বললেন, তার কাছে অন্তত সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে দেড়শ সাংবাদিকের তালিকা আছে যারা তাদের কোম্পানি থেকে মাসোহারা নেন। এই সাংবাদিকদের তারা পে করেন যাতে পত্রিকা বা টিভিতে তাদের কোম্পানির অনিয়ম দুর্নীতির কথা না আসে। মাসে ওই কোম্পানিটি গড়ে ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। কায়দা হিসেবে ‘দেশীয় পণ্য’ স্লোগানটা কাজে লাগায়। চায়না পণ্য এনে অ্যাসেম্বল করে ৭০ কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়ার সহজ তরিকা তারা প্রয়োগ করেন ওই আড়াইশ সাংবাদিকের ওপর। খরচ সাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। মালিকপক্ষকে তারা দেয় সাংবাৎসরিক মোটা রেটের বিজ্ঞাপনের টোপ। ব্যাস। ব্যবসা হালাল। শুধু ওই কোম্পানিই নয়, প্রায় সব কোম্পানিই এই ফর্মূলায় চলে বলে জানালেন ওই কর্মকর্তা।
এ তো গেল সাংবাদিক ম্যানেজ করার বিষয়। মালিক বা সাংবাদিকরা ব্যক্তিগতভাবে কী করেন? তারা এজেন্ডা সেট করে নেন আগের থেকেই। তারা কি ফোকাস করবেন আর কি করবেন না। অমুক দলের প্রতি অনুরক্ত মিডিয়া হলে অমুককে ফোকাস করতেই হবে। আর তমুক পার্টি হলে তমুককে ফোকাস করো। বাস্তবতার নিকুচি করো। সম্পাদক বা মালিকের আজ্ঞা। কয়েকটি সংবাদ কেসস্টাডি হিসেবে আলোচনায় আনি। পাঠকরা সম্যক ধারণা পাবেন আশা করি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আলোচিত ‘তালা’ শীর্ষক সংবাদটির কথা মনে আছে তো আপনাদের? তিনি অন্য আরো তথ্যের পাশাপাশি তখন বলেছিলেন, “ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সায়েদাবাদ-গাবতলীসহ ২০টি স্পটে অস্থায়ী সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতেই এ ব্যবস্থা”। এ সময় রাজধানীবাসীকেও তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা দরকার”। সংবাদটিকে প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো ভিন্নভাবে ফোকাস করল। সিসি ক্যামেরা, আইনশৃঙ্খলা, নিজেদের নিরাপত্তা- এসব পাশ কাটিয়ে ‘তালা’ বিষয়টিকে অহেতুক গুরুত্বারোপ করল। ফল যা হওয়ার তাই হলো। মিডিয়ার তোপের মুখে পড়লেন মন্ত্রী। কথা হলো, বিষয়টিকে অন্যভাবে কী ফোকাস করা যেত না?
একই ধরনের একটি বক্তব্য দিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন ২০০১ সালের তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন। এক ছোট মেয়ে বাবার কোলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়। মন্ত্রী বলেছিলেন, "আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে।" কিন্তু এ কথাটাকে মিডিয়া ‘ভুলভাবে’ ফোকাস করল। তারা ভুলে গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও একজন মনময় মানুষ। সেই হিসেবে এটা তিনি আবেগের জায়গা থেকে বলে বসেছেন। কিন্তু ভুল তো বলেননি। মিডিয়া তাকে মানবিক মন্ত্রী হিসেবেও ফোকাস করতে পারতো। তিনি তো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। অথচ মিডিয়ার ফোকাস সেদিকে ছিল না।
কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি, একটি ‘বিখ্যাত’ নিউজপোর্টাল টানা কয়েকদিন নিউজ করল, প্রাণ ব্র্যান্ডের পণ্য নাকি ভেজালে ভরপুর। হঠাৎ একদিন দেখা গেল, তারা নিউজ করেছে, ‘প্রাণের পণ্য একদম খাঁটি পণ্য। সাথে বিজ্ঞাপনও দেখা গেল সাইটটিতে। কোনো পাঠকের বুঝতে বাকি রইল না এর নেপথ্যের বিষয়টি আসলে কী।
আরেকটি উদাহরণ দিই। ২০০৪ সাল। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার পতন। তার হাতে ট্রাম্পকার্ড আছে। এমনকি তিনি এও বললেন, "৩০ এপ্রিলের পর খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ঠিকই, তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নন, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে।" কিন্তু শেষমেশ ৩০ এপ্রিল কিছুই ঘটেনি। এটি যে স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার কৌশল পাঠক মাত্রই বুঝেছেন। অথচ সংবাদটিকে ভিন্ন ফোকাসে তুলে ধরে একটি প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ট্রাম্পকার্ড’ কে একটি ইস্যু বানিয়ে ফেলে। উপর্যুপরি সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। ওই পত্রিকার প্রভাবে অন্য মিডিয়াগুলোও ফলোআপ করে আব্দুল জলিলকে একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে যায়। অথচ প্রত্যেক নেতাই এমন চ্যালেঞ্জ প্রতিপক্ষকে ছুড়ে দিচ্ছেন হরহামেশাই। কিছুদিন আগে বেগম খালেদা জিয়াও ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সরকার ফেলে দিতে। সরকার ফল করেনি। কই, কোনো হইচই তো হয়নি। কেউ তো কৈফিয়ত চায়নি, সরকার ফেলতে পারলেন না, এমন কথা বললেন কেন।
এ যুগের জনগণ অনেক বেশি সচেতন। তারা ভালো করেই জানেন এগুলো নেতা-নেত্রীদের রাজনৈতিক বক্তব্য। তারা সিরিয়াসলি নেনও না। জনগণ এগুলোতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু এই মিডিয়াগুলো নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করার জন্য বিশেষভাবে ফোকাস করেন কাকে তুলবেন আর কাকে নামাবেন। একজন মন্ত্রী তো এই সেদিনও সংসদে অভিযোগ আনলেন প্রভাবশালী একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে। সেই পত্রিকার সম্পাদক নাকি একটি টার্গেট ঠিক করেন, তারপর একে একে তীর ছুড়তে থাকেন। তাকে ঘায়েল না করে তিনি থামেন না। অভিযোগটির ভিত্তি আছে কিনা পাঠকমাত্রই এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন।
শুরুতে যে গল্পটার অবতারণা করেছিলাম, এবার আসি সে প্রসঙ্গে। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তিনি যে-ই দেশের, যে-ই ধর্মের নাগরিকই হন না কেন, তার বড় পরিচয় তিনি মানুষ। তাকে যদি মার্কিন মিডিয়া সেই নিরিখে বিচার করতো অসুবিধা ছিল না। যখনই তার দেশ-ধর্ম ফোকাস করে সাংবাদিক অন্ধ হলেন তখনই পেশার মৃত্যু ঘটল। সাংবাদিক কি ফোকাস করবেন আর করবেন না, এই যুগে সেটা একটা আলোচনার বিষয় বটে। বিশেষ করে আমাদের দেশে। আমরা দেখেছি, কোনো মালিক-সম্পাদক যদি কোনো ব্যক্তি বা নেতাকে পছন্দ না করেন, তবে নির্ঘাতভাবে তার খারাপ ছবিটিই সংশ্লিষ্ট সংবাদ বা সম্পাদকীয়তে জুড়ে দেবেন। আর যদি পছন্দের হন, তাহলে তিনি খুঁজে খুঁজে সুন্দরতম ছবিটাই বাছাই করবেন।
ইটস মিডিয়া
এই ফোকাস করার বিষয়টি নিয়ে (মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা) জনপ্রিয় একটি কার্টুনচিত্র ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটে। একটি ছবি যদি হাজার শব্দের কথা বলে, আমি বলব এটি সেই ধরণের একটি ছবি-কার্টুন। একেবারে সহজ অথচ অত্যন্ত অর্থবহ একটি কার্টুন এটি। কার্টুনটি কে এঁকেছেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। কার্টুনটির ভাষ্য অনেকটা এ রকম, "একটি টিভি ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে একটি অপরাধ সংঘটনের দৃশ্য। একজন হামলাকারী অপর একজনের ওপর ধারালো ছোরা নিয়ে চড়াও হয়েছেন। কিন্তু ক্যামেরার ফোকাসে হামলাকারী হয়ে গেছে শিকার আর শিকার বা ভুক্তভোগীকে মনে হচ্ছে হামলাকারী।" এ রকম ফোকাস-কারসাজির ঘটনা কিন্তু হরহামেশাই আমাদের দেশে দেখা যায়।
এ তো গেল ফোকাস করার বিষয়; নৈতিকতা বলে সাংবাদিকতায় একটি বিষয় আছে যা না থাকলে সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতা থাকে না। সেই নৈতিকতা এ পেশায় এখন বিরল। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি, একটি ‘বিখ্যাত’ নিউজপোর্টাল টানা কয়েকদিন নিউজ করল, প্রাণ ব্র্যান্ডের পণ্য নাকি ভেজালে ভরপুর। হঠাৎ একদিন দেখা গেল, তারা নিউজ করেছে, ‘প্রাণের পণ্য একদম খাঁটি পণ্য। সাথে বিজ্ঞাপনও দেখা গেল সাইটটিতে। কোনো পাঠকের বুঝতে বাকি রইল না এর নেপথ্যের বিষয়টি আসলে কী। একই পোর্টাল ‘ক্ষ’ নামের একটি ব্যান্ডের জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে নিউজ করল, জাতীয় সঙ্গীতকে নাকি ব্যান্ডদলটি অপমান করেছে। এটা দেশদ্রোহিতার সামিল। দুদিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন ব্যান্ডদলটির পক্ষেই সবাই বলতে থাকল, তখন তারা উল্টো নিউজ করল, দুর্দান্ত গেয়েছে 'ক্ষ'। দেশপ্রেম জাগ্রত হবে নতুন করে। তারা শিল্পীদের লাইভ অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানালো। এভাবে কার্যত তারা বড় একটি ক্ষতি করল সংবাদমাধ্যমের। আর সেটি হলো, পাঠকের কাছে মিডিয়ার ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতার। সংবাদমাধ্যমের প্রতি মানুষের এমনিতেই বিশ্বাস বড় দুর্বল। সংবাদমাধ্যমের এমন আচার প্রকাশ পেলে সুদূরপ্রসারী এ ক্ষতির দায় কিন্তু তখন পাঠকের ঘাড়েই যাবে না, যাবে মিডিয়ার ঘাড়েও।
ইদানীং গুগল সার্চ করলে অসংখ্য দেশীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল চলে আসে। এগুলোর আধেয় ঘেঁটে দেখলে তাজ্জব হতে হয়। এরা লাইম লাইটে আসার জন্য ইচ্ছে করে এমনভাবে নিউজের শিরোনামগুলো করছে যে, ধাক্কা না খেয়ে উপায় থাকে না। শীর্ষস্থানীয় একটি পোর্টাল সেদিন শিরোনাম করল : 'খালেদার সাথে বেবী নাজনীন, এ কেমন সম্পর্ক'—এ ধরনের। বিস্তারিত নিউজে গিয়ে দেখা গেল, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হচ্ছেন বেবী নাজনীন।‘ বুঝুন অবস্থা। অনলাইন অপর এক পোর্টালের শিরোনাম, “কাজী নজরুলকে পিটালেন জগন্নাথ”। হেডিং দেখে মনে হতে পারে ঢাকার তৎকালীন জমিদার জগন্নাথ রায়চৌধুরী আর বিদ্রোহী কবি নজরুলের মধ্যে হাতাহাতি। নিউজের ভেতরে ঢুকে দেখা গেলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র, কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের কয়েকজনকে পিটিয়েছে। এমনই আরেকটি শিরোনাম দিল একটি পোর্টাল, “আইয়ুব বাচ্চু আর নেই”। ডিটেইল নিউজ- 'এই ঈদে আইয়ুব বাচ্চুর ক্যাসেট 'নেই'। এটা কেমন তরো সাংবাদিকতা? কোথায় যাচ্ছি আমরা?
পুনশ্চ ‘শিরোনাম’
লেখার শিরোনামের ‘সাংবাদিকতা, সুসাংবাদিকতা ও কুসাংবাদিকতার’ উদাহরণটি আরো স্পষ্ট হবে পুরান ঢাকার তরুণ দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাশকে নিছক সন্দেহের বশে পিটিয়ে হত্যার খবরটির ব্যবচ্ছেদ করলেই। যদিও বড় মর্মান্তিক, তারপরও চলুন আবার সেই দৃশ্যপটে আরেকবার ঘুরে আসি। ছাত্রলীগের মাত্র গোটা বিশেক নেতাকর্মী বড় নির্মমভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে একটি ছেলেকে, যে কিনা বাঁচার শেষ চেষ্টাটুকু করে বলেছিল, "দাদা, আমি হিন্দু। আমাকে মারবেন না। আমি অবরোধ সমর্থক নই।" এমন ‘কার্যকর’ সার্টিফিকেটেও মন গলেনি ক্যাডারদের। না গলুক। ছাত্রনেতারা জনসেবক, তারা এভাবে ‘সেবা’ করবেই। কিন্তু সেখানে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যাডারদের চেয়ে বেশি ছিল। আমি যেহেতু সাংবাদিক, আমার সহকর্মীদের ভূমিকাটাই আমার আগে চোখে পড়বে। তারা তখন যদি তাৎক্ষণিক কিছু ছবি আর ফুটেজ তুলেই ছেলেটিকে বাঁচাতে একযোগে এগিয়ে যেতো ক্যাডাররা বাড়াবাড়ির সাহসটুকু পেত না। তখন এই সুসাংবাদিকরা নিজেরাই ইতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে পারত। অনেকেই ঘোরতর আপত্তি জানাবেন এই পয়েন্টে যে, সাংবাদিকের কাজ কিন্তু কাউকে উদ্ধার করা না। মানলাম। কিন্তু আমি সবকিছুতে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। এ ক্ষেত্রে নয় কেন?
দ্বিতীয়ত, বিশ্বজিৎকে সেদিন উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান রিকশা চালক রিপন সরদার। হাসপাতালের অহেতুক বিলম্বের কারণে রিকশার ওপরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন বিশ্বজিৎ।
©somewhere in net ltd.