![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘বাংলাদেশে ভারতবিদ্বেষ কী জন্য বাড়ছে? এভাবে যদি বিদ্বেষ জমতে থাকে, তাহলে আপনি দুই দেশের জনগণের সংহতির যে প্রস্তাব রাখছেন, তা কী করে সম্ভব?’ কলকাতা ও দিল্লিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিনটি সমাবেশে কথা হচ্ছিল ভারতের অনেক সংগঠক, লেখক, পরিবেশবাদী, রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকের সঙ্গে। এসব সভায় এ রকম প্রশ্ন এল, অনেক বিষয়ে আলোচনা ছড়াল। মূল বিষয় ছিল রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এ বিষয় নিয়ে ভারতে সভা-সমাবেশ করার কারণ হলো, সুন্দরবন ধ্বংস করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ করছে ভারতেরই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি। দ্বিতীয়ত, সুন্দরবন ভারতেও বিস্তৃত। বাংলাদেশের সুন্দরবন যদি ক্ষতবিক্ষত হয়, ভারতেও সুন্দরবন অক্ষত থাকবে না। এ ধ্বংসাত্মক কাজ ঠেকাতে ভারতের জনগণও ভূমিকা পালন করবে—এ প্রত্যাশা থেকেই এসব সভা।
তাঁদের বললাম, বাংলাদেশে ভারত সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যেসব বিষয়ে যুক্তিযুক্ত ক্ষোভ আছে, সেগুলো আপনারা হয়তো জানেন না। কারণ, আমরা ভারত সম্পর্কে যতটা জানি, সে তুলনায় আপনারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন অনেক কম। আপনারা আমাদের টিভি দেখতে পারেন না, বইপত্রও আসে খুব কম। আপনাদের মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে সেসব খবরই গুরুত্ব পায়, যাতে মনে হয়, বাংলাদেশ ‘মৌলবাদ জঙ্গি’-অধ্যুষিত দেশ। কিন্তু এর বিরুদ্ধে লড়াই ও চিন্তার খবর কমই আসে।
আপনারা অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম বইটির কথা জানতে পারেন, এটি নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রের কথাও নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু জানেন না ভারতের ভারী যন্ত্রপাতি নেওয়ার জন্য সেই নদী আড়াআড়িভাবে ভরাট করা হয়েছিল। আপনারা জানেন না ভারতের পণ্য বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পার হয়ে ভারতেরই আরেক অঞ্চলে নেওয়ার জন্য নানা ব্যবস্থা করা হচ্ছে জনগণকে না জানিয়ে। এর জন্য বাংলাদেশের কী লাভ, কী ক্ষতি—সে সম্পর্কে সরকার জনগণকে পরিষ্কারভাবে কিছু জানায়নি। ভারতের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ অবকাঠামো প্রস্তুত করছে। অথচ বাংলাদেশের তিন দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর নামে। তিন দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও হয়ে থেকে বন্ধুত্ব কীভাবে সম্ভব? ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েল এ রকম বেড়া দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কি সে রকম সম্পর্ক তৈরি করতে চায়? ভারতের মানুষ কি তা অনুমোদন করে?
আরও বললাম, আপনারা সীমান্ত হত্যার খবর খুব কম জানেন। আপনারা জানেন না যে ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি কত দূর বিস্তৃত হয়েছে। এরপর আবার টিপাইমুখ বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষ কেন ক্ষুব্ধ হবে না? বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ৫৪টি নদী নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি, তিস্তা নদী নিয়ে বিরোধ ঝুলে আছে। আপনারা জানেন না, ভারতের বিনিয়োগ বাংলাদেশে অগ্রাধিকার পেলেও ভারতে বাংলাদেশের বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা মাত্র বছর খানেক আগে শিথিল করা হয়েছে, কিন্তু এখনো নানা বাধা-বিপত্তি বজায় আছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আইনি পথে যেসব পণ্য আসে, তার চেয়ে বেশি আসে বেআইনিভাবে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভারতে আইনিভাবে পণ্য নিতে গেলেও শত অশুল্ক বাধা। এত সব বৈষম্য, অসম্মান ও আধিপত্যের ঘটনা থাকলে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষমাত্রই তার প্রতিকার চাইবে। এ ক্ষোভকে ভারতবিরোধী বিদ্বেষ বা মৌলবাদীদের তৎপরতা হিসেবে চিত্রিত করা মানে মূল ইস্যুকে আড়াল করা। তাতে অবিশ্বাস ও বিদ্বেষের রাস্তাই প্রশস্ত হবে।
আলোচনায় প্রশ্ন এল, তাহলে এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার পথ কী? বললাম, এ পথ পেতে গেলে চিন্তার একটি অস্বচ্ছতা থেকে আমাদের মুক্ত থাকা দরকার। সেটি হলো, রাষ্ট্র ও জনগণ যে সমার্থক নয়, তা স্পষ্ট করা। ভারতের সরকার যা করছে, ভারতের শাসকশ্রেণী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তার দায়দায়িত্ব ভারতের জনগণের নয়। যেমন আমাদের দেশের সরকার বা শাসকগোষ্ঠী যত অপকর্ম করে, তার দায়দায়িত্ব গ্রহণে আমরা রাজি নই। এ বিষয় সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। cÖ_g ce©
©somewhere in net ltd.