![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাইকোর্টে মন্ত্রীর ফোন ও দুদকের ভেলকি আর কত দেখবে মানুষ
----------------------------------------------------------------------
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়েছে। সরকারি চাপ থাকে উচ্চ আদালতেও। যার নমুনা পাওয়া গেল হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায়। গত সোমবার একটি মামলায় শুনানি পর্যায়ে মন্ত্রী ফোন করেন বিচারপতিকে। সেজন্য বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি একজন নীতিবান বিচারপতি হিসেবে আমরা জানি। নীতিবান বলে তাকে গুরুত্বহীন মামলার বেঞ্চে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। তার কাছেও ফোন করতে কসুর করেননি মন্ত্রী। এছাড়া বিচার বিভাগের ওপর সরকারি চাপের স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে স্কাইপ স্ক্যান্ডালে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের জবানিতে রয়েছে সরকারি সেই প্রভাবের বিবরণ।
দলীয়করণ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদই দিলাম। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিক দুনিয়ার মানুষ দেখতে পেয়েছে। বিচার বিভাগ হচ্ছে এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়রানির অন্যতম একটি মাধ্যম। সরকার যেভাবে চায় সেভাবে অনেক আদেশ আসে। আসে রিমান্ডের নির্দেশনা। বিচার বিভাগ ব্যবহার করে সরকার নির্মম নির্যাতন করছে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর রিমান্ড আদেশের চিত্র দেখলে বোকাও বুঝতে পারে বিচারের নামে আসলে কি ঘটে। বহুবার এ নিয়ে সবিস্তার লিখেছি। লিখে কোনো কাজ হয় বলে মনে হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে কোনো চেতনা নেই। সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে এসব অন্যায়-অবিচার। তারপরও বলে যাচ্ছি অবিরাম। যদি কোনো কাজে আসে। মজলুমরা কিছুটা স্বস্তি পায়, সেই আশায়।
সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এক সময় আপিল বিভাগের চেম্বার জজের দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া কতগুলো আদেশ নিয়ে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম তখন। এজন্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং আমাকে (অলিউল্লাহ নোমান) কারাদণ্ড দিয়েছিল। শুনানিতে আমাদের পক্ষে উপস্থাপন করা তথ্য প্রমাণের জবাবে আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিল ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। এখন পাঠক আপনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন বিচার বিভাগ আইনের শাসনের জন্য সত্য উদ্ঘাটন করে, নাকি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রায় দেয়।
২০১০ সালের মার্চ মাসে জেলা জজ আদালতে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলো। মামলাটি থেকে সেই প্রধান আসামির নাম প্রত্যাহারের আগেই দৈনিক আমার দেশ-এ রিপোর্ট করলাম। রিপোর্ট করার পর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করা হলো। তবে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে নিয়োগ দেয়া হলো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তির স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। সেই ব্যক্তিও নিয়োগ পেলেন বিচারপতি পদে। তাদের শপথ দিতে অস্বীকার করলেন একজন প্রধান বিচারপতি। শপথ হলো না। ৬ মাস পর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হলো। নিয়োগের ৬ মাস পর শপথ নিলেন ওই দুজন। এগুলো হচ্ছে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের ছোট্ট কিছু নমুনা! পর্দার আড়ালে আরও কত ঘটনা ঘটছে সেটাতো সাধারণ মানুষ জানেন না। মন্ত্রীরা হাইকোর্টে মামলা নিয়ে ফোন করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোনো কোনো পত্রিকা দেখলাম ভেতরের পাতায় কোনো রকমে একটু স্থান দিয়েছে। যদি বর্তমান আমলের বিপরীত কোনো সরকার থাকত ওই পত্রিকাগুলোই ব্যানার হেডিং করত এ ঘটনা। সুতরাং শুধু বিচার বিভাগ নয়, দলীয়করণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মিডিয়াও।
২০০৪ সালের নভেম্বরে তত্কালীন চারদলীয় জোট সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশ আমলে গঠিত দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে যায় কমিশন গঠনের দিন। সেদিন থেকে কমিশনের সঙ্গে আমিও জড়িত। কমিশনের চাকর হিসেবে নয়। কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল দৈনিক আমার দেশ থেকে। কমিশনের নানা কিছু ঘটেছে আমার চোখের সামনে। লিখেছি অসংখ্য রিপোর্ট। কমিশন গঠনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেগুন বাগিচায়। ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের সময় কমিশনের দাপট দেখেছি।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে অপমানজনক বিদায় দেয়া হলো। নতুন কমিশন নিয়োগ হয়নি। আছেন শুধু একজন সরকারি আমলার নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কমিশন ছাড়াই সচিবের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো। সচিব সাহেব সেই তালিকা সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং শীর্ষ রাজনীতিকদের নাম ছিল এই তালিকায়। একে একে ৩টি তালিকা প্রকাশ করল দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। তালিকাগুলো দুদকের তৈরি নয়। তাদের কোনো অনুসন্ধান বা গবেষণার ফসলও নয়। জরুরি আইনের সরকারের বিশেষ জায়গা থেকে নাজিল হতো। আর সেটা প্রকাশ করত কমিশন। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা, কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং চরিত্র হনন করাই ছিল মূল কাজ। কমিশনের তত্কালীন মহাপরিচালন কর্নেল হানিফ সাহেব মিডিয়া ট্রায়ালের নায়ক ছিলেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর কমিশনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। দাপুটে চেয়ারম্যান সাবেক লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করে বিদায় নেন। যদিও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার সময় বলেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য তিনি এখানে আসেননি। তবে পদত্যাগ করেই তাকে বিদায় নিতে হয়। হাসান মশহুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকার লোক নন। এজন্য তাকে বিদায় নিতে হয় পদত্যাগ করে। হাসান মশহুদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অপর দুজন পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ছিলেন।
জেনারেল হাসান মশহুদের বিদায়ের পর কমিশন পুরো আওয়ামীকরণ হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কারও দুর্নীতি দেখেননি কমিশন জীবনের ৪ বছরে। আওয়ামী লীগ সরকারের কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবুর বাসামুখী গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি ঘুষের টাকা উদ্ধার হলো। তারপরও গোলাম রহমানের কমিশন একেবারে নিষ্কলুষ সার্টিফিকেট দেয় সুরঞ্জিত বাবুকে। শুধু সুরঞ্জিত বাবু নন, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করল সৈয়দ আবুল হোসেনকে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো জাতিকে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা টাকা ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই আবুল হোসনকেও ধোয়া তুলসিপাতা হিসেবে একখানা সনদ দিলেন গোলাম রহমান। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতির মামলাগুলো বিনা বাধায় আদালতে খারিজের ব্যবস্থা হলো গোলাম রহমানের তত্ত্বাবধানে। বিরোধী দলের সব মামলা পুরো সচল হলো। নতুন মামলা হলো একের পর এক। এমনকি মাহমুদুর রহমানের মতো একজন নিষ্ঠাবান সত্ মানুষের বিরুদ্ধে লাগল দুদক। যদিও তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ থাকলে যে কোনো বিচার তিনি মাথা পেতে নেবেন।
গোলাম রহমানের পর বদিউজ্জাম সাহেব চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন।
গোলাম রহমানের কার্যক্রমের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক পরিচয় রেখে গেছেন। আবুল হোসেন এবং সুরঞ্জিত বাবুকে ধোয়া তুলসিপাতার সার্টিফিকেট দেয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছেন বিশ্ববাসী। বদিউজ্জামান সাহেব নিজেই জাতির সামনে রাজনৈতিক পরিচয় উপস্থাপন করছেন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছেন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। গত ৩ ফেবু্রয়ারি বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বদিউজ্জামান সাহেব লক্ষ্মীপুরে সরকার নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন। এটা হলো স্রেফ রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। একই দিনে দাওয়াত খেয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের বাড়িতে। দাওয়াতে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষেই এই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান। স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে যে কোনো কাজ করতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে। কমিশনকে আওয়ামীকরণের স্বাধীনতাও রয়েছে তার।
লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের পরিচয় সবারই কম বেশি জানা আছে। বহুল সমালোচিত ব্যক্তি তিনি। এক সময় যার সন্ত্রাস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা ছিল। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত সন্ত্রাস ও খুনের আসামি ছিলেন তিনি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে নিজের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় তাহের বাহিনী। স্ত্রী-সন্তানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে। গুম করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের লাশ। আজও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ ঘটনার বিচার হয়েছিল।
বিচারে আবু তাহেরের যাবজ্জীবন এবং তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন মুক্ত আবু তাহেরের ছেলে। তার বাড়িতে আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দাওয়াত খেয়েছেন বদিউজ্জামান সাহেব। এতে দোষের কিছু দেখছি না। এরপরও কি তার দলীয় পরিচয় বলার প্রয়োজন রয়েছে! দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে আর খাটো করতে চাই না তাকে।
এ বদিউজ্জামানের নেতৃত্বেই দুদক পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি তার চোখে ধরা পড়ে না। তার রাডারের বাইরে আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি। তামাশার নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়েছে। জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে ৫ বছরে আয়ের খতিয়ান দেখে অনেকেই আতকে উঠেছেন। কিন্তু সেটা দুদকের রাডারে ধরা পড়েনি। ধরা পড়ার কথাও নয়। মিডিয়ার সমালোচনা সামাল দিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্তের কথা ইদানীং বলা হয়েছে। তাও আবার সবার বিরুদ্ধে নয়। তাদের মধ্যে কতজন ধোয়া তুলসিপাতার সনদ লাভ করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বদিউজ্জামান। যিনি কোনো সরকারি পদে ছিলেন না কখনও। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছে। সেটা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন দুদকের কাছে। সেই সময়টাও মঞ্জুর করা হয়নি তাকে। যারা মাত্র ৫ বছর মন্ত্রী-এমপি হিসেবে শত শত গুণ সম্পদ বাড়িয়েছেন তাদের খবর নেই। যিনি কোনোদিন চাকরি করেননি, কোনোদিন রাজনীতি করেননি, কোনো ব্যবসা করেননি। শুধু পূর্ব-পুরুষদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা!
৭০ বছরের বেশি তার বয়স। একটি বনেদি পরিবারের সদস্য। শুশুর ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ব্যারিস্টার। তার দাদাশ্বশুরও ছিলেন ব্রিটিশ আমলে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বনেদি পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ তিনি ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে জনকল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। নীরবে সমাজসেবা করছেন তিনি। তার স্বামীও ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান। এরশাদ আমলে ছিলেন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তখন এক বিমান দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ তদারকির সময় হার্ট অ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি খান।
সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর একটাই অপরাধ। তিনি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ি। সুতরাং তার সম্পদের হিসাব চাইতে হবে। মামলা দিয়ে হয়রানি করতে হবে তাকে। এই হচ্ছে বদিউজ্জামান সাহেবদের কর্মসূচি।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
হাইকোর্টে মন্ত্রীর ফোন ও দুদকের ভেলকি আর কত দেখবে মানুষ ---------------------------------------------------------------------- বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়েছে। সরকারি চাপ থাকে উচ্চ আদালতেও। যার নমুনা পাওয়া গেল হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায়। গত সোমবার একটি মামলায় শুনানি পর্যায়ে মন্ত্রী ফোন করেন বিচারপতিকে। সেজন্য বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি একজন নীতিবান বিচারপতি হিসেবে আমরা জানি। নীতিবান বলে তাকে গুরুত্বহীন মামলার বেঞ্চে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। তার কাছেও ফোন করতে কসুর করেননি মন্ত্রী। এছাড়া বিচার বিভাগের ওপর সরকারি চাপের স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে স্কাইপ স্ক্যান্ডালে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের জবানিতে রয়েছে সরকারি সেই প্রভাবের বিবরণ। দলীয়করণ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদই দিলাম। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিক দুনিয়ার মানুষ দেখতে পেয়েছে। বিচার বিভাগ হচ্ছে এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়রানির অন্যতম একটি মাধ্যম। সরকার যেভাবে চায় সেভাবে অনেক আদেশ আসে। আসে রিমান্ডের নির্দেশনা। বিচার বিভাগ ব্যবহার করে সরকার নির্মম নির্যাতন করছে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর রিমান্ড আদেশের চিত্র দেখলে বোকাও বুঝতে পারে বিচারের নামে আসলে কি ঘটে। বহুবার এ নিয়ে সবিস্তার লিখেছি। লিখে কোনো কাজ হয় বলে মনে হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে কোনো চেতনা নেই। সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে এসব অন্যায়-অবিচার। তারপরও বলে যাচ্ছি অবিরাম। যদি কোনো কাজে আসে। মজলুমরা কিছুটা স্বস্তি পায়, সেই আশায়। সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এক সময় আপিল বিভাগের চেম্বার জজের দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া কতগুলো আদেশ নিয়ে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম তখন। এজন্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং আমাকে (অলিউল্লাহ নোমান) কারাদণ্ড দিয়েছিল। শুনানিতে আমাদের পক্ষে উপস্থাপন করা তথ্য প্রমাণের জবাবে আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিল ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। এখন পাঠক আপনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন বিচার বিভাগ আইনের শাসনের জন্য সত্য উদ্ঘাটন করে, নাকি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রায় দেয়। ২০১০ সালের মার্চ মাসে জেলা জজ আদালতে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলো। মামলাটি থেকে সেই প্রধান আসামির নাম প্রত্যাহারের আগেই দৈনিক আমার দেশ-এ রিপোর্ট করলাম। রিপোর্ট করার পর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করা হলো। তবে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে নিয়োগ দেয়া হলো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তির স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। সেই ব্যক্তিও নিয়োগ পেলেন বিচারপতি পদে। তাদের শপথ দিতে অস্বীকার করলেন একজন প্রধান বিচারপতি। শপথ হলো না। ৬ মাস পর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হলো। নিয়োগের ৬ মাস পর শপথ নিলেন ওই দুজন। এগুলো হচ্ছে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের ছোট্ট কিছু নমুনা! পর্দার আড়ালে আরও কত ঘটনা ঘটছে সেটাতো সাধারণ মানুষ জানেন না। মন্ত্রীরা হাইকোর্টে মামলা নিয়ে ফোন করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোনো কোনো পত্রিকা দেখলাম ভেতরের পাতায় কোনো রকমে একটু স্থান দিয়েছে। যদি বর্তমান আমলের বিপরীত কোনো সরকার থাকত ওই পত্রিকাগুলোই ব্যানার হেডিং করত এ ঘটনা। সুতরাং শুধু বিচার বিভাগ নয়, দলীয়করণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মিডিয়াও। ২০০৪ সালের নভেম্বরে তত্কালীন চারদলীয় জোট সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশ আমলে গঠিত দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে যায় কমিশন গঠনের দিন। সেদিন থেকে কমিশনের সঙ্গে আমিও জড়িত। কমিশনের চাকর হিসেবে নয়। কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল দৈনিক আমার দেশ থেকে। কমিশনের নানা কিছু ঘটেছে আমার চোখের সামনে। লিখেছি অসংখ্য রিপোর্ট। কমিশন গঠনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেগুন বাগিচায়। ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের সময় কমিশনের দাপট দেখেছি। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে অপমানজনক বিদায় দেয়া হলো। নতুন কমিশন নিয়োগ হয়নি। আছেন শুধু একজন সরকারি আমলার নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কমিশন ছাড়াই সচিবের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো। সচিব সাহেব সেই তালিকা সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং শীর্ষ রাজনীতিকদের নাম ছিল এই তালিকায়। একে একে ৩টি তালিকা প্রকাশ করল দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। তালিকাগুলো দুদকের তৈরি নয়। তাদের কোনো অনুসন্ধান বা গবেষণার ফসলও নয়। জরুরি আইনের সরকারের বিশেষ জায়গা থেকে নাজিল হতো। আর সেটা প্রকাশ করত কমিশন। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা, কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং চরিত্র হনন করাই ছিল মূল কাজ। কমিশনের তত্কালীন মহাপরিচালন কর্নেল হানিফ সাহেব মিডিয়া ট্রায়ালের নায়ক ছিলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর কমিশনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। দাপুটে চেয়ারম্যান সাবেক লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করে বিদায় নেন। যদিও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার সময় বলেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য তিনি এখানে আসেননি। তবে পদত্যাগ করেই তাকে বিদায় নিতে হয়। হাসান মশহুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকার লোক নন। এজন্য তাকে বিদায় নিতে হয় পদত্যাগ করে। হাসান মশহুদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অপর দুজন পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ছিলেন। জেনারেল হাসান মশহুদের বিদায়ের পর কমিশন পুরো আওয়ামীকরণ হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কারও দুর্নীতি দেখেননি কমিশন জীবনের ৪ বছরে। আওয়ামী লীগ সরকারের কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবুর বাসামুখী গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি ঘুষের টাকা উদ্ধার হলো। তারপরও গোলাম রহমানের কমিশন একেবারে নিষ্কলুষ সার্টিফিকেট দেয় সুরঞ্জিত বাবুকে। শুধু সুরঞ্জিত বাবু নন, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করল সৈয়দ আবুল হোসেনকে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো জাতিকে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা টাকা ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই আবুল হোসনকেও ধোয়া তুলসিপাতা হিসেবে একখানা সনদ দিলেন গোলাম রহমান। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতির মামলাগুলো বিনা বাধায় আদালতে খারিজের ব্যবস্থা হলো গোলাম রহমানের তত্ত্বাবধানে। বিরোধী দলের সব মামলা পুরো সচল হলো। নতুন মামলা হলো একের পর এক। এমনকি মাহমুদুর রহমানের মতো একজন নিষ্ঠাবান সত্ মানুষের বিরুদ্ধে লাগল দুদক। যদিও তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ থাকলে যে কোনো বিচার তিনি মাথা পেতে নেবেন। গোলাম রহমানের পর বদিউজ্জাম সাহেব চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন। গোলাম রহমানের কার্যক্রমের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক পরিচয় রেখে গেছেন। আবুল হোসেন এবং সুরঞ্জিত বাবুকে ধোয়া তুলসিপাতার সার্টিফিকেট দেয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছেন বিশ্ববাসী। বদিউজ্জামান সাহেব নিজেই জাতির সামনে রাজনৈতিক পরিচয় উপস্থাপন করছেন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছেন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। গত ৩ ফেবু্রয়ারি বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বদিউজ্জামান সাহেব লক্ষ্মীপুরে সরকার নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন। এটা হলো স্রেফ রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। একই দিনে দাওয়াত খেয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের বাড়িতে। দাওয়াতে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষেই এই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান। স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে যে কোনো কাজ করতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে। কমিশনকে আওয়ামীকরণের স্বাধীনতাও রয়েছে তার। লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের পরিচয় সবারই কম বেশি জানা আছে। বহুল সমালোচিত ব্যক্তি তিনি। এক সময় যার সন্ত্রাস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা ছিল। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত সন্ত্রাস ও খুনের আসামি ছিলেন তিনি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে নিজের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় তাহের বাহিনী। স্ত্রী-সন্তানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে। গুম করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের লাশ। আজও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ ঘটনার বিচার হয়েছিল। বিচারে আবু তাহেরের যাবজ্জীবন এবং তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন মুক্ত আবু তাহেরের ছেলে। তার বাড়িতে আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দাওয়াত খেয়েছেন বদিউজ্জামান সাহেব। এতে দোষের কিছু দেখছি না। এরপরও কি তার দলীয় পরিচয় বলার প্রয়োজন রয়েছে! দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে আর খাটো করতে চাই না তাকে। এ বদিউজ্জামানের নেতৃত্বেই দুদক পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি তার চোখে ধরা পড়ে না। তার রাডারের বাইরে আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি। তামাশার নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়েছে। জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে ৫ বছরে আয়ের খতিয়ান দেখে অনেকেই আতকে উঠেছেন। কিন্তু সেটা দুদকের রাডারে ধরা পড়েনি। ধরা পড়ার কথাও নয়। মিডিয়ার সমালোচনা সামাল দিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্তের কথা ইদানীং বলা হয়েছে। তাও আবার সবার বিরুদ্ধে নয়। তাদের মধ্যে কতজন ধোয়া তুলসিপাতার সনদ লাভ করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বদিউজ্জামান। যিনি কোনো সরকারি পদে ছিলেন না কখনও। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছে। সেটা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন দুদকের কাছে। সেই সময়টাও মঞ্জুর করা হয়নি তাকে। যারা মাত্র ৫ বছর মন্ত্রী-এমপি হিসেবে শত শত গুণ সম্পদ বাড়িয়েছেন তাদের খবর নেই। যিনি কোনোদিন চাকরি করেননি, কোনোদিন রাজনীতি করেননি, কোনো ব্যবসা করেননি। শুধু পূর্ব-পুরুষদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা! ৭০ বছরের বেশি তার বয়স। একটি বনেদি পরিবারের সদস্য। শুশুর ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ব্যারিস্টার। তার দাদাশ্বশুরও ছিলেন ব্রিটিশ আমলে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বনেদি পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ তিনি ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে জনকল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। নীরবে সমাজসেবা করছেন তিনি। তার স্বামীও ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান। এরশাদ আমলে ছিলেন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তখন এক বিমান দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ তদারকির সময় হার্ট অ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি খান। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর একটাই অপরাধ। তিনি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ি। সুতরাং তার সম্পদের হিসাব চাইতে হবে। মামলা দিয়ে হয়রানি করতে হবে তাকে। এই হচ্ছে বদিউজ্জামান সাহেবদের কর্মসূচি। লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
----------------------------------------------------------------------
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়েছে। সরকারি চাপ থাকে উচ্চ আদালতেও। যার নমুনা পাওয়া গেল হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায়। গত সোমবার একটি মামলায় শুনানি পর্যায়ে মন্ত্রী ফোন করেন বিচারপতিকে। সেজন্য বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি একজন নীতিবান বিচারপতি হিসেবে আমরা জানি। নীতিবান বলে তাকে গুরুত্বহীন মামলার বেঞ্চে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। তার কাছেও ফোন করতে কসুর করেননি মন্ত্রী। এছাড়া বিচার বিভাগের ওপর সরকারি চাপের স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে স্কাইপ স্ক্যান্ডালে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের জবানিতে রয়েছে সরকারি সেই প্রভাবের বিবরণ।
দলীয়করণ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদই দিলাম। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিক দুনিয়ার মানুষ দেখতে পেয়েছে। বিচার বিভাগ হচ্ছে এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়রানির অন্যতম একটি মাধ্যম। সরকার যেভাবে চায় সেভাবে অনেক আদেশ আসে। আসে রিমান্ডের নির্দেশনা। বিচার বিভাগ ব্যবহার করে সরকার নির্মম নির্যাতন করছে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর রিমান্ড আদেশের চিত্র দেখলে বোকাও বুঝতে পারে বিচারের নামে আসলে কি ঘটে। বহুবার এ নিয়ে সবিস্তার লিখেছি। লিখে কোনো কাজ হয় বলে মনে হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে কোনো চেতনা নেই। সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে এসব অন্যায়-অবিচার। তারপরও বলে যাচ্ছি অবিরাম। যদি কোনো কাজে আসে। মজলুমরা কিছুটা স্বস্তি পায়, সেই আশায়।
সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এক সময় আপিল বিভাগের চেম্বার জজের দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া কতগুলো আদেশ নিয়ে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম তখন। এজন্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং আমাকে (অলিউল্লাহ নোমান) কারাদণ্ড দিয়েছিল। শুনানিতে আমাদের পক্ষে উপস্থাপন করা তথ্য প্রমাণের জবাবে আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিল ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। এখন পাঠক আপনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন বিচার বিভাগ আইনের শাসনের জন্য সত্য উদ্ঘাটন করে, নাকি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রায় দেয়।
২০১০ সালের মার্চ মাসে জেলা জজ আদালতে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলো। মামলাটি থেকে সেই প্রধান আসামির নাম প্রত্যাহারের আগেই দৈনিক আমার দেশ-এ রিপোর্ট করলাম। রিপোর্ট করার পর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করা হলো। তবে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে নিয়োগ দেয়া হলো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তির স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। সেই ব্যক্তিও নিয়োগ পেলেন বিচারপতি পদে। তাদের শপথ দিতে অস্বীকার করলেন একজন প্রধান বিচারপতি। শপথ হলো না। ৬ মাস পর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হলো। নিয়োগের ৬ মাস পর শপথ নিলেন ওই দুজন। এগুলো হচ্ছে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের ছোট্ট কিছু নমুনা! পর্দার আড়ালে আরও কত ঘটনা ঘটছে সেটাতো সাধারণ মানুষ জানেন না। মন্ত্রীরা হাইকোর্টে মামলা নিয়ে ফোন করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোনো কোনো পত্রিকা দেখলাম ভেতরের পাতায় কোনো রকমে একটু স্থান দিয়েছে। যদি বর্তমান আমলের বিপরীত কোনো সরকার থাকত ওই পত্রিকাগুলোই ব্যানার হেডিং করত এ ঘটনা। সুতরাং শুধু বিচার বিভাগ নয়, দলীয়করণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মিডিয়াও।
২০০৪ সালের নভেম্বরে তত্কালীন চারদলীয় জোট সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশ আমলে গঠিত দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে যায় কমিশন গঠনের দিন। সেদিন থেকে কমিশনের সঙ্গে আমিও জড়িত। কমিশনের চাকর হিসেবে নয়। কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল দৈনিক আমার দেশ থেকে। কমিশনের নানা কিছু ঘটেছে আমার চোখের সামনে। লিখেছি অসংখ্য রিপোর্ট। কমিশন গঠনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেগুন বাগিচায়। ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের সময় কমিশনের দাপট দেখেছি।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে অপমানজনক বিদায় দেয়া হলো। নতুন কমিশন নিয়োগ হয়নি। আছেন শুধু একজন সরকারি আমলার নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কমিশন ছাড়াই সচিবের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো। সচিব সাহেব সেই তালিকা সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং শীর্ষ রাজনীতিকদের নাম ছিল এই তালিকায়। একে একে ৩টি তালিকা প্রকাশ করল দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। তালিকাগুলো দুদকের তৈরি নয়। তাদের কোনো অনুসন্ধান বা গবেষণার ফসলও নয়। জরুরি আইনের সরকারের বিশেষ জায়গা থেকে নাজিল হতো। আর সেটা প্রকাশ করত কমিশন। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা, কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং চরিত্র হনন করাই ছিল মূল কাজ। কমিশনের তত্কালীন মহাপরিচালন কর্নেল হানিফ সাহেব মিডিয়া ট্রায়ালের নায়ক ছিলেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর কমিশনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। দাপুটে চেয়ারম্যান সাবেক লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করে বিদায় নেন। যদিও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার সময় বলেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য তিনি এখানে আসেননি। তবে পদত্যাগ করেই তাকে বিদায় নিতে হয়। হাসান মশহুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকার লোক নন। এজন্য তাকে বিদায় নিতে হয় পদত্যাগ করে। হাসান মশহুদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অপর দুজন পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ছিলেন।
জেনারেল হাসান মশহুদের বিদায়ের পর কমিশন পুরো আওয়ামীকরণ হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কারও দুর্নীতি দেখেননি কমিশন জীবনের ৪ বছরে। আওয়ামী লীগ সরকারের কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবুর বাসামুখী গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি ঘুষের টাকা উদ্ধার হলো। তারপরও গোলাম রহমানের কমিশন একেবারে নিষ্কলুষ সার্টিফিকেট দেয় সুরঞ্জিত বাবুকে। শুধু সুরঞ্জিত বাবু নন, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করল সৈয়দ আবুল হোসেনকে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো জাতিকে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা টাকা ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই আবুল হোসনকেও ধোয়া তুলসিপাতা হিসেবে একখানা সনদ দিলেন গোলাম রহমান। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতির মামলাগুলো বিনা বাধায় আদালতে খারিজের ব্যবস্থা হলো গোলাম রহমানের তত্ত্বাবধানে। বিরোধী দলের সব মামলা পুরো সচল হলো। নতুন মামলা হলো একের পর এক। এমনকি মাহমুদুর রহমানের মতো একজন নিষ্ঠাবান সত্ মানুষের বিরুদ্ধে লাগল দুদক। যদিও তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ থাকলে যে কোনো বিচার তিনি মাথা পেতে নেবেন।
গোলাম রহমানের পর বদিউজ্জাম সাহেব চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন।
গোলাম রহমানের কার্যক্রমের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক পরিচয় রেখে গেছেন। আবুল হোসেন এবং সুরঞ্জিত বাবুকে ধোয়া তুলসিপাতার সার্টিফিকেট দেয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছেন বিশ্ববাসী। বদিউজ্জামান সাহেব নিজেই জাতির সামনে রাজনৈতিক পরিচয় উপস্থাপন করছেন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছেন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। গত ৩ ফেবু্রয়ারি বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বদিউজ্জামান সাহেব লক্ষ্মীপুরে সরকার নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন। এটা হলো স্রেফ রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। একই দিনে দাওয়াত খেয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের বাড়িতে। দাওয়াতে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষেই এই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান। স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে যে কোনো কাজ করতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে। কমিশনকে আওয়ামীকরণের স্বাধীনতাও রয়েছে তার।
লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের পরিচয় সবারই কম বেশি জানা আছে। বহুল সমালোচিত ব্যক্তি তিনি। এক সময় যার সন্ত্রাস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা ছিল। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত সন্ত্রাস ও খুনের আসামি ছিলেন তিনি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে নিজের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় তাহের বাহিনী। স্ত্রী-সন্তানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে। গুম করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের লাশ। আজও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ ঘটনার বিচার হয়েছিল।
বিচারে আবু তাহেরের যাবজ্জীবন এবং তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন মুক্ত আবু তাহেরের ছেলে। তার বাড়িতে আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দাওয়াত খেয়েছেন বদিউজ্জামান সাহেব। এতে দোষের কিছু দেখছি না। এরপরও কি তার দলীয় পরিচয় বলার প্রয়োজন রয়েছে! দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে আর খাটো করতে চাই না তাকে।
এ বদিউজ্জামানের নেতৃত্বেই দুদক পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি তার চোখে ধরা পড়ে না। তার রাডারের বাইরে আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি। তামাশার নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়েছে। জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে ৫ বছরে আয়ের খতিয়ান দেখে অনেকেই আতকে উঠেছেন। কিন্তু সেটা দুদকের রাডারে ধরা পড়েনি। ধরা পড়ার কথাও নয়। মিডিয়ার সমালোচনা সামাল দিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্তের কথা ইদানীং বলা হয়েছে। তাও আবার সবার বিরুদ্ধে নয়। তাদের মধ্যে কতজন ধোয়া তুলসিপাতার সনদ লাভ করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বদিউজ্জামান। যিনি কোনো সরকারি পদে ছিলেন না কখনও। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছে। সেটা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন দুদকের কাছে। সেই সময়টাও মঞ্জুর করা হয়নি তাকে। যারা মাত্র ৫ বছর মন্ত্রী-এমপি হিসেবে শত শত গুণ সম্পদ বাড়িয়েছেন তাদের খবর নেই। যিনি কোনোদিন চাকরি করেননি, কোনোদিন রাজনীতি করেননি, কোনো ব্যবসা করেননি। শুধু পূর্ব-পুরুষদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা!
৭০ বছরের বেশি তার বয়স। একটি বনেদি পরিবারের সদস্য। শুশুর ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ব্যারিস্টার। তার দাদাশ্বশুরও ছিলেন ব্রিটিশ আমলে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বনেদি পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ তিনি ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে জনকল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। নীরবে সমাজসেবা করছেন তিনি। তার স্বামীও ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান। এরশাদ আমলে ছিলেন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তখন এক বিমান দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ তদারকির সময় হার্ট অ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি খান।
সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর একটাই অপরাধ। তিনি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ি। সুতরাং তার সম্পদের হিসাব চাইতে হবে। মামলা দিয়ে হয়রানি করতে হবে তাকে। এই হচ্ছে বদিউজ্জামান সাহেবদের কর্মসূচি।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
হাইকোর্টে মন্ত্রীর ফোন ও দুদকের ভেলকি আর কত দেখবে মানুষ ---------------------------------------------------------------------- বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়েছে। সরকারি চাপ থাকে উচ্চ আদালতেও। যার নমুনা পাওয়া গেল হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায়। গত সোমবার একটি মামলায় শুনানি পর্যায়ে মন্ত্রী ফোন করেন বিচারপতিকে। সেজন্য বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি একজন নীতিবান বিচারপতি হিসেবে আমরা জানি। নীতিবান বলে তাকে গুরুত্বহীন মামলার বেঞ্চে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। তার কাছেও ফোন করতে কসুর করেননি মন্ত্রী। এছাড়া বিচার বিভাগের ওপর সরকারি চাপের স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে স্কাইপ স্ক্যান্ডালে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের জবানিতে রয়েছে সরকারি সেই প্রভাবের বিবরণ। দলীয়করণ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদই দিলাম। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিক দুনিয়ার মানুষ দেখতে পেয়েছে। বিচার বিভাগ হচ্ছে এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়রানির অন্যতম একটি মাধ্যম। সরকার যেভাবে চায় সেভাবে অনেক আদেশ আসে। আসে রিমান্ডের নির্দেশনা। বিচার বিভাগ ব্যবহার করে সরকার নির্মম নির্যাতন করছে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর রিমান্ড আদেশের চিত্র দেখলে বোকাও বুঝতে পারে বিচারের নামে আসলে কি ঘটে। বহুবার এ নিয়ে সবিস্তার লিখেছি। লিখে কোনো কাজ হয় বলে মনে হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে কোনো চেতনা নেই। সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে এসব অন্যায়-অবিচার। তারপরও বলে যাচ্ছি অবিরাম। যদি কোনো কাজে আসে। মজলুমরা কিছুটা স্বস্তি পায়, সেই আশায়। সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এক সময় আপিল বিভাগের চেম্বার জজের দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া কতগুলো আদেশ নিয়ে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম তখন। এজন্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং আমাকে (অলিউল্লাহ নোমান) কারাদণ্ড দিয়েছিল। শুনানিতে আমাদের পক্ষে উপস্থাপন করা তথ্য প্রমাণের জবাবে আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিল ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। এখন পাঠক আপনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন বিচার বিভাগ আইনের শাসনের জন্য সত্য উদ্ঘাটন করে, নাকি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রায় দেয়। ২০১০ সালের মার্চ মাসে জেলা জজ আদালতে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলো। মামলাটি থেকে সেই প্রধান আসামির নাম প্রত্যাহারের আগেই দৈনিক আমার দেশ-এ রিপোর্ট করলাম। রিপোর্ট করার পর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করা হলো। তবে চলমান খুনের মামলার প্রধান আসামিকে নিয়োগ দেয়া হলো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তির স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। সেই ব্যক্তিও নিয়োগ পেলেন বিচারপতি পদে। তাদের শপথ দিতে অস্বীকার করলেন একজন প্রধান বিচারপতি। শপথ হলো না। ৬ মাস পর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হলো। নিয়োগের ৬ মাস পর শপথ নিলেন ওই দুজন। এগুলো হচ্ছে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের ছোট্ট কিছু নমুনা! পর্দার আড়ালে আরও কত ঘটনা ঘটছে সেটাতো সাধারণ মানুষ জানেন না। মন্ত্রীরা হাইকোর্টে মামলা নিয়ে ফোন করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোনো কোনো পত্রিকা দেখলাম ভেতরের পাতায় কোনো রকমে একটু স্থান দিয়েছে। যদি বর্তমান আমলের বিপরীত কোনো সরকার থাকত ওই পত্রিকাগুলোই ব্যানার হেডিং করত এ ঘটনা। সুতরাং শুধু বিচার বিভাগ নয়, দলীয়করণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মিডিয়াও। ২০০৪ সালের নভেম্বরে তত্কালীন চারদলীয় জোট সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশ আমলে গঠিত দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে যায় কমিশন গঠনের দিন। সেদিন থেকে কমিশনের সঙ্গে আমিও জড়িত। কমিশনের চাকর হিসেবে নয়। কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল দৈনিক আমার দেশ থেকে। কমিশনের নানা কিছু ঘটেছে আমার চোখের সামনে। লিখেছি অসংখ্য রিপোর্ট। কমিশন গঠনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেগুন বাগিচায়। ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের সময় কমিশনের দাপট দেখেছি। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে অপমানজনক বিদায় দেয়া হলো। নতুন কমিশন নিয়োগ হয়নি। আছেন শুধু একজন সরকারি আমলার নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কমিশন ছাড়াই সচিবের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো। সচিব সাহেব সেই তালিকা সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং শীর্ষ রাজনীতিকদের নাম ছিল এই তালিকায়। একে একে ৩টি তালিকা প্রকাশ করল দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। তালিকাগুলো দুদকের তৈরি নয়। তাদের কোনো অনুসন্ধান বা গবেষণার ফসলও নয়। জরুরি আইনের সরকারের বিশেষ জায়গা থেকে নাজিল হতো। আর সেটা প্রকাশ করত কমিশন। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা, কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং চরিত্র হনন করাই ছিল মূল কাজ। কমিশনের তত্কালীন মহাপরিচালন কর্নেল হানিফ সাহেব মিডিয়া ট্রায়ালের নায়ক ছিলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর কমিশনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। দাপুটে চেয়ারম্যান সাবেক লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করে বিদায় নেন। যদিও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার সময় বলেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য তিনি এখানে আসেননি। তবে পদত্যাগ করেই তাকে বিদায় নিতে হয়। হাসান মশহুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকার লোক নন। এজন্য তাকে বিদায় নিতে হয় পদত্যাগ করে। হাসান মশহুদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অপর দুজন পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ছিলেন। জেনারেল হাসান মশহুদের বিদায়ের পর কমিশন পুরো আওয়ামীকরণ হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কারও দুর্নীতি দেখেননি কমিশন জীবনের ৪ বছরে। আওয়ামী লীগ সরকারের কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবুর বাসামুখী গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি ঘুষের টাকা উদ্ধার হলো। তারপরও গোলাম রহমানের কমিশন একেবারে নিষ্কলুষ সার্টিফিকেট দেয় সুরঞ্জিত বাবুকে। শুধু সুরঞ্জিত বাবু নন, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করল সৈয়দ আবুল হোসেনকে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো জাতিকে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা টাকা ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই আবুল হোসনকেও ধোয়া তুলসিপাতা হিসেবে একখানা সনদ দিলেন গোলাম রহমান। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতির মামলাগুলো বিনা বাধায় আদালতে খারিজের ব্যবস্থা হলো গোলাম রহমানের তত্ত্বাবধানে। বিরোধী দলের সব মামলা পুরো সচল হলো। নতুন মামলা হলো একের পর এক। এমনকি মাহমুদুর রহমানের মতো একজন নিষ্ঠাবান সত্ মানুষের বিরুদ্ধে লাগল দুদক। যদিও তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ থাকলে যে কোনো বিচার তিনি মাথা পেতে নেবেন। গোলাম রহমানের পর বদিউজ্জাম সাহেব চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন। গোলাম রহমানের কার্যক্রমের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক পরিচয় রেখে গেছেন। আবুল হোসেন এবং সুরঞ্জিত বাবুকে ধোয়া তুলসিপাতার সার্টিফিকেট দেয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছেন বিশ্ববাসী। বদিউজ্জামান সাহেব নিজেই জাতির সামনে রাজনৈতিক পরিচয় উপস্থাপন করছেন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছেন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। গত ৩ ফেবু্রয়ারি বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বদিউজ্জামান সাহেব লক্ষ্মীপুরে সরকার নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন। এটা হলো স্রেফ রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। একই দিনে দাওয়াত খেয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের বাড়িতে। দাওয়াতে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষেই এই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান। স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে যে কোনো কাজ করতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তার রয়েছে। কমিশনকে আওয়ামীকরণের স্বাধীনতাও রয়েছে তার। লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের পরিচয় সবারই কম বেশি জানা আছে। বহুল সমালোচিত ব্যক্তি তিনি। এক সময় যার সন্ত্রাস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা ছিল। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত সন্ত্রাস ও খুনের আসামি ছিলেন তিনি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে নিজের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় তাহের বাহিনী। স্ত্রী-সন্তানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে। গুম করা হয় অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের লাশ। আজও লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ ঘটনার বিচার হয়েছিল। বিচারে আবু তাহেরের যাবজ্জীবন এবং তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন মুক্ত আবু তাহেরের ছেলে। তার বাড়িতে আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দাওয়াত খেয়েছেন বদিউজ্জামান সাহেব। এতে দোষের কিছু দেখছি না। এরপরও কি তার দলীয় পরিচয় বলার প্রয়োজন রয়েছে! দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে আর খাটো করতে চাই না তাকে। এ বদিউজ্জামানের নেতৃত্বেই দুদক পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি তার চোখে ধরা পড়ে না। তার রাডারের বাইরে আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতি। তামাশার নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়েছে। জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে ৫ বছরে আয়ের খতিয়ান দেখে অনেকেই আতকে উঠেছেন। কিন্তু সেটা দুদকের রাডারে ধরা পড়েনি। ধরা পড়ার কথাও নয়। মিডিয়ার সমালোচনা সামাল দিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্তের কথা ইদানীং বলা হয়েছে। তাও আবার সবার বিরুদ্ধে নয়। তাদের মধ্যে কতজন ধোয়া তুলসিপাতার সনদ লাভ করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বদিউজ্জামান। যিনি কোনো সরকারি পদে ছিলেন না কখনও। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছে। সেটা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন দুদকের কাছে। সেই সময়টাও মঞ্জুর করা হয়নি তাকে। যারা মাত্র ৫ বছর মন্ত্রী-এমপি হিসেবে শত শত গুণ সম্পদ বাড়িয়েছেন তাদের খবর নেই। যিনি কোনোদিন চাকরি করেননি, কোনোদিন রাজনীতি করেননি, কোনো ব্যবসা করেননি। শুধু পূর্ব-পুরুষদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা! ৭০ বছরের বেশি তার বয়স। একটি বনেদি পরিবারের সদস্য। শুশুর ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ব্যারিস্টার। তার দাদাশ্বশুরও ছিলেন ব্রিটিশ আমলে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বনেদি পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ তিনি ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে জনকল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। নীরবে সমাজসেবা করছেন তিনি। তার স্বামীও ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান। এরশাদ আমলে ছিলেন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তখন এক বিমান দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ তদারকির সময় হার্ট অ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি খান। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর একটাই অপরাধ। তিনি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাশুড়ি। সুতরাং তার সম্পদের হিসাব চাইতে হবে। মামলা দিয়ে হয়রানি করতে হবে তাকে। এই হচ্ছে বদিউজ্জামান সাহেবদের কর্মসূচি।
©somewhere in net ltd.