![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খন আর ইহুদীদের স্বপ্ন নয়, বাস্তব
গ্রেটার ইসরাইল ! জয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ
যুদ্ধ প্রধানত দুই প্রকার, একটি আগ্রাসনের যুদ্ধ (ওয়ার অফ আগ্রেশন) অপরটি হল মুক্তি যুদ্ধ (ওয়ার অফ লিবারেশন)। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে এখন কোন ধরনের যুদ্ধ চলছে? হামাস প্রথমে কোন সশস্ত্র আক্রমণ করেনি এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ ঘোষণা করেনি সুতরাং আমরা কোন ভাবেই বলতে পারব না যে ফিলিস্তিন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর ইসরাইল যেহেতু আক্রমণ করছে, শত শত মানুষ মারছে সেহেতু ইসরাইলই যুদ্ধ শুরু করেছে এটা আমরা খুবই সহজে বুঝতে পারছি। আমাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে – কিসের জন্য এই যুদ্ধ? কিসের জন্য এই যুদ্ধ তা নিয়ে বলবার আগে আমাদের ভাবতে হবে এটি কোন ধরনের যুদ্ধ। এটি কি আগ্রাসনের যুদ্ধ না মুক্তি যুদ্ধ? ইসরাইল একটি নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাই ইসরাইল এর মুক্তি যুদ্ধ করার মতো কোন কারন নেই এটা নিশ্চিত। তাহলে কি এটি আগ্রাসনের যুদ্ধ? সেই উনিশ শতকের গোরা থেকে ফিলিস্তিনের ভূমি একটু একটু করে দখল করে আসছে ইসরাইল অর্থাৎ তখন থেকে যখন ইসরাইল নামে কোন রাষ্ট্র ছিলনা। উনিশ শতকের গোরার দিকে প্রমিস ল্যান্ড এর দোহাই দিয়ে ইহুদীদের প্রবেশ, অভিবাসন এবং বংশ বৃদ্ধির কথা আমাদের সবারই জানা। আর তা ঘটেছিল ব্রিটিশ কূট কৌশলের মাধ্যমে যে বিষয়ে পশ্চিমা দেশ গুলোর সম্মতিও ছিল বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে এময় স্মরণ না করলেই নয়। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা পরাশক্তির সাম্রাজ্যবাদ প্রতিস্টা করার জন্যই ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এমনটি বললে খুব ভুল কিছু বলা হবে কি? ফিনিস্তিনি আরবদের ভিতর এবং মধ্য প্রাচ্যে বুদ্ধি করে ইহুদীদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করানোর প্রচেষ্টা প্রায় সফল থেকে সফলতর হতে চলেছে ব্রিটিশ ও আমেরিকান কূট শক্তির। আর হবেই না কেন? এরাইতো এখন বিশ্বের মোড়ল। যা খুশি করতে পারে। এদের কথায় উঠছে বসছে আরব দেশ গুলো। এদের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কাছে পরাধীন মধ্যপ্রাচ্য এর স্বাধীন সত্ত্বা। আরও একটু পিছনে যাই। ১৯১৮ সালে বৃটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদী বাহিনী “হাগানাহ” গঠিত হয়। এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের অবৈধ রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়। ফিলিস্তিনী জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করা এবং বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশ স্থলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের বিতাড়নের কাজ ত্বরান্বিত করা ছিল হাগানাহ বাহিনীর কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবেই একসময়ের আশ্রিত ইহুদীরা হয়ে উঠে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র। কিন্তু না তাতে পেট ভরছেনা পশ্চিমাদের। এবার পুরো গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে দখল করতে হবে তারপর ফিলিস্তিনকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে (যেমনটি ইরাক ও আফগানস্থান এ হয়েছে) ধরতে হবে। এবং ইহুদীদের স্বপ্ন হল গ্রেটার ইসরাইল তৈরি করা। হামাস কে হটিয়ে গাজা, ওয়েস্টব্যাঙ্ক এর উপর আগ্রাসন চালান। ইসরাইল গাজা ও ওয়েস্টব্যাঙ্ক নিয়ে গঠন করা গ্রেটার ইসরাইল। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়াল? আপনি যাকে আপনার বাসায় আশ্রয় দিলেন পরে সেই আশ্রিতের কাছেই আপনি এখন আশ্রয় চাইবেন। আর এ কাজের সবচেয়ে বড় কাজী হচ্ছে আমেরিকা। যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় বলি নাঁটের গুরু। ভেবে দেখুন পশ্চিমাদের এই কূট কৌশলের গভীরতা ও দক্ষতার মাত্রা ! আর ইসরাইল-পদ্ধতি দিয়ে সফল না হলে সাদ্দাম কে হত্যা করে ইরাক এ তাবিদারি সরকার তো বসানোই আছে। মিশরকেও চাপের উপর রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনের বন্ধু হিসাবে পরিচিত জর্ডান, লেবানন, সৌদি, কাতার মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তুর্কি একটু সাহস করে কিছু বলেছে কিন্তু একা তার কথায় কি হবে। মুর্দা কথা আরব দেশ গুলোর বিপুল খনিজ সম্পদের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বজায় রাখাই মূল উদ্দেশ্য পশ্চিমাদের। তাহলে আমরা স্পষ্ট করে এখন বলতে পারি যে ইসরাইল এটি আগ্রাসনের যুদ্ধ করছে আর এ সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি লাভবান হবে ইসরাইল আর পরোক্ষভাবে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য তথা পশ্চিম বিশ্ব। মাঝখান থেকে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ বহু মানুষ। শিশুদের ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখে আমরা আহা উহু করব কিছু দিন তারপর ভুলে যাব নিকট ভবিষ্যতেই। আমরা সধারন মানুষ। জীবন জীবিকার যুদ্ধে এতোকিছু মনে রাখতে পারিনা। আজকে যখন এই লেখাটি লিখছি তখনও কেউ না কেউ মরছে বা আহত হচ্ছে গাজাতে। আর এ মৃত্যুর দায় কে নেবে? সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন – ব্রিটিশ শক্তির নামে ইতিহাসে এ দায় লেখা না হলেও এই ষড়যন্ত্র কঙ্কিত করবে মানবতার ইতিহাসকে যুগে যুগে নিশ্চয়। সবশেষে আমার এটাই মনে হচ্ছে এই সংঘাতের সবচেয়ে বীভৎস দিক হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা যা আরও প্রকট হবে মধ্যপ্রাচ্যে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো হারাতে পারে তাদের স্বাতন্ত্র্য বাড়তে পারে অধীনতা। এখনি যদি মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে ঐক্য না দেখা যায়, তারা যদি একে অপরকে প্রতক্ষ্য ভাবে সহযোগিতা করতে শুরু না করে তবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জয় হতে পারে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের।
©somewhere in net ltd.