![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রসঙ্গ: আল্লাহর ৯৯ নাম দেবতাদের নাম থেকে এডাপ্ট’
গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যের একটি একাডেমিক জবাব
(পর্ব - ১)
নিউ ইয়র্কে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর দেয়া ‘একাডেমিক’ বক্তব্যের একটি একাডেমিক জবাব লিখবো ভাবছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। তাই ভাবছিলাম আর লিখবো না, কিন্তু বিবেকের তাড়নায় লিখতে হলো। কারণ গাফ্ফার চৌধুরী গত ২০শে জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে তার একটি কলামে লিখেছেন ‘আমি যদি ভুল বলে থাকি, তাহলে নিশ্চয়ই আমার বক্তব্য কেউ খ-ন করতে পারেন এবং আমিও ভুল শোধরাতে পারি।’ তাছাড়া তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে না বুঝে অনেকেই অনেক কিছু লিখছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন। তাই এ ব্যাপারে তথ্যভিত্তিক একটি লেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করি। তবে এ লেখার মাধ্যমে তাঁকে শোধরানোর কোন দায়িত্ব বা উদ্দেশ্য আমার নেই। শুধু কুরআন-হাদিসের আলোকে একটি দালিলিক জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো। এই লেখাটি পড়ে মনঃপূত হলে গাফ্ফার চৌধুরী চিন্তা করে দেখতে পারেন তাঁর দেয়া বক্তব্য সঠিক কি-না। আর সঠিক না হলে তাঁর করণীয় কী? আর দ্বিমত করলে একটি পাল্টা লেখা পাঠাতে পারেন। অবশ্যই সেটি ছাপানো হবে- যদি তা কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। সাপ্তাহিক দেশ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের অগে আমি দীর্ঘ প্রায় এক দশক সাপ্তাহিক নতুন দিনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম। তিনি এই কাগজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আমার যোগদানের পর তিনি কিছুদিন নতুন দিনে নিয়মিত লিখেছেন। এই সূত্রে তাঁর সাথে প্রায়শই যোগাযোগ হতো। তাঁর সাথে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। সেটি কোনদিন সময়-সুযোগে প্রয়োজন হলে লিখবো। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, এখনও করেন কি-না জানি না! তবে একজন বর্ষীয়ান ও বিজ্ঞ সাংবাদিক হিসেবে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধার কোন কমতি নেই। গঠনমূলক সমালোচনার অর্থ কাউকে অশ্রদ্ধা করা নয়। অতএব, তিনি এই আলোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবেন বলে আশা রাখি। সে যাক, এবার মূল আলোচনায় মনোনিবেশ করা যাক। গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা পাঠকদের সুবিধার্থে পুনরায় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ৩রা জুলাই শুক্রবার বিকালে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে তিনি ‘বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একক বক্তব্য রাখেন। সভায় তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি, এর ব্যবহার, হাজার বছর আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা গ্রহণ ও বর্জনের ইতিকথা তুলে ধরেন। বাংলা ভাষার বিবর্তনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ্র যে ৯৯ নাম রয়েছে এগুলো কাফেরদের দেবতাদের নাম থেকে এডাপ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশে আরবি ভাষায় সন্তানের নামকরণের প্রবণতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে বেশি হাদিস সংগ্রহকারী আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা। আর আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছেÑ ছাগলের বাবা। বাংলাদেশের মানুষ অর্থ না জেনে এসব নাম রাখে। আরবে কোথাও এসব নাম পাওয়া যাবে না। বক্তৃতার একপর্যায়ে বাঙালি মহিলাদের হিজাব পরার বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন- বাঙালি নারীরা শাড়ি পরবেন, কপালে টিপ দেবেন, এটা আমাদের সংস্কৃতি। তাঁর এ বক্তব্যের পর দেশে-বিদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলে তিনি নিউ ইয়র্কের স্থানীয় একটি টেলিভিশনে তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দেন। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমি ভুল কিছু বলিনি। আমি বড় মুসলমান। তিনি আবারও বলেন, আল্লাহ্ নামতো আগে কাফেরদের দেবতার নাম ছিল। তা না হলে রাসূলের (সাঃ) পিতার নাম আবদুল্লাহ কী করে হলো? এটা তো মুসলমান নাম নয়। তিনি আরও বলেন, হজও ইসলামের হজ নয়। এটাও ২ হাজার ৩ হাজার বছর আগে কাফেরদের প্রবর্তিত হজ। সর্বশেষ গত ২০শে জুলাই সোমবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনকণ্ঠে ‘নিউ ইয়র্কে আমার ঘটনা এবং বন্ধুদের রটনা’Ñ শীর্ষক কলামে তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে বিস্তর লিখেছেন। কলামে তিনি ঐদিন নিউ ইয়র্কে প্রকৃতপক্ষে কী বলেছিলেন তা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘ভাষা-জাতীয়তা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে আমি বলেছি, ভাষার কোন ধর্মীয় পরিচয় নেই। ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবি ভাষা অমুসলিমদের ভাষা ছিল। সেই ভাষাতেই কোরআন নাজিল হয়েছে এবং ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। আল্লাহ্র বহু গুণবাচক নাম আরবি ভাষা থেকেই সংগৃহীত এবং আগে তা কা’বার দেবতাদের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দেবতাদের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলার পর এই নাম শুধু আল্লাহ্র গুণবাচক নাম হয়ে দাঁড়ায়।’ তিনি ওই কলামে আরও লিখেছেন, তাঁর বক্তব্য কাটছাঁট করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। তবে তিনি দেখিয়ে দেননি কোথায় কাটছাঁট করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে। এটাতো কাটছাঁট করার কোন সুযোগই নেই। তিনি কি বলতে চান ভিডিওটি কোন আইটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করেছেন। নাহ, এমন অভিযোগ অবশ্য তিনি এখনও করেননি। আচ্ছা, ধরে নিলাম ভিডিওটিতে কাটছাঁট করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এবার জনকণ্ঠে তাঁর কলামে স্বজ্ঞানে লিখেছেন- আল্লাহ্র বহু গুণবাচক নাম আরবি ভাষা থেকেই সংগৃহীত এবং আগে তা কা’বার দেবতাদের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দেবতাদের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলার পর এই নাম শুধু আল্লাহ্র গুণবাচক নাম হয়ে দাঁড়ায়। এটুকুই যথেষ্ট। আমি তাঁর বক্তব্যের উপরোক্ত অংশের আলোকেই জবাবটি লিখতে চাই। তবে মূল বক্তব্যে যাওয়ার আগে আল্লাহ্র গুণবাচক নাম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা দিচ্ছি। আল্লাহ্র গুণবাচক নামের উৎস কী? আল্লাহ্র ৯৯ নাম কোথা থেকে এলো? আমরা কিভাবে জানতে পারলাম যে, আল্লাহ্তায়ালার ৯৯টি নাম আছে। অনেকের মনে নতুন করে এ প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। তাই প্রথমে ৯৯ নামের ব্যাপারে একটি ভূমিকা দিতে চাই। পবিত্র কোরআনের নবম পারায় সূরা আল-আরাফের ৮০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ্তায়ালার জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সেই নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে।’ ৩০ পারা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নামগুলো সুবিন্যস্ত রয়েছে। যেমন রাহমান, রাহিম, গাফ্ফার, হাকিম, কাদির, রাজ্জাক ইত্যাদি। সূরা হাশরের শেষ আয়াতগুলোতে একত্রে বেশ কয়েকটি নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে নামের প্রকৃত সংখ্যা কত- এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কোরআনে কিছু বলা হয়নি। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বোখারী ও মুসলিম শরীফের ২৭৩৬ ও ২৬৭৭ নং হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ্তায়ালার ৯৯টি নাম রয়েছে। এক কম একশ’। যে ব্যক্তি নামগুলো গণনা (পাঠ) করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এখানে হাদিসে নামের সংখ্যা উল্লেখ করা হলেও কোন্ কোন্ নাম আল্লাহ্র গুণবাচক নাম- এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন পুস্তকাদিতে যে ৯৯ নামের তালিকা রয়েছে এগুলো কোন হাদিসে পাওয়া যায়নি। কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্ভরযোগ্য নামগুলো নিয়ে হয়তো ইসলামী চিন্তাবিদরা ৯৯ নামের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এসব নামের পৃথক পৃথক অর্থ রয়েছে। যেমন রহমান অর্থ দয়াশীল, গাফুর অর্থ ক্ষমাশীল, কাদির অর্থ শক্তিশালী ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা এসব গুণের অধিকারী বলেই এসব নামে তাঁকে ডাকতে বলেছেন। আর যারা এসব নাম নিয়ে আজে-বাজে কথা বলে, নামের বিকৃতি ঘটায় তাদেরকে বর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ৯৯ নামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এখন আলোচনায় আসা যাক সাংবাদিক আŸদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, এই ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতা বা মূর্তির নাম ছিল। সেখান থেকেই নামগুলো ইসলামে সংযোজন করা হয়েছে। যেহেতু কোরআন ইসলামের উৎস সেহেতু তাঁর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কাফেরদের দেবতাদের নামানুসারে এই নামগুলো পবিত্র কোরআনে সুবিন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ, রাসূল (সাঃ) নিজেই কোরআন রচনা করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ্র ৯৯ নাম যে কোথাও থেকে সংযোজন করা হয়নি, বরং তা অনন্তকাল ধরে ছিল তার কিছু প্রমাণ ও যৌক্তিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাই। এক. আল্লাহ্ নিজেই যেহেতু পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং আমাদের আর বলার কোন সুযোগ নেই যে, এই নামগুলো সংযোজন করা হয়েছে। কারণ এই বিশ্ব সৃষ্টির আগে অনন্তকাল থেকে যেমন আল্লাহতায়ালা ছিলেন তেমনি তাঁর নামগুলোও বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীতে অন্য কারো কাছ থেকে এসব নাম হাওলাত করে নেয়া বা সংযোজন করার প্রশ্নই ওঠে না। দুই. পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্র গুণবাচক নামগুলোর উল্লেখ রয়েছে। আর কোরআন শরীফ আজ থেকে ১৪০৬ বছর আগে ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হলেও এই গ্রন্থ অনন্তকাল থেকেই লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল। আর কোরআন শরীফ যখন লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল, তাহলে আল্লাহ্র নামগুলোও সেখানেই সংরক্ষিত ছিল। এক্ষেত্রে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, কোরআন শরীফ তো প্রয়োজন অনুসারে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে কিছু কিছু করে ২৩ বছরে নাজিল হলো। তাহলে এটি লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল কিভাবে? এর জবাব কোরআন শরীফেই দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় সূরা কদরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন, ইন্না আনজালনাহু ফি লাইলাতিল কাদর। অর্থাৎ আমি ইহা (কোরআন) কদরের রাত্রে নাজিল করেছি। কদর বলতে আমরা কী বুঝি? হাদিস অনুযায়ী লাইলাতুল কদর হচ্ছে এমন একটি মর্যাদাকর রাত্রি, যে রাত হাজারও মাসের চেয়ে উত্তম। রাসূল (সাঃ) এই রাতকে রামাদানের শেষ ১০ দিনের যে কোন বিজোড় রাতে খুঁজতে বলেছেন। এজন্যই রামাদানের শেষ দশ রাতে বেশি করে ইবাদত করতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.