![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ৯ সেপ্টেম্বর পাকুয়াখালী ট্র্যাজেডি তথা ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যা দিবস।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের শোকাবহ এক কালো দিন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের প্রাক্কালে রাঙামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে তৎকালীন বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তি বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় ৩৫ নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়া। সেই থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙালিরা এ দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু গণহত্যার মধ্যে অন্যতম ঘটনা। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ১৯ বছর পরেও বিচার না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত নিহতদের পরিবার।
১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শান্তি বাহিনী লংগদুর ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা বলে পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কাঠুরিয়াদের তিনদিন আটকে রেখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়। আটক ৩৬ জন কাঠুরিয়ার মধ্যে ইউনুচ নামের একজন কাঠুরিয়া পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সে খবর দিলে ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাকুয়াখালীর জঙ্গল থেকে ২৮ জন কাঠুরিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। বাকি সাত কাঠুরিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি।
বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের স্মরণে এখনো কেঁদে ওঠে লংগদুর মানুষ। খুনিদের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরত আসা ইউনুছ ঘটনার বর্ণনায় বলেন, সেনাবাহিনী যখন জানলো যে আমাকেও শান্তি বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তখন তারা লাশের সন্ধান করার জন্য আমাকেও সঙ্গে নেয় পথ দেখানোর জন্য। আমি তাদের পাহাড়ে নিয়ে গেলাম। ঘটনার সময় তক্তা নজরুলকে যেখানে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল শান্তিবাহিনীরা সেখান থেকে আরেকটু সামনে গিয়ে দেখলাম বামদিকে একটি বাঁশের বেড়া। নিচে নেমে সেই বেড়া পার হলাম। তারপর আর রাস্তার চিহ্ন নেই। একটু দূরে দেখলাম একটা কাঁচা বাঁশের কঞ্চি আধ ভাঙা অবস্থায় ঝুলে আছে। কঞ্চিটা সরানোর পর একটা পথ পেলাম। পথ বেয়ে সামনে গিয়ে দেখি সরাফুদ্দি ভাইয়ের টুপিটা একটা কঞ্চির সঙ্গে লেগে আছে। এরপর স্যান্ডেল, মদের টেংকি, বেশ কয়েকটা লাঠি দেখলাম, তারপর দেখলাম আলাল ভাইয়ের লাশ। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি বিশাল জায়গা জুড়ে শুধু লাশ আর লাশ। কাউকে চেনার উপায় নেই। বন্দুকের বেয়নেট, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে খুঁচিয়ে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, চোখ তুলে, দা দিয়ে কুপিয়ে একেকজনকে হত্যা করা হয়েছে।
এই বর্বর গণহত্যার বিচার না পেয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত কাঠুরিয়া পরিবারগুলো। সেই সাথে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিগুলোর মৃত্যুতে তারা আজও অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
©somewhere in net ltd.