নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভবঘুরে মানুষ । ভবের ঘরে প্রবেশের নেশায় ঘুরে ফিরি দিবানিশি।

আলী নওয়াজ খান

ভবঘুরে মানুষ আমি । ভবের ঘরে প্রবেশের নেশায় ছুটে মরি দিবানিশি। তবুও পাইনা খুজে তারে।

আলী নওয়াজ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী দর্শন কি গ্রীক দর্শনের অনুকপি ?

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:২২



ইসলামী দর্শনের আলোচনার শুরুতেই একটি মৌলিক প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে। যে প্রশ্নটির সূত্র ধরে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের অনেকেই ইসলামী দর্শনের ভিত্তিকেই সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে থাকেন। তাঁদের দৃষ্টিতে ইসলামী দর্শন বলতে কোন দর্শনই নেই। তাই তাঁদের মতে ‘ইসলামী দর্শন’ এই পরিভাষা থেকে ‘ইসলাম’ কথাটি বাদ দেওয়া উচিত। কেননা, প্রথমত ‘ইসলামী দর্শন’ নামের দর্শনটি সম্পূর্ণরূপে গ্রীক দর্শনের নকল। ফ্রান্সের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আরনেস্ট রেনান (Ernest renan) বলেন, “এই দর্শন [ইসলামী দর্শন] অ্যারিস্টটলের অন্ধ অনুকরণ বৈ কিছুই নয়। এখানে কেবল গ্রীক চিন্তভাবনাকেই আরবী ভাষায় লেখা হয়েছে।” [ E. Renan Aeverroeset, paris, v১১১ ed, p, ৭-৮] এ উদ্ধৃতিটি নেয়া হয়েছে আরবী গ্রন্থেও ফারসী অনুবাদ ‘দার বরে-এ ফালসাফায়ে ইসলামী রাভেশ ওয়া ত্বাতবিকে অন্’ মূল লেখক- ইবরাহীম বাইউম্মী মাদকুর, অনুবাদক আব্দুর রহমান অয়াতি, প্রকাশকাল ফারসী সাল ১৩৬১, পৃষ্ঠাঃ ০৮।]
দুহিম বলেন, “ইসলামী দর্শন নব প্লেটোনিক দর্শনেরই (Neoplatonic) নকল।” [Duhem , Le Systeme du monde, paris, ১৯১৭, T, ১v, p, ৩২১ es suive. ] এখন প্রথম প্রশ্নটি হলো ইসলামী দর্শন কি গ্রীক দর্শনের নকল? যদি তা-ই তবে তাকে কখনই ইসলামী দর্শন নাম করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত দর্শন একটি স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান। তাই স্বাধীন জ্ঞানের সাথে ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তি কোন জাতি-গোষ্ঠী বা ধর্মের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বিষয়টি এমন যে, বুদ্ধির সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তাই প্রশ্ন হলো ইসলামকে দর্শনের সাথে সংযুক্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
প্রথম প্রশ্নটি ছিল ইতিহাসগত প্রশ্ন, আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন। মোটকথা, এ দু’টি প্রশ্নকে সামনে রাখলে ইসলামী দর্শন বলতে কোন দর্শনেরই আর অস্তিত্ত্ব থাকে না।

ইসলামী জ্ঞানের অর্থ
ইসলামী জ্ঞান বলতে আমরা কী বুঝে থাকি? কোন্ কোন্ প্রকারের বিদ্যাকে আমরা ইসলামী জ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত করতে করতে পারি? অন্যভাবে বললে ইসলামের সাথে জ্ঞানের আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কী? তাই ‘ইসলামী জ্ঞান’ না বলে ‘মুসলিম জ্ঞান’ বলা উচিত। এমনটি ঘটেছে ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে, বিশেষ করে ইসলামী দর্শনের ক্ষেত্রে। অনেকে ইসলামী দর্শনকে ধরে নিয়েছিলেন আরব দর্শনের সমার্থক শব্দ হিসাবে। তাঁদের যুক্তি ছিল ইসলামী দর্শন নামের বিশেষ দর্শনের গ্রন্থসমূহ যেহেতু আরবী ভাষায় রচিত হয়েছে সেজন্য তাকে ‘আরবীয় দর্শন’ বলা উচিত। [ইসলামী দর্শনের ইতিহাস, হেনরী কোরবিন, পৃষ্ঠাঃ ৭। ] কিন্তু সামান্য গবেষণার পরেই যখন বুঝতে পারলেন ইসলামী দর্শন নামের দর্শনের মহান দার্শনিকগণ পারস্যের বা বর্তমান ইরানের অধিবাসী এবং ফারসী ভাষাতেও অসংখ্য দর্শন গ্রন্থ রচিত হয়েছে তখন তাঁরা তাঁদের পূর্ব ধারণার গন্ডিটি আরকেটু প্রসারিত করে বললেন, এ দর্শনকে ‘মুসলিম দর্শন’ বলা উচিত। [ ইসলামী দর্শনের ইতিহাস, হেনরী কোরবিন, পৃষ্ঠাঃ ৭।] তাঁদের এরূপ মতামতের সপক্ষে তাঁরা কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ উপস্থাপন এবং এ ক্ষেত্রে সঠিক কোন নীতি অবলম্বন করেন নি। আর এ কারনেই খেয়ালখুশী অনুযায়ী মত পেশ করে থাকেন এবং পরক্ষণে পূর্বের মত থেকে আবার সরে আসেন।
পৃথিবীতে এমন কোন সভ্যতা আছে কি যে সভ্যতা গড়ে ওঠার পথে অন্য কোন সভ্যতা থেকে উপকৃত হয়নি? এমনকি গ্রীকসভ্যতাও তার পূর্বের মিশরীয় ও ভারতীয় সভ্যতা থেকে উপকৃত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতটি সভ্যতা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার পূর্বের বা সমসাময়িক সভ্যতা থেকে তার প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে থাকে। তবে এ সাহায্য দু’ভাবে হতে পারেঃ ১। ঐ সভ্যতাকে অন্ধের মতো অনুকরণ করে; ২। জাতীয়করণ পদ্ধতির মাধ্যমে।
কোন সভ্যতাকে অন্ধের মতো অনুকরণ করে কখনও নতুন একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কেবল অনুবাদ ও অনুকরণ করে সভ্যতা গড়া যায় না। কোন সভ্যতা গড়ে ওঠার প্রথম শর্ত হলো ঐ সভ্যতা গড়ে ওঠার মতো শক্তিশালী একটি ভিত্তির উপস্থিতি প্রয়োজন। সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট মেধার প্রয়োজন। আর অনুবাদের মাধ্যমে মেধা আমদানী করা যায় না। বরং মেধা হলো একটি জাতীয় সম্পদ। তবে আধুনিক যুগে মেধা আমদানী-রফতানী হচ্ছে, বিশেষ করে পাশ্চাত্য জগৎ তাদের বস্তুগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গরীব দেশের জাতীয় সত্ত্বা বিচ্ছিন্ন মেধাবীদের ক্রয় করে তাদের সভ্যতার প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। তাই আজ আমরা বলতে পারি, বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার আর্থিক ও মানবিক (মেধাগত) ভিত্তি- দু’টিই আমদানী করা সম্পদ। তারপরও স্বীকার করতে হয় এই সভ্যতার অবকাঠামো তাদের নিজস্ব প্রকৃতি থেকে উৎপত্তি ঘটেছে। অবকাঠামোকে বহির্বিশ্ব থেকে আমদানী করা হয়নি , সম্ভবও নয় ।
মোটকথা, প্রাচীন গ্রীক দর্শন অনুবাদ করে ইসলামী দর্শনের ভিত্তি বা অন্য কোন দর্শনের ভিত্তি রচনা করা সম্ভব নয়। আব্বাসীয় খেলাফতের যুগে যত গ্রন্থ অনুবাদ হয়ে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে তার চেয়ে অধিক গ্রন্থ মুসলিম সমাজ থেকে অনুবাদ হয়ে মধ্যযুগে পাশ্চাত্যে প্রবেশ করেছে। এমনকি মধ্যযুগের শেষে পাশ্চাত্যের রেঁনেসার যুগেও আরেক দফা মুসলিম মনীষীদের গ্রন্থ অনুবাদ হয়ে পাশ্চাত্যে প্রবেশ করে- যার সত্যতা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কোন সভ্যতা থেকে উপকৃত হওয়াটা নেতিবাচক কিছু নয়। আমরা এ কথা বলতে মোটেও সংকোচ বোধ করি না যে, ইসলামী দর্শনের প্রথম যুগে প্রাচীন গ্রীক দর্শনের কিছু কিছু গ্রন্থ আরবী ভাষায় অনুবাদ হয়ে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ শুধু অনুবাদ করেই একটি বিশাল দার্শনিক আদর্শ সৃষ্টি করা কি সম্ভব? মোটেও সম্ভব নয়। আর ইসলামী দর্শনে অনুবাদকৃত প্রাচীন গ্রীক দর্শনের অবিকৃত নমুনা পাওয়া আজ বেশ দুষ্কর। প্রাচীন গ্রীক দর্শন যখন মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে তখন সেখানে দার্শনিক বিষয় ছিল দু’শত, আর বর্তমানে ইসলামী দর্শনের বিষয়াবলী হচ্ছে সাত’শর মতো। শুধু তাই নয়, উল্লিখিত প্রাচীন গ্রীক দর্শনের দু’শটি বিষয়কে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যার একটি অংশ মুসলিম দার্শনিকদের দ্বারা সংশোধিত হয়েছে বা বাদ পড়েছে, আরেকটি অংশ ইসলামী চিন্তার আলোকে ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন রূপ লাভ করেছে, আর শেষের অংশটির ক্ষেত্রে আরো নতুন নতুন যুক্তি ও প্রমাণ সংযোজন করা হয়েছে।
অর্থাৎ মুসলমানরা প্রাচীন গ্রীক দর্শন হুবহু গ্রহণ করেননি; বরং তাঁরা তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তির আলোকে বিচার-বিশ্লেষেণ করেই তা গ্রহণ করেছেন। এই বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাঁদের ধর্মীয় চেতনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। কেননা, মুসলমানরা তাঁদের আদর্শকে বিভিন্নমুখী জ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে দর্শনের শরণাপন্ন হন।
মহান ইসলামী সভ্যতায় এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যার ফলে অন্য কোন সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সহজেই জাতীয়করণ করা সম্ভব হয়েছে। যেমনঃ পারস্যের প্রাচীন সভ্যতা ইসলামের প্রভাবে পরিশোধিত হয়ে মুসলিম সভ্যতায় রূপান্তরিত হয়েছে। কেননা দ্বিত্ববাদী এক ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল তাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা। ইসলামের সংস্পর্শে এসে সে সভ্যতার নেতিবাচক দিকগুলোর বিনাশ ঘটেছে, আর ইতিবাচক দিকগুলো স্বাভাবিক গতিতেই ইসলামের ছত্রছায়ায় ধর্মীয় রূপ লাভ করেছে।
বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের জন্য ইসলাম ধর্মে পূর্ণ স্বাধীনতা ও উৎসাহ দিয়ে বলা হয়েছেঃ “জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে বক্তার প্রতি লক্ষ্য করো না, বরং লক্ষ্য করো সে কী বলছে।”[لا تنظر إلى من قال وانظر إلى ما قال ] তাই বলা যায় শুধু তরবারীর শক্তিতে রাজ্য জয় করা হয়নি, বরং জ্ঞান এক্ষেত্রে আরো অধিক ভূমিকা রেখেছে । আর এজন্যেই আজও ইসলাম বিশ্বের অন্যতম শক্তি হিসেবে টিকে আছে। সুতরাং এটি ইসলাম ধর্মের এক বিশেষ কৃতিত্ব। ইসলাম ধর্মে জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এমনটি বিশ্বের অন্য কোন আদর্শে করা হয়নি। প্রজ্ঞাকে (হিকমাত) হারানো মানিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। দোলনা থেকে মৃত্যু অবধি জ্ঞানার্জনের কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের জন্য যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেখানেই যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: অত্যান্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং জ্ঞানগর্ব লেখনি। লেখাটি পড়ে লেখকে জ্ঞানের পরিধি আন্দাজ করা যায়। ভালো লেগেছে।

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪১

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: জনাব সোহাগ তানভীর সাকিব @ লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুশী হয়েছি তবে আমরা এখনো জ্ঞানের আসরে শিশু মানুষ।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল লাগলো আলোচনা :)

+++

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১০

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: থাক্স আ লট

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:২৮

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: জনাব সামিউল ইসলাম বাবু @ আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

Hermes বলেছেন: চমৎকার যুক্তি উপস্থাপন করেছেন ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩২

আলী নওয়াজ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.