নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন ও মননের চর্চায় প্রতিনিয়ত পথচলাতেই আমার আনন্দ।

আলোর জানালা

সবার আমি ছাত্র/ শিখছি দিবা-রাত্র

আলোর জানালা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুল মানস এবং অসাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ:

২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬

কবি নজরুলের সময়ে সাম্প্রদায়িকতা মারাত্মক আকারে শিকড় গেড়ে বসেছিল ভারতের মাটিতে। সেই সময়ের অবস্থা এমন ছিল- মুসলমানরা অনেক হিন্দুর সাথে মিশতে চাইতেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মুসলমানদের অন্য চোখে দেখতো; বড়লোকের ঘরে গরীব আত্মীয়ের মত।

কবি নজরুলের সাহিত্য সাধনার কণ্ঠকময় পথে একদিকে ছিল দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাত অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতার বাধা। প্রচণ্ড কবিত্বশক্তি থাকা সত্বেও তিনি হিন্দু মানসে আঘাত না দিয়েই শুধু লিখে গেছেন তাই নয় বরং সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে উঠেই তিনি কলম ধরেছেন। সাহিত্য সাধনাকে তিনি দেশের একতা রক্ষা এবং ইংরেজ বিতারনে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। একারণে তিনি স্বধর্মের বিরোধিতা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। কুরআন, হাদিস নিয়ে বিদ্রুপ ও আলিম সমাজকেও আঘাত দিয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। তবুও হিন্দুদের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সমর্থন তিনি পাননি। তারপরও তিনি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে মুগ্ধ করতে ধর্মীয় উদারতা প্রদর্শনপূর্বক নিজ ধর্মের মস্তক মুণ্ডন করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

কবি নজরুল ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ও সশস্ত্র একজন কর্মী ছিলেন। তখন তিনি সন্ত্রাসবাদী দল ‘যুগান্তর’ ও ‘অনুশীলন’ দলের কর্মী ছিলেন। উক্ত দল দুটোর কর্মী হতে নিয়মানুযায়ী- সেখানে গীতা হাতে করে ঠাকুরের সম্মুখে তরবারি নিয়ে পরিপূর্ণ হিন্দু পদ্ধতিতে দীক্ষা নিতে হতো। দেশের স্বার্থে স্ব-ধর্মের বিশ্বাস ও বাঁধন ছিন্ন করেও নজরুল ঐ ‘যুগান্তর’ও ‘অনুশীলন’দলে নিজেকে যুক্ত করার জন্য এগিয়ে যান। কিন্তু তখনও তাঁর লেখা অমুসলমান সমাজে আশানুরূপ চিত্তাকর্ষক হয়নি। উপরোন্ত মোহিতলাল সম্পাদিত ‘শনিবারের চিঠি’পত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে লেখা আরম্ভ হয়। তবুও কবি আঘাতের পরিবর্তে পাল্টা আঘাত না দিয়ে আরও নমনীয় হলেন। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে মুগ্ধ করতে তাঁর কলম থেকে বের হতে লাগলো শুধু ঠাকুর দেবতার কথা, রামায়ণ-মহাভারতের কথা, প্রাচীন মুনি-ঋষিদের কথা। এবার যেন তাঁর উপর অনেকের দৃষ্টি পড়লো। তবুও তা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করলেন। তাই নার্গিসের (নার্গিস বিয়েতে রাজি ছিল কিন্তু নার্গিসের চাচা খান সাহেবের কিছু শর্ত নজরুলের ব্যক্তিত্বে খুব লেগেছিল বলে নজরুল নিজেই সে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন) সঙ্গে তাঁর বিবাহ বাতিল হওয়ার পর তিনি শ্রীযুক্ত গিরিবালা দেবীর কন্যা প্রমীলাকে বিয়ে করলেন। তাতে একদল হিন্দু খুশি হলেন বটে, কিন্তু আর একদল অসন্তুষ্ট হলেন এই জন্য যে,‘ হিন্দুর মেয়ে মুসলমানদের হাতে চলে গেল। কমপক্ষে একজন হিন্দু কমে গেল এবং তার গর্ভজাত সন্তানরা আসবে মুসলমান হয়ে।’

কবি আরোও নমনীয় হয়ে আরোও নিচে নেমে এলেন নিজ পূর্বপুরুষদের ধর্মীয় গণ্ডির সীমা থেকে। নামায-রোযা থেকে নিজেকে আড়াল করে তো নিলেনই উপরোন্ত তাঁর পুত্রদের নাম হিন্দু কায়দায় রাখলেন সব্যসাচী, অনিরুদ্ধ, বুলবুল ইত্যাদি। তাছাড়া ছেলেদের জন্য এমন পরিবেশ তিনি গড়ে তুললেন যাতে তাঁর পুত্ররা কল্পনাও করতে পারতেন না যে তাঁরা মুসলমান পাত্রীকে বিয়ে করবেন। হলোও তাই। তাঁর ছেলেরা হিন্দু কায়দায় বড় হলেন, হিন্দু মেয়ে বিয়ে করলেন এবং তাঁরাও তাঁদের ছেলেমেয়েদের নাম হিন্দু পদ্ধতিতেই রাখলেন। ফলে এতদিনে প্রমানিত হলো যে, তিনি মুসলমান সমাজ থেকে নিজেকে বের করতে চান। এর পরেও নজরুল আরোও দেবতাভক্ত হলেন, কালী দেবীর নামে অনেক শ্যামাসঙ্গীত সৃষ্টি করলেন, তাতে সুর লাগালেন, নিজে তা আবেগের সঙ্গে গেয়েও শুনালেন।
তিনি কালী-ভক্তদের খুশী করতে কালীকীর্তনে লিখলেন: “আমার কালো মায়ের পায়ের নিচে দেখে যা আলোর নাচন
মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন
আমার কালো মায়ের আঁধার কোলে শিশু রবি শশী দোলে
মায়ের একটুখানি রূপের ঝলক ঐ স্নিগ্ধ বিরাট নীল গগন।”

এতকিছুর পরেও অনেকে তাঁকে তাদের মতো মনে করে বরণ করে নিলেও কিছু ‘ব্রাত্যজনের’ এ কথা মনে হয়েছিল- লেখা আর কাজ এক নয়।

নজরুল নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমানের জন্য যেন নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলেন। সংখ্যাগুরুদের মন ভরলো না বলে তিনি আরোও নিচে নেমে এলেন-
কালী সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তারপর কবি বাকহীন ও পঙ্গু হয়ে গেলেন। এবার ভক্তিমাল্য ঝরতে লাগলো জ্ঞানবিলুপ্ত কবির উপর। আজ কবির পুত্র, পৌত্র ও কন্যাদের হিসেবের অঙ্ক বড় জটিল হয়ে পড়েছে। না তাঁদের মুসলমানত্বের কোনো মর্যাদা আছে, না তাঁরা পরিপূর্ণ হিন্দু হতে পেরেছেন । মোট কথা, ঠিক বেঠিক যাই হোক, নজরুল হিন্দু মানসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।

নজরুল জীবিতাবস্থায় রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখদের ন্যায় ধনী হতে পারেননি। নিজের সহজাত সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে ইংরেজদের পদলেহন করতে পারেননি বলে জেল-যুলুম আর অপমান ছাড়া জীবনে কিছুই পাননি। সারা জীবন শুধু ঋণ করে গেছেন আর বুকের যণ্ত্রণা ভুলতে মদ্যপান করেছেন। গান গেয়ে হাসির আবরণে সুপ্ত কান্নার সৌধ গড়েছেন। নিজের বংশ ধ্বংস হওয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে ফুরসত পাননি।

নজরুল নিজেকে অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রমানিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্বেও যখন ব্যর্থ হলেন, তখন মনে প্রাণে বুঝতে পারলেন- ভারত- মাতার সন্তানদের একতার পথে বড় বাধা হচ্ছে ধর্ম এবং ধর্মের নামে রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ করে লিখে বোঝাতে চাইলেন হিন্দু-মুসলমানে মিলেমিশে একাকার হওয়া উচিত। তাই হিন্দু পুরোহিত ও মুসলমান উলামা গোষ্ঠীকে সমানভাবে আঘাত দিয়ে তিনি লিখলেন- “হিন্দুত্ব ও মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায়, কিন্তু তাদের টিকিত্ব ও দাড়িত্ব অসহ্য, কেননা ঐ দুটোই মারামারি বাধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা পণ্ডিত্ব! তেমনি দাড়িত্ব ইসলামত্ব নয়, ওটা মোল্লাত্ব। এই দুই ‘ত্ব’ মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ এত চুলোচুলি। আজ যে মারামারিটা বেধেছে সেটাও পণ্ডিত-মোল্লার মারামারি। হিন্দু-মুসলমানের মারামারি নয়। তাই তিনি হিন্দু-মুসলমান অথবা টিকিত্ব ও দাড়িত্বের অধিকারী পণ্ডিত- মোল্লাদের উদ্দেশ্যে বিদ্রুপ করে লিখেছেন- ‘মসজিদ আর মন্দির ঐ শয়তানের মণ্ত্রনাগার
রে অগ্রদূত, ভাঙ্গতে এবার আসছে কি জাঠ কালাপাহাড়।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.