![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম। আমি আমাতুস সামী তাহেরা। আমি ২০১৯ সালে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে ইউনানী চিকিৎসার উপর বি.ইউ.এম.এস. ডিগ্রী অর্জন করেছি। আমি আমার এই ব্লগে ইউনানী চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করব যাতে সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচে ও ঘরোয়া ভাবে নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে।
ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতির ৩ টি বিভাগ আছে।
১. ইলাজ বিল গিযা বা খাদ্যভিত্তিক চিকিৎসা।
২. ইলাজ বিল দাওয়া বা ঔষধভিত্তিক চিকিৎসা।
৩. ইলাজ বিল তাদবীর বা কৌশলগত চিকিৎসা।
১. ইলাজ বিল গিযা বা খাদ্যভিত্তিক চিকিৎসাঃ-
এক্ষেত্রে রোগীকে তার রোগের ধরণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী কিছু খাদ্য খেতে দেয়া হয় এবং কিছু খাদ্য খেতে বারণ করা হয়।
যেমন- কারো জ্বর হলে তাকে সহজপাচ্য খাদ্য খেতে বলা হয়। অপরদিকে কারো মাথাব্যাথা হলে বায়ু-উৎপন্নকারী খাদ্য খেতে বারণ করা হয়।
২. ইলাজ বিল দাওয়া বা ঔষধভিত্তিক চিকিৎসাঃ-
ইউনানী চিকিৎসায় একক ও যৌগিক উভয় প্রকার ঔষধ ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ- কারো স্মৃতিশক্তির সমস্যা থাকলে তাকে থানকুনি খেতে বলা হয়। অপরদিকে বিভিন্ন ভেষজের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় সিরাপ, পাউডার, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ড্রপার, সেমি-সলিড ইত্যাদি ঔষধ যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
৩. ইলাজ বিল তাদবীর বা কৌশলগত চিকিৎসাঃ-
এই পদ্ধতিতে কোন খাদ্য বা ঔষধ ছাড়াই অন্য উপায়ে রোগ নিরাময় করা হয়। মূলত এই পদ্ধতিসমূহ ঔষধের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনক ভাবে বৃদ্ধি করে।
বিভিন্ন ধরণের কৌশলগত চিকিৎসা রয়েছে। নিচে কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল।
*** তালীক বা জোঁক চিকিৎসাঃ-
এটি প্রাচীন গ্রীসের অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি রোগীর শরীরে ঔষধি জোঁক লাগানো হয়। এরপর একে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে দেয়া হয়। এরপর এটি নিজেই আলাদা হয়ে যায় অথবা লবণ দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।
আধুনিক গবেষণায় জানা যায় যে, জোঁকের স্যালাইভা (saliva) তে বিভিন্ন ধরণের উপাদান রয়েছে যেমন- হিরুডিন (Hirudin), পেইন কিলারস (pain-killers), এন্টি-ইনফ্লামেটরি মেডিয়েটরস (anti-inflammatory mediators), এন্টি-ক্যান্সার ফ্যাক্টরস (anti-cancer factors) ইত্যাদি। এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন- বাতব্যাথা, চর্মরোগ, গোদরোগ, ডায়বেটিক আলসার ফুট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চুলপড়া, কান ও গলার রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি।
*** ফাসাদ বা রক্তমোক্ষণঃ-
এটি প্রাচীন গ্রীসের বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীর দেহের কোন শিরার নির্দিষ্ট অংশ কেটে রক্ত বের করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ, অর্শ, চর্মরোগ, অতিঃরজ, বাতব্যথা ও রক্ত-দূষণজনিত রোগ নিরাময়ে রক্তমোক্ষণ করা হয়।
*** হিজামা বা কাপিংঃ-
হাদিসে এই চিকিৎসা পদ্ধতির উল্লেখ আছে। এই পদ্ধতিতে রোগীর দেহের বিভিন্ন অংশে নির্দিষ্ট মাপের কাপ ব্যবহার করা হয়।
হিজামা ৩ ধরণের।
ড্রাই হিজামা (dry hijama) এক্ষেত্রে রোগের শরীরে কোন অংশ কাটা হয় না আর রক্তও বের করা হয় না।
ময়েস্ট হিজামা (moist hijama) এক্ষেত্রে কাপ লাগানোর অংশে সামান্য কেটে সেখান থেকে রক্ত বের করা হয়।
ড্রাই মাসাজ হিজামা (dry massage hijama) এক্ষেত্রে কাপ লাগানোর অংশে নির্দিষ্ট তেল লাগানো হয় যেন কাপগুলোকে সুন্দরভাবে সঞ্চালন করা যায়।
হিজামা বাতব্যাথা, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, স্ত্রীরোগ, বন্ধ্যাত্ব, স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
*** ইলায বিল আবার বা আকুপাংচারঃ-
এই চিকিৎসা পদ্ধতির উৎপত্তিস্থল চীন হলেও প্রাচীন গ্রীসে এর প্রচলন ছিল। এই পদ্ধতিতে দেহের বিভিন্ন স্থানে সূক্ষ্ম নরম সূঁচ ঢোকানো হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেখে দেয়া হয়। ফলে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সক্রিয় হয়। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়, যেমন- পক্ষাঘাত (paralysis), মুখের পক্ষাঘাত (facial palsy), কাঁধ জমে যাওয়া (frozen shoulder), বাতব্যাথা (arthritis), অনিদ্রা (insomnia), মাথাব্যাথা (headache), মাইগ্রেন (migraine), বন্ধ্যাত্ব, স্ত্রীরোগ, হৃদরোগ, কিডনীর রোগ ইত্যাদি।
*** দালাক বা মাসাজ থেরাপিঃ-
দালাক বা মাসাজ থেরাপি বাতব্যাথা (arthritis), অনিদ্রা (insomnia), মাথাব্যাথা (headache), মাইগ্রেন (migraine), পক্ষাঘাত (paralysis), মুখের পক্ষাঘাত (facial palsy), খিঁচুনি, মৃগী, হাত-পা কাঁপা, শোথ ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
*** রিয়াযাত বা ব্যায়ামঃ-
ব্যায়াম ইউনানী চিকিৎসার অন্যতম অংশ। যেকোন ধরণের রোগ নিরাময়ে ও প্রতিরোধে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। শারীরিক ও মানসিক যেকোন রোগ নিরাময়ে রোগের ধরণের উপর নির্ভর করে সহজ বা কঠিন ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয়।
*** হাম্মাম বা গোসল করাঃ-
নিয়মিত গোসল করাও আরোগ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আমরা সাধারণত যে পদ্ধতি গোসল করি এটি ছাড়াও কিছু কিছু রোগীকে রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী অন্য পদ্ধতিতে হাম্মাম বা গোসল করতে বলা হয়। যেমনঃ- সূর্যস্নান, চন্দ্রস্নান ইত্যাদি।
*** আবযান বা হিপ বাথঃ-
এটি মূলত অর্শ, ফিস্টুলা, মলাশয় ও মলদ্বারের রোগ, ঋতুকালীন ব্যাথা, প্রসব পরবর্তী সমস্যা ইত্যাদি রোগে ব্যবহার করা হয়।
*** শামুম বা এরোমা থেরাপিঃ-
এই পদ্ধতিতে রোগীকে সুগন্ধী উদ্বায়ী তেলের (essential oil) ঘ্রাণ নিয়ে বলা হয় বা এই তেল নিয়ে ব্যাথার স্থানে, হাতে, পায়ে মাসাজ করতে বলা হয়। এটি মূলত অনিদ্রা, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, সাইনুসাইটিস ইত্যাদি রোগে দারুণ কাজ করে।
*** নুতুল বা জলধারাঃ-
এই পদ্ধতিতে রোগীর মাথায় বা রোগাক্রান্ত অঙ্গে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা বা দূরত্ব থেকে ঔষধি জল ঢালা হয়। এটি মূলত অনিদ্রা, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, সাইনুসাইটিস, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগে ব্যবহার করা হয়।
*** তাকমীদ বা সেঁক দেওয়াঃ-
এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীরে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়।
এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি আছে, যেমন-
পাশওয়া বা ফুট বাথ, তারিক বা ঘর্মচিকিৎসা, বমি করানো, ডুশ দেওয়া ইত্যাদি।
___আমাতুস সামী তাহেরা
বি.ইউ.এম.এস. (ব্যাচেলর অফ ইউনানী মেডিসিন এন্ড সার্জারী)
সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ঢাকা, বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.