নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘোরতর সমাজ বিরোধী

বেনামী রাজপুত্র

বর্ণনার অযোগ্য

বেনামী রাজপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সমাজ ও কিছু গল্প

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২

ঘন লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে আছে ফাহিমের দুই হাত। মেয়েদের রক্তে নিজের দেহ রাঙানোর মাঝে এক অদ্ভুত পৈশাচিক উল্লাস অনুভব করে ও। হাত-পা বাঁধা অবস্তায় ওর বিছানায় পড়ে তড়পাচ্ছে একটি মেয়ের দেহ। সারা শরীর তার ক্ষতবিক্ষত। এতক্ষণ নরকীয় যন্ত্রণা দিয়ে এই মাত্র মেয়েটির গলার শিরা কেটে তীব্র যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিলো মেয়েটিকে। গলার শিরা কাটার পরও বেশ কিছুক্ষণ ধরে শরীরটি তড়পাচ্ছে। স্বাভাবিক মস্তিষ্কের কোন মানুষ হলে এই দৃশ্য কল্পনা করতেও ভয় পেত। কিন্তু ফাহিমের এই দৃশ্য দেখে খুবই তৃপ্তি লাগছে। মনে হচ্ছে বহু দিনের খরার মাঝে এক তৃষ্ণার্ত পথিক তার বহু প্রতীক্ষিত পানির সন্ধান পেল। হিংস্রতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে খুন করাটা অবশ্য ফাহিমের জন্য নতুন কিছু নয়। তবুও ওর নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হয়না। অনেকের মত ওরও আছে একটি গল্প, হয়তোবা সেই গল্পটি একটু বেশীই আঘাত করেছিল ওকে। সেই আঘাতেই ও পরিণত হয়েছিল নারী বিদ্বেষী এক ভয়াবহ উন্মাদে।
গ্রামের এক সাদাসিধে মেয়ে লাবণ্য। শ্রমিক বাবা মারা যাওয়ার পর হঠাৎই সংসারে নেমে আসে তীব্র অভাব। বাবাই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। লাবণ্য পরিবারের বড় মেয়ে। ২য় শ্রেণী পড়ুয়া ছোট ভাই আর বিছানায় পরে থাকা অসুস্থ মাকে নিয়ে দু চোখে অন্ধকার দেখছিল। দেখতে সুন্দর হওয়াতে সমাজের বহু অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কুদৃষ্টি পড়েছিল লাবণ্যর উপর। কিন্তু শত প্রলোভনের মাঝেও মানুষ নামের ওই সব হায়েনার হাতে নিজেকে সপে দেয়নি ও। অবর্ণনীয় কষ্টে কিছুদিন কাটানোর পর স্বপ্নের ঢাকা শহরে একটি চাকরির খোঁজ দেয় ওর গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। অনেক সপ্ন নিয়ে পরিবারকে ফেলে ঢাকা ছুটে যায় লাবণ্য। পরিবারের একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায়। কিন্তু ও জানতো না এই সমাজ ওকে ভালো থাকতে দিবে না। ঢাকা আসার পর সেই প্রভাবশালী লোকটি ওকে নিয়ে যায় একটি হোটেলে। তারপরের ঘটনা আর মনে করতে চায় না লাবণ্য।
এখন নিজেকে নরকের কীটের চেয়েও অধম মনে হয় ওর। কিন্তু কিছুই করার নেই ওর। গরিবের ঘরের মেয়ে লাবণ্য। পরিবারের মানসম্মানের কথা ভেবে, দু বেলা মা-ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এই জঘন্য কাজটিই করতে হয় ওর। আধুনিক সমাজ ওকে বলে কলগার্ল। উচ্চবিত্ত সমাজের কিছু নোংরা লোকের ভোগ্যপণ্য ও। লাবণ্য চাইলেই আত্মহত্যা করতে পারেনা। পরিবারের মানুষগুলোর দু বেলা দু মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ওর উপর। পাখিদের দেখলে খুব হিংসা হয় ওর। মাঝে মাঝে পাখির মতো উড়ে যেতে তীব্র ইচ্ছা হয় ওর। কিন্তু এই ঘৃণ্য সমাজ তার ধারালো হাতিয়ার দিয়ে ওর ডানা কেটে নিয়েছে।
অন্যান্য দিনের মতই একটি ফোনকল পেয়ে একটি ফ্ল্যাটে যায় লাবণ্য। ভেতরে ঢোকার পর থেকেই শুরু হয় ওর উপর অমানবিক নির্যাতন। পরে বুঝতে পারে একজন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের খপ্পরে পড়েছে ও। মুখ বাঁধা থাকায় চিৎকারও করতে পারছে না। ওর নিজের রক্তে চারদিক রঙিন হয়ে যাওয়া দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই ওর। অনেকক্ষণ যাবৎ পাশবিক নির্যাতনের পর তীব্র যন্ত্রণার মাঝে হঠাৎই নিজেকে অনেক হালকা মনে হয় লাবণ্যের। মনে হয় সকল যন্ত্রণাকে পেছনে ফেলে সকল শিকলের বাঁধন ছিঁড়ে মুক্ত পাখির মত উড়ছে ও। আর কোন মানুষরূপী পিশাচ ওর উপর হামলে পরবে না। সমাজের আর কোন অভিশাপ ওকে আর স্পর্শ করতে পারবেনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.