![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুই টাকার কচকচে নোটটিকে সরু শলাকা বানিয়ে সূক্ষ্ম দক্ষতার সাথে ইয়াবার বিষবাষ্প ফুসফুসে টেনে নেয় আবির। সে এখন সমস্ত দুঃখ-দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত। এখন তার কাছে জীবনটাই অন্যরকম মনে হচ্ছে। দুই আঙুলের মাঝে বেনসন সিগারেট জ্বলছে। বারান্দায় বসে আছে আবির। বসন্তের ঝিরঝিরে বাতাস গায়ে হিমেল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। মধ্যবিত্ত জীবন ভালো লাগে না ওর। হাত খরচের জন্য বাবা যে সীমিত অংকের টাকা দেয়, তা দিয়ে ওর ১০ দিনও চলে না। তাই মিথ্যে বলে প্রতিনিয়ত টাকা চাইতে হয় বাবার কাছে। নেশার টাকাটাও একইভাবে জোগাড় করতে হয়। দামী শার্ট-প্যান্ট-জুতা, দামী স্মার্টফোন ছাড়া এখন চলেই না। বন্ধুদের সামনে একটা মানসম্মানের ব্যাপার আছে না! অনেকদিন ধরে বাবার কাছে একটি বাইক কিনে দেওয়ার আবদার করতে করতে বাবার প্রতি বিরক্ত হয়ে গেছে আবির। সামনের সপ্তাহে আবার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিতে হবে বলে বাবার কাছে অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে তাই আবির। ধূর, বাবা এখনো যে টাকাটা কেন দিচ্ছে না!
মাথার উপর প্রচণ্ড রোদ। ঘামছেন রফিক সাহেব। দেড় মাইল রাস্তাইতো মাত্র! হেটে গেলে রিক্সা ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যায়। তাই প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় হেটে চলে যান রফিক সাহেব। ২৫ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকুরী করেন রফিক সাহেব। এলাকায় ও কর্মস্থলে সততার জন্য সবাই তাকে সম্মান করে। ধূমপান তো দূরের কথা জীবনে কখনো সিগারেট ছুঁয়েও দেখেননি তিনি। বদ অভ্যাস তার একটিই ছিল, তা হচ্ছে পান খাওয়া। ছেলেকে পড়াশুনা করতে শহরে পাঠানোর পর, কিছু টাকা সঞ্চয় করার আশায় পান খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই পায়ের একটি জুতা ছিঁড়ে যায় রফিক সাহেবের। জুতা হাতে নিয়ে ভালো ভাবে দেখলেন তিনি, দুটো সেলাই দিলে আরো মাসখানেক অনায়াসে চালিয়ে নিতে পারবেন। বিগত ৩ বছর ধরে একই জুতা ব্যবহার করছেন তিনি। আজ মাসের ১০ তারিখ, বেতনের টাকাটা এখনো হাতে আসেনি। ছেলে পড়ার খরচের জন্য ১৫ হাজার টাকা চেয়েছিল, তা এখনো পাঠাতে পারেননি তিনি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। তাই ছেলেকে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। অনেক বছরের জমানো কিছু টাকা ছিল তার, এক অর্থে বলা যায় তার শেষ সম্বল। তা দিয়ে এতোদিন ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ যুগিয়েছেন। কিন্তু দুই মাস আগে তাও শেষ হয়ে গিয়েছে। সামনের মাসে আবারো টিউশন ফি দিতে হবে। মানুষের সামনে হাত পেতে ধার চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় অবশিষ্ট নেই এখন। চার মাস পর চাকুরী থেকে অবসরে যাবেন। পেনশনের টাকাটা হাতে পেলে সেই ধার শোধ করে দিতে পারবেন তিনি।
বাড়িতে এসে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসলেন রফিক সাহেব। বাড়িটা বেশ ফাকা লাগে উনার কাছে। ছেলে শহরে পড়াশুনায় ব্যস্ত, বাড়ি আসার সময় পায় না। ছেলেটা বেশ কিছুদিন ধরে একটি মোটরসাইকেল এর বায়না ধরেছে। পেনশনের টাকাটা পেলে তার একটি অংশ দিয়ে ছেলের আবদার পূরণ করবেন বলে ভেবে রেখেছেন তিনি।
জীবনের চলার পথটি একেবারে মসৃণ হলে খুবই ভালো হত, ভাবেন রফিক সাহেব। এই এবড়ো-থেবড়ো পথে চলতে চলতে খুবই ক্লান্ত তিনি। একটু বিশ্রাম নিতে খুবই ইচ্ছে হচ্ছে তার। কিন্তু তা কি করে সম্ভব! তিনি যে একজন পিতা!!
©somewhere in net ltd.