![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিডি জবস, প্রথম আলো জবস, পত্রিকার পাতায় চাকরীর খবর সব ভাজা ভাজা হয়ে গেল। তবু চাকরীর দেখা মেলেনি হাবীবের। গত প্রায় দেড় বছর চেষ্টা করেছে একটা চাকরীর জন্য। কোন লাভ হয়নি। ছাত্র অবস্থায় অনেকেই আশ্বাস দিয়েছিল বটে। কিন্তু, দরকারের সময় কারোর দেখা পায়নি ও। সপ্তাহে অন্তত পঞ্চাশটা জায়গায় সিভি দেয় ও। হঠাত কোন এক জায়গা থেকে কল করে ইন্টারভিউ এর জন্য। সেবারতো একটা চাকরী পেয়েও গেল! আইটি কম্পানি। তারা সিকিউরিটি মানি চেয়েছিল দশ হাজার টাকা। এর ওর কাছে ধার নিয়ে আর সাধের মোবাইলটা বিক্রি করে সেটা দিয়েছিল ও। কিন্তু, জয়েন করতে গিয়ে দেখে কোথায় কম্পানি?? কেউ নেই সেখানে!! এলাকার মানুষ বলল, এখানে এক মাসের জন্য ভাড়া এসেছিল কয়েকজন লোক। তারা চলে গেছে দু’দিন আগে!! টিকিটিও আর খুঁজে পাওয়া গেল না তাদের!
কঠিন শিক্ষা হওয়ার পর এখন বেশ সতর্ক হাবীব। মাঝে মাঝে ইমেইল আসে ওর কাছে। কখনও কাতারের ওয়ার্ক পারমিট। কখনও সিঙ্গাপুরের ওয়ার্ক পারমিট! এগুলো যে ভুয়া, সেটা বেশ বুঝতে পারে ও। তাই এসবে কান দেয় না ও।
সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।
:Are you Mr. Habibur Rahman?
হাবীবঃ Yes.
:We are calling from Heaven Incorporation. You dropped your CV here for the post of “Customer Relationship Officer”.
হাবীবঃ Yes.
: We have arranged an interview for you. Will you please come tomorrow at 3 p.m.?
হাবীবঃ Yes. I can. Please, let me know your address.
: Thanks a lot. We will text the address to you .
হাবীবঃ Ok, Thank you.
: Thank you too. See you. Bye.
হাবীবের মোবাইলে মেসেজ আসলো
Heaven Incorporation
Heaven city
Road number #21
House NO: #32
Banani, Dhaka
ঠিকানাটা খটকা লাগার মতই। হেভেন সিটিটা কি জিনিষ? যাইহোক,বনানীর একুশ নম্বর রোড খুঁজে বের করাটা কঠিন হবে না।
পরদিন একটু তারাতারিই বের হল হাবীব। নির্দিষ্ট সময়ের বেশ আগেই পৌছে গেল একুশ নম্বর রোডে। বত্রিশ নম্বর বাসাটাও বের করতে পারল ও। সেখানে ঢুকতেই বড় করে লেখা “Heaven City” । আজব কম্পানিতো! নিজেদের বাসার নাম রেখেছে হেভেন সিটি! যাহোক, ইন্টারভিউ হলো। এবং সেই সাথে চাকরীটাও কনফার্ম হয়ে গেল হাবীবের! কাজটা খুব সহজ। হাবীবকে এখানে কাস্টমার রিলেসনশীপ রক্ষা করতে হবে। সেটা অনলাইন এবং অফলাইন দুইভাবেই। একটাই সমস্যা, কম্পানি একেবারে নতুন। এখনও নিজেদের জিনিষপত্র সব যোগাড় হয়নি ওদের। তাই আপাতত শুরুর কয়েকটা দিন হাবীবকে নিজের ল্যাপটপটাই নিয়ে আসতে হবে। মাস শেষে ইন্টারনেট বিল সে কম্পানি থেকেই পাবে। সব মিলিয়ে চাকরীটা কিন্তু মন্দ না!
এক সপ্তাহ পরেই অফিস জয়নিং। জুলাই মাসের এক তারিখ সকালে মহা উতসাহে ল্যাপটপ ঘাড়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হল হাবীব। অফিসে ঢুকলো । ওর বসার জায়গা আগেই দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল ওকে। তাই, নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসল হাবীব। ওর বস ওর সামনে এসে বসল।
বসঃ চাকরী পেয়ে তাহলে খুব খুশি?
হাবীবঃ হ্যা অবশ্যই। আসলে, চাকরীটা খুব দরকার ছিল আমার।
বসঃ বেঁচে থাকার জন্য কত চেষ্টা আমাদের, তাই না? অথচ বেঁচে থাকতে গিয়ে যে কষ্টটা আমরা করি, তাতে কি বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে যায় না?
হাবীবঃ তা ঠিক স্যার।
বস ইজ অলওয়েজ রাইট, মনে মনে বলল হাবীব!
বসঃ এটা হচ্ছে হেভেন কম্পানি। মানে একদম স্বর্গ বলতে পারেন। স্বর্গে যেতে চান?
কথাটার মানে ঠিক বুঝলো না হাবীব। হঠাত ডান পাশের দরজা থেকে কেউ একজন ঢুকল। কাস্টমার নাকি? হাবীব সামনে তাকিয়েই আঁতকে উঠল! একটা রড হাতে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে লোকটা। বসের গলা শোনা গেল, “এই এই! কি করছেন কি?” হাবীব দেখতে পেল রডটা ঠিক ওর মাথার উপরেই নেমে আসছে! তারপর অন্ধকার!
হাসপাতালের বেডে ঘুম ভাঙলো হাবীবের। পাশে বসে আছে হাবীবের বন্ধু তন্ময়। হাবীব চোখ মেলে তাকাল। একটু একটু মনে পরছে ওর। তন্ময়কে বলল, “দোস্ত, আমার ল্যাপটপটা কি নেই?” তন্ময় হতাশ ভঙ্গিতে বলল, “কীসের ল্যাপটপ? তোর পকেটে মানিব্যাগ পর্যন্ত নেই!” হাবীব একটা ছোট্ট দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে ওর। মাথাটা চেপে ধরে বলল, “আমাকে কোথায় পেলি? আর ওরা কোথায়?”
তন্ময় বলল, “তোকেতো এক রিকশাওয়ালা এখানে দিয়ে গেছে। তুই নাকি রিকশায় বসে হঠাত অজ্ঞান হয়ে পরেছিলি, এই হাসপাতালের সামনেই। তারপর এখানকার কয়েকজন কল রেকর্ড থেকে আমার নাম্বার বের করে আমাকে ফোন করেছে।”
মাথাটা গুলিয়ে গেল হাবীবের। রিকশা কোথা থেকে আসল? আচ্ছা এমনওতো হতে পারে যে, এইটা একটা দূঃস্বপ্ন? নাহ! অসম্ভব। সহ্যের একটা সীমা আছে। এবার মামলা করবে ও। এই কম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করবে। চাকরী এমনিতেও কপালে নেই ওর। পরিশ্রম করে টাকা উপায় করা ওর হবে না। সৎ পথে পরিশ্রম করার সুযোগটাই যে কেউ দিচ্ছে না!
সুস্থ হয়ে বাসায় আসার পর অবশ্য আরেক দফা অবাক হল হাবীব। পেপারে আবার চাকরীর বিজ্ঞাপন চোখে পরল ওর। গ্রেফতারী পরোয়ানা ওর নামে! ও নাকি হেভেন সিটি নামক কম্পানিতে চাকরী করতে গিয়ে অর্থ চুরি করে পালিয়েছে! ও কি মামলা করবে! এখনতো মামলা ঠেকাতে হবে ওকে।
*********
শেষ কথা হচ্ছে এই, হাবীব অবশেষে কাজ পেয়েছে একটা। দিব্যি কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে ও। পোস্টিং হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওকে। পেপারটা পড়ার সুযোগ হয় অবশ্য। চাকরীর খবর অবশ্য এখনও দেখে ও। মাঝে মাঝেই নতুন নতুন পোস্টের জন্য সার্কুলার হয়। কম্পানির নাম পরিবর্তন নতুন। কিন্তু ঠিকানাটা সেই একইঃ
Road number #21; House NO: #32; Banani, Dhaka
১৬ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
অমিত বাগচী বলেছেন: না ভাইজান। সত্যি না। তবে, এরকম ঘটনা নিশ্চয় ঘটছে দেশে। কত রকম ঘটনাইতো পড়ি, শুনি। প্রথম অংশটুকু বিভিন্ন মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। আর শেষ অংশটুকু আমার কল্পনা। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
২| ০৩ রা জুন, ২০১৫ রাত ৩:০৬
প্রামানিক বলেছেন: এরকম ঘটনা এখন বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। ধন্যবাদ
৩| ১৬ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
অমিত বাগচী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধণ্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:২৪
কাঠ পাতা বলেছেন: ঘটনাটা কি সত্যি? আর এখনো কি অফিস অন্য নামে আছে?