নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

সেই লোকটিকে এখনো খুঁজি

আনোয়ার কামাল





আমি কোন রিক্সায় উঠলে রিক্সা চালকের সাথে গল্প করতে করতে সময় কাটাই। এতে তাদের জীবন কাহিনী নিয়ে আমার কিছুটা জানা হয়। আর রিক্সায় বসে বসে বোরিং ফিল করাটা কিছুটা হলেও কেটে যায়। তবে এটা করি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতে। আমার বেশ ভালো লাগে রাতের বেলা বাসে চড়ে যাতায়াতের চেয়ে রিক্সায় যাতায়াতে। রিক্সায় রাতের ঢাকা দেখতে আনন্দ একটু ভিন্ন স্বাদের।



লোকটা বেশ ফর্সা। গোলগাল চেহারা। মুখ ভরা কাঁচা দাড়ি। কথা বললো ধীরে ধীরে। কলাবাগান থেকে কল্যাণপুর। ভাড়া রফা হলো পঞ্চাশ টাকা। ঠিক আছে মামা বলে আয়েশ করে রিক্সায় চেপে বসলাম। তার শুরু হলো আমার অভ্যাস মত ইন্টারভিউ।

- মামা তোমার নাম কী ?

- আব্দুর রহিম।

- গ্রামের বাড়ি কোথায় ?

বিনয়ের সাথে বললেন, বরিশাল।

- ও আচ্ছা।

- মামা ঢাকায় কতদিন থেকে ?

- দুই বছর।

- বেশ, ভালো।

- রিক্সা কী নিজের ?

- না। ভাড়ায়।

- ও, আচ্ছা।

- রোজ কত টাকা ভাড়া দিতে হয় ?

- ষাট টাকা।

- অনেক টাকাই তো দিতে হয়। এতে খাওয়া বাদে রোজ কেমন থাকে ?

- থাকে আর কি। চইল্যা যায়।

- তা কোথায় থাকা হয় ?

- মোহাম্মদপুরে।

- পরিবার নিয়ে; না একা ?

- একা থাকি মামা। পরিবার ঢাকা থাকলে চলবো কেমনে !

এমন সময় মোবাইলে একটি কল এল। এক বন্ধুর কল। দীর্ঘদিন পর হঠাৎ কল করেছে। তার ছেলে অসুস্থ্য। ঢাকায় ডাক্তার দেখাবে। কথা বলছি, তবে কেন যেন আমার ইন্দ্রিয় শক্তি বার বার তাগাদা দিচ্ছে, কে যেন আমাকে ফলো করছে। আমি ধনু রাশির জাতক। যদিও রাশিতে তেমন আস্থা নেই। তবে মাঝে মধ্যে কাকতালীয় ভাবে কিছু কিছু মিলে যায় আর কি। মাঝে মাঝে পেপারে রাশি মিলিয়ে দেখি, কোন কোন দিন কাকতালীয়ভাবে হুবহু মিলে যায়। বেশ মজা পাই। কেন যেন ইন্দ্রিয় শক্তি ভীষণভাবে তাগাদা দিচ্ছে। বামে চেয়ে দেখি সত্যি সত্যি তাই। আমার রিক্সার খানিক দূরে মটর সাইকেলে দুইজন আরোহী। পেছনে বসা ছেলেটি আমাকে দেখছে আর আসনে বসা হেলমেট পরা ছেলেটিকে কি যেন বলছে। বার বার আমাকে দেখছে। আমি তখন রাসেল স্কয়ারের কাছে পান্থপথের পশ্চিম প্রান্তে। সিগন্যালে আটকা পড়েছি। বেশ অনেকক্ষণ রিক্সায় বসে আছি। বন্ধুর সাথে কথা দ্রুত সেরে মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটে রেখে সতর্ক দৃষ্টিতে আমিও তাদের লক্ষ্য করতে থাকি।



সিগন্যাল পার হলে দেখতে থাকি মোটর সাইকেল আরোহীদের। না নজরে পড়ছে না। তবে কি ধানমন্ডি ৩২ নং সড়ক দিয়ে চলে গেছে। যাক বাবা, বিপদ থেকে বাঁচা গেল। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এগুতে থাকি। তবে মনের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে বৈকি। একটু এগুতেই দেখি সোবহানবাগে বিরাট জ্যাম। রিক্সা একটু একটু করে আগায়, আবার থেমে থাকে।



ঢাকা শহরের এই এক দশা। ঘর থেকে মানুষজন জরুরি কাজে বেরিয়ে কখন যে ঘরে ফিরতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। জ্যাম যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। জ্যামে আটকে আছে এ্যাম্বুলেন্স। মুমূর্ষু রোগী, এ্যাম্বুলেন্স তার মতো করে কান ফাটিয়ে হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে। কে কার কথা শোনে ! আর কথা শুনে মুমূর্ষু রোগী ভেবে এ্যাম্বুলেন্সকে সামনে এগুনোর সুযোগ দিবেই বা কিভাবে। একচুল জায়গা নেই। রিক্সা, টেক্সি, সিএনজি অটো, প্রাইভেট কার আর বাসের দীর্ঘ লাইনে যাত্রীরা অনেক সময় ঝিমুতে ঝিমুতে ঘুমিয়ে পড়েন। এ এক মরণ ফাঁদ বৈকি ! ঢাকাতে এত মানুষ কেন আসে? এ প্রশ্ন মাঝে মধ্যে মনের অগোচরেই প্রশ্ন হয়ে জেগে ওঠে। সদুত্তর একটাই, পেটের দায়ে, জীবন বাঁচাতে। গ্রাম থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা শহর, তারপর রাজধানী। গ্রামে কাজের তেমন সংস্থান নেই বলেই মানুষ কাজের খোঁজে শহুরমূখী হচ্ছে। এই ঢাকা শহরে এখন দেড় কোটির উপরে লোকের বসবাস। একদিন ফার্মগেটে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু হারুন রংপুর থেকে ঢাকা এসে আমাকে ফোন দিল। বাসায় নিয়ে যাব বলে মতিঝিলে বাসে উঠলাম। দেরি হচ্ছে দেখে ফোন করে বললো, সেখানে মানুষের মাথা আর মাথা। তাই এত মাথা দেখে সে ভীত হয়ে আজ আর নয় অন্যদিন দেখা করবে বলে দ্রুত রংপুরের বাস ধরে। আমার ভীষণ হাসি পায় ওর কথায়। এখন যখনই রাস্তায় জ্যামে পড়ি, তখনই হারুনের কথা মনে পড়ে। নিজের অজান্তেই তখন হাসি পায়।



জ্যামের ম্যধ্য রিক্সা গড়াতে গড়াতে সোবহানবাগের মসজিদের গেটের কাছে এসেছি মাত্র। আবার জ্যামে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঠিক তখনই আমাদের রিক্সার সামনে দিয়ে এক যুবক পার হয়ে গেল। তবে না। এক কদম এগিয়ে পরক্ষণেই সে আবার ফিরে এসে রিক্সা চালককে থামিয়ে বলল:

- রিক্সা আমার গায়ে লাগালে কেন ?

- রিক্সা চালক রহিম বলল, কই মামা আপনার গায়ে তো লাগেনি !

যুবকের কড়া ভাষায় তিরস্কার:

- লাগেনি মানে। ব্যাটা পায়ের মধ্যে লাগাইয়া কইতাচস লাগায়নি।

রহিম অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। ক্যামন যেন মেউ মেউ করতে লাগলো। তারপর সে কিছুটা প্রস্তুত হয়ে রিক্সা থেকে নেমে বলল:

-মামা যদি লাইগা থাকে, তবে মাফ কইরা দেন।

যুবকটি কথা শুনে কিছুটা পিছিয়ে গেল। মনে হলো সে চলে যাচ্ছে। কিন্তু না। আবার সে ফিরে এসে সেই একই কথা। গায়ে লাগালি ক্যান ?



ছেলেটির খানিক বর্ণনা না দিলেই নয়। ছেলেটি ছিপছিলে শ্যামলা ধরনের। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের হবে। জিন্সের প্যান্ট। হাফ হাতা টি শার্ট, ইন করে পরা। হয়তো কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে। ছাত্র ছাত্র ভাব রয়েছে চলনে বলনে। তবে তাকে বেশ বেসমাল মনে হচ্ছিল। সোবহানবাগ মসজিদের ঠিক গেটের সামনে ঘটনা ঘটছে। গেট বন্ধ হালকা অন্ধকার। তবে রাতের রোড লাইটের নিয়ন আলোয় সবই দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। সামনে কার, বাস, ট্রাক সবই জ্যামে আটকে আছে। কেউ যেন কারো দিকে তাকাবার ফুরসত নেই। এই ঢাকা শহরের মানুষরা কেন যেন ইট পাথরের মত, কারো দিকে তাকাবার প্রয়োজন নেই। যে যার মত করে চলছে। চলছে তো চলছেই।



এবার আমি আর চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। রিক্সায় বসেই বললাম, যাক ভাই ওকে মাফ করে দেন। আমি নিজে ওর পক্ষ থেকে মাফ চাইছি। এতেও সে সন্তুষ্ট না। তার পর আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে আমি রিক্সা থেকে নেমে সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু না বিপদ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের শেষ প্রান্তে আরও একজন দাঁড়িয়ে আছে। বিপদ তখন আমাকে জানান দিচ্ছে। বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে। এগুনোর উপায় নেই। এদিকে জ্যামে সব আটকে আছে। বাধ্য হয়ে আবার রিক্সায় উঠে বসলাম। এবার যুবকটি তার কোমরে রাখা কোন অস্ত্রের স্পর্শ করতে গেল। আমি আর কালবিলম্ব না করে রিক্সার পেছন দিয়ে ডান পাশে একটা বাস দাঁড়িয়ে ছিল তাকে পাশ কাটিয়ে ভোঁ দৌঁড় দিলাম। দৌড় দিতেই সামনে সুদর্শন এক যুবক সাদা টি শার্ট পরা একঠায় অতন্দ্র প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দৌড়াতে দেখেই তার প্রশ্ন:

- কী হয়েছে ভাই ?

আমি বললাম:

- কিছু না।

বলছি আর দৌড়াচ্ছি। এদিকে আমার পা চলে না। সাপের মত বাস, ট্রাক, রিক্সা অতিক্রম করে প্রাণপনে রাপা প্লাজার দিকে ছুটছি। আমার মনে হতে লাগলো পৃথিবীর যত সব ভারী বস্তু যেন আমার পিঠে চাপানো হয়েছে। আমার পা উঠছে না। যতই ভোঁ দৌড় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি ততই যেন পিছনের দিকে চলে আসছি বলে মনে হতে লাগলো। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পেছন থেকে আমার সার্টের কলার চেপে ধরলো। এত কিছু ভাবলেও পেছনের দিকে যেন আমার তাকানোর সময় নেই মনে করে সমানে সমানের দিকে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছি। রাপা প্লাজার সামনে এসে একটা বাস পেলাম। বাসের পেছনের দরজা দিয়ে উঠে সামনে চলে গেলাম। তিন আসনের সিটে স্বামী-স্ত্রী বলে মনে হল দু’জনকে, তাদের পাশে ধপাশ করে বসে পড়লাম। তখন কেন যেন মনে হচ্ছিল সাক্ষাৎ যমের হাত থেকে বেঁচে এলাম।



সমানে ঘামতে লাগলাম। এবার পাশে বসে থাকা লোকটিকে বললাম:

- ভাই আমাকে ছিনতাইকারীরা ধাওয়া করেছে। আমি আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।

লোকটি একটু নড়ে চড়ে বসে তার পাশে বসা মহিলার দিকে তাকালো। তারপর আমাকে বললো:

- ভাই কিছু নিয়েছে নাকি ?

- না, বলে ঢোক গিললাম।

লোকটি বললো:

- ও আচ্ছা। ঠিক আছে।

- ভাই বাসটি কোথায় যাবো ? জিজ্ঞেস করলাম।

- জানিনা তো। লোকটির সোজা সাপ্টা জবাব।

আরে লোকটা বলে কি। ব্যাটা বউ নিয়ে বাসে বসে আছে আর বাসটা কোথায় যাবে তা জানেনা। তাহলে তার গন্তব্য কোথায় ? বউকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছে নাকি! তবে রাতের বেলা এ ঢাকা শহরে কে যে কার সাথে যায় তা অনেক সময় বুঝে ওঠা দায় হয়ে যায়। আমার ভেতরের অস্থিরতা বাড়তে থাকে। পকেটে সাত-আট হাজার টাকা, ছোট ভায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বিদেশি দামি মোবাইল।



এখন আমার ভেতরে কাজ করছে ওরা হয়তো আমাকে উল্টো ছিনতাইকারী বলে বাস থেকে নামিয়ে না নিয়ে যায়। অনেকের কাছে গল্প শুনেছি চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী যাত্রীকে ছিনতাইকারী বানিয়ে উল্টো তার সব লুটে নেয়। এটা হঠাৎ মনে হয়ে গেল। তাই পাশের লোকটিকে জানিয়ে খানিক স্বস্তি পেলাম। এবার আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকালাম। কয়েক সিট পেছনে বসা এক যুবক, আমি তাকাতেই সে তার মাথা নিচু করে নিল। তখন আমার ধারণা বদ্ধ মূলে দাঁড়ালো এ যুবক হয়তো ওদেরই একজন। আমাকে ফলো করছে।



এদিকে বাস ছাড়ছে না। জ্যাম কি জন্মের মত এলো নাকি ? মনে পড়লো অনেক গল্পে পড়েছি, বিপদের সময় নাকি দীর্ঘ হয়। আমারও সেই দশা হয়েছে মনে হলো। আস্তে করে মোবাইল বের করে বাসায় ফোন দিলাম। বউকে আগে জানাই। মরলেও সে যেন জানতে পারে যে, মরনের আগে আমার আসলে কি ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

- হ্যালো।

- হ্যালো কী খবর ? বউয়ের প্রতি উত্তর।

- ছিনতাইকারী ধাওয়া করেছে। তাড়াতাড়ি সোজা উত্তর দিলাম।

- কোথায় ? কিভাবে ? কিছু নিয়েছে কিনা ? আহত কিনা ?

একনাড়াগে গড়গড় করে প্রশ্নগুলো ছুড়ে মারলো।

মহিলাদের আবার এই ধরনের অভ্যাস থাকে। অল্পতেই বেশি বিচলিত হয়ে পড়ে।

-আরে না, না। কিছু নিতে পারেনি। আমি এখন বাসে উঠে বসেছি। চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি ভালো আছি।

-আচ্ছা, আচ্ছা। সাবধানে আসো।

-ঠিক আছে, বলেই আমি লাইন কেটে দিলাম।

জ্যাম ছেড়েছে। বাস আস্তে আস্তে গড়াতে শুরু করেছে। আর আমি ভাবছি বাসটি কোথায় যাবে ! যদি মোহাম্মদপুরে যায় তবে তো সাড়ে সর্বনাশ। ওরাতো আমাকে ধরে ফেলবে। এ বাসেই তো ওদের প্রতিনিধি রয়েছে। আর কাউকে জিজ্ঞেস করতেও সাহস হলো না বাসটি কোথায় যাবে। শেষে ঠিক করলাম, যেখানে যায় যাক। আমি ট্রাফিক সার্জেন্টের সহযোগিতা নেব। দেখতে দেখতে বাসটি আসাদ গেট পার হলো। এবার বুঝলাম বাসটি কমপক্ষে শ্যামলী পর্যন্ত যাবে। এদিকে ভাড়া নিতেও কেউ আসছে না যে নিশ্চিত হব বাসটির গন্তব্য কোথায়। দেখতে দেখতে শ্যামলী পার হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কল্যাণপুর আসতেই কন্ডাকটরকে ভাড়া দিয়ে বাস থেকে দ্রুত নেমে পড়লাম। নেমেই দেখি ট্রাফিক সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে। তার কাছে দ্রুত চলে গেলাম। আমার ঘটনা বলে তাকে জানালাম, এ বাসেই হয়তো তাদের লোক রয়েছে।

-ঠিক আছে। ওরা কিছু নিয়েছে কী ? সার্জেন্ট প্রশ্ন করলেন।

-না। নিতে পারেনি। দৌড়ে বেঁচেছি আর কি।

-ও , আচ্ছা। ঘটনাটা যেন কোথায় ?

-সোবহানবাগ মসজিদের গেটের সামনে।

-আরে ও জায়গাটাতো খুব খারাপ। ও খানে প্রায়ই ছিনতাই হয়।

গার্জেন্টের এ ধরনের কথায় আমার ভীষণ রাগ হলো। আরে ব্যাটা ও জায়গাটা যদি খারাপ হয়েই থাকে তবে তোদের লোক কোথায় ? একটা পুলিশও তো দেখলাম না। এ ধরণের কথা আমার ঠোঁটোর আগায় এসে গেল তাকে বলবো বলে। অনেক কষ্টে নিজেকে নিবৃত করলাম আর সৃষ্টিকর্তার নাম জপতে জপতে দ্রুত রাস্তা পার হ’লাম। আর পেছনে ফেলে এলাম একরাশ আতঙ্ক। তার সাথে দারুন কষ্ট লাগছিল সেই মুখ ভরা কাঁচা দাড়িওয়ালা রিক্সা চালক আব্দুর রশিদকে তার প্রাপ্য ভাড়া দিতে না পারার। আমি এখনো রাস্তায় খুঁজে ফিরি তাকে। আমার জানা হয়নি তার ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায় কি না। কতদিন পর পর সে গ্রামের বাড়িতে যায়। তার কাছ থেকে দেশের রাজনীতি নিয়ে মতামতটা জানার খুব ইচ্ছে ছিল। আমার সে স্বাদ আর পূরণ হলো না। একরাশ কষ্ট নিয়ে আবারও বাসার উদ্দেশ্যে রিক্সায় চেপে বসলাম। আর পেছনে পড়ে থাকলো সদ্য ফেলে আসা এই রাজধানীর নির্মম কিছু বাস্তবতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.