![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
■■■■
আনোয়ার শাহজাহান : মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বাউল আব্দুল মোতালেব হাওলাদার এবং মা মোছা. সুুফিয়া বেগম।
ছোটবেলা থেকেই মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থাতেই বিমানবাহিনীতে যোগদানের তাঁর খুব ইচ্ছে ছিল এবং তিনি সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোখের অসুবিধার জন্য বাদ পড়েন। অতঃপর ১৯৬৭ সালের ৫ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাঁর সেনাবাহিনী নম্বর ছিল পিএসএস ১০৪৩৯। তাঁর জেন্টলম্যান ক্যাডেট নম্বর ছিল ৭৬৪০। তিনি পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৬৮ সালের ২ জুন ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। তাঁর প্রথম পোস্টিং হয় পাকিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কারাকোরাম ক্যান্টনমেন্টের ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বিবিসি সংবাদ মারফত তিনি দেশের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। দেশের জন্য কিছু একটা করার প্রত্যয়ে ব্যাকুল ওয়ে ওঠেন তিনি। তখন গোপনে পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি অন্য অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে ৩ জুলাই আরো তিনজন বাঙালি অফিসারসহ (ক্যাপ্টেন খায়রুল আনাম, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার, ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ) পাকিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি আরণ্যক পথ ও খর¯্র্েরাতা নদী অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে তাঁদের পালানোর খবর বেতার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। সদ্যাগত এই চার বাঙালি অফিসারকে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত করা হয়। সেই হিসেবে ৭ নম্বর সেক্টরের মেহেদিপুর সাব-সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বলাভ করেন ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সাব-সেক্টরের সামরিক শক্তিকে পুনর্বিন্যস্ত করেন। মেহেদিপুর সাব-সেক্টরের আওতাধীন ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, কলাবাড়ি, সোবরা, কানসাট ও বারোঘরিয়া এলাকা।
১৪ নভেম্বর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে স্বল্পপ্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল সোনা মসজিদ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। জাহাঙ্গীরের অসামান্য রণকৌশলের কারণেই তারা এই এলাকা দখল করতে সমর্থ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ১১ জন সৈনিক নিহত, অসংখ্য সেনা আহত এবং ৫ জনকে জীবিতাবস্থায় আটক করা হয়।
১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ¯্রােতস্বিনী মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে পাকিস্তানি সেনাদের একটি ঘাঁটি ছিল। তা ছাড়া শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছিল শত্রুসেনাদের অবস্থান এবং অসংখ্য গুপ্তঘাতকের আনাগোনা। এই শহর দখল ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দেশের আরো অভ্যন্তরে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের সমন্বয়ে একটি অপারেশনাল পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল যে মিত্রবাহিনী তাদের প্রয়োজনীয় আর্টিলারি সহায়তা প্রদান করবেÑমেজর গিয়াস থাকবেন রোড ব্লক পজিশনে, মেজর রশিদ কাটঅফ পার্টিতে এবং মূল আক্রমণ রচনা করবেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা আ¤্রকাননে ঘাঁটি গড়ে তোলেন। কিন্তু চূড়ান্ত আক্রমণে যাওয়ার আগে মিত্রবাহিনীর যে আর্টিলারি সাপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল তা জাহাঙ্গীর পাননি। ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক চেষ্টার পরও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর ভারতীয় সহায়তা ছাড়াই শত্রুদের আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশে ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিসেনারা শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শত্রুর ক্রমাগত মেশিনগানের গুলিতে মুক্তিসেনাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। জাহাঙ্গীর তখন একাই রাস্তা ক্রলিং করে একটি দ্বিতল ভবনে অবস্থিত শত্রুর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড চার্জ করেন। সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায় সেটি। আরো একটি পোস্ট থেকে অনবরত গোলা আসতে থাকে। জাহাঙ্গীর সেদিকেই অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় একটি বুলেট এসে কেড়ে নেয় জাহাঙ্গীরের প্রাণ। সহযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছায়া এসে পড়ে। পরে সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেন নবাবগঞ্জ। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে শহিদ হন তিনি।
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শেষ ইচ্ছানুযায়ী সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর খেতাব নম্বর ১।
তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা -আনোয়ার শাহজাহান