নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম ১৯৭৩ সালে সিলেটে। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫টি।

আনোয়ার শাহজাহান

জন্ম সিলেটে

আনোয়ার শাহজাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:০৩

স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামাল

আনোয়ার শাহজাহান: মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাবিলদার ছিলেন। মায়ের নাম মালেকা বেগম।
বাবার চাকরির সুবাদে মোস্তফা কামালের শৈশবকাল অতিবাহিত হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। সে সময় সৈনিকদের সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও নিয়মানুবর্তিতা দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, বড় হয়ে তিনি সৈনিক হবেন। তাঁর সেই কাক্সিক্ষত সময়টা আসে ১৯৬৭ সালে। সে বছর ১৬ ডিসেম্বর তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন।

১৯৭১ সালে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে মোস্তফা কামাল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি জান্তা সরকার বেঙ্গল রেজিমেন্টের সব ইউনিটকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত রাখে, যেন তারা একত্র হয়ে প্রতি-আক্রমণ করতে না পারে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও নকশাল দমনের খোঁড়া অজুহাতে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন রাখা হয়। মোস্তফা কামাল ছিলেন এই ইউনিটের একজন সৈনিক। পাকিস্তানিদের কূট ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করে বাঙালি সৈনিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকার গণহত্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে ২৭ মার্চ মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোস্তফা কামালের বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে। একই দিন মেজর খালেদ মোশাররফ এই সেনাদলের কমান্ড গ্রহণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন।
পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর ও তালশহরে পাঠানো হয়। মেজর শাফায়াত জামিল মৌখিকভাবে নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে মোস্তফা কামালকে ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি দান করে আলফা কোম্পানির ২ নম্বর প্লাটুনের অধিনায়ক মনোনীত করে দরুইন গ্রামে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেন। মোস্তফা কামালের দল একটি পুকুরপাড়ে অবস্থান গ্রহণ করে এবং এলএমজি নিয়ে তিনি সর্বদক্ষিণে অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বিশাল দল কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে মোস্তফা কামালসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শত্রুর আগমনের খবরে মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের সতর্ক করে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করেন। অন্যদিকে শত্রু হননের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন মোস্তফা কামাল
১৭ এপ্রিল সকালবেলা শত্রুরা একের পর এক আর্টিলারির শেল মোস্তফা কামালের অবস্থানের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকে। সাথে সাথে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। কিন্তু এতসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে শত্রু ক্রমেই অগ্রসর হতে থাকে, সেই সাথে বাড়তে থাকে আক্রমণের তীব্রতাও। ঝোড়োবৃষ্টি ও অনাহারের কারণে অন্য যোদ্ধাদের মনোবল দুর্বল হয়ে গেলেও মোস্তফা কামাল ছিলেন দৃঢ়প্রত্যয়ী। এমনকি খাবার সংগ্রহের জন্যও ন্যূনতম চেষ্টা করেননি তিনি। দিনব্যাপী এই যুদ্ধ চলতে থাকে। মোস্তফা কামালের অবস্থান ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের গঙ্গাসাগর ও মোগড়াবাজার প্রতিরক্ষা অবস্থানে পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ চালায়।

১৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করার জন্য শত্রুদল দক্ষিণ দিক থেকে মোস্তফা কামালের অবস্থানে আক্রমণ করে, কিন্তু প্রকৃত আক্রমণ আসে দুপুর ১২টায় পশ্চিম দিক থেকে। শত্রুদের এই দ্বিমুখী আক্রমণে দরুইন গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। তাই কৌশলগত কারণে মোস্তফা পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নিখুঁত ও কার্যকর কাভারিং ফায়ার। একজন আদর্শ সৈনিক ও দক্ষ যোদ্ধা হিসেবে স্বেচ্ছায় মোস্তফা ওই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নিজের এলএমজি নিয়ে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি প্রাণপণ লড়াই করতে থাকেন। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তাঁর বুলেটের আঘাতে নিহত হয়। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয় এবং তাদের অগ্রযাত্রা ক্ষণিকের জন্য গতি হারায়। কিন্তু মোস্তফার একার পক্ষে এত বেশি সৈনিকের সাথে লড়াই চালিয়ে যাওয়া খুব দুরূহ হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা মোস্তফার অবস্থান লক্ষ্য করে ক্রমাগত মেশিনগান ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি স্থান পরিবর্তন করে গুলি চালিয়ে যেতে থাকেন। একসময় একটি ঘাতক বুলেট এসে নির্ভীক মোস্তফার জীবনীশক্তি কেড়ে নেয়। ততক্ষণে তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। অতিদ্রুত শত্রুদল মোস্তফার নিকটবর্তী হয় এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মোস্তফা কামালকে দরুইন গ্রামে সমাহিত করা হয়।

সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে মোস্তফা কামাল নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। এই বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর সনদ নম্বর ৪।
তাঁর স্ত্রীর নাম পেয়ারা বেগম। তাঁরা এক সন্তানের জনক ছিলেন।

তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা - আনোয়ার শাহজাহান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.