নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম ১৯৭৩ সালে সিলেটে। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫টি।

আনোয়ার শাহজাহান

জন্ম সিলেটে

আনোয়ার শাহজাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:১২

স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন

আনোয়ার শাহজাহান: রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালের জুন মাসে নোয়াখালী জেলার সাবেক বেগমগঞ্জ থানা এবং বর্তমান সেনাইমুড়ী উপজেলার বাগচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মো. আজহার মিয়া পাটোয়ারী এবং মা জোলেখা বেগম। তাঁরা ছিলেন ছয় ভাই-বোন। রুহুল আমিন ছিলেন মা-বাবার প্রথম সন্তান।
রুহুল আমিন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে একজন জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করেন তিনি পাকিস্তানি নৌযান পিএনএস বাহাদুর, পিএনএস কারসাজ, পিএনএস টিপু সুলতান ও পিএনএস বাবরে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে অবস্থিত পিএনএস বখতিয়ারে তিনি যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাধারণ বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর পর থেকেই পাকিস্তানিদের প্রকৃত মনোভাব বুঝতে পারেন এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রুহুল আমিন চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পৌঁছান এবং অন্য যোদ্ধাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ২ নম্বর সেক্টরে পদাতিক সৈনিকের ভূমিকায় যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। যদিও তিনি নৌসেনা ছিলেন, কিন্তু দেশের প্রতি অকৃত্রিম মমত্ববোধের কাছে ওই সীমাবদ্ধতা পরাভূত হয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইতোমধ্যে ভারত সরকার কলকাতা ও হলদিয়া নৌবন্দর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং তাঁদের ব্যবহারের জন্য দুটি বোট উপহার হিসেবে দেয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর সেগুলোকে গানবোটে রূপান্তর করা হয়। গানবোট পলাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার ছিলেন রুহুল আমিন। গানবোট চালানোর পাশাপাশি তিনি নিজ আগ্রহে পানিতে মাইন বিস্তরণ শেখেন। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্য যোদ্ধাদের সাথে রুহুল আমিন চালনা বন্দরে মাইন বিস্তরণ করে রাখেন। ১৩ নভেম্বর ওই মাইনের বিস্ফোরণে ৩টি বিদেশি জাহাজ ও পাকিস্তানি গানবোট সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। রুহুল আমিনের এই সফল মাইন আক্রমণের ফলে বিদেশি জাহাজ ও পাাকিস্তানি নৌবহর এই পথ পরিহার করে চলছিল।
৬ ডিসেম্বর যশোর পতনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমাগত দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশি গানবোট পদ্মা ও পলাশ এবং ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ আইএনএস পানভেল কলকাতা থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ওই নৌবহর খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রবেশ করে।
এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আকাশে তিনটি জঙ্গি বিমান গোচরীভূত হয়। রুহুল আমিন গানবোট পলাশের কমান্ডারের কাছে ওই বিমান তিনটিকে আক্রমণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু কমান্ডার তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন যে সেগুলো শত্রুর বিমান নয় মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ বিমান। ১০-১৫ মিনিট পর সেই বিমানগুলো আবার ফিরে আসে এবং পলাশ ও পদ্মার ওপরে ব্যাপক হারে বোমাবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পলাশের ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায় এবং কয়েকজন নৌসেনা এতে গুরুতর আহত হন। এমতাবস্থায় কমান্ডার সবাইকে দ্রুত জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করেন। রুহুল আমিন কমান্ডারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সব সহযোদ্ধাকে জাহাজেই অবস্থানের অনুরোধ জানান এবং বিকল ইঞ্জিনকে সচল করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালান। বিমান তিনটি আবারো উড়ে এসে পুনরায় গোলা নিক্ষেপ করে রুহুল আমিনের গানবোট পলাশে। পলাশ বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে রুহুল আমিনের দুই হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। শুরু হয় প্রচ- রক্তক্ষরণ। অগত্যা জীবন বাঁচাতে তিনি রূপসা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেক কষ্টের পর তিনি নদীর পূর্ব পাড়ে পৌঁছাতে সক্ষম হন। কিন্তু চরম অবসন্ন ও বিষাদগ্রস্ত রুহুল আমিন রাজাকারদের হাতে ধৃত হন।
বর্বর রাজাকাররা রুহুল আমিনের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় এবং বেয়োনেট চার্জ করে ক্ষতবিক্ষত করে তাঁর শরীরকে। মানবতার চরম সীমা লঙ্ঘন করে অসভ্য রাজাকাররা তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তাঁর দেহভস্ম রূপসা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ব্যক্তিগত জীবনে রুহুল আমিন ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, সরলমনা ও মিষ্টভাষী। তাঁর উদ্যম ও রণকৌশলের কাছে পাকিস্তানি সেনারা একের পর এক পরাজিত হতে থাকে। ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের কাছে তিনি মূর্তমান আতঙ্কে পরিণত হন। মুক্তিযুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর সনদ নম্বর ৫।
রুহুল আমিনের স্ত্রীর নাম জাকিয়া বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্মস্থান বাগচাপা গ্রামের নাম পরিবর্তন কওে একন রাখা হয়েছে তাঁর নামে আমিন নগর। বাড়ির সম্মুখে তাদেও পরিবারের দেয়া ২০ শতক জমিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে নোয়াখালি জেলাপরিষদ নির্মাণ করেছে আমিন স্মৃতিজাদুঘর ও গ্রন্থাগার।

তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা - আনোয়ার শাহজাহান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.