নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম ১৯৭৩ সালে সিলেটে। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫টি।

আনোয়ার শাহজাহান

জন্ম সিলেটে

আনোয়ার শাহজাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান

আনোয়ার শাহজাহান: মতিউর রহমান ঢাকার আগা সাদিক লেনে ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আব্দুস সামাদ এবং মা মোবারকুন্নেছা। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম।

ছোটবেলা থেকেই মতিউর রহমান অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়ালেখা করেন। এরপর সারগোদায় পিএফ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ডিশটিংশন মার্কসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৩ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমান পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি যেসব বিমানে উড্ডয়ন করেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টি-৬, টি-৩৩, টি-৩৭, এফ-৮৬, মিগ-১৫ ও মিগ-১৯। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে অসামান্য অবদান ও অনবদ্য রণনৈপুণ্যের জন্য তিনি ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর ‘সেতারা-ই-হার্ব’ খেতাবে ভূষিত হন।

১৯৭১ সালে মতিউর রহমান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে করাচির মাশরুর বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে তিনি নরসিংদীস্থ গ্রামের বাড়িতে চলে যান এবং স্থানীয় যুবকদের সংগঠিত করে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাব, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতাসহ নানাবিধ প্রতিকূলতা মতিউর রহমানকে ভাবিয়ে তোলে। এরপর তিনি পরিকল্পনা করেন, পাকিস্তানে ফেরত যাবেন এবং যেভাবেই হোক একটি জঙ্গি বিমান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করবেন। উল্লেখ্য, মতিউর রহমানের ছুটি ১ মার্চ শেষ হলেও তিনি ৬ মে পাকিস্তানে ফেরত যান। পাকিস্তানি সহকর্মীরা যেন তাঁর বিলম্ব নিয়ে সন্দেহ না করে, সে জন্য তিনি স্ত্রী ও ছোট্ট দুই মেয়ে সন্তানকে নিয়ে করাচিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
মতিউর রহমান অনেক প্রচেষ্টার পর জানতে পারেন, তাঁর সাবেক ছাত্র পাকিস্তানি অফিসার রশিদ মিনহাস ২০ আগস্ট টি-৩৩ বিমান নিয়ে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ করবে। এরপর ডানপিটে মতিউর রহমান এক দুঃসাহসীক পরিকল্পনা করেন, তিনি সেই বিমানটি ছিনতাই করে দেশে ফিরে আসবেন। অধীর আগ্রহে মতিউর রহমান সেই দিনের প্রহর গুনতে থাকেন। মতিউর রহমান অত্যন্ত ঠা-া মাথায় তাঁর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন যেন তাঁর আচরণ পাকিস্তানিদের কোনো সন্দেহের উদ্রেক না করে বা প্রিয়তমা স্ত্রী এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের কোনো অন্তরায় না হয়। মতিউর রহমানের স্ত্রী সবকিছু অনুধাবনের পরও কোনো প্রতিবাদ করেননি।

২০ আগস্ট বেলা ১১টা। রশিদ মিনহাস টি-৩৩ (যার ছদ্মনাম ব্লু বার্ড-১৬৬) নিয়ে ৪ নম্বর ট্যাক্সি ট্র্যাক হয়ে রানওয়েতে প্রবেশের আগ মুহূর্তেই মতিউর রহমান সেখানে পোঁছে যান এবং একটি টিলার আড়াল থেকে বের হয়েই প্লেনটি থামাতে নির্দেশ দেন। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরও সাবেক প্রশিক্ষক ও বর্তমান সেফটি অফিসারের এমন নির্দেশ পেয়ে রশিদ হকচকিয়ে যান এবং ক্যাপোনি খুলে মতিউর রহমানের কাছে কারণ জানতে চান। তাৎক্ষণিকভাবে মতিউর রহমান প্লেনের ককপিটে উঠে বসেন। উল্লেখ্য, মতিউর রহমানের কার্যক্রম দেখে কেউ যেন সন্দেহের অবকাশ না পায়, সে জন্য তিনি ইউনিফর্ম, প্যারাস্যুট বা বৈমানিক কোনো পোশাক পরিধান না করেই এই আত্মঘাতি অপারেশন পরিচালনা করেন, যেখানে মৃত্যু প্রায় অনিবার্য। ওই প্লেনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মতিউর রহমান ও রশিদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মতিউর রহমানের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও বুদ্ধিদৃপ্ত কৌশলের কাছে পাকিস্তানি তরুণ অফিসার হার মানতে বাধ্য হন। এরই মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে প্লেন থামানোর কারণ জানতে চেয়ে রশিদের কাছে বারবার মেসেজ আসতে থাকে। কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর না আসায় কন্ট্রোল টাওয়ার খুব সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে প্লেনটি খুব নিচু দিয়ে দ্রুতবেগে উড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় রাডার তার অবস্থান নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। বারবার যোগাযোগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা নিশ্চিত হয়ে যায় প্লেনটি ছিনতাই হয়েছে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে এফ-৮৬ জঙ্গি বিমান মতিউরের পশ্চাদ্ধাবন করে, কিন্তু খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়।
মতিউর রহমান যখন ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছাকাছি সিন্ধু প্রদেশের মরু এলাকায় চলে আসেন, তখন রশিদের সংবিৎ ফিরে আসে এবং বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতিউর রহমানের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। লড়াইয়ের একপর্যায়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং উভয় অফিসারই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত ঘৃণা ও অবজ্ঞা নিয়ে মতিউরের মৃতদেহ সৎকার করে।

মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে রাষ্ট্রের সর্Ÿোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর সনদ নম্বর ৬।

২০০৬ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশ সরকার এই বীরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে ফেরত নিয়ে আসে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে যশোরে অবস্থিত বিমানঘাঁটির নামকরণ করা হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটি’।

মতিউর রহমানের স্ত্রীর নাম মিলি রহমান। তাঁদের দুই মেয়ে।

তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা - আনোয়ার শাহজাহান

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

আমাদের জাতির শ্রেস্ঠ ৭ জনার ১ জন উনি, সন্মান রলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.