নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম ১৯৭৩ সালে সিলেটে। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫টি।

আনোয়ার শাহজাহান

জন্ম সিলেটে

আনোয়ার শাহজাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

আনোয়ার শাহজাহান: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন যেসব বীরযোদ্ধা নিজের জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচানোর অনন্য নজির স্থাপন করেছেন, ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত মহেষখোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. আমানত শেখ এবং মা জিন্নাতুননেছা।

ছোটবেলাতেই নূর মোহাম্মদ শেখ মা-বাবাকে হারান। ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম বিয়ে করেন। সংসারের অনটন দূর করতে প্রথমে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগদান করেন। কিন্তু তাতেও সচ্ছলতা আসে না। ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইপিআর বাহিনীতে যোগদান করেন। তাঁর ক্রমিক নম্বর ছিল ৯৪৫৯। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শত্রুর গুলির আঘাতে তিনি আহত হন। ওই যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমঘা-ই-জং’ ও ‘সিতারা-ই-হারম’ দুটি বীরত্বপূর্ণ খেতাবে ভূষিত করে। সেই সাথে চাকরিতে পান ইনক্রিমেন্ট। ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে ৪ নম্বর উইংয়ে তাঁকে বদলি করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে নূর মোহাম্মদ শেখ ছুটিতে নিজ গ্রামে অবস্থান করছিলেন। বেতারের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নগ্ন গণহত্যার খবর শুনে তিনি খুবই বিচলিত হয়ে পড়েন এবং নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে যোগদানের জন্য পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। এই সাব-সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা আগস্ট মাসের শুরুতে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার সুতিপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মোতায়েন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাঁটিকে রক্ষা এবং শত্রুদের নজরদারিকল্পে গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল নিয়োজিত করা হয়। এই দলের বাকি সদস্যরা হলেন নান্নু মিয়া, মোস্তফা কামাল ও একজন গণযোদ্ধা।

৫ সেপ্টেম্বর যথানিয়মে নূর মোহাম্মদ দায়িত্ব পালন করছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁর দলের অস্তিত্ব টের পেয়ে যায়। শত্রুবাহিনী তিন দিক থেকে নূর মোহাম্মদের দলকে ঘিরে রেখে আক্রমণ করতে থাকে। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হন তিনি। শত্রুর বারবার আত্মসমর্পণের নির্দেশকে উপেক্ষা করে তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে থাকেন। ইতোমধ্যে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া শত্রুর গুলিতে আহত হন। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একজন সাহসী অধিনায়ক হিসেবে নান্নু মিয়াকে কাঁধে করে নিয়ে পিছু হটতে থাকেন। হঠাৎ শত্রুর দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলার আঘাতে তাঁর ডান হাত ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

একের পর এক শত্রুর মর্টারের গোলা, মেশিনগানের গুলিবর্ষণ এবং সর্বোপরি নিজেদের গুলিও শেষ হয়ে আসে। এমন উভয়সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি সহযোদ্ধা মোস্তফাকে নির্দেশ দেন, নান্নু মিয়াসহ তাঁরা যেন পশ্চাদপসরণ করেন। তিনি কাভার ফায়ার চালিয়ে যাবেন। কিন্তু মোস্তফা অধিনায়ক নূরকে এভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ারে ফেলে যেতে রাজি হননি। পরে অবশ্য নূর মোহাম্মদের নির্দেশে অন্যান্য সহযোদ্ধাকে নিয়ে তাঁরা পিছু হটেন।
সৈনিকদের বিদায় দেয়ার সময় নূর মোহাম্মদ তাঁর এলএমজিটি সহযোদ্ধা নান্নু মিয়ার হাতে তুলে দেন, যাতে তিনি শহিদ হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের ভা-ার থেকে কোনো ভারি অস্ত্রের মজুত নষ্ট না হয়, আর নিজের কাছে রেখে দেন একটি সেল্ফ লোডেড রাইফেল (এলএলআর)। এবার বারবার স্থান পরিবর্তন করে তিনি শত্রুদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন, যেন সহজেই শত্রুরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। নূর মোহাম্মদের একের পর এক নিশানাভেদী বুলেটে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারায়। সহযোদ্ধাদের নিশ্চিত পশ্চাদপসরণ ও মূল ঘাঁটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি নিজের অস্তিত্ব ও প্রাণসংহার বা অবিরত রক্তক্ষরণেও বিচলিত ছিলেন না। এভাবে কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলার পর নূর মোহাম্মদের গুলি শেষ হয়ে যায়।
শত্রুসেনারা ক্রমাগত নূর মোহাম্মদের অবস্থানের ওপর মেশিনগান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একসময় অকুতোভয়ী এই যোদ্ধা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। হিং¯্র পাকিস্তানি সেনারা বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে নূর মোহাম্মদের মৃতদেহকে। এরপর মানবতার সকল নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে তাঁর চোখ দুটি উপড়ে ফেলে। ঘণ্টা খানেক পরে সুতিপুর মূল দল থেকে আরো সৈনিক আসে, কিন্তু ততক্ষণে শত্রুর দল এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় সহযোদ্ধারা এই বীরের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
একজন অধিনায়ক হিসেবে নূর মোহাম্মদ ছিলেন অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য সহযোদ্ধারা নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসীকতা ও মহান আত্মত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর খেতাব নম্বর ৭।

তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম তোতা বেগম এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ফজিলাতুননেছা। তাঁদের এক ছেলে এবং তিন মেয়ে।

তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা - আনোয়ার শাহজাহান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.