নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম ১৯৭৩ সালে সিলেটে। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫টি।

আনোয়ার শাহজাহান

জন্ম সিলেটে

আনোয়ার শাহজাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭

স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ

আনোয়ার শাহজাহান: মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার (বর্তমানে মধুখালী উপজেলা) অন্তর্গত ছালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সী মেহেদি হোসেন এবং মা মকিদুননেছা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। আব্দুর রউফ অবিবাহিত ছিলেন।

ছোটবেলাতেই আব্দুর রউফ পিতৃহারা হন। তাঁর জন্মের পর তাঁদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আবাদযোগ্য সামান্য যে জমিজিরাত ছিল, তা-ও মধুমতী নদীর কলারগ্রাসে হারিয়ে যায়। ফলে মা মকিদুননেছা চার সদস্যের সংসার নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। অনেক সংগ্রাম করে আব্দুর রউফকে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়ালেখা করানো মায়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সংসারের হাল ধরার জন্য পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ইপিআর বাহিনীতে যোগদান করতে হয়। তাঁর ইপিআর নম্বর ছিল ১৩১৮৭। এ সময় তিনি চট্টগ্রামে অবস্থিত ইপিআরের ১১ নম্বর উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। মাঝারি মেশিনগান ডিটাচমেন্টের ১ নম্বর মেশিনগানের চালক ছিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ইপিআর বাহিনী প্রথমেই বিদ্রোহ করে। ওই সশস্ত্র বিদ্রোহে এলএমজি চালক আব্দুর রউফ শত্রুর বিরুদ্ধে অসীম সাহসে লড়াই করেন। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সেই আন্দোলন বেশি দিন টিকতে পারেনি। কালুরঘাটে মুক্তিবাহিনী প্রথম তাদের সদর দপ্তর গড়ে তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একের পর এক বেপরোয়া আক্রমণে খুব বেশি দিন সেখানে থাকা সম্ভব হয়নি।

১১ এপ্রিল কালুরঘাট পতনের পর মুক্তিযোদ্ধারা রামগড় অভিমুখে রওনা হন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, রামগড় হবে বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী। তাই রামগড় রক্ষার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। কালুরঘাট থেকে রামগড়ে যাওয়ার একমাত্র সড়কপথটি বুড়িঘাট হয়ে অগ্রসর হয়েছে, আবার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কপথটি বুড়িঘাটকে স্পর্শ করে গেছে। অবস্থানগত কারণেই বুড়িঘাট ছিল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইপিআরের একটি দলকে বুড়িঘাটে মোতায়েন করা হয়। আব্দুর রউফ একজন দক্ষ এলএমজি চালক হিসেবে এই দলে নিয়োজিত ছিলেন।

৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩ কমান্ডো ব্যাটালিয়নের দুই কোম্পানির একটি বিশাল দল ৭টি স্পিডবোট এবং ২টি লঞ্চ নিয়ে বুড়িঘাটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৬টি ৩ ইঞ্চি মর্টার, মেশিনগান ও অন্যান্য ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করে। শত্রুর এমন আকস্মিক ও প্রচ- আক্রমণে প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এই সুযোগে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আরো কাছে চলে আসে এবং ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের অবস্থানকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, আবার তাদের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ, যোগাযোগ সরঞ্জামও ঢের বেশি ছিল। তাই বাধ্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে প্রয়োজন ছিল কাভার ফায়ারের। এলএমজি চালক ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। অধিনায়ক ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান আব্দুর রউফকে তাঁদের সাথে পিছু হটার জন্য বলেন। জানা যায়, প্রতিউত্তরে আব্দুর রউফ নাকি বলেছিলেন, “আমি একজন এলএমজি চালক, সুতরাং কাজটি আমাকেই করতে হবে স্যার, আপনি সবাইকে নিয়ে পশ্চাদপসরণ করুন। আমি পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করছি।”

আব্দুর রউফ একাই শত্রুদের বিপক্ষে লড়াই করতে থাকেন। তাঁর লক্ষ্যভেদী নিশানায় একের পর এক ঘায়েল হতে থাকে পাকিস্তানি সেনা। নিজেকে অক্ষত রাখতে তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর একেকটি গুলির আঘাতে পাকিস্তানি স্পিডবোটগুলো আক্রান্ত হতে থাকে। এভাবে ক্রমেই ডুবতে থাকে শত্রুদের স্পিডবোটগুলো, সাথে সাঁতার না জানা অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। এই সুযোগে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ও তাঁর সৈনিকেরা নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

আব্দুর রউফের অব্যর্থ নিশানায় পাকিস্তানি স্পিডবোটগুলো যখন ক্রমান্বয়ে ডুবে যাচ্ছিল, তখন লঞ্চ দুটি নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। রউফের এলএমজির রেঞ্জের বাইরে চলে যাওয়ায় সেগুলো অক্ষত থেকে যায়। অকুতোভয়ী রউফ একাই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। ইতোমধ্যে লঞ্চ দুটি একযোগে ৩ ইঞ্চি মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। একটি গোলা এসে সরাসরি আব্দুর রউফের শরীরের ওপর আঘাত করে। সাথে সাথে খ-বিখ- হয়ে যায় তাঁর দেহ। শহিদ হন তিনি।

পরবর্তীকালে আব্দুর রউফের সহযোদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খালের নিকটবর্তী একটি টিলায় সমাহিত করেন। কর্তব্যনিষ্ঠার এক অনন্য উদাহরণ আব্দুর রউফ। নিজের জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে পুরো একটি দলের জীবন রক্ষা করেন।
এই মহানুভব কীর্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর খেতাব নম্বর ২।


তথ্যসূত্র ■■■
স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা - আনোয়ার শাহজাহান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.