নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিস

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন,খুঁজি তারে আমি আপনায়....

এপিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের খোঁজে

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৫

অনেকদিন ধরে স্বপ্ন দেখিনা।ভাবলাম স্বপ্নের খোঁজে বের হওয়া যাক। গত রাতে বের হলাম স্বপ্ন খুঁজতে। রাত বলতে একদম মাঝরাত। এখন দিনের বেলা শীত হাল্কা থাকলেও রাতে ভালই ঠান্ডা পড়ে। গায়ে একটা সোয়েটার পরে তার উপরে একটা গরম চাদর জড়িয়ে নিয়েছিলাম।স্বপ্নের খোঁজে হাটতে হাটতে কখন যে আব্দুল্লাহপুর চলে আসলাম টেরই পেলাম না। আচ্ছা এতক্ষণে কি একটাও স্বপ্ন চোখে পড়েনি?স্বপ্নের মত কিছু কি পাইনি? আব্দুল্লাহপুরের ফুট ওভার ব্রিজের নিচে যে জড়োসড়ো হয়ে কিছু নারী-পুরুষ ঘুমাচ্ছে তাদের নিয়ে কি স্বপ্ন দেখা যেত না? তাদের জীবনেও তো অনেক স্বপ্ন আছে। আমি বিলাসিতা করে স্বপ্নের খোঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু তারা? তারা নিশ্চয় বিলাসিতা করতে ব্রিজের নিচে ঘুমাচ্ছে না। এই শীতের রাতে গাদাগাদি হয়ে কতইনা সুখে ঘুমাচ্ছে এরা। এই সুখটা কি আমরা পাই? না, পাইনা। আমাদের উষ্ণতা আছে, সুখ নেই।
হাউজ বিল্ডিং এর এখানে এসে এক অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। দেখলাম নর্থ টাওয়ার আর মাস্কট প্লাজার পাশ দিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ির মত গাড়ি উড়ে যাচ্ছে! শুধু ঘোড়ার জায়গায় কতগুলো হরিণ। কয়টা হরিণ ওখানে? নাহ গোণা যাচ্ছেনা। আলোর স্বল্পতার কারণে ভালোভাবে দেখতেই তো পারছিনা।
আরেহ! এটা তো সান্টা ক্লজের রথ! আরে! ওই তো সান্টা ক্লজ!
সান্টা আ আ আ আ আ!
নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলাম। আসলে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছিলাম আমি। জীবনে কত যে শুনেছি সান্টা ক্লজের কথা। এই প্রথম তাঁর দেখা পেলাম। আমার চিৎকার শুনেই কিনা সান্টা তার রথ নিয়ে নিচে নেমে এল। আমাকে জিজ্ঞেস করলো
- কি গিফট চাই ইমন?
- শান্তি
- শান্তি?
- হ্যাঁ শান্তি, যে শান্তির জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন যীশু, যে শান্তির জন্যই আবার পৃথিবী ছাড়লেন।
- আচ্ছা, কিরকম শান্তি চাই বলো?
- আপনি তাহলে মায়ানমারে যান, সিরিয়ায় যান, ওখানেই শান্তি দরকার খুব বেশি।
- তোমার দেশে শান্তির দরকার নেই?
- আছে, কিন্তু আমাদের থেকে যে ওদেরই বেশি দরকার।
সান্টা ক্লজ চলে গেলেন তার শান্তির বাণী নিয়ে। আমি আবার হাটা শুরু করলাম।স্বপ্নের মত এখনও কিছু পেলাম না।
আজমপুরের এখানে আসতেই একটা একটা আওয়াজ শুনে জমে গেলাম।
হল্ট!
পিছনে ঘুরে দেখলাম একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। কাছে আসার পর তার নেমপ্লেট দেখলাম, যোসেফ নাম তার। জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনি এই সময়ে এখানে কি করেন?
আমার প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে উনি বললেন,
- প্রশ্নটা আমার আপনাকে করার কথা
- ওহ, তাই তো। আমার তো এইসময়ে এখানে থাকার কথা নয়।
-হ্যা,তা অবশ্য ঠিক।স্বপ্ন খুঁজতে বেরিয়েছি।
- ফাজলামো করছেন আমার সাথে? রাত তিনটায় আপনি স্বপ্ন খুঁজতে বেরিয়েছেন?
- না, সত্যি বলছি। কিন্তু আপনি এখানে কেন? আপনার তো এখানে থাকার কথা না। আজকে তো বড়দিন।
কথাটা উনাকে টাচ করে গেল। কেমন যেন একটু মিইয়ে গেলেন।
- কি করব বলুন ভাই, আমাদের আবার বড়দিন আর ছোটদিন।
- তাই বলে আজকের দিনটার জন্যও আপনি ছুটি পেলেন না? রাতের ডিউটিটা তো অন্য কাউকেও দিতে পারতো।
- পারতো হয়তো, কিন্তু উপরওয়ালার মুখের উপর তো কিছু বলার নেই ভাই।
- আপনার ছেলে মেয়ে? ওরা ক্রিসমাস পালন করবে কাকে নিয়ে? এই সাধারণ ব্যাপারটা আপনার উপরওয়ালা বুঝতে চাইবেনা? ঈদের দিন যদি তাকে ছেলেমেয়ে রেখে ডিউটি করতে হয় তাহলে তার কেমন লাগার কথা?
- কি আর করার ভাই, আমাদের সিস্টেমই এটা। যান, আপনি স্বপ্ন খুঁজতে থাকেন। আমি দেখি দুয়েকটা চোর ডাকাত পাই কিনা।
মন খারাপ করে আবার হাটা শুরু করলাম। বেচারা যোসেফ! এমন একটা আনন্দের দিনেও বউ ছেলেমেয়ে রেখে ডিউটি করতে হচ্ছে। আজব সিস্টেম আমাদের।
নাহ, আজ আর স্বপ্ন খুঁজবনা। রাতের স্বপ্নগুলো অনেক ভারি। ওদের ওজন বইবার সাধ্য এখনও হয়নি আমার। স্বপ্নগুলো ভালো থাকুক এবং সবার মনের মাঝে বেঁচে থাকুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.