![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আমি হয়তো তেমন না যেমনটা তোমরা ভাবো....!! হয়তো আমি তেমন , যাকে তোমরা বুঝতে পারো না....!!" আমার খুব সাধারন থাকার সাধ । অসাধারন হবার মত কোন গুন আমার ভেতর নেই । সমালোচকদের চোখে : আমি একটা 'অ' টাইপ ছেলে । ((অসহ্য, অসভ্য, অসামাজিক, অতিভদ্র, অস্থির, অধৈর্য্য, অনিয়ন্ত্রিত, অনাকাঙ্খিত (তাদের জীবনে), অবিশ্বাসী, অগোছালো, অতিরিক্ত ভাব, অত্যাচারী, অভিশপ্ত + ..... )) মানবিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করি । বন্ধুদের চোখে : আমি আমি বিনয়ী, ভদ্র, বিশ্বাসী, প্রকৃতিপ্রেমী, আঁতেল, মেধাবী, ফানি, দুর্ভাগা এবং রোমান্টিক :) । মনুষ্যত্বের সংজ্ঞায় নিজেকে মানুষ বলে মনে করি । এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ।
''মতাদর্শিক একজন মানুষ হন পাহাড়ের মতো অটল আর ব্যাক্তি মানুষ যেন পেঁজা তুলোর মত হালকা ''-- মাও সে তুং ।
প্রশ্ন আসতে পারে মতাদর্শ কি ??-- মতাদর্শ হল আপনার বিশ্বাস/ আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক । আপনি চুরি/ডাকাতিতে বিশ্বাস করেন ? নাকি সততা/নিষ্ঠায় ?? যেটাই করুন সেটাই আপনার মতাদর্শিক পরিচয় । তেমনি আপনি রাজনীতিতে কোন দলকে সাপোর্ট করছেন-মানে হল তার মতাদর্শটাকেই আপনি বহন করছেন । ফেবুতে নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির ইউজারদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও তারাও কোন না কোন মতাদর্শ সাপোর্ট করেন, কারন আমরা আসলে কেউ রাজনীতির বাইরে নই ।
আমি তখন মাধ্যমিকে পড়ি, রাজশাহী মেডিক্যালে পড়ুয়া খালাতো ভাইটি যখন ছুটিতে বাড়িতে আসতো আমি তার পিছুপিছু ঘুরতাম । অনেক ধরনের গল্প হতো আমাদের । তার মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম 'ছাত্র ইউনিয়ন' বলে একটা দল আছে যারা সমাজের নানা অনিয়ম/ শিক্ষাব্যাবস্থার ত্রুটিগুলো/ ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে । তিনি তাতে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং কথাগুলো বলার সময় তার চেহারার উজ্জলতা আমাকে বরাবরই বেশ আকর্ষণ করতো । আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ পড়ুয়া । তিনি আমাকে কিছূ বই সাজেস্ট করেছিলেন - ছোটদের অর্থনীতি, ছোটদের রাজনীতি, তানিয়া, মা-মনিকে বাবা + ...। বইগুলো পড়ার পর এ ব্যাপারে জানার আগ্রহটা বেড়ে গেল । উচ্চ মাধ্যমিকে উঠার পর পশ্চিবঙ্গের অনেক প্রথিতজশা লেখকের উপন্যাসের ভক্ত হয়ে গেলাম । সমরেশ, সুনীল, বুদ্ধদেব,নিমাই, শংকর, তারাশঙ্কর .... ইনারা সবাই ৬০/৭০ এর দশকের গল্প বলতেন । যে সময়টা উপমহাদেশে মাক্সর্সীয় মতাদর্শ/কমিউনিজমের আসন গেড়ে বসার সময় । উঠতি ছাত্রসমাজ কিংবা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে মার্ক্সসীয় চেতনা বেশ শক্ত অবস্থান নিয়ে ফেলেছে । তারা (নকশালপন্থি নামে পরিচিত ) একটা শ্রেণীবৈষ্যম্যহীন সমাজ ব্যাবস্থার স্বপ্নে বিভোর হতে শুরু করেছে। তখন ক্ষমতালিপ্সুদের আসন নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার ফলে তারা চড়াও হতে শুরু করে । অমানবিকভাবে মেরে ফেলা হয় অনেক বিপ্লবীকে / অনেকে বাধ্য হয়ে আন্ডারগ্রাইন্ডে অবস্থান নেন এবং গেরিলা হামলা পরিচালনা শুরু করেন । একসময় স্তিত হয়ে পড়ে সমস্ত প্রতিরোধ । কিন্তু আজও পশ্চিমবঙ্গের অনেক রাজ্যেই তাদের দেখানো পথে অনেক গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠেছে ।
সমরেশের চারটা উপন্যাস সবার পড়ার লিস্টে থাকার কথা । কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিনী, উত্তরাধিকার-প্রতিটা গল্পেই সমাজের অন্ধকার অংশগুলো তুলে ধরে সেখান থেকে একজন নায়ক তৈরি করা হয়েছে, যে এই সমাজের অচলায়ন ভাংতে চায় ।
গর্ভধারিনীতে সমাজের এলিট শ্রেণীর মেয়ে জয়িতা যখন নিম্নবিত্ত আনন্দ,সুদীপদের সাথে হিমালয়ের পাদদেশে কোন এক গ্রামে গিয়ে তাদের মতাদর্শিক সেই শ্রেণীবৈষম্যহীন সমাজব্যাবস্থা গড়ে তোলে তখন আমার শরীর অন্যরকম এক উত্তেজনায় কাঁটা দিয়ে ওঠে ।
ইস্পাত (নিকোলাই অস্ত্রভস্কি), মা (ম্যাক্সিম গোর্কি) , ভ-ই লেনিন, চে-গুয়েভারার ডায়েরী, রাশিয়ার চিঠি (কবিগুরু), ভোলগা থেকে গঙ্গা, পাশ্চাত্য দর্শণের ইতিহাস, ভারত সভ্যতার ইতিহাস, মার্কসবাদ-লেলিনবাদ,পথের দাবী (শরৎচন্দ্র), সমাজ সংস্থা +... এই বইগুলো আমাকে কমিউনিজমের প্রতি অনেক আকর্সিত করেছিল । আমি দর্শণ,ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজ সব ঘেটে দেখেছি মানুষের জন্য এই মতাদর্শটাই প্রয়োজন ছিল । কিন্তু ৯১ পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরই মূলত কমিউনিজমের পতন শুরু ।পৃথিবী ততদিনে ধনতান্ত্রিক/ভোগবাদী সমাজব্যাবস্থায় প্রবেশ করেছে ।
শুরু হয়েছে নতুন 'কনসেপ্ট' গণতন্ত্র ।। ধনতন্ত্র বা বাকিগুলো কিন্তু এক একটা সমাজ ব্যবস্থা কিন্তু গণতন্ত্র একটা 'কনসেপ্ট' । এখন যদিও সব তন্ত্র মিলে একটা লেজেগোবরে অবস্থায় দাড়িয়েছে । বিমেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ তথা এশিয়ার দেশগুলোতে ।
পৃথিবীর শুরু থেকে নানান সমাজ ব্যবস্থা এসছে এবং এক সময় তা পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে নতুন একধরনের সমাজ ব্যবস্থা শুরু হয়েছে ।সামন্ততান্ত্রিক> রাজতান্ত্রিক>ধনতান্ত্রিক> বা অধুনা গণতান্ত্রিক কোন সমাজ ব্যাবস্থাতেই সাধারন মানুষের ভাজ্ঞের কোন পরিবর্তন হয়নি । উঁচু শ্রেণীর পকেট ভারী হয়েছে- নিচু শ্রেণী আরো নিচে নেমেছে । বিত্তভেদে সমাজে নানান শ্রেণী তৈরী হয়েছে । এ কারনেই সমস্যাগুলোও আরো প্রকট হয়ে উঠছে । অর্থনৈতিক মন্দা বা দেউলিয়াত্ব বেড়ে চলেছে ।
আমি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি যেখানে সাধারন মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে । কেবল মাত্র ভোট ব্যাংক হিসেবে নয় তারা রাষ্ট্রের যে কোন সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের সকল সমস্যাগুলো রাষ্ট্র পূরণ করতে বাধ্য থাকবে । মোদ্দা কথা রাষ্ট্র হবে বিকেন্দ্রীভূত সমাজ কাঠামো নির্ভর ।।
©somewhere in net ltd.