নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবোন্ধ কবি

আশিক হোসেন

কবোন্ধ কবি আমি। কবিতা দেইখা চোখ মুখ চিনা লন।

আশিক হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হৃদয়ের পা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

হৃদয়ের কি পা থাকে?

একটা বাম পা বিহীন ভিক্ষুককে ১০ টাকা ভিক্ষা দেয়ার পর আরিফের হঠাৎ এই আজগুবি কথা মাথায় আসলো। আজকে মাসের ১৫ তারিখ। টিউশুনির টাকা পেতে আরও অনেক হিজরি সাল বাকি। এমন অর্থের মাইনকা চিপায় তার কাছে ১০ টাকা হিরা কোহিনুরের চেয়েও বেশি দামি। কিন্তু আজকে একটা টিউশুনি থেকে ফেরার পথে সে দেখল একটা জুয়েলারির দোকানের সামনে একটা বৃদ্ধ ল্যাংরা ভিক্ষুক ক্রাচে ভর দিয়ে এক হাত প্রসারিত করে অনন্ত ধারায় বলে যাচ্ছে ” স্যার, একটা পয়সা দেন। রোযার মাসে খাস দিলে দোয়া করুম ”

জুয়েলারির লোকজন একটা সুন্দরি কাস্টমারকে নিয়ে ছিল মহাব্যাস্ত। হবারই কথা। একে তো এই আকালের সময় সোনার বেচাকেনাই হয় না , আবার সুন্দরি রমণী। অবশেষে ভিতরের থেকে একটা চেংড়া কর্মচারী বলে উঠলো

“চাচা, মাফ করেন।”

কিন্তু বুড়ো সবুরে বিশ্বাসী। তিনি বলতেই লাগলেন

” আল্লাহর ওয়াস্তে দুইডা টাকা দ্যান।”

আরিফ সেই দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । বুড়ো লোকটা কেমন অসহায়ভাবে এক পা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার মায়া হল। কেন জানি তার নিজেকেও অই বুড়োর মতই অসহায় মনে হল। হয়ত এই বুড়ো এম এ হলে সেও টিউশুনি করত। কিন্তু বিধির চক্র ভিন্ন দিকে গিয়েছে।



আরিফ মানিব্যাগ বের করে দেখল ১০ টা টাকা আছে মাত্র। সে ১০ টা টাকা নিয়ে বুড়োর কাছে গেলো। বুড়ো তখনো পুরনো পন্থায় নিষ্ফল চেষ্টা করছিলো। আরিফ বুড়োর হাতে ১০ টাকা দিলো।বুড়ো টাকাটা হাতে নিয়েই তার বস্তায় ভরার জন্য উঠে পরে লাগল । মনে হচ্ছিল তার আরেকটা পা গজিয়ে গেছে। বুড়োটা আরিফের দিকে ফিরেই তাকাল না। আরিফ ভাবল বলবে “খাস দিলের দোয়া কই”



আরিফ বুড়োর বস্তার দিকে চোখ দিলো। বস্তা টাকায় ভরতি। আরিফের মনে হতে লাগল বুড়া তাকে ঠকিয়েছে। তার মন খুত খুত করতে লাগল। তারপর ভাবল “থাক বুইরা মানুষ। পাও নাই। “



কিন্তু হঠাৎ আরিফের মনে প্রশ্ন জাগল “আমিও কি ভালো আছি? আমার পাও দুইডাই আছে।কিন্তু আমি কি আসলেই ভালো আছি?”



আরিফের কেন জানি মনে হল সেও কোন না কোন দিক থেকে অস্বাভাবিক।সেও হয়ত ভিতরের দিক দিয়ে প্রতিবন্ধি।



আরিফের মনে হল সে একজন হৃদয় প্রতিবন্ধি। তার হৃদয়ের পা নেই। কষ্টের করাতে তার হৃদয়ের পা গুলা কাটা পরেছে। কিন্তু হৃদয়ের কি পা থাকে?আর কি এমন কষ্ট যে তাকে হৃদয় প্রতিবন্ধি বানাল? “ধুর। আগের আজাইরা জিনিশ ঘাইটা কি লাভ?”



আরিফ বাসার দিকে যেতে লাগল। একটু পথ পেরুলেই নিউ মারকেট।আর তার এক কোনে তার অগোছালো মেস। মার্কেট এলাকা পার হবার সময় সে হঠাথ লক্ষ করল এক চেনা মুখ। সে তাড়াতাড়ি রাস্তা পের হয়ে গেলো।



না। সে আরিফকে দেখে নি। আচ্ছা দেখলে কি করত?কি বলত? “বাদ দে।কি আর কইত।”আরিফ নিজেকে বলে।



একদিন এই নিউ মার্কেটেই এক অদ্ভুত মজায় মেতে উঠেছিল সে। সে ছুটছিল একটা রিক্সার পিছনে। রিক্সাতে বসা ব্যাক্তিকে সে বলছিল -

“মাফ কর জান।আর কয়টা মাস । চাকরি এবার হলেই তোমার বাবার কাছে যাবো।”

“তুমি এই কথা বারবার বল।মিত্থ্যুক। সামনের মাশে আমার বিয়ে। তুমি খেয়ে যেও ।”

“কি বলছ এগুলা? এই রিকশা থামাও”

“না চাচা জোরে চালান। আর তুমি আমাকে কখনো ফোন দিবা না।আজকেই শেষ দেখা”

“বললেই হইল।দাড়াও এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেছি”

সেইদিন সেই রিকশার সামনে ময়লা রাস্তায় সটান শুয়ে পরেছিল সে। জোরে জোরে চিৎকার করছিল-

“যেতে হলে আমার উপর দিয়া যাও”

তখন পারমিতা মিষ্টি হেসে বলেছিল

“অই তুমি বাংলা সিনেমা পাইস।!মান্না হবা! আচ্ছা মান্না একটা দউর দাও দেখি। আমার রিক্সা ধরতে পারলে আমার রাগ কমবে নাইলে তুমি আমার বাচ্চার আংকেল।”

“না।আমি বাচ্চার বাবা হব।আর তোমার অই ডাক্তার পাত্র বাচ্চারে বিস্কুট খাওয়াবে।”

“দেখা যাবে। চাচা জোরে টান দ্যান”



তারপর আরিফের সেই ম্যারাথন রান। পুরা এলিফ্যান্ট রোড চক্কর দিল সে রিক্সার পিছনে। অবশেষে হয়ত রিক্সাওয়ালাই চাচ্ছিল আরিফ জিতে যাক। তাই রিক্সাটা ধীরে ধীরে যাওয়া শুরু করলেই আরিফ রিক্সা ধরে উঠে পরে।আর তার হাত ধরে বলে “তোমাকে আজ কেউ বাচাতে পারবে না সুন্দরি!”



"এখন আবার ভিলেন! আচ্ছা ঠিক আছে।কাজির অভিনয় পারো?”

‘হু।অনেক বিয়া পরাইসি।”

"এখন নিজেরটা পরাও।"

আবল তাবল সুরা পরার পর আরিফ বলল

“কন্যা বলেন কবুল”

পারমিতা চুপ।

আরিফ বলল “মৌনতাই সম্মতির লক্ষন। আমরা আজ থেকে জামাই বউ”।



আরিফ হাসল।পারমিতা তাকে দেখেও নি।হয়ত দেখেও না দেখার ভান করেছে। তার সাথে একটা টাকলা ভদ্রলোক। ইনি মনে হয় অই ডাক্তার। হবারই কথা। দুনিয়াটা কি আশিক হোসেনের কবিতা রে!



তারা রিক্সায় উঠলো । ক্রিং ক্রিং আওয়াজ করে রিকসা চলতে লাগল । পারমিতা আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছে। মনে হয় সুখেই আছে। থাক। সুখে থাক।



আরিফ একা দারিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর এক চলন্ত রিক্সার পিছু নেয়া শুরু করল। খালি রাস্তা। রিক্সা ফুলস্পীডে চলছে। আরিফ ও দৌড় দেয়া শুরু করল। কিছুখন যাওয়ার পর রিচক্সাওয়ালা এইটা লক্ষ করল। সে আরিফকে বলল

“ভাই কোনোখানে যাইবেন? ”

“না ভাই।তুই পুরা এলিফ্যান্ট রোড চক্কর দে। আমি তোর পিছনে দউরামু।”



রিক্সা চলছে। রিক্সাওয়ালার গলায় গান “প্রেমের নাম বেদনা”



পিছনে আরিফ ছুটছে। তার অদ্ভুত ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন পর তার হৃদয়ের ভাঙ্গা পা গুলা আবার গজাচ্ছে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২

ডরোথী সুমী বলেছেন: এক কথায় দারুন উপভোগ্য। মজা করে কঠিন সত্য ধরিয়ে দিলেন। শুভ কামনা।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮

আশিক হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১

মধ্য রাতের আগন্তক বলেছেন: আপনার অনেকগুলো লেখাই পড়ে ফেললাম। ভালো লেগেছে সত্যি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.