নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সার্কাসের হাতি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

সার্কাসের হাতি দেখেছেন কখনো? সার্কাসের হাতির থাকে ৫ পা। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? যার বা যাদের বিশ্বাস হচ্ছে না- তারা আজই দেখে আসুন। বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও সার্কাসের হাতির দেখা পাবেন। আমাকে মিথ্যাবাদী বলার আগে আপনি নিজ চোখে গিয়ে একবার দেখে আসলে ক্ষতি কি? ভাগ্য ভালো থাকলে পল্টনের আশে-পাশে বা লালদিঘীর ময়দানেও দেখতে পারেন। তবে বৃষ্টির কারণে এখন দেখা না পাওয়ার সম্ভাবণা শতভাগ। অসুবিধা নাইক্কা, কিছুদিন অপেক্ষা করুন। সার্কাসওয়ালা ঘুরে ঘুরে আপনার শহরে একদিন না একদিন ঠিকই আসবে- তখন দেইখ্যেন। আপনারা যারা এর আগে দেখেছেন- তারা বলবেন- ভাই! মিছা কথা কন ক্যান? জীবনে কতোবার সার্কাসের হাতি দেখলাম, কখনো তো ৫ পা দেখিনি। এমন জলজ্যান্ত মিছা কথা কইতে আপনার শরম করে না? তাদের বলবো- একটু সবুর করুন জনাব! আমি প্রমাণ দিতে পারলে হলো তো? এতো অধৈর্য হওয়ার কী আছে?

তার আগে চলুন হাতির সাথে একটু পরিচিত হই। হাতির রয়েছে বিভিন্ন নাম- ১.পিল ২.হাতি ৩.নাগ ৪.দ্বিপ ৫.বারণ ৬.গজ ৭.হস্তী ৮.করী ইত্যাদি । হাতির তিনটি প্রজাতি: একটি এশীয় (এলিফাস ম্যাক্সিমাস) ও দুটি আফ্রিকান (লক্সোডন্টা আফ্রিকানা, লক্সডন্টা সাইক্লোটিস)। প্রাপ্তবয়স্ক (এশীয় হলে শুধু পুরুষ) হাতির উপরের ইনসিসর দাঁত দুটি লম্বা হয়ে গজদন্ত তৈরি করে। হাতি বৃহত্তম স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। শুঁড়কে হাত-এর মত ব্যবহার করতে পারার জন্য এর নাম ‘হাতি’।

হাতি দলবদ্ধ জন্তু। দলপতি হয় সবথেকে শক্তিশালী দাঁতাল। দলের কেন্দ্রে বাচ্চাদের ঘিরে থাকে মা-দিদিমারা। বাচ্চারা বড় হলে দলের বাইরের সারিতে স্থান নেয়। দলছুটও হতে থাকে। পরিণত দাঁতালরা নিজেদের দল গঠনের চেষ্টা করে। তরুণ দাঁতালরা "মস্ত" হবার মরসুমে কানের সামনে অবস্থিত "মস্তগ্রন্থি"র অত্যধিক ক্ষরণে মত্ত-বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং দলপতি বা অন্য দাঁতাল বা যে কোন শাসনকারীকে (যেমন মাহুত) আক্রমণ করে। তখন দলপতি লড়াই বা আত্মগোপনের চেষ্টা করতে পারে। গজদন্তহীন পুরুষ হাতিদের বলে 'মাকনা'। এরা মাদী হাতিদের মধ্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এবং দাঁতালদের অজ্ঞাতসারে বংশবিস্তার করতে পারে। হাতির গর্ভকাল প্রাণীরাজ্যে দীর্ঘতম- প্রায় দু’বছর (২২ মাস বা ৬৪৫দিন)। গল্পে একশ বছর বাঁচে বলা হলেও হাতিরা আসলে ৬০-৭০ বছরের বেশী বাঁচে না। কারণ এদের জীবদ্দশায় ছয়বার (আমাদের মত দু'বার নয়) কষদাঁত বের হয়, আবার চিবিয়ে চিবিয়ে ক্ষয়ে যায়। কষদাঁতের শেষ সেট ষষ্ঠম দশকে গজায়, যা ক্ষয়ে যাবার পর অনাহারে মৃত্যু অনিবার্য।

বিশাল দেহের হাতি কিন্তু প্রকৃতিগতভাবেই খুব নিরীহ। খায় লতাপাতা আর ফলমূল। আবার পোষা, প্রশিক্ষণ পাওয়া সার্কাসের হাতি নানা রকমের খেলাও দেখাতে জানে। আফ্রিকান হাতির ক্ষেত্রে ছেলে হাতি আর মেয়ে হাতি, দুইয়েরই দাঁত আছে। কিন্তু এশিয়ান হাতিদের ক্ষেত্রে কেবল ছেলে হাতিদেরই দাঁত থাকে। এ দাঁত খাবার খোঁড়া আর খোঁজার কাজে ব্যবহৃত হয়। মাটি খুঁড়ে পানির সন্ধান পেতেও দাঁত ব্যবহার করতে পারে হাতি। একটা পূর্ণবয়স্ক হাতির দিনে কতটুকু পানি খাওয়া দরকার জানেন? বেশি না- মাত্র ২১০ লিটার! হাতির কান বিশাল আকৃতির হলেও বেশ পাতলা। প্রকৃতিতে হাতির তেমন কোনো শত্রু নেই। ছোটখাট কিংবা দুর্বল হাতিদের ওপর মাঝেমধ্যে সিংহ আক্রমণ করে। হাতির সবচেয়ে বড় শত্রু আসলে মানুষ! কারণ মানুষই তাদের হত্যা করে দাঁত ও হাড়গোড়ের জন্য। হাতির শুঁড় দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ওজন হতে পারে প্রায় দেড় শ কেজি পর্যন্ত! মেয়ে হাতিরা আজীবন একটি দলের মধ্যে থেকে যায়। ছেলে হাতিরা ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত এই দলের মধ্যে থাকে, তারপর তারা দল ত্যাগ করে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে। হাতি সাঁতার কাটতে পারে। গভীর পানিতে শ্বাস নেওয়ার জন্য তারা ব্যবহার করে শুঁড়! হাতি একটি নিরীহ তৃণভোজী প্রাণী। দিনের ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় এরা লতাপাতা, ঘাস, ফলমূল খোঁজাখুঁজি করে দিন কাটিয়ে দিতে পারে।

সবচেয়ে বড় হাতির রেকর্ডটি আছে আফ্রিকান এক পুরুষ হাতির দখলে। লম্বায় যা ১৩ ফুট। আর ওজন? ২৪ হাজার পাউন্ড। হাতি একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী- যা লাফাতে পারে না। এতো ওজন নিয়ে বেচারা লাফাবেই বা কী করে বলুন? এদের মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় ৩-৪ গুণ বড় এবং মস্তিষ্ক উন্নত। তাদের ঘ্রাণ শক্তি ভয়াবহ রকমের প্রখর। বিড়াল-কুকুর তাদের ঘ্রাণ শক্তির জন্য বেশ প্রশংসিত। কিন্তু আপনি কি জানেন- হাতি তাদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে? হাতিদের পা বেশ নরম আর তুলতুলে আবরণে আবৃত থাকে. এ কারণেই তারা এতো বড় শরীরটা নিয়ে প্রায় নিঃশব্দে হাঁটতে পারে। ভালোবাসা, মমতা, রাগ, কষ্ট এই আবেগগুলো কি শুধু আমাদের জন্যই? হাতিরাও কিন্তু কাঁদে, হাসে। তাদের কোনো বন্ধু অনেকদিন পর দলে ফিরে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানায় । ওরা খেলাধুলাও করে- সাঁতার কাটে। আপনি কি জানেন? হাঁটতে হাঁটতে যদি অন্য কোনো হাতির মৃত দেহ ওদের চোখের সামনে পড়ে, তখন তারা কিছুক্ষণের জন্য থামে। চুপচাপ নীরবতা পালন করে সেই সময়টায়।মাঝে মাঝে নীরবে চোখের জলও ফেলে। এতো বড শরীরটার মাঝে মায়া-মমতাও যে কম পরিমাণে হবে না, তা তো খুব সহজেই অনুমান করা যায়- তাই না?

বিশাল নিরীহ প্রাণীটাকে দু’পেয়ে মানুষ বুদ্ধিখাটিয়ে বশ করে যুদ্ধক্ষেত্রেও ব্যবহার করে থাকে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধে হাতির বেশ ব্যবহার হতো। ইয়েমেনের বাদশাহ 'আবরাহা' হাতির পাল নিয়ে পবিত্র কা'বাঘর আক্রমণ করার জন্য মক্কায় আসার কথা ও ‘আবাবীল’ কর্তৃক পর্যুদস্ত হয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পলায়নের কথা তো পবিত্র কোরআনেই আছে। আল্লাহ এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই অবতীর্ণ করেছেন। সূরা ফীল (হাতি) নামে। প্রিয়নবী হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম সেই ঘটনাটি মাতৃগর্ভ থেকেই দেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন- ‘আলাম তারা কায়ফা ফা’আলা রাব্বুকা বিআসহাবিল ফীল’ (হে হাবীব (দ.) আপনি কি দেখেননি- আপনার প্রভু হস্তীবাহিনীদের সাথে কী ধরণের ব্যবহার করেছিলেন?) সে সময়ে হাতি বর্তমান যুগের ট্যাংক এর মতো কাজ করতো।

হাতির তান্ডব নিজ চোখে দেখেছেন কখনো? ওরে বাপরে! উম্মত্ত হাতির পাল যেদিকেই যায়- সব কিছু ধ্বংসস্তপে পরিণত করে। আমার এলাকা (চট্টগ্রামের রাউজান থানার এয়াছিন নগর গ্রাম) একসময় হাতিপ্রবণ এলাকা ছিলো। ঠিক সন্ধ্যার পরপরই হাতির পাল নেমে আসতো আমাদের গ্রামে। তখন মানুষের কী ছুটোছুটি! কেউ খড়ের গাদায় আগুন দিতো? কেউ বড় ‘উজাল’(মশাল) নিয়ে হাতিদের ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ভয়ে চিৎপটাং হয়ে যেতো। আর কেউ ঘরের ছাদে কেউ বা গাছে উঠে আল্লাহ্ আল্লাহ করতো। আবার কেউ কেউ হাতিদের লক্ষ্য করে বলতো- ‘মামা! ও মামা! আপনারা চলে যান। আমাদের ধান নস্ট করিয়েন না’। আল্লাহর দোহায় লাগে মামুজান!' গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো হাতির পালকে এমনভাবে আদব ও আদরের সাথে ‘মামা’ ডাকতো যে, আপনারা শুনলে মনে করবেন- ওই হাতি বুঝি তাদের মায়ের 'আপন সহোদর ভাই'! শুনে আমার বড়ই হাসি পেতো। আমি এক দৌঁড়ে গিয়ে হযরত এয়াছিন শাহ (রহ.) এর মাজারে ঢুকে মাইকে গ্রামবাসীকে খবরটি জানিয়ে দিতাম আর দোয়া-দরুদ পড়তে বলতাম। আমার ভয়-কাতুরে মনে একটি ভরসা ছিল- আর যাইহোক ‘হাতি মামা’ আমারে কিছু করবে না। কারণ মানুষরা আল্লাহর অলিদের না চিনলেও বনের পশুরা ঠিকই চেনে।

একবার হলো কী? এলাকার মানুষজন গিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়াম্যান স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘সাদা মনের মানুষ’ জনাব এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুলকে ধরল এর একটা বিহীত করতে। তিনি ইউএনও কে নিয়ে হলদিয়া রাবার বাগানের এক টিলায় অপেক্ষা করতে লাগলেন। সাথে থানার পুলিশ ও এলাকার শত শত জনতা। অপেক্ষা করছেন তো করছেন। কিন্তু ‘মামাদের’ দেখা নাই। সূর্য ডুবতে আর বেশি দেরি নেই। এমন সময় পাহাড়ের গা বেয়ে অনেকটা নেচে নেচে আন্ডা-বাচ্চাসহ মামারা শুভআগমন করলেন। সবাই উত্তেজিত হয়ে ওঠলো। পুলিশ বাহিনী বন্দুক তাক করে আছেন ‘মামাদের’ দিকে। মামারা বুক ফুলিয়ে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। ইউএনও সাহেব হাতে হ্যান্ড মাইক নিলেন। বললেন, ‘মামাজান! আপনারা আর সামনের দিকে আসবেন না। আপনারা আপনাদের বাড়ীতে চলে যান। সামনের দিকে আসলে আমরা কিন্তু গুলি চালাতে বাধ্য হবো।’ আচ্ছা আপনারা বলুন- বন্য হাতিরা কি মানুষের ভাষা বুঝে? আপনি ‘মামাজান’ বলুন বা ‘শালাজান’ বলুন- ওনাদের কাছে আপনাদের পরিচিতি একটাই আপনারা ‘খাদক’। হ্যাঁ- ওনাদের বসতঘর 'অরণ্য' আপনারা ধ্বংস করেছেন। তো ওনারা আপনাদের বসতঘরে হামলা করতে না এসে কি চাঁদের দেশে গিয়ে হামলা করবে? 'কামা তুদীনু তুদান' – য্যায়সে করেগা, ওয়ছে ভরেগা। মামারা এগিয়ে আসতে লাগলেন- ইউএনওকে লক্ষ্য করে দ্রুতগতিতে। ইউএনও বললেন-‘ফায়ার’! একসাথে গর্জে ওঠলো সরকারি বন্দুকগুলো। না, মামাদের দিকে নয়- আকাশের দিকে। গুলির শব্দ পেয়ে মামাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল। ওনারা এবার একপ্রকার দৌঁড়ে আসতে লাগলেন। সবচাইতে মজার ব্যাপর কি জানেন? হাজার লোকের মধ্যে যে ব্যক্তিটি সবার আগে ভোঁ দৌঁড় দিলেন- তিনি আর কেউ নন- মামুদের 'পেয়ারের ভাগিনা' জনাব ইউএনও সাহেব। তিনি তাঁর সরকারি গাড়িতে করে চম্পট। গ্রামবাসীরা যে যার মতো যেদিকে পারলো পালিয়ে গেলো।

এতো কথা বলা আমার উদ্দেশ্য না। আসল উদেশ্য বলার আগেই আমার অনেক বোদ্ধা পাঠক মতলবটা বুঝে ফেলেছেন। তাঁরা এতোই বুদ্ধিমান যে, ‘হা করতে ঠা-রা বুঝে ফেলে’। পানির মধ্যে হাতি দেইখ্যাই বুঝে ফেলেছেন- আমি ঠিক কী উদ্দেশে ‘হস্তি বন্দনা’ শুরু করেছিলাম। এ রকম বুদ্ধিমান মানুষ যার পাঠক- সে কি আর নির্বোধ থাকতে পারে? বলুন- পারে? নাহ্, পারে না। আমি ‘নির্বোধ প্রাণী’ হলেও প্রতিদিন আমার পাঠকদের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখি। তাঁদের অসম্ভব সুন্দর মন্তব্যগুলোর জন্য আমি সারাক্ষণ ওঁৎ পেতে থাকি। তাঁদের থেকে শিখে শিখে ‘সার্কাসের হাতি’র লাহান নির্বোধ এই আমি- কিঞ্চিৎ বুদ্ধি সঞ্চয় করেছি। তাই লেখাটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলাম। ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ! হাতির সাথে ‘হাতা-হাতি’ করে কোন লাভ আছে- বলুন! ওরা আমার কোন কথার জবাব দেয় না, দিতে পারে না। সুযোগ পেলে বন্য হাতির মতো ইয়া লম্বা ‘শুড়’ নিয়ে মারতে তেড়ে আসবে।

হাতি নিয়ে আমার একটা শখ ছিল- ‘হাতিতে চড়ে বিয়ে করা’। কিন্তু আমার শশুর বাড়ি যেখানে, সেখানে হাতিটাকেই বরং হাতির চেয়েও বড় আরেকটা জাহাজ দিয়ে কর্ণফুলি পার করাতে হবে। শশুর আব্বাকে হাতে -পায়ে ধরে বিয়ের অনুষ্ঠানটা কর্ণফুলির এপাড়ে আনতে পারলেও সার্কাসের হাতির যেই গতি আমাদের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে আসতে ৩ দিন লাগার কথা। পথের মধ্যেই ‘বাসর রাত’ চলে যাবে। তাই হাতি মামাকে দূর থেকে সালাম করিয়া গেলাম ঘোড়ার কাছে। ঘোড়াওয়ালাকে বললাম- সহিস ভাই! ‘আপনার ঘোড়ায় চড়ে আমি বিয়ে করতে চাই’। গামছা দিয়ে মাথায় পট্টিবাঁধা ঘোড়াওয়ালা তার গামছাটা খুলে কোমরে বেঁধে বললেন- অসুবিধা কী? কোথা থেকে কোথা যেতে হবে বলুন। বললাম- রাউজান থেকে পাঁচলাইশ আবার পাঁচলাইশ থেকে রাউজান। বললেন- এতোদূর যেতে পারবো না। আপনি গাড়িতে করে অক্সিজেন নামবেন ওখান থেকে আমি আপনাকে ঘোড়ায় তুলে নেবো আবার বিয়ের পর বধুসমেত আপনাকে অক্সিজেনে নামিয়ে দেবো। বললাম- 'ইয়ান একখান কথা কইলা না বদ্দা'! গ্রামবাসীরা যদি নাই দেখল- আমি ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতেছি, তাইলে আর ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করার মজাটা কোথায়? ‘ইয়ান একখান কথা’! আপনি এক কাজ করুন- একটা ট্রাক ভাড়া করে আমারে আর গাড়িসমেত আমার ঘোড়াটারে রাউজান উপজেলার সামনে নামিয়ে দেবেন। আমি ওখান থেকে আপনার বাড়িতে গিয়ে আপানাকে নিয়ে এসে রাউজানে নামিয়ে দেবো। আবার আপনি যখন বউ নিয়ে আসবেন, রাউজান সদরে এসে গাড়ি থেকে নেমে আমার ঘোড়ার গাড়িতে চেপে বসবেন। বুঝলাম- আমার কপালে হাতিও নেই, ঘোড়াও নেই। এরকম কান্ড-কারখানা করলে মানুষজন বলাবলি করবে- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল’। এমনিতেই আমি একটু ‘পাগলা’ টাইপের লোক। ঘোড়াওয়ালার কথা শুনলে মুরুব্বিরা আমাকে বউয়ের কাছে নয়, বরং ‘পাবনা’ পাঠাবে। তাই মনের ইচ্ছা মনে রাখিয়া অবশেষে 'কার' ভাড়া করিলাম।

কথা শুরু করেছিলাম ‘সার্কাসের হাতি’ নিয়ে। ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে তখন মাসব্যাপী সার্কাস চলছিল। দূর থেকে দেখলাম প্যান্ডেলের বাইরে খোলা ময়দানে পাহাড় সমান একটা হাতি ৫ পা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টি বেশ ইন্টরেস্টিং মনে হলো। কাছে গিয়ে দেখলাম- দূর! কোথায় হাতির ৫ পা। আমি যেটাকে হাতির পা মনে করেছিলাম, সেটা আসলে হাতির 'পা' না। জলজ্যান্ত একটা ইয়া মোটা মানুষ হাতির দুই দাঁত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা অনেকে রাতের বেলা পথে কোন রশি পড়ে থাকলে সাপ মনে করে চেঁচামেচি করে লাঠি নিয়ে মারতে এসে যে ভুলটা করেন, আমিও দূর থেকে ওই হাতির দাঁত ধরে থাকা মানুষটিকে দেখে ভুল করেছিলাম। কাছে গিয়ে ‘হাতিমামা’কে সালাম করলাম। দেখলাম- মামারে বাইন্ধা রাখছে যে রশি দিয়া, তার চেয়ে বড় রশি দিয়ে আমি আমার ছোটকালে ‘ছাগল’ বাঁধতাম। মামারে সে সামান্য খুঁটি গেড়ে বেঁধে রাখছে, তার চেয়ে বড় খুঁটিতে আমি আমার ছাগল বাঁধতাম। অনেক সময় সেই দড়ি ছিড়ে খুঁটি উপড়ে আমার 'বজ্জাত' ছাগলটা আমার ক্ষেত সাবাড় করতো। তাহলে আমার সেই ছোট্ট ছাগলের শক্তিও কি নেই এই ‘বড় মামার’? আমি একবার হাতির দিকে দেখছিলাম, আরেকবার হাতির রশি ও খুঁটির দিকে দেখছিলাম। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম- কিছুক্ষণ! এই বিশাল হাতির শক্তিগুলো কোথায় গেল?

ভেবে দেখুন- বন্য হাতির যে শক্তি আছে, সার্কাসের হাতিরও ঠিক একই শক্তি কিন্তু আছে। কিন্তু দুই হাতির দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বন্য হাতি মনে করে- বিশাল এই বন-জঙ্গল সবখানেই তার রাজত্ব। সে জন্য হাতির পাল এক বন থেকে আরেক বনে যায়। যায় এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। সবটাই তার দখল করা চাই। হাতিধরা চতুর মানুষরা যখন ‘খেদা’ নামক ফাঁদে ফেলে হাতিকে ধরে ফেলে, তখন হাতি ‘খেদা’ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। না খেয়ে খেয়ে একসময় তার শরীর ও মন ভেঙ্গে পড়ে, দিন দিন দূর্বল হতে থাকে। একপর্যায়ে ইয়া বড় লোহার কয়েকখানা শিকল দিয়ে হাতির সব হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। একই জায়গায় হাতিটিকে দীর্ঘ দিন বেঁধে রাখা হয়। এদিক যেতে চাইলে হাতির পায়ে টান পড়ে। ওদিক যেতে চাইলে হাতির হাতে (শুড়ে) টান পড়ে। অন্যদিকে যেতে চাইলে হাতির গলায় টান পড়ে। আর ঠিক তখনই হাতির মনে পরিবর্তন আসে। হাতি ভাবতে থাকে- এই 'দশহাত' জায়গাটুকুই হাতির দুনিয়া। সেখান থেকে সে ইচ্ছা করলেও বেরুতে পারবে না। তখন হাতিটাকে তার চাহিদার অতিরিক্ত মজার মজার খাবার দেয়া হয়। বন্দি হাতিটা মনের সুখে সেই খাবারগুলো খেয়ে উদরপূর্তি করে। হাতি ভাবতে থাকে- ‘কোন কষ্ট ছাড়া যখন পায়ের কাছেই এতো পর্যাপ্ত পরিমাণ উপাদেয় খাবার টাইমলি পাওয়া যাচ্ছে- তখন বাইরে যাবার বৃথা চেষ্টা করে লাভ কী? এমন করে করে মাস যায়, বছর যায়। হাতিটা যখন একেবারে পোষ মেনে যায়- তখন হাতিটাকে সার্কাসের মালিকের কাছে বিক্রি করা হয়। সেই হাতিটাকে নিয়ে সার্কাসের মালিকরা বাংলাদেশের জনপদে ঘুরে বেড়ায় আর পয়সা কামায়।

বাংলাদেশের সুন্নীদের অবস্থাও ঠিক ওই ‘সার্কাসের হাতি’র মতো। তারা আপন দরবারটাকেই পুরো বাংলাদেশ মনে করে। বাৎসরিক ওরসটা করতে পারলেই মনে করে- সুন্নিয়তের বড় কাজটা তারা করে ফেলেছেন। সুন্নী মাওলানারা ভাবে তালতলা, বাঁশতলা আর বরই তলায় একটা মাহফিল করতে পারলেই মনে করে- পুরো বাংলদেশ তাদের করতলগত। সংগঠকরা চট্টগ্রাম জেলাটাকেই মনে করে পুরো বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে একটা মানব বন্ধন, একটা সভা করতে পারলেই মনে করে সারা বাংলাদেশকে তারা ঝাঁকুনি দিয়েছেন। আরে সাকাসের হাতি সব! চট্টগ্রামের বাইরে বাংলাদেশে আরো ৬৩ টি জেলা আছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরেও আরো ৬টি বিভাগ আছে। সেখানেও তোমাদের যেতে হবে। সার্কাসের হাতির মতো দশহাত চট্টগ্রামকে তোমাদের দুনিয়া ভেবো না। যদি ভাবো- ৩৫ বছরে যেমন তোমাদের লক্ষণীয় উন্নতি হয়নি, তার সাথে আরো ৩৫ বছর যোগ করলেও তোমরা বাংলাদেশের সব জেলায় পৌঁছুতে পারবে না। এজন্য তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টাও। তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রোএক্টিভ করো। রিএক্টিভ করো না। এ বিষয়ে গত শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, ‘আমার প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে একজন মানুষ পারে তার জীবনকে বদলে ফেলতে। নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে যেকোনো চিন্তাকে বাস্তবায়িত করার এক অসাধারণ ক্ষমতা।

এ বিষয়ে ডা. অ্যালেন গোল্ডস্টেইন, ডা. জন মটিল, ডা. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ডা. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি ‘মন’ মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়্যার আর মন হচ্ছে সফটওয়্যার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মপ্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর হবে- তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম এর ভালো-মন্দের উপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে, আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচেছ- দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।

তো- হে সুন্নীয়তের কর্ণধারগণ! হে আমাদের রাহবারবৃন্দ! হে আমাদের তরুন সেনানীরা! আমি তোমাদের পায়ে ধরি- আমি তোমাদের হাতে ধরে বলছি- তোমাদের নিয়তটা দ্বীনের খাতিরে খালিস করো। তোমাদের অন্তরটা প্রিয়নবীর (দ.) মুহাব্বতে পূর্ণ করো, তোমাদের হৃদয়টা মহান আউলিয়ায়ে কিরামের মনের মতো বিশাল করো। সংকীর্ণতা, কূপমন্ডুকতা ও আঞ্চলিকতা ভুলে একবার ঢাকায় যাও, বারবার ঢাকায় যাও। তোমাদের প্রোগ্রামগুলো ঢাকা কেন্দ্রীক করো। যেখানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষ প্রতিদিন যাওয়া আসা করে। ওরা তোমাদের দেখুক। তোমাদের কথা শুনুক। ৬৪ জেলার মানুষগুলো বাসে চেপে, ট্রেনে চেপে যাওয়ার সময় তোমাদের কথা আলোচনা করুক। ওরা সকালে ওঠে চায়ের দোকানে তোমাদের কথা নিয়ে আলোচনা করুন। ক্লান্ত শ্রান্ত চাষী জমিনের আইলে বসে জিরানোর সময় তোমাদের কথা ভাবুক। হাটে-বাজারে তোমাদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হোক। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছাত্ররা তোমাদের নিয়ে তর্ক করুক। দেখবে- একদিন পুরো বাংলাদেশটা তোমাদের হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কেন পুরো পৃথিবীটাই তোমাদের হবে। মহাকবি আল্লামা ইকবাল তো তাই বলে গেছেন- ‘চীনও আরব হামারা হিন্দুস্তান ভী হামারা/ মুসলিম হ্যায় হাম ওয়াতান হ্যায় সারা জাহান হামারা’।

আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।

তারিখ: ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:

-আসলে, হাতীর পা পাঁচটাই।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৫

অাবছার তৈয়বী বলেছেন: তাই নাকি? ব্যখ্যা করুন, প্লীজ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.