![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'ভ্যাট' নিয়ে ভেটভেটানি
-আবছার তৈয়বী
ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিল দেয়ার গোঁসাই
বর্তমান সরকার নির্বাচনে জিতেনি। জিতেছে তাদের কূটচালে। যেই চালে তাল মেলাতে না পেরে বিএনপি একেবারে কূপোকাত নয়; চলে গেল ভূতলে। নির্বাচন করার পর সরকার একবছর নরমে-গরমে দিন গুজরান করেছে। বিএনপিও তার আশ্রিত ১৯ দল কিছুই করতে পারেনি। আমার পাঠকদের অনেকে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলবেন- ‘কে বলেছে কিছুই করতে পারে নি? আপনি কি বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের লাগাতার ৯০ দিন অবরোধ দেখেন নি!!?’ হুম, দেখেছি। আমি কি অন্ধ নাকি? দেখেছি, উপলব্ধি করেছি এবং এদের অমানবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে দু’হাতে লিখেছি। এই অমানবিক কর্মসূচীতে বাংলাদেশের মানুষ পেট্রোল বোমার আঘাতে জ্বলে-পুড়ে মরেছে, মানুষের দোকান-পাট, যানবাহন বন্ধ থেকেছে। দেশের রাস্তাঘাট, পশু-পাখি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মোটকথা দেশের বারোটা বেজেছে। কিন্তু সরকারের? টোঁ... টোঁ...! সরকারের কোন ক্ষতিই হয় নি। সরকারের আসনটা আরেকটু বরং শক্ত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। তাদের আপ্রাণ চেষ্টা থকবে সরকারকে বাঁচানোর। তারা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করছে। বিরোধী পক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
এই সুযোগে সরকার দফায় দফায় জিনিস-পত্রের দাম বাড়িয়েছে। মানুষ নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে। এটা নিয়ে বিএনপি কোন আন্দোলন করেনি। সরকার জ্বালানী তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিএনপি নিশ্চুপ। কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন মৃদু প্রতিবাদ করেছে। এসব প্রতিবাদে সরকারি দলেরও কিছু বিবেকবান নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছে। সরকারের তোষামোদকারী সংবাদিক ও কলামিস্টরাও প্রতিবাদ করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরকার আছে মৌজে। সরকারের এসব দেখার ও শুনার প্রয়োজনও নেই, তারা বাধ্যও নয়। কারণ, এই সরকার জনগণের সরকার নয়। আচ্ছা, আমরা সাধারণ জনগণ এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে যে কষ্টে আছি- সরকারি দলের লোকেরাও কি এর থেকে মুক্ত? মুক্ত না। তাহলে এরা বুঝে না ক্যা রে? বুঝে। বলে না ক্যা রে? কারণ, বললে তাদের পার্টির পদ-পদবি যাবে। তার চেয়ে বরং যে যেমনে পারে সরকারের তোষামোদ করে কিছু ‘হালুয়া রুটি’র ভাগ পাইলে মন্দ কি? মন্দ মোটেও নয়। সরকারি দলের লোকেরা আমাদের সাধারণ জনগণের মতো অতো বোকা না। বরং তারা খুবই বুদ্ধিমান ও চালাক প্রকৃতির প্রাণী। তারা ‘ঝোপ বুঝে কোপ মেওে’ রাঘব-বোয়াল তুলে আনেন এবং বিবি-বাচ্চা নিয়ে আনন্দে-আহলাদে চেটে চেটে খান। আপনারা চেটে চেটে খান বা লুঠে-পুটে খান- আমাদের কোন অসুবিধা নেই। আমি সাধারণ বেসরকারি চাকুরিজীবি, আমি শিক্ষক, আমি ব্যবসায়ী, আমি পেশাজীবি, আমি দিন-মজুর, আমি রিক্সাঅলা-ঠেলাওয়ালা- আমার দিকে দেখার সরকারের ফুরসত কই? আমরা তো আর সরকারকে ভোট দেইনি। সরকার আমাদের দিকে তাকাবে কোন দুঃখে? সরকারের বরং তাদের দলের হোমড়া-চোমরা ও বাহিনীগুলোর দিকেই তাকানো দরকার। কারণ, তারা সরকারকে ভোট দিয়েছে, ভোট নিয়েছে এবং সরকারের জন্য ‘লবেজান’ হয়ে কাজ করেছে। সরকার তো আর ‘নিমকহারাম’ নয় যে, উপকারীর উপকারের কথা ভুলে যাবে! এই জন্য বরং বাংলাদেশের আম-জনতার পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত।
কথা সেটা না। কথা উঠেছে ‘ভ্যাট’ নিয়ে। আপনারা দেশের জনগণ মহাপ্রতাপশালী সরকারকে ‘ভোট’ দেননি তো কী হয়েছে? তো- এবার সরকারকে ‘ভ্যাট’ দেন। নো প্রতিবাদ, নো কর্মসূচী। প্রতিবাদ করবেন তো সরকারি ‘বন্দুকওয়ালা’ আছে না? শরীর গরম করে আওয়াজ বড় করে চিল্লাবেন? একেবারে ‘পিতলের বড়ি’ খাইয়ে দিমু। জীবনের জন্য ঠান্ডা হয়ে যাবেন। একটি কাজ করতে পারবেন- মৌন মিছিল বা মানববন্ধন। যতো পারেন- করেন। সরকার বরং এতে খুশিই হয়। কারণ আপনাদের মানববন্ধনের কারণে সরকারি রাস্তাগুলোর খানাখন্দক ও ফুটপাত জুড়ে যে ডাস্টবিন আছে তা কিছুক্ষণের জন্য হলেও লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। এতে বরং রাস্তার সৌন্দযই বৃদ্ধি হয়।
বাংলাদেশের জনগণ বিনা বাক্য ব্যয়ে এতোদিন ‘ভ্যাট’ দিয়ে এসেছে। সরকার যতো ইচ্ছা জিনিস-পত্রের ওপর ‘ভ্যাট’ বসিয়েছে এবং ‘ভ্যাট’ কেটে নিয়েছে। মানুষ উচ্চবাচ্য করেনি। উচ্চবাচ্য করবে কীভাবে? আমরা অনেকে জানিই না যে, আমরা কী কী দ্রব্যে ও বিষয়ে ‘ভ্যাট’ দেই এবং কতো পারসেন্ট ‘ভ্যাট’ দেই! চাল, ডাল, তেল, নুন, মরিচ- মসলা ওষুধ, বিস্কিট, চনাচুর এমনকি পাওরুটি পর্যন্ত কোথায় ভ্যাট নেই- বলুন? আপনার মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে সব জিনিস ব্যবহার করেন, খান এবং পান করেন সবখানেই ‘ভ্যাট’ আছে। ‘ভ্যাট’ নাই- এমন কোন জিনিস থাকলে আমাকে দেখান। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আপনি ‘ভ্যাট’ দিতে বাধ্য। একটি ‘খাত’ এই সর্বগ্রাসী ‘ভ্যাট’ এর আওতামুক্ত ছিলো- সেই শিক্ষাখাতেও সরকার ‘ভ্যাট’ বসিয়েছে। শিক্ষা দিয়ে কী আর হবে? শিক্ষা এখন আপনার অধিকার নয়, ‘শিক্ষা’ এখন পণ্য। তো পণ্যের ‘ভ্যাট’ না দিয়ে আপনি পালাবেন কোথায়- শুনি? যেতে পারেন এক জায়গায়। কওমী ওহাবী মাদ্রাসায়। হ্যাঁ ওটা সম্পূর্ণ ‘ভ্যাট’ আওতামুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। চলুন আমরা সকলে কওমী মাদ্রাসায় আমাদের সন্তানদের ভর্তি করিয়ে ‘জঙ্গী ও দেশের অযোগ্য নাগরিক’ হিসেবে গড়ে তুলি। ওরা আমাদের অন্তরটাকে বেহেশতের অধিপতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লামের প্রেম শূন্য করে ও বেহেশতবাসী আওলিয়ায়ে কেরামদের চেতনা শূন্য করে আমাদেরকে বেহেশতের খোয়াব দেখাবে, বয়ান শুনাবে। ওরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশটাকে ‘হাবিয়া দোযখ’ বানাবে।
মজার ব্যাপার হলো এ ‘ভ্যাট’ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে একটি প্ল্যাকার্ড ও ‘একটি পতিতামুখ’ আলোচনায় এসেছে। ‘ভ্যাট’ নিয়ে এতো ‘ভেটভেটানি’র কী প্রয়োজন? ‘ভ্যাট’ চাপা পড়ে আছে সেই আলোচনার নীচে। কী লেখা ছিল ওই প্লাকার্ডে? ‘মন পাবি, দেহ পাবি, মাগার ভ্যাট পাবি না’। হা হা হা। কী চমৎকার কথা! দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষার্থী ‘নাদিয়া রহমান বাঁধন’ তাঁর এই আলোচিত কথাগুলোর একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছেন। কিন্তু দেশের সব জনগণ তো আর তাঁর মতো ‘শিক্ষিত্’ না। সেটি বুঝতে তো আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হওয়ার প্রয়োজন নেই- তাই না? তিনি এই কথার যে মীনিং করেছেন- তা না বুঝে সরকারি দলের সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি বা সিকি সেঞ্চুরি ‘দুষ্কর্ম’ সম্পাদনকারী কোন ক্যাডার এসে যদি বলে “জানু! তোমার মন দিতে অইবো না, ভ্যাটও দেয়া লাগবো না- শুধু তোমার এই ‘লাস্যময়ী দেহটা’ই দেও- একটু চেটে-পুটে খাই” তখন কী করবেন? মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এমন চটকদারী স্লোগান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দিলো যারা- ‘শিক্ষিত’ সেই ‘খবিসগুলোর’ মুখে আমার এখন একদলা থুথু দিতে ইচ্ছে করছে। কেউ আইসা ‘মাসকিন ট্যাপ’ দিয়ে আমার মুখটা বন্ধ কইরা দেও। আমার সব থুথু যে বেড়িয়ে যায়...।
যারা এসব প্লাকার্ড হাতে সারা ঢাকা শহরে উল্লম্ফন করেছেন, চষে বেড়িয়েছেন, সেই ভাইয়া ও আপুদের বলবো- নামি-দামী বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়লেই ‘শিক্ষিত্’ হওয়া যায় না। বড়জোর একখানা মোটা কাগজের কারুকাজ করা সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। শিক্ষা আওর বা-ত হ্যায়। আপনারা শিক্ষিত্ পরে হোন, দয়া কইরা আগে ‘সভ্য’ হোন- ফিলীছ...!
আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।
তারিখ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.