![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই দ্যাখেন- কানে ধরলাম!
-আবছার তৈয়বী
ঈদের ছুটিতে ‘সালতানাত ওব ওমান’ সফরের ইরাদা করেছি। সেখানকার নবী-ওলীর মাজার শরীফ যেয়ারত করাই উদ্দেশ্য। সাথে ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শনগুলো দেখার ইচ্ছা আছে। গত বছরও গিয়েছি। তবে আমার সফরসঙ্গী ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ার কারণে মজা পাইনি। এই ধরুন- আমি চাই কোন মাজারে গিয়ে সাহেবে মাজারের সাথে দু’দণ্ড কথা বলি। কিছুক্ষণ তাঁর কদম ধরে বসে থাকি। কিন্তু ওরা তা করতে দেবে না। সবখানেই কেবল চড়ুই পাখির মতো ‘ফুরুত ফুরুত’ করে। আরে বাবা! আল্লাহ্ আমারে দুই দুইটা নিতম্ব দিয়েছেন কী জন্য? তাঁর প্রিয় বান্দাদের কদমে গিয়ে আরামসে বসে থাকার জন্য। তোমাদের মেশিনম্যান ‘বাইস্কোপওয়ালা’র জলসায় গিয়ে বসে থাকার জন্য নয়।
ওমান যাওয়ার ব্যাপারে ৯৫% নিশ্চিত আছি। আমার পক্ষ থেকে ১০০% প্রস্তুতি আছে। আমি যাঁর সাথে যাবো- আমার মামা 'আল নূর ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ'র চেয়ারম্যান মুহতারাম আলহাজ্ব ন.আ.ম বদর উদ্দীন সাহেব বলেছেন তিনি ৯৫% প্রস্তুত। তাই তাঁর কথাটাই তুলে ধরেছি। গত বছর মাস্কাটে, রুইতে, হামেরিয়ায়, সালালাতে আমাদের সাংগঠনিক ভাইদের অনেক খুঁজেছি- পাইনি। আশা করছি এবার অনেককে পাবো। কাউকে না পেলেও আমার দুই বেয়াই হাসান ভাই ও আকবর ভাই তো আছেন। সময় পেলে তাঁদের সাথে বসে ‘এক ছিলিম’ হুক্কা খাবো। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে জম্পেশ আড্ডা জমিয়ে হুক্কায় টান মারার মজাটাই আলাদা! আপনারা এক কাজ করতে পারেন। আমার আইডির সাথে যুক্ত বা বিযুক্ত যাঁরা এই লেখাটি পড়বেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা ওমান সম্পর্কে ধারণা রাখেন, বা নবী-ওলির মাজার ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানেন- তাঁরা দয়া করে আমাকে একটু ‘গাইডলাইন’ দিতে পারেন।
গত বছর পড়েছিলাম এক বিড়ম্বনায়। আপনারা জানেন, আমি আস্ত একটা ‘পাগল’ মানুষ। তাই ছাগলের মতো যেখানে সেখানে মুখ দিতে মন চায়। হয়েছিল কী- আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.) এর কূপে যাওয়ার পথে দেখলাম- থোকায় থোকায় ছোট ছোট শশা জাতীয় ফল ধরে আছে। ওরা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলো- ‘এই ছাগল! এদিকে আয়- আমারে তুমার মুখে তুইল্লা নাও।’ আমি বললাম- কেন, কিয়ের লাই? তারা সমস্বরে বললো- ‘তোর লাগিয়া পরান আমার একা একা কান্দে’! আমার আবার একটা দোষ আছে। আমি মানুষটা যতো খারাপই হই না কেন- আমি কারো ‘কান্দন’ সহ্য করতে পারি না। তাই 'মোটাতাজা' দেখে তেলতেলে একটি ‘শশা’ মুখে তুলে নিলাম। ক্ষুধার্ত ছিলাম। কয়েক কামড়ে অর্ধেকটা সোজা ‘আন্দর মহলে’ চালান করিয়া দিলাম। ও মাইগো মাই! এটা আমি কী খাইলাম? জনমের তিতা! তিতা করল্লা আমি খেয়েছি। পান করেছি ‘চিরতার পানি’ও- ইচ্ছায় নয়, অনিচ্ছায়। কিন্তু সব তিতা ওই পাহাড়ি শশার কাছে নস্যি! এরপর বিবি রহিমার স্মৃতি বিজড়িত কূপে নেমে আচ্ছামতো পানি খেলাম। সাঁতরালাম এবং বুনোহাসের মতো ডুবের পর ডুব মারলাম। পরিশেষে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ওঠে যেই মাত্র হাঁটা শুরু করলাম- মাথায় চক্কর দেয়া আরম্ভ হলো। সাথে আমার বিশাল ভুরিওয়ালা পেটের মধ্যে ‘গুড়গুড় মুড়মুড়’ শুরু হলো। পেছনের রাস্তায় কিছুটা ‘মাল’ ডেলিভারি দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ‘মাল’ এখনো ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত নয়। প্রায় ২০০ কদম সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে খানিকক্ষণ বসলাম। আমার মতো লোকের এই পাহাড়ে ওঠতে তিনবার জিরাতে হলো। ভাবলাম- বিবি রহিমা কী করে এই কূপ থেকে পানি এনে তাঁর 'গেরস্থালি' কাজ সামলাতেন?! আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.) এর অযু-গোসলের সমস্ত পানি তিনি একাই পাহাড়ের চূড়ায় বহন করে তুলতেন। এ কথা ভাবতেই এই মহীয়সী নারীর প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মনটা বিগলিত হয়ে গেলো। চোখটা ভিজে গেলো পতি-পরায়না এই সম্মানিত মহিলার ত্যাগ ও ভালোবাসা দেখে। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার আগে মাঝ পথেই মুখভরে কল কল করে একবার বমি হলো। কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মাথায় পাহড়ের চূড়ায় ওঠার পর নবী আইয়ুব (আ.) এর মাজারের বাইরে আবারও বমি করলাম।
এতো বমি আমি আমার জীবনে করিনি। লাল, হলুদ, সবুজ ও নীল কতো কিসিমের ‘মাল’ রে বাবা! দুঃখে আমার পরান যায়। তারপরও ‘মাল’ এর চিত্র-বিচিত্র রঙ দেখে আমার ভেতরের ‘পাগল’ মনটা জেগে ওঠলো। হায় খোদা! এতো রঙ-বেরঙের ‘মাল’ আমার পেটের মধ্যে জড়াজড়ি করে কীভাবে দিনের পর দিন বসবাস করলো? আমি ভেবে পাই না। এতোদিনে বুঝে আসলো সাঁইজির কথা- ‘বাইরে কেবল কালো-ধলো/মাঝখানে সব সমান রাঙা’! সাঁইজিও কিন্তু কিঞ্চিত ভুল করেছেন- ‘সমান রাঙা’ কই? আমি তো দেখলাম- ‘হরেক রাঙা’। কী মিছা কইলাম নাকি? আমি কিন্তু চোখে দেখা কানে শুনা কথা কইতাছি। এর চেয়ে বড় সত্যি আর কী? সাঁইজি বেঁচে থাকলে বলতাম- ‘আফনেও কিন্তুক পুরো হাছা কন নাই’! আমি হযরত আইয়ুবের (আ.) চৌহদ্দীর দেয়াল হেলান দিয়ে বাইরে মাটিতে বসে আছি। ওমা! কিছুক্ষণ পর আন্দর মহল থেকে আবারও ‘ঠেলা’ অনুভব করলাম। হায়রে খোদা! এখন তো আর ওঠে দাঁড়ানোরও শক্তি নাই। পরানডা আমার মুখে আসিয়া বাইরে যেতে উদ্যত। মনোবল কিন্তু আমার কমে নাই। কোন রকমে কষ্টে-শিষ্টে ‘গোয়াছিওয়ালা’র কাছে গেলাম। ইশারা করে বললাম- পাকনা চাইয়া দুইডা পেয়ারা দিতে। পেটে যে ধরণের খিদে লেগেছে মনে হচ্ছে পুরো ‘সালালাহ’ শহরটাকে ‘সমুছা’ বানিয়ে আমার পেটের মধ্যে ঢুকাইয়া দিলেও পেট কিছুটা খালি থাকবে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে একটা পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। খাইতেও যে শক্তি লাগে- তা কোনদিন বুঝি নাই। এবার হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেলাম। কিন্তু ওই পেয়ারাও অমাকে তার ‘পেয়ার’ থেকে বঞ্চিত করে কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ারাওয়ালার সামনেই হড়হড় করে বেরিয়ে গেল।
ক্লান্ত দেহে ওজু করে এবার নবী আইয়ুব (আ.) কে সালাম দিতে তাঁর রওজায় গেলাম। সিনা বরাবর বসে কয়েকটি সুরা পরার পর এবার মনে হলে পেটের নাড়ি-ভুরিশুদ্ধ বেরিয়ে যাবে! বাইরে এলাম। কিন্তু বেরুবে কী? পেটের মধ্যে তো আর কোন ‘মাল’ অবশিষ্ট নেই। অনেক কষ্টে-শিষ্টে সিনায় হাতে দিয়ে সামান্য থকথকে কি যেন বেরুলো। মনে মনে আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.) কে বললাম- হে আল্লাহর নবী! ভালোই তো মেহমানদারী করলেন! তিনি বললেন- “তুমারে কি আমি ‘ছাগলের’ মতো যেখানে সেখানে মুখ দিতে কইছি! ‘পাগলের পাগল’ ছাগল কোথাকার!” তাঁকে বললাম- ‘সরি! ভুল হয়ে গেছে। মাফ কইরা দ্যান। আর কোনদিন খাইতাম ন’। এই দ্যাখেন- 'কানে ধরলাম'।
তারিখ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।
©somewhere in net ltd.