![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হে নলা সম্প্রদায়! আইজ তুমাদের একদিন কি আমার একদিন
-আবছার তৈয়বী
কয়েকদিন আগে বানীইয়াছে এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াতে গিয়েছিলাম। তিনি মাঝে মধ্যে নানা পদের তরকারি দিয়ে এই গরীবের ভুরিভোজন করান। একবার খাওয়ার পর তক্ষে তক্ষে থাকি- তিনি আবার কবে দাওয়াত দেন। কারণ ভাবীর রান্না বেশ সুস্বাদু। ওই একটা ঘরেই আমি নিজ দায়িত্বে নিজের মতো মনে করে খেতে পারি। তাছাড়া আমার বন্ধুটি এরপরও আরেকটু দিতে চাইলে আমি মুখে ‘না... না...’ করি বটে, কিন্তু প্লেটটা ঠিকই তার দিকে এগিয়ে দেই। আমার পেট ফুলে ডোল হোক- তাতে কোন সমস্যা নাই, কিন্তু বন্ধুর মনে কষ্ট দেই কী করে? আমার এ কাণ্ড-কীর্তন দেখে বন্ধুপত্মী আড়ালে-আবডালে হাসে। আমার বড়ই ভালো লাগে!
বেশ ক’বছর থেকে প্রতি ঈদে তাঁর বাসায় খাওয়া ‘অলিখিত চুক্তি’ হয়ে গেছে। এ বছর ওমানে থাকায় ঈদের দাওয়াতটি যথাসময়ে খেতে পারিনি। মনে মনে আফসোস ছিল- আহা! ভাবীর হাতের রান্না করা সুস্বাদু খাবার থেকে কি তবে এবার বঞ্চিত হলাম! একদিন ভাগে পেয়ে বন্ধুকে বললাম, কী ভাই! ভাবী কি আমার কথা ভুলে গেলেন নাকি?
-কী ব্যাপার?
না বলছিলাম কি- ভাবী এতো ‘নলা-কাজি’ একাই কীভাবে সাবাড় করলেন? বন্ধুর মুখে কোন ‘রা’ নেই। কয়েকদিন পর বন্ধুটি বললেন- তৈয়বী সাব! রাইতে আমার বাসায় হাত ধুইবেন। বললাম- শুধু হাত ধুইলে কি চইলবো? হাত পাও সব ধুইবো- ইনশাআল্লাহ। বললাম- আমি ভুলো মনের মানুষ। রাইতে আমারে জাস্ট একটু মনে করাইয়া দিবেন।
মনে করানোর কী আছে? অন্য সব কথা ভুলে গেলেও খাবারের কথা আমার ঠিকই মনে থাকে। ‘জাস্ট টাইমে’ বন্ধুর বাসায় গিয়ে হাজির। দেখলাম ৫ পদের তরকারি হাজির। বন্ধুর ছোটভাই গরুর নলার বড় বাটিটা আমার সামনে রাখলো। একে একে রাখলো- গরুর গোস্ত, মাছ, মুরগী ও চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করা অসম্ভব সুস্বাদু ভাবীর স্পেশাল ফুলকপির সবজি।
প্লেটে এখনো ভাই নেইনি। কাছে থাকা নলা সম্প্রদায়ের লিডার (বড় নলা) নরম সুরে বললো- ‘ভাইজান! আফনে তাড়াতাড়ি আমারে আফনের প্লেটে তুইল্লা নেন’। কেন? সে কাঁদো কাঁদে সুরে বললো- “আমি হইলাম তামাম তরকারি সম্প্রদায়ের রাজা। আকারে, শক্তিতে ইজ্জতে কেউ আমার সমকক্ষ নয়’। তো? ‘আমি যদি ভুঁড়িওয়ালা কোন লোকের উদরে না গিয়ে অন্য কোন চিকনা-পাতলা তালপাতার সেপাইর চ্যাপ্টা পেটে যাই- তো আমার কী ইজ্জত থাকবো- আফনেই কন? তাছাড়া আফনের সাথে বসা অন্য লোকগুলোর উদরের চেয়ে আমার সাইজটা বরং একটু বেশিই হবে। তাই অন্তিমকালে ওদের পেটে গিয়ে ‘মাইনকা চিপায়’ পড়তে চাই না”। ঠিক আছে- এতো যুক্তি দিয়ে বলার কী আছে? আইস! আমার প্লেটে আইসা পড়। নিলাম তারে প্লেটে তুলিয়া। কথা তার মিছা নয়। সে এসে আমার প্লেট জুড়িয়া বসিল।
তার অবস্থা দেখিয়া মুরগির মাংস প্রতিবাদ করিয়া উঠিল। বলে- “আফনেসহ বেবাক প্রবাসীর আপনজন হইলাম আমি। হল্যান্ড থিকা আমারে আমদানি করা হইয়াছে। পাশের দেশ সৌদিয়াতেও আমার বিশাল বড় আকারের ফার্ম আছে। আফনে আমারে থুইয়া নলা সম্প্রদায়ের লিডারকে পাইয়া তো ‘আসমানের চাঁদ’ পাওয়ার লাহান খুশি হইয়াছেন। আমরা ছোট হইলেও মানুষের আপদে-বিপদে মেহমানদারিতে আমরাই বেশি উপকারে আসি। আফনে অকৃতজ্ঞ। আফনে আইজ বড়লোককে পাইয়া উপকারীর উপকারের কথা ভুলিয়া গিয়াছেন। মাগার মনে রাখবেন, ‘এক মাঘে শীত যায় না’। অচিরেই আফনে আমার দ্বারস্থ হইবেন।” আমি শশব্যস্ত হইয়া বলিলাম, দোস্ত! রাগ কর ক্যাঁ? তুমি তো আমার বিপদের বন্ধু। আইজ নলারে থুইয়া তোমারে ক্যামনে খাই? বলল- ঠিক আছে, আমি অনশনে গেলাম। ‘আফনের আর আমারে খাওনের দরকার নাই’। আহা! এই রকম রাগ করিলে চলে? আসো, আমার প্লেটে আসো।
মুরগির মাংসের কথা শুনিয়া ‘মাছ’ রীতিমতো রাগান্বিত হইয়া উঠিল। বলিল, ‘আফনের কী এখনো বুদ্ধি-শুদ্ধি হইবে না?’ কেন গো বাপু! সে বলিল- ‘চাচাজান! গত দুই মাস আগে ডাক্তার বাবু আফনারে কী পরামর্শ দিয়াছিলো- তা মনে আছে’? কী কও তো? ‘কেন, আফনের কোলেস্টরলের বিমার নাই’? আছে। ‘তো আফনে যারে সর্বপ্রথম প্লেটে তুলিয়া লইলেন, সে তো কোলেস্টরলের ডিপু। জলদি তারে প্লেট থিকা নামান। নইলে আমি কিন্তু ডাক্তার সাবরে কইয়া দিমু।’ তাড়াতাড়ি মাছের গতরে হাত বুলাই বলিলাম- হেইচ্ছা করে না বেটা! এই বুড়া চাচার প্রতি কি তোমার কোন দয়া-মায়া নাই? শ্রদ্ধাবোধ নাই? মাছ কাচুমাচু হইয়া বলিল- ‘আছে বলেই তো আফনের মুখের ওপর উচিত কথাটি বলিলাম। আফনে বেজার হোন বা নারাজ হোন- আমি বাঁচিয়া থাকিতে আমার চক্ষের সামনে আফনের ক্ষতি আমি মানিয়া নিতে পারিব না। আমারে ক্ষমা করিবেন’। কী আর করা? মাছের প্লেট থেকে এক টুকরো মাছ তুলিয়া নিলাম।
সবজি বেচারা এতোক্ষণ চুপচাপ বসিয়াছিল। মাছের প্রতিবাদ শুনিয়া নিরীহ-নির্বিবাদী সবজির দেহেও বোধহয় কিছুটা শক্তি ও সাহস সঞ্চার হইয়াছে। সে মাথা তুলিয়া আদবের সহিত আরজ করিল- খালুজান! ‘ডাক্তার সাব কিন্তু অফনারে আমাদেরকেই বেশি ভক্ষণ করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন। আফনের সাথে বেয়াদবি করার সাহস আমার নাই। কিন্তু ডাক্তারের উপদেশ না মানিলে আমি কিন্তুক ডাক্তারকে সব কইয়া দিমু। তাছাড়া আফনে সবার সামনে স্বীকার না করিলেও মনে মনে কিন্তু আমাদেরকেই বেশি ভালবাসেন। আমরাই আফনের ফেবারেট আইটেম। আমরাই কিন্তু পৃথিবীর মানুষের সবচাইতে আপনজন। সুতরাং আমাদের অবহেলা করা মানে আফনের নিজেকেই অবহেলা করা- কথাটি মনে রাইখেন’। চুপ! ব্যাটা একদম চুপ! তুমাদের খাইতে খাইতে আমার জান শেষ! আগে ওদের কে আন্দরে চালান করি- তোমার কথা পরে ভাবা যাইবে। ধমক খাইয়া সবজি বেচারা একেবারেই চুপ করিয়া গেল।
এই ক্যাচাল শুনিয়া গরুর গরম মাংসগুলি রাগে ক্ষোভে-আপন মনেই জ্বলিতেছিল। চোখ বড় বড় করিয়া আমারে বলিল- “নাতি! ইটিশ-পিটিশ তো বহুত কইরলা। আমারে তো এখনো চেনো নাই। আমি হইলাম সকলেরই দাদা! আমার প্রতি তোমার এই অবহেলা দেখিয়া আমার নিজেরই এখন ‘আত্মহত্যা’ করবার লাগি মুঞ্চায়। বাট, আমি অত্ত সহজে আত্মহত্যা করিব না। প্রয়োজনে মনুষ্যজাতির ভেতর ঢুকিয়া বেশুমার রোগের জীবানু ছড়াইয়া দিমু, তারপরও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ইজ্জতে কালিমা লাগিতে দিমু না। আমার কত্তো ক্ষমতা জানস?! ইন্ডিয়াতে গিয়ে দ্যাখ্। আমার স্বাদ পাইতে চাওয়ার অপরাধে কতো মুসলমানকে নির্যাতনের শিকার হইতে হইয়াছে! বাংলাদেশে আমার কত্তো কদর! আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হইয়া কালো কালো মহিষগুলোর মাংস আমার নামেই মার্কেটে বিক্রি হয়। আমি কোন প্রতিবাদ করি না। বরং আমার ভালোই লাগে। কিন্তু আইজ তুমার কাণ্ড-কারখানা দেখিয়া আর চুপ থাকিতে পারিলাম না। যাও তুমারে ‘সুন্নী সম্প্রদায়’ থিকা বাইর করিয়া দিলাম। দেখি- এবার ঠেলা সামলাও।”
কীসের দাওয়াত, কিসের কী? গোমাংসের এমন ‘সন্ত্রাসী ডায়ালগ’ শুনিয়া আমি তো ভয়ে অস্থির। অতি আদবের সাথে গোমাংসের পেয়ালাটি নিজের কাছে টানিয়া লইলাম। আর পটাপট একটার পর একটা গোমাংসের টুকরা মুখের ভেতর চালান করিয়া দিতে লাগিলাম। আমার পেট ফুলিয়া ‘ডোল’ হউক- তাহাতে কোন সমস্যা নাই। কোলেস্টরল, ব্লাড প্রেসার ও ওবেসিটি বাড়ুক- তাতে কী! কিন্তু আমারে ‘সুন্নী’ থাকিতে হইবে। প্রয়োজনে গো-মাংস খাইতে খাইতে মরিয়া যাইবো- তারপরও গো-মাংসের স্বাদ ছাড়িব না। মরিলে গো-মাংস খাইয়া 'সুন্নী' হিসেবেই মরিব। সব কিছু সাবাড় করার পর বড় একাগ্রতার সাথে 'নলা' সম্প্রদায়ের দিকে নজর দিলাম। যেই 'নলা' সম্প্রদায়ের কারণে আইজ আমারে এতো কথা শুনিতে হইলো- তারে কী আমি এমনি ছাইড়া দিমু? হে 'নলা' সম্প্রদায়! আইজ তুমাদের একদিন কি আমার একদিন!
তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।
©somewhere in net ltd.