নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওহাবী কওমী হুজুরদের প্রতি কৌতুহল

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২০

‘হামানদিস্তা’ সিরিজ-০২
ওহাবী কওমী হুজুরদের প্রতি কৌতুহল
-আবছার তৈয়বী

হামানদিস্তা সিরিজ- ০১ লেখার পর আমার পোস্টের কমেন্টস বক্সে, ইনবক্সে, ইমোতে, ওয়াটসআপে এবং ফোনে তিন ধরণের কমেন্টস পেয়েছি। সেই কমেন্টগুলোকে যদি আল্লাহর দিকে নিসবত করি তো এভাবে বলা যায়- ১. আস্তাগফিরুল্লাহ ২. নাঊজুবিল্লাহ ৩. আলহামদু লিল্লাহ। তবে আমার কোন ওহাবী কওমী বন্ধুদের কমেন্ট পাইনি। আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু জনাব Salim Chowdhury একটি মন্তব্যে জানতে চাইলেন, 'আমি কীভাবে ওহাবী কওমীদের হাঁড়ির খবর জানলাম'? প্রশ্নটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, আমার বেশ-ভুষা, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, লেখা-লেখি, আকিদা-বিশ্বাস কিছুই ওহাবী কওমীদের সাথে মেলে না। তাহলে? তাহলে কীভাবে জানলাম- কমবখত ওহাবী কওমীদের সমকামিতা ও অবুঝ শিশুদের ওপর যৌন-নির্যাতনের কলঙ্কজনক ইতিহাস???

বলছি ভাই বলছি। এতো তাড়াহুড়োর কী আছে? আমি তো আর কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। আলহামদু লিল্লাহ! আমার জম্ম একটি সুন্নী পরিবারে। ছোটকাল থেকে আমি একজন মহান অলির ছত্র-ছায়ায় মানুষ হয়েছি। তিনি হযরত এয়াছিন শাহ্ (রহ.)- যাঁর পবিত্র নামে আমাদের গ্রামের নাম হয়েছে 'এয়াছিন নগর'। যখন একটু বড় হই, তখন থেকে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে আমার যাওয়া-আসা শুরু হয়। আমাদের এলাকাটা সুন্নী এলাকা। আমাদের বাড়ীর পশ্চিমের বাড়ীতে একজন 'ওহাবী মোল্লা' ছিলেন। তিনি কখনো জুমার এবং ৫ ওয়াক্ত নামায আমাদের মসজিদে পড়তেন না। কিন্তু ঈদের নামায ঠিকই আমাদের জুবিলি স্কুল মাঠের ঈদগাহে পড়তেন। আমাদের ‘ঈদ জামাত’ উত্তর রাউজানের সবচেয়ে বড় ‘ঈদ জামাত’। নামায শেষে খুতবার পর মিলাদ-কিয়াম হতো। আমি যখন ছোট- সে সময় ঈদগাহে মিলাদের সময় ওই 'ওহাবী মোল্লা' কিয়াম করতে দাঁড়াননি। শতাধিক বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে আমরা ৮/৯ বছরের বালক- সবাই দাঁড়িয়ে পেয়ারা নবীকে সালাম দিচ্ছেন। কিন্তু ওই 'ওহাবী খাটাস' গোঁ ধরে বসে আছেন। সবাই তার দিকে তাকাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না। চেয়ারম্যান-মেম্বার চৌধুরী-মাতবর- কেউ না। আমি আমার বাবার পাশে দাঁড়ানো ছিলাম। আমার বাবার কাছে বিষয়টি অসহ্য ঠেকলো। তিনি বললেন-‘কেউ এই ওহাবী খবিসের কান ধরে তুলে দিচ্ছে না কেন’? কিন্তু না, কেউ এগিয়ে এলেন না। এই ঈদ জামাতের সবচেয়ে নিরীহ ব্যক্তি- আমার বাবা কাল-বিলম্ব না করে নিজে গিয়েই তার কান ধরে তাকে তুলে দিলেন। বললেন- ‘এই ওহাবী! তোমার যদি ‘মিলাদ-কিয়াম’ ভালো না লাগে তুমি আমাদের মাঝে বসে আছো কেন? তুমি এখান থেকে চলে যাও'। মিলাদে ছন্দ-পতন হলো। সবাই স্তব্ধ। ওহাবী খবিসটি দাঁড়ালো বটে, কিন্তু লজ্জায় মুখ নিচু করে আছেন। নামায শেষে সবাই আমার বাবাকে সাব্বাসী দিতে লাগলেন। দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। ওহাবী মোল্লাটি ‘টু’ শব্দটি না করে লেজ গুটিয়ে প্রস্থান করলেন। আসার পথে বাবাকে বললাম, বাবা! আপনি সেই লোকটিকে কান ধরে তুলে দিলেন কেন? বললেন ‘সে একটা ওহাবী খবিস’। ‘ওহাবী’ মানে কী? ‘খবিস’ কাহাকে বলে? তিনি বললেন, ওহাবী হলো- ‘খোদার দুষমন, নবীর (দ.) দুষমন, আহলে বায়তের দুষমন, ওলীর দুষমন’। আমি তখন কিছুই বুঝি নাই। শুধু এটুকু বুঝেছি- আমার বাবা তখনো রেগে আছেন। ভয়ে আর তাঁকে কিছুই জিজ্ঞেস করি নি। কিন্তু সেই ঘটনাটি আমার শিশুমনে দাগ কাটে। সেই থেকে ওহাবীদের প্রতি আমি কৌতুহলী হয়ে ওঠলাম। আখের কিয়া বা-ত হ্যায়। শত বছরের অতিশীপর বৃদ্ধ পর্যন্ত লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারলেন- কিন্তু গর্দান মোটা, ন্যাড়া মাথায় হাজি রুমাল পেঁচানো এই মোল্লা লোকটি দাঁড়ালেন না কেন?

ঈদুল ফিতরের পর কোরবানীর ঈদ আসলো। ওহাবী লোকটি যথারীতি ঈদগাহে হাজির। না, এবার কেউ তাঁকে দাঁড়াতে বলতে হয়নি। সবার সাথে তিনিও দাঁড়ালেন। আশ-পাশের লোকেরা মুচকি হেসে আমার বাবার দিকে তাকালেন। আমার বাবাও মুচকি হাসলেন। আমি বাচ্চা মানুষ। আমার বেশ কৌতুহল হলো। গিয়ে ওহাবী লোকটির পাশে দাঁড়ালাম। ওমা! দেখলাম- লোকটি দাঁড়িয়েছেন ঠিকই। কিন্তু মুখে কোন ‘শব্দ’ নাই। দৌঁড়ে এসে বাবাকে বললাম- বাবা! উনি তো কিছুই পড়ছেন না। বাবা ইশারা করে বললেন- চুপ!

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। ধীরে ধীরে ওহাবীদের ব্যাপরে জানতে থাকি। আমাদের বাড়ী ও আত্মীয়দের পরিবারে কেউ কোন সম্বন্ধ নিয়ে আসলে মুরুব্বিরা আগে জানতে চাইতেন- পাত্র বা পাত্রীর পরিবারটি সুন্নী কি-না? ছোটকালে মা-খালাদের মুখে শুনেছি- ‘ওহাবীর মেয়েকে বউ বানিয়ে আনতে পারে। কিন্তু ওহাবী পরিবারে মেয়ে বিয়ে দেয়া যায় না’। আমি তাঁদের ফতোয়া (!) শুনতাম আর ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকতাম। আমার এক খালু ছিলেন- ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনও মিল্লাত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা আজিজুল হক শেরেবাংলা (রহ.) এর মুরিদ। তিনি আমার মা-খালাদের কথা শুনে দাঁত মুখ কড়মড় বলেন- "তোমরা ‘চুইল্লা মুলোই’ (চুলওয়ালী মৌলভী) তোমাদেরকে কে বলেছে, ওহাবীর মেয়েকে ‘বউ’ বানিয়ে ঘরে আনা যায়? বউ বানানো দূরে থাক- ওহাবীর মসজিদে নামায পড়লে সেই নামাযও হবে না"। একদিন একলা পেয়ে খালুকে জিজ্ঞাসা করলাম- খালুজান! আপনি তো ফতোয়া (!) দিয়ে আমার মা-খালাদের মুখ বন্ধ করলেন। কিন্তু আপনি তো আলেম না। তিনি আমাকে বললেন- বেটা! তোমার কথা সত্য, কিন্তু এই কথা আমার হুযুর (ইমাম শেরেবাংলা রহ.) বলেছেন। বললাম, নামাযের সময় হলে যদি ওহাবী মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদ পাওয়া না যায়? তিনি বললেন, হায়.. হায়...! সেই কথাটা তো আমার হুজুরকে জিজ্ঞাসা করি নাই!

আমাদের ছোটবেলায় আল্লামা ‘নঈমী সাহেব’ হুজুরের (হাজার হাজার সুন্নী আলেমের উস্তাদ, জামেয়ার শায়খুল হাদিস হযরতুলহাজ্ব আল্লামা ওবায়দুল হক নঈমী ম.জি.আ) খুবই ক্রেজ ছিল। আমরা মুরুব্বিদের সাথে ওয়াজ শুনতে যেতাম। তিনি কোরআন, হাদিস, ইজমা ও ক্বিয়াস দিয়ে সুললিত কণ্ঠে ওহাবীদের রামধোলাই দিতেন। তাঁর এক বয়ানে ওহাবীদের সমকামিতার বিষয়টি ওঠে আসে। তিনি ‘সমকামিতা’ শব্দের বদলে ‘কওমে লূত (আ.) এর কাজ-কারবার’ বলেছিলেন। এবং বলেছিলেন- ‘কোন মহিলা যদি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার পুকুরে গোসল করে- তা হলে সেই মহিলা গর্ভবতী হয়ে যাবে’। ওহাবীদের প্রতি এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতি কৌতুহল আরো বাড়লো। ১৯৮৬ সালে আমি হাটহাজারী উপজেলাধীন ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনিয়া বহুমূখী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তখন স্থানীয়ভাবে ওহাবী-আর সুন্নিদের মাঝে কবিতার লড়াইও চলতো। ‘অলিপুরি’ নামক এক 'কমবখত ওহাবী' ইমাম শেরে বাংলাসহ সুন্নিদের বিরুদ্ধে ‘এটমবোমা’ নাম দিয়ে একটি কবিতার পুস্তিকা ছাড়লো। এরপর ছিপাতলী আলিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্র (পরবর্তীতে আমার উস্তাদ) মাওলানা জিল্লুর রহমান আনোয়ারী সাহেব ‘হাইড্রোজেন বোমা’ নামে এর জবাবে আরেকটি কাব্য পুস্তিকা রচনা করলেন। চারিদিকে হইচই পড়ে গেলো। হাটে-মাঠে-ঘাটে ‘হাইড্রোজেন বোমা’র জয়-জয়কার অবস্থা। হাইড্রোজেন বোমার এটি স্লোক ছিল- ‘অলিপুরি আর ডাইল পুরি/খাবো মোর পেট ভরি’। তখন ‘ওহাবী কওমী’দের প্রতি আমার আগ্রহের ‘ষোলকলা’ পূর্ণ হলো।

হাটহাজারী মাদ্রসায় আবছার তৈয়বীর অভিযান ও খবিস সমকামী ওহাবী কওমীদের সম্পর্কে জানতে পড়ুন- ‘হামানদিস্তা’ সিরিজ-০৩।

তারিখ: ২৭ অক্টোবর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউএই।

আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক,‘উজ্জীবন’ সাংস্কৃৃতিক সংস্থা (উসাস)।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস), দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.