![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘হামানদিস্তা’ সিরিজ-০৩
কইলজাডা মোর পুইড়া গেলো- ও আমার 'ওহাবী' বন্ধু রে!
-আবছার তৈয়বী
(প্রিয় পাঠক! সরি! লেখাটি একটু বড় হয়ে গেল। কষ্ট করে একবার পড়ুন- বহুত 'ফায়দা' পাইবেন।)
আজ আমার অন্য একটি বিষয়ে লেখার কথা ছিলো। কিন্তু লেখার আগে আমার পোস্টে দু’জন বন্ধু আসলেন- ‘কওমী’ ঘরানার। গ্রাম বাংলায় ‘কওমী’ কে ‘খারেজী’ মাদ্রাসা বলা হয়। আমরা ছোটকাল থেকে ‘খারেজী’ শব্দটা শুনে আসছিলাম। আর তাঁরা বলতেন- ‘বড় মাদ্রাসা’। ছোটকালে শহরে-বন্দরে গেলে বড় বড় অক্ষরে লেখা দেখতাম- অমুক বড় মাদ্রাসার ‘বড় সভা’। কিন্তু বিশ্বাস করুন- আমি কোন ‘ছোট মাদ্রাসার বড় সভা’ বা ‘ছোট মাদ্রাসার ছোট সভা’ বা ‘বড় মাদ্রাসার ছোট সভা’ জাতীয় কোন পোস্টার আমার জিন্দেগীতে দেখিনি। আপনারা দেখে থাকলে জানিয়ে বাধিত করবেন। এক্ষেত্রে কোনটা ‘ছোট’ কোনটা ‘বড়’ ভাবতেই আমার দিন যেত। বেশ কয়েকবার আমি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়েছি। আবার মদনহাট মাদ্রাসায়ও একবার গিয়েছি। আকাশ পাতাল ব্যবধান। কিন্তু পোস্টারে উভয়টি বড় মাদ্রাসা আর সভাগুলোও বড় বড়। আমি হিমশিম খেতাম। কিন্তু আজও কোন কুল-কিনারা খুঁজে পাইনি। কিন্তু এসব মাদ্রাসায় ইলমের কী চর্চা হয় আল্লাহ-রাসূলই (দরুদ) ভালো জানেন। একটা উদাহরণ দেই।
একবার বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (সম্ভবত তাঁর নাম আবদুল খালিক বা বাকি বিল্লাহ- ঠিক বলেছি কি?) পটিয়া শাহচান্দ আওলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসলেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এক রাজ্য কৌতুহল নিয়ে অধঃস্তন কর্মকর্তা ও পাইক-পেয়াদাসহ পটিয়া বড় মাদ্রাসায় ঢুকলেন। নিজের পরিচয় দিলেন। কর্তৃপক্ষ শশব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু তিনি বললেন, চলুন- আগে আপনাদের লেখা-পড়ার অবস্থাটা একটু দেখি। ‘মোতম’ ছাব ভাবলেন- এই সুযোগে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ‘খারেজী’ মাদ্রাসার ‘ইলমের জাহাজ’টাতে তুলে দিয়ে হুইঁসেল বাজিয়ে দেবেন আর বলবেন- ‘আলিয়া বা সরকারি অধিভুক্ত মাদ্রাসায় কোন লেখা-পড়া হয় না’। 'মোতম' ছাব সিনা ফুলিয়ে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সরকারি কর্তাদের একেবারে 'দাওরা' ক্লাসে নিয়ে গেলেন। বুখারি শরীফের দরস চলছে। চেয়ারম্যান সাহেব সাদা-মাটা কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। (ওই প্রশ্নের মধ্যে একটা ছিলো- বুখারি শরীফের নাম কী?) কিন্তু শত শত ছাত্রের কেউই উত্তর দিতে পারলেন না। ‘মোতম’ ছাবের হাসি-খুশি ঝলমলে মুখটাতে রাজ্যের মেঘ এসে ভর করলো। এখনই বোধহয় অঝোর ধারায় তাঁর নয়ন যুগলে বর্ষণ শুরু হবে। তিনি হেদায়া ক্লাসে নিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, 'কী মিয়া! মানুষের খয়রাত-যাকাতের পয়সার এভাবে 'শ্রাদ্ধ' করেন!??? ‘মোতম’ ছাব লা জওয়াব। কিন্তু মেহমানকে আদর-আপ্যায়নে কোন ত্রুটি করলেন না। শেষে যাওয়ার বেলায় ‘মোতম’ ছাব চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে পরিদর্শন বই তুলে ধরলেন। বেরসিক চেয়ারম্যান মহোদয় প্রাঞ্জল আরবীতে স্পষ্ট অক্ষরে লিখলেন- "মাদরাসাতুন আ-লিয়াতুন খা-লিয়াতুন আনিল ইলমে ওয়াল হুদা"!!!!!!!! আমি এই অনিন্দ্য সুন্দর বাক্যটির বাংলা তরজমা করবো না। কারণ, এই বাক্যের বাংলা তরজমা করলে আমার 'ওহাবী' বন্ধুরা কিঞ্চিৎ 'মাইন্ড' করতে পারেন। এই বাক্যের তরজমাটা বরং আমার কোন 'ওহাবী' বন্ধুরাই করে দিন।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য 'ওহাবী' বড় মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে পটিয়া মাদ্রাসার ব্যাপক খ্যাতি আছে। এই খ্যাতি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আরব বিশ্বেও আছে। তবে এলমের বাহাদুরিতে নয়; বরং চান্দার লিষ্টে। মিডলইস্টের বিভিন্ন সরকার ছাড়াও ধনবান ব্যক্তিবর্গ এবং কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এই মাদ্রাসার নিয়মিত ডোনার। এক হাজি ইউনুস সাহেব যা করেছেন- তা ভুলার মতো নয়। তবে পটিয়া মাদ্রাসা অনেকটা আধুনিক! সে তুলনায় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা অনেকটা ‘গোঁড়া’। আমার ছাত্রজীবনের মাঝামাঝিতে সম্ভবত হাটহাজারী মাদ্রাসার এক শিক্ষক মিশকাত শরীফের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন- তার নাম ‘তানজিমুল আশতাত’। সেটি ভারতের ‘দেওবন্দ’ থেকে ছাপানো হয়। সে তুলনায় তখন পটিয়া থেকে কয়েকটি পুস্তিকা ও একটি মাসিক ম্যাগাজিন ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু বের হয়নি। শুনেছি- হাটহাজারী আর পটিয়া মাদ্রাসার মাঝে একটা ‘চিকন’ দ্বন্দ্বও বিরাজমান। সেই দ্বন্দ্বটা ‘মুনাজাত’ নিয়ে নয়তো? আমার 'ওহাবী' বন্ধুরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের অর্ন্তভুক্তি নিয়েও কী একটা ‘ক্যাঁচাল’ আছে উভয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের মধ্যে। হেফাজতের ঢাকা অভিযানে পটিয়া মাদ্রাসা তো অংশগ্রহণ করেই নি; বরং বিরোধীতাও করেছে। সারা বাংলাদেশে ‘খারেজী’ বলুন বা ‘কওমী’ বলুন- (‘কওমী’ নামটি ইদানিং বেশ প্রচারিত। আশ্চর্য ব্যাপার হলো- তাদের কোন মাদ্রাসার নাম ‘কওমী’ নেই)
বাংলাদেশের ওহাবীরা বেশ কয়েকধারায় বিভক্ত। রাজনৈতিক দলে যেমন বিভক্তি আছে, তেমনি ‘পীর-মুরিদী’ নিয়েও বিভক্তি আছে। ওহাবীদের অনেকেই পীর-মুরিদীতে বিশ্বাস করে না। অনেকেই পীরের জন্য জান কোরবান করতেও প্রস্তুত। আমি জানি- অনেকেই পীরের ‘সবক’ও নিয়মিত আদায় করেন। কারো কারো অন্তরে পীরের কথা এতো ‘আছর’ করে যে, পীর যদি এসে বলে- বাবারা! মুরিদ পীরের মুখে ‘বাবা’ শব্দ শোনা মাত্রই কেউ বাঁশের আগায়, কেউ গাছের মাথায়, কেউ ঘরের মাছায়, আর কেউ প্যান্ডেলের ওপরে ওঠে 'লাফালাফি' করে থাকেন। পীরের কথায় তাদের অন্তরে এমন ফয়েজ আসে- তারা ডাঙায় তোলা ‘কাতলা’ মাছের মতো খালি 'ধরপর ধরপর' করে। দেখে আমার বেশ মজাই লাগে! আখের আমিও পীরভক্ত মানুষ! আমি ওদের মতো লাফাতে না পারলেও যে কোন সঠিক সিলসিলার সঠিক পীরদের সম্মান করি। সুন্নীদের কেউ তার ‘পীর’কে সম্মানার্থে ‘বাবা’ ডাকলে ‘ওহাবী’দের মতে ‘মায়ের স্বামী’ হয়ে যায়। আর ‘ওহাবী’ পীরেরা তাঁদের শত শত মুরিদকে ‘বাবা’ ডাকলে কী হয়?- আমি বলতে পারবো না। মোর লজ্জা করে! আপনারাই বলেন। আমি দুবাই থাকাকালীন এক ‘ওহাবী’ পীর ছাব আমাকে কল দিয়ে বলতেন, ‘বাবা’ তৈয়বী আফনে কই, আফনের দেখা পাই না কেন? তখন আমি বিয়ে করি নাই। লজ্জায় আমার মুখটা লাল হয়ে যেতো। আমি তখন একটা ‘জোয়ান মর্দ’- এই বুড়া বেডার মায়ের 'স্বামীন' হই ক্যামতে?’
কিন্তু‘ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সব 'খারেজী' আর 'কওমী'রা আকিদার ক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। তা হচ্ছে- তাঁরা প্রত্যেকেই ‘ওহাবী’। সরি- এখন ‘ওহাবী’দের ‘ওহাবী’ বলতেও বারণ আছে। আমার ফেবুবন্ধু প্রিয় ভাই Mashud Rana আমাকে বেশ ‘মুহব্বত’ করেন। তিনি আমার ‘খায়ের খাঁ’। একজন নিরেট ভদ্রলোক। তিনি বাংলা শিক্ষিত হলেও আমি মনে করি- তাঁর কাছ থেকে উগ্রবাদীরা অনেক কিছু শিখতে পারেন। এরকম বেশ কিছু ‘ওহাবী’ বন্ধু আমার আছেন- যারা দেখা হলে আগে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁদের মধ্যে ওহাবীদের সাংবাদিকতার পথিকৃত মাও. আবদুর রহীম ইসলামাদী এবং মাসিক দাওয়াতুল হকের নির্বাহী সম্পাদক জনাব আবদুর রহমান চৌধুরী অন্যতম। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের চট্টগ্রাম প্রধান। প্রথমোক্ত জনের সাথে আমার 'তুই-তুকারি' সম্পর্ক ছিল এবং শেষোক্ত জন আমার বড় ভায়ের মতো। ইসলামাদীকে একবার বললাম- সব ‘ওহাবী’ তোর মতো 'উদার' হয় না কেরে? তার চটপট উত্তর- সব ‘বেদাতি’ তোর মতো 'উদার' হয় না কেন? সে পীর মানে, উসিলাও মানে। তাকে আমি ‘ওহাবী’ বলে খেপাতে চেষ্টা করি, সে আমাকে ‘বেদাতি’ বলে খেপাতে চেষ্টা করে। (তাকে নিয়ে মজার একটি ঘটনা আছে। সেটি পরে বলবো।) দেশে থাকতে শত চেষ্টা করেও তাকে ‘ওহাবীবাদ’ থেকে ফেরাতে পারি নি।
আপনি দেখবেন- ওহাবীদেরকে ‘ওহাবী’ বললে তাঁরা বেজায় নাখোশ হন। তাঁরা বলেন- ‘ওহ্হাব’ হলো আল্লাহর গুণবাচক নাম। তো? তাইলে আপনারা আমাদেরকে ‘ওহাবী’ বইল্যা গালি দেন ক্যান? বলি- হায়রে না সমঝ্! যদি তাই হয়, তাহলে তো আপনাদের ‘গালি’ কোথায় দেয়া হলো? আপনাদেরকে ‘ওহাবী’ বললে তো ‘আল্লাহওয়ালা’ই বলা হলো। তাই না? না, না, না। আমরা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’র অনুসারী। আমাদেরকে ‘ওহাবী’ বলে গালি দিবেন না! কয়েকদিন আগে এই প্রশ্নটি আমার ফেবু বন্ধু Mashud Rana ভাইকে করেছিলাম। তিনি বেশ বুদ্ধিমান। কথা কাটাতে বেশ ওস্তাদ। তিনি যা বললেন, তা অনেকটা এ রকম- ৩নং প্রশ্নের উত্তর ৫নং প্রশ্নে আছে। ৫ নং প্রশ্নের উত্তর ৭নং প্রশ্নে আছে। ৭ নং নম্বর প্রশ্নের উত্তর ৩নং প্রশ্নের আছে। তাঁর এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর শুনে আমি বেশ কয়েকবার হেসেছি। এবং যতোবারই হেসেছি ততোবারই একটি ঘটনা মনে পড়েছে।
ঘটনাটি হলো- তখন পরীক্ষায় নকলের 'ধকল' ছলছিল পুরো দেশ জুড়ে। একজন পরীক্ষার্থীর সাথে দশজন লোক যেতো সেন্টারে। হাউস টিচার তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের শরীরে 'জায়গা মতো' নকল বেঁধে দিতেন। ছাত্র-ছাত্রীরা নকলের ওপর ভরসা করে পরীক্ষার হলে ঢুকতো। হলে ‘প্রশ্ন’ দেয়ার সাথে সাথে প্রশ্নটি কেন্দ্রের বাইরে চলে আসতো। আমার এক বন্ধু তার ‘হাবাগোবা’ ছাত্রীর বোরকার পকেটগুলোতে পুরো নোট বইটি কেটে-কুটে ভরে দিয়েছিলেন। ছাত্রী জানে না কোন পকেটে কী আছে। বন্ধুটি লিখে পাঠাল- ১নং প্রশ্নের উত্তর বোরকার ১০নং পকেটে আছে। ২নং প্রশ্নের উত্তর ৫নং পকেটে আছে। ৩নং প্রশ্নের উত্তর ৬নং পকেটে আছে। এভাবে সব প্রশ্নের উত্তর আর পকেট নং বলে দিলো। ঘন্টা দেড়েক পর বন্ধুর ছাত্রীটি খুশিতে ‘বাকবাকুম’ করতে করতে স্যারের কাছে আসলো। ছাত্রীর মা তাড়াতাড়ি 'ডাব' নিয়ে ছাত্রীর মুখে ধরলেন। এক চুমুকেই পুরো ডাব শেষ! ডাবের খোসা মায়ের হাতে দিয়ে সে বললো- 'স্যার আজ সব প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ হয়েছে'! বন্ধুটি বললো- সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক মতো লিখেছো তো? জ্বী সার! আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই ‘ফুল অ্যান্সার’ করেছি! বন্ধুটি চোখ কপালে তুলে বললো- বলো কী! হ্যাঁ, স্যার। আপনিই তো লিখে পাঠালেন- ‘১নং প্রশ্নের উত্তর ১০ পকেটে...’ । আপনি যেভাবে লিখে দিয়েছেন আমিও ঠিক সেভাবে খাতায় লিখে দিয়েছি। আমার বন্ধু তার ছাত্রীর মাকে লক্ষ্য করে বললো- ‘আপা! আপনার হাতের ডাবের খোসাটা আমার মাথায় মারেন।’
তারিখ: ২৮ অক্টোবর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউএই।
আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক,‘উজ্জীবন’ সাংস্কৃৃতিক সংস্থা (উসাস)।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস), দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।
©somewhere in net ltd.