নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন একজন শহীদের পিতার জীবন বাঁচাই

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:২১

আসুন একজন শহীদের পিতার জীবন বাঁচাই
-আবছার তৈয়বী
আজ আমার মন ভালো নেই। চোখে নেমেছে জলধারা। মাথাটা এলোমেলো। মাথায় কিছুই আসছে না। নিয়মিত লেখাগুলো লিখতে মন সায় দিচ্ছে না। শরীরটা অবশ হয়ে এসেছে- লিখবো কী? লেখার জন্য ফ্রেশ মন চাই- সেটা এই মুহূর্তে নেই। তাই লেখাও নেই। আল্লাহ্-রাসূলের (দরুদ) মর্জি হলে কাল থেকে লিখবো। ভারক্রান্ত মন নিয়ে আমার খুব কাছের একজন উঠতি বয়েসী লেখক তাহের আকবরের লেখা পড়ছিলাম। লেখাটি আমি আগেও একবার পড়েছি। কিন্তু তখন ভালো করে বুঝে আসেনি। আজ আবার পড়লাম। পড়েই আমি ‘থ’ হয়ে বসে রইলাম। চোখের জলধারা আরো গতি পেলো। কিছু কিছু লেখা আমাকে কাঁদায়। তাহেরের এই লেখাটি আমাকে আবার কাঁদালো।

কী ছিল তাহেরের লেখায়? তাহেরের লেখায় ছিল- এক সাবেক সেনাকর্মীর আর্তনাদের কথা! এক অসহায় মহৎপ্রাণ সুন্নী ভাইয়ের জীবন-যন্ত্রণার কথা! একজন মুসলামানের মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাওয়ার কথা! মুসলমান নামধারী মানুষরূপী কিছু হায়েনার ছোঁড়া প্রেট্রোল বোমায় শরীরের ৭৫% জ্বলে যাওয়া একজন বনী আদমের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মর্মষ্পর্শী বর্ণনা। হ্যাঁ, সে কাহিনী পড়ে আমার চোখের জলধারা প্রবল বেগে ছুটেছে। আমি জানি- একসময় তা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তাহেরের লেখাটি আমার মনে যে 'ক্ষত' সৃষ্টি করেছে- তা কখনো শুকাবে না। বরং তা 'দগদগে ঘা' হয়ে হৃদয়ের চারপাশটাকে দুষিত করবে। কিন্তু আমার করার কিছুই থাকবে না।

মূসা। আমাদের মূসা ভাই। চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন ওয়ারদর পাড়ার সাবেক সেনাকর্মী মূসা ভাই। যে সারাদিন টমটম চালিয়ে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে না পড়ে সুন্নী মাহফিলের পোস্টার লাগাতো- সে মূসা ভাই। যে মিছিলে-মাহফিলে 'না’রায়ে রিসালাত- ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (দরুদ)' বলে স্লোগান ধরতো- সে মূসা ভাই। যে মৃত্যুর বিছানায় ‌'ইয়া গাউছুল আজম দস্তগীর (রা.)' বলে ডাক দিতো- সে মূসা ভাই। সেই মূসা ভায়ের জন্য আমরা কিছুই করিনি। করবো কি- আমরা তো তাকে চিনিই না! চিনিয়েছে আমাদের আলোকিত সেনানী তাহের আকবর। দুই দুই বারের ঢাবি সেনা সভাপতি। ২০১৩-১৪ সেশনের কেন্দ্রীয় স্কুল বিষযক সম্পাদক ও ২০১৪-১৫ সালের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক। সে না চিনালে আমি জীবনেও মূসা ভাইয়ের পরিচিতি জানতাম না। কী হয়েছিল মূসা ভাইয়ের? আসুন! আমরা তাহেরের জবানীতেই তা শুনি-

“২০১৩ সালের ২৫ মার্চের কথা অাপনাদের মনে অাছে? জামায়াত নেতা কামরুজ্জামানের যখন ফাঁসির রায় হয়েছিল জামায়াত দুই দিন হরতাল ডেকেছিল। প্রতিদিনের মত সেদিনও ছাত্রসেনার সাবেক এক কর্মী মুসা (২৬) তার টমটম গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল পেটের তাড়নায়। কিন্তু কী ঘটেছিল সেদিন? মুসা একজন বিদেশ ফেরত টমটম ড্রাইভার। চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া থানার ওয়ারদর পাড়ায় মুসার বাসা। মুসা পরিবারের বড় ছেলে। বাবা একজন দিন মজুর। মুসারা তিন ভাই পাঁচ বোন। মুসা সব সময় স্বপ্ন দেখতেন- নিজে বেশি পড়ালেখা করতে না পারলেও ভাই বোনদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। মা-বাবার দুঃখ ঘুচাতে তিনি মধ্যপ্রাচ্যেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর পর দেশে ফেরত অাসতে হয়। মুসা থেমে না থেকে একটি টমটম গাড়ি নিয়ে অাবার নতুন জীবন শুরু করেন। মুসাই পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী। অসুস্থ পিতা প্রতিদিন কাজ করতে পারে না। ছোট ভাই হানিফ তখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সবার ছোট হুসাইন ক্লাস সেভেনে পড়ে। প্রতিদিনের মত সকালে মা কে একটু বিদায় জানিয়ে বের হয়েছিল গাড়ি নিয়ে। কিন্তু সেদিন জামায়াত-শিবির হরতাল ডেকেছিল কামরুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে। সকাল এগারটা। হরতাল সমর্থককারী কিছু কর্মী বাকলিয়ার রাস্তায় মুসার গাড়িতে এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে অগুন ধরিয়ে দেয়। মুসা রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে লাগল, মূহুর্তেই তার জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেল। কাপড় ছাড়া প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়িতে চলে গেল। তারপর বাসা থেকে মুসাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিল। একদিন থাকার পর মুসাকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলো.........।”

পেট্রোল বোমায় অন্যান্য অগ্নিদগ্ধ যন্ত্রণাকাতর মানুষগুলোর মতো আমাদের মূসা ভাইও আর্তনাদ করেছে। তার আর্তনাদে আল্লাহর আরশ কেঁপেছে। কিন্তু কাঁপেনি হায়েনাদের অন্তর! কারণ, এরপরে আরো বহু মূসা এভাবে প্রেট্রোল বোমার শিকার হয়েছে। এবং পুরো বাংলাদেশের অধিবাসীদের অভিশাপ দিয়ে প্রতিজন মূসা এক পর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আমরা গায়ে সামান্য আগুনের তাপ লাগলে বা কোন দুর্ঘটনায় সামান্য পুড়ে গেলে কী যন্ত্রণা অনুভব করি- তা ভুক্তভোগী মাত্রই অবগত আছি। আর যার শরীরের ৭৫% শতাংশই পুড়ে যায়- তাও আবার প্রেট্রোল বোমার আগুনে- ব্যাপারটি কতো ভয়াবহ বুঝতে পারছেন তো?! ঠিক এভাবে কাতরাতে কাতরাতে ৯ দিন পর আমাদের মূসা ভাইয়ের আর্তনাদ চিরদিনের মতো থেমে যায়। ৬ এপ্রিল’১৩ আমাদের মূসা ভাই শাহাদাতের সূধা পান করেন।

এরপর মূসা ভায়ের অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব এসে পড়ে জীর্ণ-শীর্ণ বয়োঃবৃদ্ধ বাবার ওপর। এতোদিন খেয়ে না খেয়ে পরিবারটি কোন রকমে চলছিল। কিন্তু এবার সেখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়- মূসা ভায়ের বৃদ্ধ বাবার 'লিভার সিরোসিস'সহ নানা প্রকার ব্যাধি। তিনি এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ডাক্তার বলেছেন- ৩ লাখ টাকা লাগবে। এই ৩ লাখ টাকা জোগাড় করা শহীদ মূসা ভাইয়ের পরিবারের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা সকলেই চাইলে ৩ লাখ টাকা যোগাড় করা কোন ব্যাপারই না। ৩০০ জনে ১০০০ টাকা করে দিলে ৩ লাখ হয়। ৬০০ জনে ৫০০ টাকা করে দিলেও ৩ লাখ হয়। ১০০০ জনে ৩০০ টাকা করে দিলেও ৩ লাখ হয়। আবার ৩০০০ জনে ১০০ টাকা করে দিলেও ৩ লাখ হয়। একের বোঝাটি আমরা দশে ভাগ করে নিতে পারি। টাকার অঙ্কটি যতো বড়ই হোক না কেন- সম্মিলিত উদ্যোগের কাছে খুবই ছোট। আপনার একটু সহানুভুতি একজন শহীদের পিতাকে বাঁচাতে পারে। বাঁচাতে পারে- একটি অসহায় পরিবারকে। আপনার সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য পৌঁছে দিন নিম্মোক্ত জিম্মাদারগণের কাছে।

মুহাম্মদ হানিফ (মুসা ভাইয়ের ছোট ভাই) বিকাশ নং: 01827058207 বা তাহের আকবর- বিকাশ নং: 01812025670 অথবা (A/c - 11421070013501, Mohammed Abu Taher, Prime Bank Ltd. Elephant Road Branch, Dhaka. Bangladesh.

তাহেরের লেখাটা পড়ে নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে- সাবেক সেনাকর্মী মূসার মৃত্যুর জন্য আর কেউ নয়, আমিই দায়ী। আমাদের মূসা ভাইয়ের জন্য আমি কিছুই করিনি, করতে পারিনি। মূসা ভাইয়ের পরিবারের প্রতিও আমার/আমাদের দায়িত্ব পালন করিনি। আসুন! এবার অন্ততঃ একজন শহীদের পিতার প্রতি আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করি। আল্লাহ্-রাসূল (দরুদ) আমাদের সহায় হোন। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ্, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি উনীব। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

বি.দ্র: এই লেখটি সর্বোচ্চ শেয়ার করুন। কপি-পেইস্ট করে নিজেদের টাইমলাইনে দিন, আপনার পরিচিত সকল পেইজ ও গ্রুপে দিন। ওয়াটসাপ ও ইমো গ্রুপে দিন। অথবা আপনি নিজেই এ বিষয়ে দু'কলম লিখুন। মনে রাখবেন, আপনার একটু সহানুভূতি বা সামান্য প্রচেষ্টায় একজন শহীদের পিতাকে বাচাতে পারে। রক্ষা পেতে পারে- একটি শহীদ পরিবার, একটি অসহায় সুন্নী পরিবার।

তারিখ: ২২ মার্চ, ২০১৬ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.