![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাতির জন্য ছাগলদের মায়া-কান্না
-আবছার তৈয়বী
হাতি নিয়ে বাংলাদেশে চলছে 'শোকের মাতম'। মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ, স্ক্রলিং নিউজ, লাইভ স্পট নিউজ এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর চার কলামব্যাপী ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলো প্রমাণ করে- এই হাতি কোন সাধারণ হাতি নয়। মিডিয়ার ছাগলগুলোর জন্য এই হাতি 'অবতার' হয়ে এসেছে- যেন! আমাদের কপাল ভালো- এখনো যে এই হাতির পূঁজা-অর্চনা শুরু হয়নি। যেভাবে প্রচারণা চলেছে- ছাগলদের 'হাতিপূঁজা' শুরু হতে কতক্ষণ? সকালে ঘুম থেকে ওঠে জানতে পারলাম- আমাদের দেশের ছাগলদের শোক-সাগরে ভাসিয়ে অবশেষে হাতিটি ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন।হায়, হায়- 'এই শোক তাহারা কীভাবে সহিবেন'? এক্ষণে আমি শোক-সন্তপ্ত ছাগলদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ ছাড়া আর কী-ইবা করতে পারি?
দাদার দেশের হাতি বলে কথা! দাদার দেশের হাতি- দাদার চেয়েও বেশি দামী! এমনিতে কথায় আছে- 'রাজার হাতি বাঁচলেও লাখ টাকা আর মরলেও লাখ টাকা'। শুধু রাস্ট্রীয় শোক ঘোষণা করাই বাকি। অন্য সবগুলো স্টেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষগুলো যে মেহমানদারীতে 'পৃথিবী সেরা'- তাও প্রমাণ রেখেছেন। হাতিটির পরিচর্যা, আদর-সোহাগে কমতি ছিল না। ঘটা করে হাতিটির একটি নামও রাখা হয়েছে- 'বঙ্গ বাহাদুর'। যে হাতি নিজেকেই সামলাতে পারেনি- সে আবার 'বাহাদুর' হয় কী করে? আচ্ছা- ভারতের বাহাদুর বাবু বানের ঠেলায় বাংলাদেশে এসে চার পা চার দিকে ফেলে কাত হয়ে শুয়ে থেকে কী এমন বাহাদুরির প্রমাণ দিলো? বাহাদুরির প্রমাণ না হয় ছাগলগুলো পেয়েছে- মানলাম। কিন্তু তার নামের সাথে 'বঙ্গ' যুক্ত করা হলো কোন যুক্তিতে? ছাগলদের ছাগলামী দেখে দাদা বাবুরা যে গোস্বা করে সীমান্তে ফুটুস-ফাটুস করেননি- এটাই তো বড় কথা!
এই বঙ্গ বাহাদুরের জন্য বঙ্গ সন্তানদের সে কী মায়া-কান্না। ফেবুতে আমাদের রাউজানের এক গৃহবধু, সংবেদনশীল মনের শিল্পপতি লেখিকার কলিজা ফেটে কান্না বেরুতে দেখলাম! চেনা-জানা উপরতলার আরো অনেকেই কাঁদছেন। তাঁদের কান্নায় ফেবুতে অসময়ে বান ডেকেছে। দেশের নদ-নদীগুলো তাঁদের অশ্রুতে ভরে উঠেছে যেন! ছাগলদের এই ছাগলামি দেখে হাসবো না কাঁদবো- কিছুই বুঝতে পারছি না। যে দেশে আগুনে মানুষ পোড়ানো হয়, যে দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মানুষ মারা হয়, যে দেশে মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, যে দেশে বন্যা ও নদী ভাঙনে মানুষ ভিটে-মাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়, যে দেশে দু'মুঠো ভাতের জন্য মানুষ নিজের ইজ্জত বিক্রি করে, যে দেশে দেনা আদায়ে মানুষ নিজের আদরের সন্তান বিক্রি করে, যে দেশে মানুষ পীড়ায় ভুগে আত্মহত্যা করে, যে দেশে মানুষ ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গলায় দড়ি দেয়, যে দেশে বন্যা কবলিত অভুক্ত অসহায় মানুষগুলোর কান্দনে খোদার আরশ কাঁঁপে- সে দেশের মানুষের হাতি নিয়ে এমন মায়া-কান্না মানায়? বলুন- মানায়?
এই ছাগলদের উদ্দেশ্যেই শতবর্ষ আগে কবি বলেছিলেন- ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী/ রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি।’ তো বাঙালি (হাতির শোকে কাতর ছাগলগুলো) কবে মানুষ হবে- বলতে পারেন? কবে মানুষের জন্য ছাগলগুলোর মনে সামান্য মায়ার উদ্রেক হবে? বেশি নয়, বঙ্গ বাহাদুরের শত ভাগের একভাগ হলেও বাংলাদেশের কোন মানুষ আর অভুক্ত থাকবে না। প্রতিটি পরিবার থেকে একমুঠো করে চাল দিলেও বাংলাদেশের কোন মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাবে না। আমাদের দেশের মানুষ নামক ছাগলদের এই বিষয়টি ভাবার সময় আছে কি?
তারিখ: ১৬ আগস্ট, ২০১৬খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.