![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্ধকারে এখন চোখ সয়ে এসেছে। একটু আগে সোহানী রান্নাঘরে মোমবাতি খুঁজে এসেছে। অন্ধকারে হাতড়ে খুঁজতে গিয়ে পরে সোহানীর মনে হয়েছে গত তিনমাস ধরে ঘরের জন্য মোম কেনা হয় না। এপার্টমেন্টএর সোসাইটি থেকেও আগে জানানো হয়নি জেনারেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। সোহানী এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দক্ষিণের জানালাটার কাছে এসে দাঁড়ালো। সামনের রাস্তাটাও বেশ নিরিবিলি। যেভাবে বাতাসের বেগ বাড়ছে, ঝড় আসার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জানালাটা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় বেজে উঠলো সোহানীর ফোন। রাকিব ফোন করেছে।
- কোথায় তুমি?
-লিফটে আটকা পড়েছি।
-ওহো জেনারেটর তো নষ্ট! আচ্ছা তোমার কাছে কেয়ারটেকারের নাম্বার আছে না? ফোন দাও ওকে।
-ফোন দিয়ে পাচ্ছিনা।সুইচড অফ।তুমি একটু নীচে যাও জলদি।
-আচ্ছা।এক্ষুনি যাচ্ছি।
সোহানী দরজা খুলে থমকে দাঁড়ালো। অন্ধকারে রাকিব দাঁড়িয়ে আছে।
- রাকিব, তুমি কিভাবে আসলে?
কোনো কথা না বলে রাকিব নিঃশব্দে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলো।
পকেট থেকে লাইটার বের করে জ্বালালো সে।
সোহানী মুখটা দেখে চমকে উঠলো।আড়াই বছর আগের খুব পরিচিত একটা মুখ।
অভ্র! হ্যাঁ অভ্রকে রাকিব ভেবে ভুল করেছে সে!
তুমি?এতবড় সাহস তোমার! আমার ঘরে ঢুকেছো! অন্ধকার ছাপিয়ে সোহানীর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।
হ্যাপি বার্থডে সোহানী! খুব বেশি একটা সময় নেবো না আমি তোমার। তোমার জন্য একটা সামান্য উপহার আমার তরফ থেকে।
হাত বাড়িয়ে অভ্রর হাত থেকে ছোট বাক্সটা নিলো সোহানী।
-আচ্ছা সোহানী, তুমি আমাদের বিষয়ে কখনো রাকিবের কাছে আলাপ করোনি?
-তুমি আর আমি ভালো বন্ধু ছিলাম। আমাদের বিষয়ে ওর কাছে গোপন রাখতে হবে এমন কিছু আসলে নেই। কিন্তু আমার যখন বিয়ের কথা চলছিলো, তখন আমার প্রতি তোমার বন্ধুত্বের থেকে একটু বেশি কিছু আচরণ আমার কাছে অসহ্য ঠেকছিলো। তাই তোমার সাথে আমি আড়াই বছর ধরে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলাম।
-বাহ! হাসব্যান্ডের সাথে তো তোমার দারুণ বোঝাপড়া! কিছুই তো গোপন করোনি দেখছি।
-না তার প্রতি অবশ্য আমার শ্রদ্ধাবোধও নেই। অফিসের এক সহকর্মীর সাথে তার গোপন সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছি আমি।
-সোহানী, আমি বেশি সময় নিবোনা বলেছিলাম। রাকিব অফিস থেকে ফিরলো বলে।
অভ্র চলে যাওয়ার পর সোহানী সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে, এমন সময় রাকিব পেছন থেকে এসে সোহানীর চোখ চেপে ধরে বলল,
-সোহানী আসলে ফোনে আমি যে লিফটে আটকা পড়ার কথা জানালাম,সেতা বানানো ছিলো।
ঘরের দরজার কাছে এসে রাকিব সোহানীর চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।
ঘর ভর্তি অনেক মানুষ। টেবিলে একটা বড় ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক রাখা। সোহানীর যেটা খুব প্রিয়। বুঝতে আর বাকী রইলো না। এসবই ওর জন্য রাকিবের প্ল্যান।
সব গেস্ট চলে যাওয়ার পর অন্যসব উপহারের র্যা পিং খোলার আগে সোহানী অভ্রর দেওয়া বাক্সের ঢাকনা খুলে একটা ভাজ করা চিঠি পেলোঃ-
সোহানী,
তোমাকে সায়মা নামের যে মেয়েটা ফোন দিয়ে রাকিবের সাথে অফিসের সহকর্মীর বিষয়ে প্রতিনিয়ত তথ্য দিতো, সে আসলে আর কেউ না, আমার প্রেমিকা। যে খুব শীঘ্রই আমার স্ত্রী হতে যাচ্ছে। আমার কথাতেই তোমাকে ফোন দিতো সায়মা। আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাইনি। কিন্তু এটাও চাইনি যে তুমি সবসময় আমাকে ঘৃণা করো। এক না একদিন তুমি আমার ঘৃণ্য চাল সম্পর্কে জানতে পারতে। কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তাই নিজেই তোমাকে সব জানিয়ে দিলাম। রাকিবই তোমার জন্য সব থেকে যোগ্য।
ইতি তোমার বন্ধু
অভ্র
হাতমুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে রাকিব। সোহানীকে প্রশ্ন করলো রাকিব।
-তোমাকে আমি কখন ফোন দিয়ে নামতে বলেছিলাম! তুমি দেরি করলে কেন? প্ল্যানটা তো পণ্ড হয়ে যেতো একটু হলে...
কোন কিছু না বলে সোহানী রাকিবকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি কী জানতাম সবার এতো কিছু প্ল্যানের কথা?
কথাটার মানে বুঝতে না পারলেও রাকিব সোহানীর কান্নাভরা চোখের অনন্ত সৌন্দর্যের দিকে বিহ্বলের মত তাকিয়ে রইলো...
©somewhere in net ltd.