![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেমিস্টার ব্রেক এ সেজো খালার বাসায় কিছুদিনের জন্য থাকতে গেলাম। ৪ খালার মধ্যে সেজো খালার সাথেই ঘনিষ্টতা সব চেয়ে বেশি। সেজো খালার আবার ৪ সন্তান। বড় মেয়ে আমার থেকে ৬ মাসের ছোট। তার পরের জন ক্লাস ১০ এ পড়ুয়া ছেলে। তার পরের জন আমার ছোট বোনের সমান, যে ক্লাস ৭ এ পড়ে এবং সবচেয়ে ছোট জন ক্লাস ১ এ পড়ে। ছোট বেলা থেকে অবশ্য এদের সাথে তেমন একটা খাতির ছিলনা। খাতির না থাকার ২টি কারন। এক, ছোট বেলায় আমরা থাকতাম নারায়গণঞ্জ এ এবং খালা থাকতেন ঢাকায় তার শশুড় বাড়িতে,communication gap যাকে বলে। দুই,এক সময় সেজো খালা খুব ডানপিটে, চঞ্চল স্বভাবের ছিলেন। প্রেম করে বিয়ে করেছেন তার আপন খালতো ভাই কে। এ কারনে নানু বাসায় তার গ্রহণযোগ্যতা টা কমে আসে। পরবর্তিতে দেখা যায় যে তার ছেলে মেয়েরাও প্রায় ঐ একই স্বভাবের হয়। ছোট বেলা থেকেই এদের খুব বাজে একটা অভ্যাস দেখতাম এবং তা হল ' অনুমতি বিহীন অন্যের প্রয়োজনিয় জিনিস নিয়ে নেয়া', in short 'চুরি'র স্বভাব। এর পেছনে যেমন রয়েছে মানুষিক শিক্ষার তথা বিবেকের অভাব তেমন ই রয়েছে কিছু psychological disorder. কিন্তু সময় যতই পার হতে থাকে ব্যাপারটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে যে, এদের এমন হাত সাফাই করার অভ্যাস টি মটেও কোন psychological disorder জাতীয় কারন ছিলনা। পুড়োটাই ছিলো দারিদ্রের কারনে বিবেকহীনতার স্বীকার হওয়া এবং তাই আমার অন্য খালারা যেমন সেজো খালা কে এড়িয়ে চলতো, আমরা ভাই-বোনরাও তার ছেলে-মেয়েদের সাথে তেমন একটা ঘনিষ্টতা গড়ে তুলতে পারিনি। এভাবেই সময় পার হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে আমার উপলব্ধি হয় যে মানুষ হিসেবে এরা ওতোটাও খারাপ না, বরং একটা সময় আসে যখন মনের সুখ-দুঃখের কথা share করতে করতে আমি এদের সাথে খুব ঘনিষ্ট হয়ে উঠি, এবং তাই বোধহয় এদের ভুল ত্রুটি গুলো ও আমার চোখের আড়াল হতে থাকে।
যাই হক, খালার বাসায় ২দিন বেশ আনন্দে কাটে। আড্ডা ,গল্প, খাওয়া-দাওয়া সব ই মন ভরে হয়। কিন্তু শেয পর্যন্ত 'All's well that ends well' প্রবাদ টা এর যথার্থতা হারায়। ভার্সিটি টিউশন ফি দেয়ার পর খালার বাসায় আমি ১০০০ টাকার ২টা নোট অর্থাত মোট ২০০০ টাকা আমার ব্যাগ এ পুরে নিয়ে যাই। প্রথম দিন কোন সমস্যা ঘটেনি। সমস্যা টা ঘটে আসার আগে। আসার জন্য যখন আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন ব্যাগ ঘেটে দেখি আমার ১টি ১০০০টাকার নোট গায়েব!!! নিযজর চোখের উপর প্রথমে বিশ্বাস হলনা। কারন আমার যতদুর মনে আছে, আমি খালার বাসায় যাওয়ার পর আমার হ্যান্ড পার্স টি থেকে কোন টাকাই বের করিনি।এমনকি আমি আমার কাপড়ের ব্যাগ থেকেই আমার পার্স টি বের করিনি। এর আগের রাতে আমরা সবাই মিলে বাইরে খেতে যাই,কিন্তু তখনো আমি আমার পার্স থেকে টাকা বের করিনি এবং বাসায় এসেও আমার টাকা গুলোকে সহি সলামেত পাই। তাহলে এরই মধ্যে সেই টাকার নোট টি কোথায় যাবে? নিশ্চই আমার টাকার নোটটির কোন হাত-পা ছিলোনা যে একা একাই সে ব্যাগ থেকে বের হয়ে চলে যাবে। আমার মনে হতে ১সেকেন্ড ও সময় লাগলো না যে কাজ টি তাদের মধ্যই কেও একজন করেছে কারন খালার বাসায় আসার আগে আমার সেজো খালা এবং আমার খালাতো ভাই-বোন রা আমাদের বাসায় যেয়ে এক রাত যাপণ করে এবং ঠিক তখন আমার মা'র ব্যাগ থেকেও প্রায় ১০০০ টাকা missing হয়।এই ঘটনার আগেও একবার আমার পার্স থেকেও ১০০০ টাকা উধাও হয়ে যায় এবং সে সময়টাতেও আমার সেজো খালা তার পরিবার কে নিয়ে আমাদের বাসায় আবস্থানরত ছিলেন। তবে আগের বারের মত এইবার আমি চুপ করে বসে ছিলাম না।চোখ-মুখ কালো করে এক হতাশার ভোঙিমায় সবাই কে ব্যাপার টা জানাই এবং ক্রোমাগত ভাবেই তা কিছুক্ষণ পর পর বলতেই থাকি। মনে মনে এইবার পুরোপুরি প্রস্তুতি নেই যে কেও যদি টাকা টা নিয়ে থাকে এবং আমাকে তা পরে ফেরত দেয় তবে কোন বাক্য ব্যয় না করে টাকা টা এইবার নিয়েই নিবো।After all, টাকা তা তো আমার ই,আমার প্রয়োজনেরই তো টাকা।ফেরত দিলে নিবো নাই বা কেনো?কিন্তু কোন কিছু বলেও টাকাটা পেলাম না। এইদিকে এই ব্যাপার এ মা কে জানানো টাও ঠিক হবেনা, তাই মুখ গোমড়া করে খালার সাথে বাসা থেকে বের হয়ে আসি। মনে মনে তখনো ভাবতে থাকি যে, যদি একবার খালামনি টাকাটা সাধে তাহলে ঘপ করে টাকাটি নিয়ে নিবো। এ কথা ভাবতে ভাবতেই খালা তার ব্যাগ থেকে ১০০০ টাকার ১টা নোট বের করে আমাকে দেয় আর দু্ঃখিত ভাবে বলে যে তার বাসায় এমন একটা ঘটানা ঘটাতে সে খুবই দুঃখিত। খালার খুব খারাপ লেগেছে এই কারনে যে টাকা টা আমার নতুন সেমিস্টারের বই কেনার টাকার জন্য ছিলো। আর তাই সে আমকে আমার টাকাটা দিয়ে দিতে চায়। তাৎক্ষণিক ভাবে আমার মাথা থেকে যাবতীয় প্রতিহিংসা মূলোক চিন্তা ভাবনা, টাকা ফেরত নেয়ার সাধ, সব গায়েব হয়ে যায় এবং 'ধরা খাওয়া কোন চোরে'র থেকেও দুঃখত স্মরে আমি খালাকে জোর করি টাকাটা আমাকে ফেরত না দিতে। যেখানে স্পষ্টত আমার মনে আছে যে আমি টাকা টা আমার ব্যাগ থেকে বেরই করিনি,সেখানে নিজেকে 'মনভোলা' বলে দাবি করে পুরো ব্যাপার টা নিজের উপর নিয়ে নিলাম।শেষ মেষ খালাকে বাধ্য করলাম টাকাটা ফেরত নিতে। সাথে সাথে মাথায় 'টংং' করে উঠলো! কি হল ব্যাপারটা?!!! এই না আমি পুরাদমে প্রস্তত টাকা টা নেয়ার জন্য?! তাহলে কেন নিতে পারলাম না? মনে হলো যেন টাকা টা নিলে আমি ই আসামি বনে যেতাম। কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমার মন কে আটকে ধরে রাখলো। কোন মতেই আমি সেই টাকা টা নিতে পারলাম না। একেই কি তবে 'বিবেক' বলে?
অণ্বেষনের জন্য এই অঙ্গাতের প্রশ্ন: কোন মানুষের পক্ষে তার মনের মধ্যে এই সামান্য টুকু বিবেক রাখা টাও কি খুব কষ্টের যে আত্মিয়তার সামনেও টাকার মুল্যটা বেশি হয়ে যায়?
©somewhere in net ltd.