নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবেকের ফাঁসি!

আজাদী আকাশ

সাদা মনে বলছি। পেশায় আইনজীবী। ভাবতে ভালবাসি। ভাবাতে ভালবাসি। ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করনি!

আজাদী আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"নো জাস্টিস নো পিস"

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০২


পৃথিবী আজ অশান্তির দাবানলে মারাত্মকভাবে দগ্ধ। পৃথিবীজুড়েই আজ চলছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি, ধর্ষন, মারামারি, কাটাকাটি, অপহরণ, দমন-পিড়ন, দুর্নীতি সহ নানা অপকর্মের মাতম। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের চাওয়া পাওয়ার মাঝে ভিন্নতা আছে। কিন্তু আমাদের সকলের চাওয়ার লম্বা লিস্টের মধ্যে একটি কমন চাওয়া টা হল আমরা সবাই ই শান্তি চাই। কেউই অশান্তি তে থাকতে চাই না। তবে এই চাওয়া টা হলো মানুষের ব্যক্তিগত শান্তির কামনা। জাতীয় শান্তির কামনা নয়। জাতীয় শান্তি এক জিনিষ আর ব্যক্তিগত শান্তি আরেক জিনিষ। যেমন একজন খুনি, ডাকাত, চোর, জেনাকারী, দূর্নীতিবাজ লোক চাই যে সে ব্যক্তিগত ভাবে শান্তিতে থাকবে।খুন করে সে শান্তি পেতে চাই, ডাকাতি করে সে শান্তি পেতে চাই। বিলাসবহুল জীবন যাপন করে সে শান্তি পেতে চাই। এটা হলো তার ব্যক্তিগত শান্তি যদিও তার পথটা অশান্তির। এটা করে সে শান্তি পাবে কি পাবে না সে বিতর্কে যাব না। আবার একজন ভাল মানুষ, সে নিজে অন্যায় করে না এবং অন্যায় পছন্দও করে না, সে কোন ঝামেলাই জড়াতে চাইনা। খারাপ কাজ থেকে সে নিজেকে যত দুর সম্ভব দুরে রাখতে চাই। সেও চাই যে এটাতে সে নিজে শান্তি পাবে। তবে তার এ শান্তি কামনা পরোক্ষভাবে জাতীয় শান্তির নামান্তর। কেননা, একজন ব্যক্তি যখন অশান্তির ভয়ে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে তখন যে শুধু সেই শান্তিতে থাকে তা নয়। বরং জাতীয় ভাবে প্রতিটি মানুষই শান্তিতে থাকে।

আমরা দৃষ্টি দেব জাতীয় শান্তির দিকে। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র প্রধান তাদের দেশে শান্তি বজায় রাখতে নানা মুখি নীতি গ্রহণ করেন। আইন আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার করেন, শাস্তি দেন। জনগনের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেন। এই সব কিছুই করা হয়ে থাকে জাতীয় শান্তির জন্য। যে শান্তির জন্য এত কিছু আয়োজন করা হয় অধিকাংশ রাষ্ঠই সে শান্তির ছোয়া মাত্র পায় না। কারণ রাষ্ট্র যন্ত্র যারা পরিচালনা করেন তাদের ভিতর থেকে ইনসাফ বা ন্যায়বোধ শব্দটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলে জাতীয় শান্তির আশা করা বৃথা। বর্তমানে ভুক্তভোগী অধিকাংশ মানুষের মত হলো দেশে আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন নেই অর্থ হলো দেশে আইন আছে অথচ তার সুষ্ঠ প্রয়োগ না হওয়া। নির্যাতিত দুর্বল লোকের শেষ আশ্রয়স্থল হল আইন-আদালত। সেই আইন-আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়াটা দুরুহ ব্যাপার। বিজ্ঞ আদালতের এজলাসে দেখা যায় একটি মুর্তি দাড়ি পাল্লা নিয়ে হাত উচু করে দাড়িয়ে আছে। তার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বাধা। এর অর্থ হলো বিজ্ঞ বিচারক যখন বিচার করবেন তখন তিনি পরোক্ষভাবে অন্ধের ভুমিকা পালন করবেন। তার মানে তিনি দেখবেন না তার সামনে রাজা এসে দাড়ালো না কি দুই টাকার একজন ভিক্ষুক এসে দাড়ালো। তিনি একজন প্রতাপশালি মানুষের বিচার করছেন নাকি একজন অসহায় দুর্বল লোকের বিচার করছেন। তিনি আইন অনুযায়ী বিচার করবেন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বিচারের বাণী নিভৃতে কাদে। আগে একজন আইনজীবী শুধুমাত্র এটা দেখতেন না তার কাছে যে আসামী জামিনের জন্য আসলো তাকে কোন আইনের কত ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। বরং সাথে সাথে এটাও দেখতেন উক্ত অপরাধে সে কতটুকু জড়িত আছে এবং এটা দেখেই আইনজীবী বলে দিতে পারতেন তাকে জামিন করানোর সম্ভাবনা কতটুকু। কিন্তু বর্তমানে একজন আইনজীবী যদি এজাহার পড়ে দেখেন যে উক্ত আসামীর মামলার সাথে কোন সম্পর্কই নেই তাহলেও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে আসামী জামিন পাবে। পাঠকেরা দয়া করে আমার কথার মর্মার্থ বুঝে নিবেন আশা করি।

শুধু কোর্ট-কাচারি নয়। জাতীয় জীবনের কোন স্তরেই ন্যায় বিচার আশা করা এখন কঠিন। অধিকাংশ সরকারী দ্প্তরে গেলেই বোঝা যায় টাকার নিকট ইনসাফ বিক্রি হয়ে গেছে। আমার অধিকার এখন টাকা দিয়ে কেনা লাগে। সরকারী প্রতিষ্ঠান কেন, গ্রাম পর্যায়ের একটা প্রতিষ্ঠান হলো পঞ্চায়েত। সেখানেও একই চিত্র। ন্যায়বিচার বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মাতুব্বর রা উভয় পক্ষের নিকট থেকে টাকা খাচ্ছে । সালিশীর নামে অযথা গরীব দুর্বলদেরকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সকল ব্যক্তিমানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী; এই নীতির জন্য আবশ্যক হয় ‘ব্যক্তিমানুষ সর্বোচ্চ মূল্যের অধিকারী’—এই নীতি। একশত টাকার নোটের মূল্য একশত টাকাই, তা নোটটি ঝকঝকে পরিষ্কার হোক বা দুমড়ানো মুচড়ানো পুরাতনই হোক, তা নোটটিকে মাথায় নিয়ে নাচাই হোক বা তার গায়ে থুথু ছিটিয়ে পা দিয়ে মাড়ানোই হোক। নারী-পুরুষ, হিজরা-অহিজরা, মালিক-শ্রমিক, রাজা-প্রজা, ছাত্র-শিক্ষক, সাধু-অসাধু, চোর-অচোর নির্বিশেষে সকল ব্যক্তি মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু শোষণের নীতিটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ব্যক্তির কলাগত নৈপুণ্যকে ও সম্পদকে মানবসত্তার চেয়ে অধিক মূল্যবান সাব্যস্ত করতে হয় ও তার মূল্য দিয়ে ব্যক্তির মর্যাদা ও স্ট্যাটাস নির্ধারণ করতে হয়। এর ফলে ছনের ঘরের মালিকের চেয়ে ইটের ঘরের মালিক অধিক মর্যাদা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, যদিও ইটের ঘরটি যারা তৈরি করেন তারাই ছনের ঘরে থাকেন। রাজমিস্ত্রির কাজেরও কলাগত মূল্য রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও কায়িক শ্রম হবার কারণে তার মূল্য আর্কিটেক্ট বা প্রকৌশলীর বুদ্ধিবৃত্তিক নৈপুণ্যের মূল্যের চেয়ে কম ধরা হয়। একারণে কৃষকের বা শ্রমিকের কায়িক শ্রমের মূল্যকে বুদ্ধিজীবী, আমলা, শিল্পী-সাহিত্যিকদের কাজের মূল্য থেকে কম ধরা হয়—এমনকি খেলোয়াড় বা নাচনেওয়ালার কাজের মূল্যকেও বেশী ধরা হয়। এভাবে এলিট শ্রেণী ও কালচার তৈরি হয়, যেখানে ফুরুৎ ফুরুৎ শব্দে চা খাওয়ার সংস্কৃতি পর্যন্ত ‘সুকুমার’ অনুভূতি ও কেতা বর্জিত গেঁয়ো ক্ষেত অ-সংস্কৃতি সাব্যস্ত হয়ে উঠে, যা আবার এই গেঁয়োদের শ্রমের মূল্যের স্বল্পতাকে যুক্তিসঙ্গত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ধনী-গরীব, দুর্বল-শক্তিশালী, রাজা-প্রজা, সাধু-অসাধুর মধ্যে বিভেদ না খুজে আমরা যে দিন কোনটা ন্যায় আর কোন টা অন্যায় তা খুজে বের করতে উদ্যোগী হব আমাদের রায় টা যেদিন শুধুমাত্র ন্যায়ের পক্ষেই যাবে সেদিই কেবল আমাদের জাতীয় শান্তি পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় শুধুমাত্র ঘুমের ঘরেই ঘোড়াই চড়ে শান্তির রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে হবে বাস্তবে তা সম্ভব হবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.