![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাদা মনে বলছি। পেশায় আইনজীবী। ভাবতে ভালবাসি। ভাবাতে ভালবাসি। ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করনি!
দৈনন্দিন জীবনে ব্যাংকের তুলনায় অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম সেবার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা কেউই নিজের কাছে রাখেন না। আর ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে।দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির কারনে মানুষ পকেটে টাকা নিয়ে ঘরে বেড়ানোর তুলনায় বুথ থেকে প্রয়োজনের সময় টাকা উঠিয়ে নেয়াটাই বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করছেন। কারণ পকেটে হাজার হাজার টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো জীবন নাসের কারন হতে পারে। এজন্য মানুষ দিন দিন এটিএম বুথ সেবার দিকে বেশি পরিমাণ ঝুকে পড়ছে।
গবেষণায় দেখা যায়, দুই দশকে দেশে এটিএম বুথ সেবার পরিধি বহুগুণ বেড়েছে। ১৯৯২ সালে একটি মাত্র এটিএম বুথ থেকে শুরু হয় এর যাত্রা। বর্তমানে দেশে কার্যরত ৫৬টি ব্যাংকের এটিএম বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬১টিতে। লেনদেনে হচ্ছে বছরে প্রায় সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালে এটিএম বুথের মাধ্যমে লেনদেন ছিল ৭০ কোটি টাকা। ২০০১ সালে লেনদেন ছিল ২১১ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে ছিল ৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এটিএম বুথের মাধ্যমে লেনদেন ছিল ৬৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। দেশে স্থাপন করা এটিএম বুথগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ হাজার ৫১৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৬২টি, সিলেট বিভাগে ৪৬১টি, রাজশাহী বিভাগে ৩৪০টি, খুলনা বিভাগে ১৬৬টি, রংপুর বিভাগে ১৬৬ এবং বরিশাল বিভাগে ১০৩টি। দেখা যায়, শহর এলাকায় ৯৫.১৬ শতাংশ এটিএম বুথ এবং ৪.৮৪ শতাংশ গ্রাম এলাকায়। প্রতি এক লাখ ব্যাংক হিসাবধারীর জন্য গড়ে ৭.৩৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য এটিএম বুথ রয়েছে ৩.৪০টি। বুথগুলোর মধ্যে ৯৫.৫৪ শতাংশই বেসরকারী ব্যাংকের। ১.৪৮ শতাংশ সরকারী ব্যাংকের, ০.২৬ শতাংশ বিশেষায়িত ব্যাংকের এবং ২.৫৮ শতাংশ বিদেশী ব্যাংকের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ক্রেডিট কার্ড প্রথম চালু হয় ১৯৯৭ সালে। ডেবিট কার্ড চালু হয় ১৯৯৯ সালে। এর পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৪টিতে। এর মধ্যে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৭২ লাখ ৩২ হাজার ৫৫৪ টি এবং ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০টি। এসব কার্ডের মাত্র ২ শতাংশ ‘চিপ’ ভিত্তিক যা তুলনামূলক নিরাপদ। বাকি ৯৮ শতাংশ কার্ড চুম্বক প্রলেপ (ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ) দেয়া, যা লেনদেনের জন্য খুবই অনিরাপদ এবং এগুলো জাল করা সহজ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ৮টার মধ্যে এটিএম লেনদেন হয় সবচেয়ে বেশি। এর পর বেশি লেনদেন হয় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে। গত বছর একদিনে একটি এটিএম বুথে গড় লেনদেন ছিল ৪০টি। এটিএম বুথের মাধ্যমে একটি লেনদেনের জন্য ব্যাংকের খরচ হয় ৪৯ টাকা। এটা অবশ্য লেনদেনের ওপর নির্ভর করে। লেনদেনের সংখ্যা বেশি হলে এই খরচ কমে যাবে। যেমন, ২০১২ সালে প্রতিটি লেনদেনের পেছনে ব্যাংকের খরচ ছিল ৭১ টাকা। ওই বছর প্রতিটি এটিএম বুথের একদিনের গড় লেনদেন ছিল ২৭টি।
২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশে ধারাবাহিকভাবে এটিএম বুথ স্থাপন বাড়তে থাকে। ২০১২ সাল থেকে এটা কমতে শুরু করে। তবে ৭১ শতাংশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশে এখন যে পরিমাণ এটিএম বুথ রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং তারা প্রধানত গ্রাম এলাকায় এটিএম বুথ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তাছাড়া দেশের সব ব্যাংকের আইটি বিভাগের কর্মকর্তারা আরও ১৫ হাজার ৩৭৯টি এটিএম বুথের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে। সারাদেশের মধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরেই ৪৯ শতাংশ এটিএম বুথ রয়েছে। গ্রামে রয়েছে ৪.৮৪ শতাংশ এটিএম বুথ। এটিএম বুথের ওপর সর্বোপরি গ্রাহক সন্তুষ্টি ৬০.৩ শতাংশ। নগদ টাকা প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে ৬৯.৬ শতাংশ গ্রাহকের। নিজস্ব ব্যাংকের এটিএম সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে ৬১.১ শতাংশ গ্রাহকের।[সুত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪]
কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো নিখুতভাবে আসল নোটের কাছাকাছি টাকা বাজারে ছাড়ায় অনেক সময় এটিএম বুথেও দুয়েকটি জাল নোট চলে আসতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল বুথে ১০০০ টাকার জাল নোট বের হয় বলে একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন। একই ব্যাংকের মোহাম্মদপুরের রিং রোড বুথে পাওয়া যায় আরও ১০০০ টাকা। এসব টাকা গ্রাহক ফেরত পেয়েছে কি-না তা জানা যায়নি। তবে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের লালমাটিয়া মহিলা কলেজ বুথের ৫০০ টাকা ও রিং রোড বুথের ১০০০ টাকা গ্রাহক ফেরত পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে। এটিএম লেনদেন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় কোন ঘটনা চলতি বছরে ঘটেনি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করেছে। এ ছাড়া এটিএম বুথে জাল টাকা বের হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাংককাররা। তারা বলেন, নকল নোট হাতে আসা মাত্র প্রথমেই নোটের নম্বর ও নিজেকে সিসি ক্যামেরার (গোপন ক্যামেরা) সামনে উপস্থাপন করা। এরপর এটিএম কাউন্টারের সিকিউরিটি গার্ডের কাছে গিয়ে সব কিছু জানিয়ে তার রেজিস্টারে একটি অভিযোগ লেখাতে হবে। পারলে গার্ডকে দিয়ে সই করিয়ে তার একটি নকলপত্র যোগাড় করে রাখা। সমস্ত নথিপত্র নিয়ে এরপর থানায় গিয়ে আবার আরও একটি অভিযোগ ও যে ব্যাংকে এটিএম থেকে নকল নোট পাওয়া গেছে সে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কারণ প্রত্যেক এটিএম বুথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর দেয়া থাকে। ব্যাংকে গিয়ে নোটটা যে নকল সে স্ট্যাম্প ব্যাংক থেকে লাগানো। ব্যাংক এরপর সমস্তটা রেজিস্টারে রেকর্ড করে একটি রশিদ দেবে এবং প্রশাসনের সাহায্যে এটিএম থেকে এই ধরনের জাল নোট বেরুনো বন্ধ করবে। মনে রাখতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে দলিল প্রমাণ ছাড়া এটিএম বুথ ছাড়লে পরে অভিযোগ করলেও ব্যাংক কোন সহযোগিতা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আইনি মারপ্যাচে পড়ে জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
©somewhere in net ltd.