নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূত ও ভবিষ্যৎ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত ১৬/১১/২০১৬

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫


মন্টি বায়না ধরে বসে আছে, ভূত দেখাতে হবে। মন্টির শ্লোগান ”এক কথা এক দাবী-ভূত দেখাতে কবে যাবি।”
ডর-ভয় দেখিয়ে কাজের কাজ কিছুই হলো না বরং তার ভূত দেখার আগ্রহটা আরো বেড়ে গেল। মন্টির সাহস দেখে সবাই অবাক! দশ বছরের ছেলে!

মন্টির বাবা ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে শেষে বলল, যাও তোমাকে ভূত দেখাব আমি।
অন্ধকার রাত। মন্টির বাবা মন্টিকে বলল, ”তাড়াতাড়ি রেডি হও, এক্ষুণি ভ‚ত দেখতে যাব।” মন্টি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, “বাবা কী পরে যেতে হবে? সাথে কী কী নিতে হবে? আর ভূতটা যদি কিছু খেতে চায় তাহলে তাকে কোন খাবারটা দিলে খুশি হবে বাবা?” এসব প্রশ্নবাণে জর্জরিত পিতা পরনের লুঙ্গিটা টাইড করতে করতে বলল, ”ওসব কিছুই লাগবে না। চট্ করে দেখে চলে আসব, রেডি হও।“
বাবার হাত ধরে চলেছে মন্টি।

দুই.
একটু সামনে গিয়ে মন্টি আস্তে করে বলছে, ”বাবা ভূত দেখতে কোথায় নিয়ে যাচছ আমাকে?” বাবা বলল, ”শ্মশানঘাটে।” মন্টি একটু থমকে গিয়ে বাবার হাতটা জোরে চেপে ধরে বলল, ”শ্মশানঘাটে কেন বাবা!’ বাবা বলল, ভূত দেখতে হলে শ্মশানঘাটেই যেতে হবে। জোরে হাঁটো।’

চিনাদী বিলের পাড়ে শ্মশানঘাট। এ ঘাটের অতি পরিচিত পোড় খাওয়া দেবদারু গাছটা, অতি প্রাচীন মন্দিরের ক্ষয়ে যাওয়া ভাঙাচোড়া দেয়ালটি মন্টির কাছে বিশাল দৈত্যের মত মনে হতে লাগল। মন্টি বাবার দু হাঁটুর মাঝখানে আশ্রয় নিয়ে নানান ভয়ানক কল্পনা করতে লাগল। তার বাবা টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না। অন্ধকারে দুটি প্রাণী শ্মশানঘাটের পাশে একটা উঁচু ডিবিতে চুপ করে বসে আছে। একজনের সাথে আরেক জনের কথা হচেছ না; হাত চেপে, ফিসফিসিয়ে, আকার ঈঙ্গিতে, গরম নিশ্বাসে দু‘জনের ভাব বিনিময় হচেছ।
মন্টি হঠাৎ নড়েচড়ে ফিসফিস করে বলছে, ”বাবা দেখ, দেখ, ঐ যে একটা ভূত এসে গেছে, কেমন দৌড়াদৌড়ি করছে, আমাকে দেখে ফেলল না তো আবার!!” তার বাবা তাকিয়ে আবছা ছায়া দেখে বুঝলেন, একটা ক্ষুধার্ত শেয়াল খাবারের সন্ধানে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। বাবা বলল, ”কই, আমি তো কোনো ভূত দেখছি না!” মন্টি বলল, ”আরে তুমি ভাল করে দেখ তো। ওই যে দেখ কেমন কুচকুচে কালো ভূতটার ইয়া বড় দাঁত, তিনটা চোখ, একটা চোখ ট্যারা করে আমার দিকে কেমন তাকিয়ে আছে! ঐ যে মাথাটা কত বড় আর মাথার তিন পাশে লম্বামতন তিনটা মোটা শিং, বড় বড় আঙ্গুলে চিকন মত নখ, কালো লম্বা লোম, বিশাল একটা পেট!” তার বাবা ছেলের কথায় প্রথমে অবাক হলো এবং পরে মুচকি হেসে বলল, ”অ, তাই তো! এখন কি তাহলে ভূতের সাথে কথা-টথা বলবে তুমি? মন্টি আস্তে করে বলল, ”না বাবা, অন্যদিন এসে কথা বলব। এখন চলো সোজা বাড়ি চলে যাই। ভূত আমি দেখে ফেলেছি।“
দুজন দর্শক। একজন দেখল শেয়াল আরেকজন দেখল ত‚ত । বাড়ি গিয়ে গরম জলে হাত মুখ ধুয়ে মুখে কিছু না দিয়ে শুয়ে পড়ল ওরা।

তিন.
মন্টির ভূত দেখার ঘটনাটি হাত-পা মেলে পাড়াময় রটে গেল। পরের দিন ছোটো বড় ও সমবয়সীরা দল বেধে চলে এল মন্টিদের বাড়ি। ভূতের বর্ণনা কথা শোনার জন্য উপুড় হয়ে পড়ল সবাই। তারা কৌত‚হল ও ভয় মিশিয়ে নানান প্রশ্ন করতেই মন্টি একনাগাড়ে ভূতের চেহারা চরিত্রের ভয়ংকর সব বর্ণনা দিয়ে যেতে লাগল। সবাই অবাক হয়ে শুনছে আর শুকনো মুখে ঢোক গিলছে। নিজ চোখে ভূত দেখার বর্ণনা! সবাই সবিস্ময়ে বিশ্বাস করল তার কথা। মন্টির ভূত দেখার কাহিনীটা শাখা-প্রশাখা মেলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
ভূতের কথা বুঝি আর ফুরায়! যে-ই আসে সে-ই শুনতে চায় সামনা সামনি দেখা ভূতের দুঃসাহসী বর্ণনা। একটা বিশাল ভক্ত-শ্রোতা টীম গড়ে উঠেছে তার।
মন্টির মুখে এসব বর্ণনা-বৃত্তান্ত শুনে ও শ্রোতা-ভক্তের আনাগোনা দেখে মন্টির বাবা লম্বাশ্বাস ফেলে বলল, “ এভাবেই বুঝি যুগে যুগে মানব মনের কল্পনার রাজ্যে দাপটে বসবাস করে ভূতেরা!“

ছেলের মুখে স্বচক্ষে দেখা ভূতের আজগুবি কাহিনী শুনে তার বাবা বড় আবেগ-আহ্লাদে মন্টির মাকে ডেকে বলল, “তোমার এ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কোন চিন্তা করি না আমি। এ ‘গপ্পবাজ‘ ছেলে ঠেকবে না কোথাও।’
মন্টির মা অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলল, ‘গপ্পবাজ হতে যাবে কোন দুঃখে, ছেলে আমার বড় লেখক হবে।” মায়ের মুখে ছেলের এমন ভবিষ্যতের কথা শুনে মন্টির বাবার মুখটা আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.