নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ দৈনিক পূর্বদেশ-এ প্রকাশিত ছোটোগল্প "হিসুকামাল"

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:২৯

কামাল ভাই পরীক্ষায় ফেল করলেন। তিনি শিক্ষকদের বেত্রাঘাত, পরিবারের সদস্যদের গণপিটুনি আর সহপাদের টিটকারী-তিরষ্কারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। অতঃপর কানে ধরে শপথ করে বললেন, ‘সামনের বার দেখে দেব, পরীক্ষায় আমাকে ফেল করায় কীভাবে। বইয়ের আগা গোড়া খাড়া মুখস্ত করে ফেলব না!’
কামাল ভাইয়ের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেল।

কামাল ভাই দুলালপুর স্কুলে পড়ে; ক্লাশ এইট থেকে নাইন-এ উ?বে।
পরীক্ষা হয়ে গেছে।
আজ ফলাফল ঘোষণার দিন।
পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হলো। কামাল ভাইয়ের নাম-গন্ধ নেই। সে ভাবল, স্যার বোধ হয় তার রেজাল্ট নিয়ে রহস্য করছেন। কামাল ভাই হুট করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ’স্যার আমার রেজাল্টটা!‘
স্যার আঁৎকে উঠে বললেন, ’অ, তাই তো! আচ্ছা কামাল, তোর রেজাল্টটা কী হতে পারে একটু আন্দাজ করে বল তো, শুনি!’ কামাল উত্তেজিত হয়ে বলল¬, ’কী হতে পারে মানে! রুল নাম্বার থাকবে এক দুইয়ের মধ্যে!’
তার কথা আর শেষ হতে না হতেই চানমিয়া স্যার বিছার মত লাফিয়ে উঠে কামাল ভাইয়ের কান প্যাঁচিয়ে ধরলেন। তারপর যে গতিতে ক্লাশরুম থেকে টেনে নিয়ে গেলেন এতে তার পা মাটি স্পর্শ করেছিল কি না সন্দেহ। স্যার তাকে সোঝা হেড স্যারের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলেন। আমরা ভয়ে ভয়ে দূর থেকে ফুচকি দিয়ে আমাদের মুরুব্বীর এ ভয়াবহ বিপদ দেখার চেষ্টা করছি। বাঘের খপ্পরে পড়া অসহায় হরিণের মত অবস্থা তার। হেড স্যার চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন, ’ব্যাপার কী চানমিয়া সাব?’ চানমিয়া স্যার রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ’স্যার, গাধাটা এবারও ফেল করেছে, খাঁড়া ফেল। তার মতো ছাত্রের কোনো দরকার নেই এই ইস্কুলে। একটার জন্য দশটার বদনাম। এইবার নিয়ে তিনবার ফেল করেছে! তাকে এখনই টি সি দিয়ে বের করে দিতে হবে স্যার।’ স্যার এ কথা বলে কামাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করতে লাগলেন।

স্যারের মুখে এ কথা শোনামাত্র কামাল ভাইয়ের হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল, সাথে তালে-বেতালে বুক ধড়ফড়ানি। কামাল ভাই জিহ্বাটা রের করে বারবার শুকনো ঠোঁট ভেজাবার চেষ্টা করছে কিন্তু তার জিহ্বাটাও শুকিয়ে ঠনঠনা।
হেড স্যার প্রচন্ড মেজাজি মানুষ। কখনো বেশি কথা বলেন না। স্যারের চাহনির মধ্যে বিরাট ভয় ও রহস্য লুকিয়ে থাকে। হেড স্যার চোখের চশমাটা টেবিলে রেখে চেয়ারটা খড়খড় শব্দে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ’টে সি তো পরের কথা, আগে ফেল করার হিসেবটা লই।’ কামাল ভাই তখন শুকনো মুখে ঘনঘন লা ইলাহা ইল্লা আন্তা... পড়তে লাগল।

হেড স্যার মার শুরু করার আগে যাকে মারবেন তার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে নেন, এটা তাঁর রাগন্ত স্বভাব। স্যার রাগে কটমটিয়ে কামালের মাথা থেকে চোখ বুলাতে বুলাতে পায়ের পাতা পর্যন্ত গিয়ে হ?াৎ থমকে দাঁড়ালেন। চোখ কপালে তুলে সবিস্ময়ে বললেন, ‘ঘটনা কি রে কামাল! তোর চোখে এক ফোঁটা পানি নেই, অথচ প্যান্টের নিচ দিয়ে কলকলিয়ে পানি বেরোচেছ যে, ব্যাপার কি!’
‘হিসু করে দিছি স্যার‘- এ কথা বলে নির্বোধ বালকের মত কামাল স্যারের চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মতো কাঁপতে লাগল।
স্যার আঁৎকে উঠে দু’হাত পিছিয়ে গিয়ে বললেন, ’এ্যা, হিসু করে দিছিস!’ কামাল কোনো জবাব না করে মাথা হেট করে চিঁ চিঁ করে কান্না জুড়ে দিল।
হেড স্যার ডান-বাম তাকিয়ে অস্থিরভাবে চিৎকার করে চান মিয়া স্যারকে বললেন, ‘বদমাশটা তো সর্বনাশ করে ফেলেছে দেখছি। তাড়াতাড়ি ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যান। দেখেন, ফ্লোরের অবস্থাটা, দেখেন!’

চানমিয়া স্যার কামাল ভাইয়ের কানে ধরে দ্রুতপায়ে স্কুলের সীমানার বাইরে গিয়ে একটা গাট্টা মেরে বললেন, ’তুই আজ বাঘের মুখ থেকে নিরাপদে ফিরে এলি। তুই এখন কই যাবি যাহ্।’
কামাল চলে গেল।

দুই.
একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ অমঙ্গল কল্পনা করে কামালের মা ও বাবা অস্থির হয়ে গেলেন। পরে তাদের নানা প্রতিশ্র“তি ও আবেদন-নিবেদনে হেড স্যার দয়া করে কামালকে টিসি না দিয়ে স্কুলে পড়ার আরেকটা চান্স দিলেন।
কামাল ভাই নতুন উদ্যমে সুবোধ বালকের মতো স্কুলে যায়-আসে, লেখাপড়া করে।
কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনাটা পাইপমুক্ত গ্যাসের মত চারিদিকে দ্রুত ছড়িয়ে গেল। কামালের নামের আগে ‘হিসু’ কথাটি সেঁটে গিয়ে ‘হিসুকামাল’ হয়ে গেল। ক্লাশে ছোট বড় সবাই তাকে দেখে ‘হিসুকামাল’ বলে মুখ টিপে হাসে। দিনে দিনে কামালের মনে জমে উঠেছে জেদের পাহাড়।

অবশেষে কামাল চিন্তা করে দেখল, এ ‘বিড়ম্বনা‘ থেকে মুক্তি পেতে হলে তাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। সে নিজেই নিজের কাছে ‘দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়’ আবদ্ধ হলো।
কামাল ভাই অবশ্য বহু চেষ্টা-সাধনার বলে তার প্রতিজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: এত সুন্দর করে লিখেছেন, হাসতে হাসতে আমারও প্রায় কামাল ভাইয়ের মতো অবস্থা। খুব মজার গল্প, শিক্ষণীয়ও বটে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে আমি আনন্দিত। ভাল থাকবেন।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২১

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: গল্প পড়ে আমার উল্টো মন খারাপ হয়ে গেল। বাংলাদেশে মানুষজন যে কি রকম বুলি করে থাকে এবং সেটা যে আবার সমাজ স্বীকৃত - এটার একটা নমুনা আর কি।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: কিশোরেরা এমনটা করতে আনন্দ পায়।
ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখাটা তো আগে একবার পড়েছি।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আগে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.