নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা ও আমার লেখক হওয়ার গল্প

২১ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

“তুমি যে কথায় কথায় এত মজার মজার ছড়া লিখে ফেলতে পারো, আমাকে নিয়ে একটা ছড়া লিখো তো দেখি কেমন বেটা তুমি!“ অসুস্থ বাবার মুখে এমন কথা শুনে আমি একটা লাফে কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়লাম। আর পাঁচ মিনিটে বাবাকে নিয়ে আট লাইনের একটা ছড়া লিখে ফেললাম। ছড়াটি পড়তে পড়তে বাবার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘এই নাও তোমার ছড়া।’ বাবা হাসিমুখে ছড়াটি আমার হাত থেকে নিয়ে দু’লাইন পড়েই শোয়া থেকে উঠে বসলেন। তারপর মন দিয়ে পড়লেন। ছড়ার দিকে তাকিয়েই বাবা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আমার কপালে চুমু দিলেন। এটাই ছিল বাবার শেষ চুমু।

অসুস্থ বাবা ঘরে শুয়ে আছে। বাবা কারোর জন্যই কিছু করতে পারেন না। এজন্য বাবার মনে অনেক কষ্ট। তিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। অনেকেই বাবাকে দেখতে আসে। বাবার অসুখী মুখটা দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি তাঁর মুখে একটু হাসি দেখার জন্য কত কিছুই না করি। বাবার একেকটা হাসি আমার কাছে একেকটা আনন্দময় পৃথিবীর মতো। তাই আমি সবসময় চিন্তা করি, কী করলে বাবা হাসবে আর কী করলে তাঁর ভালো লাগবে।

স্কুল ছুটির পর গেটে শত শত মা-বাবা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। ছাত্ররা দৌড়ে গিয়ে তাদের কোমর পেঁচিয়ে ধরে। বাবা-মা তাদের আদর করে খাওয়াতে খাওয়াতে তুলে নিয়ে যায় বাসায়। আমি জানি আমার বাবা আসবেন না। আমি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে একা একা হেঁটে বাসায় যাই। কারণ একা থাকলে চিন্তা করে অনেক ঘটনা বানানো যায়। অসুস্থ বাবাকে হাসানোর জন্য মনে মনে গল্প, ছড়া আর অদ্ভুত ঘটনা রচনা করি, যা শুনে বাবা হাসবেন। আমার যত বুদ্ধি আর চিন্তাশক্তি আছে সবই খাটাই বাবাকে হাসানোর কাজে। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের একটা কাজ।

আমি বাসায় গিয়ে প্রথম্ইে বাবার রুমে ঢুকতাম। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে বলি গল্প, ছড়া আর আজগুবি সব ঘটনা। বাবা খুব মন দিয়ে শোনেন আমার কথা আর সবটুকুই বিশ্বাস করেন। গল্প করার সময় বাবা শোয়া থেকে উঠে বসেন। বাবা কথা শুনতে শুনতে আমার মাথার এলোমেলো চুলগুলি গুছিয়ে দেন। আমার কথা শুনে বাবা যেখানে হাসার সেখানে হাসেন আর যেখানে ভয়ের কথা সেখানে চোখ বড় করে ভয়ের চেহারা করে কথা শোনেন। আমার কথা শুনে বাবা যখন হাসেন তখন আমার খুব আনন্দ ও গর্ব হয়। এর দুটি কারণ আছে। একটি কারণ, আমি যা বলি তা সত্য কথার মতো করে বলতে পারি আর ২য় কারণ, বাবাকে হাসাতে পারি। আমার ভেতরে সবসময় নতুন নতুন চিন্তা আর ঘটনার জন্ম হতে লাগল। একটার পর একটা ছড়া, গল্প আর ভয়ানক আজগুবি কাহিনি তৈরি হতে লাগল আমার মাথায়। এটা আমার জন্য এমন একটা বিষয়, যা আমাকে সবসময় আনন্দ আর উৎসাহ দেয়।

একদিন খুব আনন্দে নেচে গেয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছি। বাবার জন্য একটি অদ্ভুত হাসির ঘটনা তৈরি হয়েছে মনে। মনে মনে ঘটনাটি বলছি আর একাই হাসছি। আনন্দে বাড়ি ফিরছিলাম এই ভেবে, আজকের গল্পটা শুনে হাসতে হাসতে বাবার পেটে খিল ধরে যাবে। তখন বাবা আমার মুখ চেপে ধরে বলবে, ‘দুষ্টু, আর বলিস না তো, থাম। হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি আমি।’ তখন আমি বাবার হাসিমুখটা দেখতে পাবো অনেকক্ষণ ধরে। এমনটি ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে দৌড়ে বাবার রুমে গেলাম। গল্প বলার আগেই আমি একচোট হেসে নিলাম। তারপর বাবাকে ধাক্কা মেরে বললাম, ‘বাবা, শোনো শোনো, আজকের ঘটনা শুনে তুমি হাসতে হাসতে মরে যাবে বাবা, ওঠো।’

বাবার কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। পাতলা কাঁথার তলে বাবার শুকনো দেহটি পড়ে আছে। আমার এত হাসি আর আনন্দ চোখের জলে গাল বেয়ে মাটি ষ্পর্শ করল।

বাবাকে হারালাম। আমার সমস্ত রাগ আর অভিমান গিয়ে পড়ল বিধাতার ওপর যিনি ইচ্ছা করলে বাবাকে আরো কিছু দিন আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন। প্রতিদিন আমার ভেতরে শত সহস্র গল্প, ছড়া আর আজগুবি কাহিনি সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তা শোনার মতো কেউ নেই।

বিশ্ববিধাতাকে খুব অনুনয় করে বলেছিলাম, ‘প্রভু, আমি এখনও খুব ছোট। এখন আমার বাবার খুবই দরকার। তুমি আমার বাবাকে অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য ধার দাও। আমি একটু বড় হলেই বাবাকে ফেরত দিয়ে দেবো। বিশ্বাস যদি না হয় তাহলে শোনো, এই যে আমি শপথ করে বলছি, আমি বড় হওয়ামাত্র একশো বার বাবাকে ফেরৎ দিয়ে দেবো, কিরা, কসম, বিদ্যা, সত্যি-শিউর! এবার হলো!’

প্রতিদিনই একটা আশা নিয়ে বাসায় ফিরি, কলিং বেলটা টিপলেই হাসিমুখে বাবা দরজা খুলে দিবে আর আমাকে ঝাপটে ধরে বলবে,
“ আমার জন্য তোকে আর কাঁদতে হবে না বাবা।”

কিন্তু দরজা খুলে দেয় কাজের বুয়া ঝরণা। হতাশার একটা নিশ্বাস ফেলে আমি বাসায় ঢুকি। তারপর বাবাকে বারান্দায়, রান্নাঘরে, বাথরুমে, দরজার চিপায়, খাটের তলে তন্ন তন্ন করে খুঁজি। কোথাও বাবা নেই!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাপ হলো অনেক বড় শক্তি। সন্তানহীণ বাপের শক্তি কম থাকে। এই শক্তি শরীরের শোক্তি নয়। মানসিক শক্তি।

২| ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আপনার বাবা আর আপনার মধুর স্মৃতি ভাল লাগলো । প্রতিটি বাবা সন্তনের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ।

৩| ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আবেগময় স্মৃতিচারণ। আপনার বাবার মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা!

৪| ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাবা হলো একটা বটবৃক্ষ। জান্নাত কামনা করি

৫| ২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৪৬

শের শায়রী বলেছেন: ছাত্র জীবনে বাবাকে হারিয়েছি, এভাবে এখনো খুজে বেড়াই বাবাকে। আল্লাহ আপনার বাবাকে জান্নাত নসীব করুক।

৬| ২২ শে জুন, ২০২০ ভোর ৬:১৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনাদের মন্তব্যগুলো যতই পড়ি ততই প্রাণিত হই।
আমার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা সকলের জন্য।

৭| ২২ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৭

মুজিব রহমান বলেছেন: গভীর শ্রদ্ধা আপনার বাবার জন্য। তিনি খুঁশি হতেন আপনাকে খুশি করতে পারার জন্যই।

৮| ২৩ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১০

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার লেখার তো তুলনা নেই, তাই একটু ধন্ধে পড়ে গেছি যে এটা কি গল্প না কি সত্যি? পঞ্চম প্যারায় যেটি লিখেছেন ঘটনা কি আসলেই এভাবে হয়েছিলো? যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে তাহলে এর কোনো সান্ত্বনা নেই।

বাবা দিবস, মা দিবস, এ সব আমার পছন্দ হয় না। আমার বাবা-মা আমার কাছে কি, আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক কি রকম, আমার মনে হয়, এগুলো কোনোভঅবেই ব্যক্ত করা সম্ভব না।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.